<p>লেবাননের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘোষিত ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি বুধবার সকাল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। তবে ইসরায়েল সতর্ক করে দিয়েছে, যুদ্ধবিরতি হলেও বেসামরিক মানুষজন এখনই যেন বাড়িঘরে ফিরে না যায়। এদিন সকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈরুতের দুটি এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট আগে আবারও বোমা হামলার খবর পাওয়া গেছে। তবে এই চুক্তি বজায় থাকলে এটি ইসরায়েল ও ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাবে।</p> <p>দুই পক্ষের মাঝে চলমান এই যুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে গত সেপ্টেম্বর মাসে, যখন ইসরায়েল বোমা হামলা বাড়ায় ও সীমিত স্থল অভিযান শুরু করে। এখানে উল্লেখ্য, যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী আগামী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানন থেকে সরে যাবে এবং এই সময়ের মাঝে হিজবুল্লাহর পরিবর্তে লেবাননের সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে।</p> <p><strong>যুদ্ধবিরতি চুক্তির কারণ</strong><br /> ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। নিরাপত্তাসংক্রান্ত এক মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর তিনি একটি বিবৃতি দিয়ে এ ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সে সময় হোয়াইট হাউস থেকে চুক্তিটিকে বৃহত্তর শান্তির পথ হিসেবে স্বাগত জানান। এই মুহূর্তে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন নেতানিয়াহু :</p> <p>১. ইরানের হুমকির প্রতি মনোযোগ দেওয়া : এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও তিনি উল্লেখ করেছেন, ইসরায়েল ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রধান অংশ ও  ইরানের পরমাণু কর্মসূচির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধ্বংস করেছে। হিজবুল্লাহকে সব সময় ইরানের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান ঢাল হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারের একটি বড় অংশ ধ্বংস হওয়ার ফলে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সামরিক ভারসাম্য ইসরায়েলের পক্ষে চলে গেছে।</p> <p>২. ক্লান্তি : এই শব্দটি তিনি সরাসরি ব্যবহার করেননি। তবে তিনি বলেছেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিরতি নেওয়া ও পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহ করাটা প্রয়োজন। ইসরায়েলি বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটির সামরিক বাহিনী দুই দিকে দীর্ঘমেয়াদে দুটি যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত ছিল না। তবে এখন লেবাননে যদি সংঘাত শেষ হয়, তাহলে গাজায় আরো বেশি ইসরায়েলি বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে যুদ্ধের কোনো সমাপ্তি দেখা যাচ্ছে না।</p> <p>৩. হামাসকে বিচ্ছিন্ন করা : হিজবুল্লাহকে যুদ্ধ থেকে সরিয়ে নেয়ার অর্থ হলো, হামাসের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়া। হামাস বরাবরই মনে করেছে, ইরানের ‘এক্সিস অব রেজিসট্যান্স’ বা ‘প্রতিরোধের অক্ষের’ বাকি সদস্যরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়বে।</p> <p>এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্ত করার জন্যই তারা এই যুদ্ধ করছেন। যদিও তার এই দাবিটি বিতর্কিত। গাজায় এখনো আটক থাকা ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবার ও আত্মীয়রা নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, তিনি গাজা যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন এবং বন্দিদের মুক্তি নিয়ে চুক্তি করার ক্ষেত্রে অবহেলা করছেন।</p> <p><strong>চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন</strong><br /> যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণা দলের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাইডেনের বহির্মুখী প্রশাসনের কারণে এই শান্তি চুক্তিতে পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে, যা এ মাসে ট্রাম্পের বিজয়ে উদ্ভাসিত হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সঠিকভাবে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, তার ঐতিহাসিক বিজয় এ অঞ্চলের নেতাদের শান্তির দিকে নিয়ে যাবে এবং আমরা ঠিক এটাই ঘটতে দেখছি।’</p> <p>তবে এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এই চুক্তির আওতায় ইসরায়েলি বাহিনী ও হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের প্রত্যাহারের পর দক্ষিণাঞ্চলে হাজার হাজার লেবানিজ সেনা মোতায়েন করা হবে। কিন্তু তাদের কিভাবে মোতায়েন করা হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। সামরিক বাহিনীর অভিযোগ, তাদের এ দায়বদ্ধতা পূরণের জন্য সম্পদ, অর্থ, জনবল ও সরঞ্জাম নেই।</p> <p><strong>কিভাবে কার্যকর হবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি?</strong><br /> যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ সম্পর্কে বিস্তারিত যা বলেছেন তা হলো :</p> <p>পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানন থেকে ইসরায়েলি সেনাদের ‘পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার’ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পাশাপাশি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দক্ষিণে ও হিজবুল্লাহ উত্তরে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লেবাননের সামরিক বাহিনী ব্লু লাইনের চারপাশের এলাকায় টহল দেবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স বিদ্যমান ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থায় যোগ দেবে। এ ব্যবস্থায় বর্তমানে লেবাননের সামরিক, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ও লেবাননে জাতিসংঘের অন্তর্বর্তীকালীন বাহিনী (ইউনিফিল) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তারা ওই এলাকায় চুক্তি কার্যকর করতে সহায়তা করবে।</p> <p>এ ছাড়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের সম্ভাব্য সব অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে। লেবাননের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সেনা থাকবে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ফরাসি বাহিনী প্রশিক্ষণ দিয়ে ও যোগাযোগের মাধ্যমে লেবাননের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করবে। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও অন্য দেশগুলো লেবাননের সামরিক বাহিনীকে একটি সামরিক কারিগরি কমিটি বা এমটিসির মাধ্যমে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা করবে।</p> <p>এ পরিকল্পনাটিতে ‘টেকসই যুদ্ধবিরতি’ হতে পারে—এমন পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় দক্ষিণ লেবাননে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সমর্থন করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানানো হয়েছে।</p>