<p>ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিয়েছে দেশটির কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে আরো ৫০ কম্পানি কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (সিএপিএফ) পাঠিয়েছেন। মণিপুর মন্ত্রিসভাও সাত দিনের মধ্যে কুকি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বৃহত্তম অভিযানের ডাক দিয়ে প্রস্তাব পাস করেছে।</p> <p>কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত সোমবার মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতি কম্পানির সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০০। অর্থাৎ মণিপুরে আরো পাঁচ হাজার কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ পাঠানো হচ্ছে। যদিও মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ এবং সেনার সঙ্গে মোতায়েন রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সঙ্গে যোগ হতে চলেছে আরো ৫০ কোম্পানি।</p> <p>এদিকে মেইতেই নাগরিক সমাজের সম্মিলিত এক সংগঠন গতকাল মঙ্গলবার দাবি করেছে, কুকি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে বীরেন সিংয়ের সরকারকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে তারা। </p> <p>অন্যদিকে মণিপুরে বীরেন সিং সরকার কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। রাজ্যের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার ওপর থেকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) সমর্থন তুলে নিয়েছে বলে কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের ডাকা বৈঠকে কোনো কারণ না দেখিয়েই এনপিপির ১১ বিধায়ক উপস্থিত না হওয়ায় এই গুজব আরো ডালপালা মেলেছে। সব কিছু মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সরকার চাপে রয়েছে।</p> <p>৭ নভেম্বর থেকে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর, বিশেষ করে জিরিবাম জেলা। জিরিবাম জেলার আসাম সীমানাসংলগ্ন অঞ্চল থেকে ছয়জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। অভিযোগের তীর ছিল কুকি গোষ্ঠীর দিকে।</p> <p>দিন কয়েক পর নদীতে ছয়টি মরদেহ ভেসে আসে। এ নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। নদীতে মরদেহ পাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করতে শুরু করে মেইতেই গোষ্ঠী। স্থানীয় সময় গত শনিবার রাতে রাজ্যের ছয় বিধায়কের বাড়িতে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। এমনকি ইম্ফল পূর্ব জেলার লুয়াংশাংবামে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের পৈতৃক বাড়িতে হামলার চেষ্টাও হয়।</p> <p>তাদের নিরস্ত করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা বিজেপি ও কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়েও আগুন ধরিয়ে দেয়। এখন পর্যন্ত কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ১৪ নভেম্বর নতুন করে আফস্পা বলবৎ করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। সেখানে ২০ কম্পানি আধাসেনা আগেই মোতায়েন করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এবার আরো ৫০ কম্পানি আধাসেনা অর্থাৎ পাঁচ হাজার সিআরপিএফ মোতায়েন করা হলো  রাজ্যটিতে।</p> <p>এদিকে মণিপুরেও এবার পৌঁছে গেছে ‘জাস্টিস’ স্লোগান। ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব মণিপুর’ (এটিএসইউএম), আইটিএলএফসহ কুকি-জো জনজাতিদের আরো কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা গতকাল মুখে কালো কাপড়ের মাস্ক এবং কালো কফিন কাঁধে নিয়ে এই স্লোগান দেন। আড়াই দশক আগে দিল্লিতে মডেল জেসিকা লাল খুনের মামলা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে ভারতজুড়ে উঠেছিল ‘জাস্টিস ফর জেসিকা’ স্লোগান। তিলজলার যুবক রিজওয়ানুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনা, জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়ায় আসিফাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরও শোনা গিয়েছিল সেই স্লোগান। সম্প্রতি আরজি কর কাণ্ডের পরও একই স্লোগান শোনা গেছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে সারা ভারতে। এবার মণিপুরে প্রথমবার শোনা গেল সেই ‘জাস্টিসের’ দাবি।</p> <p>অন্যদিকে মণিপুরে লাগাতার সংঘর্ষ এবং প্রাণহানির ঘটনা মোকাবেলায় ওই রাজ্যের সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে কলকাতায় বিক্ষোভ করেছে কংগ্রেস।</p> <p>মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের পদত্যাগের দাবিতে বালিগঞ্জে মণিপুর হাউসের সামনে স্থানীয় সময় গত সোমবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভের ডাক দেয় দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস। সেই কর্মসূচিতে শামিল হয়ে প্রদেশে কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার আরো এক ধাপ এগিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বীরেনকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘এত দিন ধরে মণিপুর জ্বলছে। কেন্দ্রীয় সরকার নীরব। নির্বাচনী প্রচারণা চালালেন কিন্তু প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে যাওয়ার সময় পেলেন না।’</p> <p>সূত্র : এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা, আজকাল ডটইন।</p>