<p>টোকিওতে যদি কেউ ছাতা, চাবি, এমনকি পোষা প্রাণী হারিয়ে ফেলে, তাহলে পুলিশ হয়তো অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে সেগুলোর দেখাশোনা করছে। জাপানে খোয়া যাওয়া জিনিস খুব কম ক্ষেত্রেই দীর্ঘদিন মালিকের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে, এমনকি প্রায় দেড় কোটি বাসিন্দার মেগাসিটি টোকিওতেও। ৬৭ বছর বয়সী হিরোশি ফুজি একজন পর্যটন গাইড। তিনি টোকিওতে খোয়া যাওয়া জিনিসের জন্য পুলিশের বিশাল কেন্দ্রের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বিদেশি ভ্রমণকারীরা প্রায়ই বিস্মিত হয়, যখন তারা তাদের খোয়া যাওয়া জিনিস ফিরে পায়। কিন্তু জাপানে সব সময় হারানো জিনিস ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা থাকে।’</p> <p>ফুজি বিষয়টিকে ‘জাতীয় বৈশিষ্ট্য’ হিসেবে উল্লেখ করেন। কারণ সে দেশে জনসমাগমস্থলে খুঁজে পাওয়া জিনিস সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা একটি সাধারণ রীতি। তিনি বলেন, জাপানে মা-বাবার কাছ থেকে এই প্রথাটি সন্তানরা শিখে থাকে।</p> <p>টোকিওর কেন্দ্রীয় ইদাবাশি জেলায় অবস্থিত পুলিশের কেন্দ্রটির পরিচালক হারুমি শোজি জানান, প্রায় ৮০ জন কর্মী একটি ডাটাবেইস সিস্টেম ব্যবহার করে খুঁজে পাওয়া জিনিসগুলো সাজিয়ে রাখেন। প্রতিটি জিনিসে ট্যাগ লাগিয়ে সাজানো হয়, যাতে দ্রুত মালিকের কাছে সেগুলো ফেরত দেওয়া যায়। আইডি কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্স সবচেয়ে বেশি হারানো যায় বলেও জানান তিনি।</p> <p><strong>পোষা প্রাণী থেকে চাবি</strong><br /> কিন্তু কুকুর, বিড়াল, এমনকি উড়ন্ত কাঠবিড়ালি ও ইগুয়ানার মতো প্রাণীও পুলিশ স্টেশনে জমা দেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরতরা বই, অনলাইন নিবন্ধ ও পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যত্নের সঙ্গে সেগুলোর দেখাশোনা করেন।</p> <p>গত বছর টোকিও মেট্রোপলিটন পুলিশ ৪০ লাখেরও বেশি খোয়া যাওয়া জিনিস পেয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ মূল্যবান জিনিস, যেমন ওয়ালেট, ফোন ও গুরুত্বপূর্ণ নথি মালিকের কাছে ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়েছে।</p> <p>খেলনাসহ খোয়া যাওয়া নানা জিনিস সুশৃঙ্খলভাবে সংরক্ষিত রাখা একটি বড় কক্ষ থেকে শোজি বলেন, ‘এমনকি যদি এটি শুধু একটি চাবিও হয়, তা-ও আমরা এটি যত্ন সহকারে ডাটাবেইসে প্রবেশ করি, যেমন চাবির সঙ্গে সংযুক্ত রিংয়ের বিষয়টিও।’</p> <p>এক বিকেলে কিছু মানুষ তাদের খোয়া যাওয়া জিনিস সংগ্রহ করতে বা খুঁজতে কেন্দ্রে যায়। ট্রেনস্টেশন বা স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে জমা পড়া জিনিসগুলো দুই সপ্তাহের মধ্যে কেউ দাবি না করলে সেখানে পাঠানো হয়। শোজি বলেন, ‘আমাদের প্রথম চিন্তাই হয়, যারা জিনিস হারিয়েছে, তারা সমস্যায় আছে। তাই এটা পুলিশকে জানানোই স্বাভাবিক।’</p> <p>যদি তিন মাসের মধ্যে কেউ ওই জিনিস দাবি না করে, তাহলে অবাঞ্ছিত জিনিস হিসেবে তা বিক্রি করা হয় বা ফেলে দেওয়া হয়।  </p> <p><strong>ইয়ারফোন থেকে ছাতা</strong><br /> শোজি জানান, করোনা মহামারির পর জাপানে পর্যটকদের রেকর্ড আগমন এবং ছোট গ্যাজেটের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে খোয়া যাওয়া জিনিসের সংখ্যা বেড়েছে। ১৯৫০ সাল থেকে কাজ করা এই কেন্দ্রে ওয়্যারলেস ইয়ারফোন ও হাতে ধরা ছোট ফ্যান এখন নিয়মিত দেখা যায়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি জায়গা, প্রায় ২০০ বর্গমিটার বরাদ্দ করা হয়েছে শুধু ছাতার জন্য। গত বছর প্রায় তিন লাখ ছাতা সেখানে জমা পড়েছিল, যার মধ্যে মাত্র তিন হাজার ৭০০টি ফেরত গেছে। শোজি বলেন, ‘আমাদের ছাতার জন্য একটি নির্দিষ্ট তলা রয়েছে। বর্ষাকালে ছাতার ট্রলি উপচে পড়ে। ফলে আমাদের দুই স্তরে সেগুলো সংরক্ষণ করতে হয়।’</p>