<p>গত সাত মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন এই মার্কিন, অবশেষে তাকে পাওয়া গেল আসাদের কারাগারে। মুক্ত হওয়া ওই মার্কিন নাগরিকের নাম ট্র্যাভিস টিমারম্যান। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সিরিয়ায় প্রবেশের পর তাকে আটক করেছিল আসাদ সরকার। </p> <p>সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে এক দশক ধরে ক্ষমতায় রেখেছিল রাশিয়ার আগ্নেয়াস্ত্র শক্তি। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সব কিছু বদলে দিয়েছে। দামেস্কের পতন হয়েছে, সিরীয় প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে এবং আকাশপথে তাকে মস্কোতে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। সিরিয়ায় পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে চলা আসাদ পরিবারের শাসনের পতন হয় অনেকটা আচমকাই। কয়েক দিনের ব্যবধানে চোখের সামনেই ধসে পড়ে বাশার আল-আসাদের সাম্রাজ্য। </p> <p>বিদ্রোহীরা বাশার আল-আসাদের শাসনকে উৎখাত করে তার আমলের সব কারাগার ভেঙে বন্দিদের উদ্ধার করেছে। কারাগারে বন্দি ছিল হাজার হাজার সিরীয়। তাদের মধ্যে ছিল নারী ও শিশুও। আসাদ সরকারের কারাগারে আসাদবিরোধীদের আটকে রেখে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হতো, করা হতো গুম। এমনকি হত্যা এবং লাশ নিশ্চিহ্ন করতে কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ টিম ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশিরা এসব আটক কেন্দ্রকে ‘আয়নাঘর’ হিসেবে বর্ণনা করছেন।</p> <p>মুক্তি পাওয়া ট্র্যাভিস টিমারম্যান জানান, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে খুঁজে পান। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, টিমারম্যান একটি সোফায় শুয়ে আছেন এবং বাসিন্দারা স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন।</p> <p>টিমারম্যান জানান, সাত মাস আগে সিরিয়ায় ঢোকার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মিসৌরি স্টেট হাইওয়ে পেট্রল এবং হাঙ্গেরির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে তাকে নিখোঁজ হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। এর আগে, তাকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে।</p> <p>টিমারম্যান বলেন, দুইজন ব্যক্তি হাতুড়ি দিয়ে কারাগারের দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করেন। তিনি বলেন, ‘হাতুড়ির আঘাতে কারাগারের দরজা ভেঙে যায় এবং আমি জেগে উঠি।’ বিদ্রোহীরা দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার এক দিন পরে তাকে উদ্ধার করা হয় বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। </p> <p>টিমারম্যান বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম কারারক্ষীরা এখনো সেখানে আছে, তাই আমি ভেবেছিলাম যে যুদ্ধটি শেষ হওয়ার চেয়ে আরো সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে... তবে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর কোনো বাধার মুখে পড়িনি, সত্যিকার অর্থে কোনো লড়াই ছিল না।’</p> <p>৩০ বছর বয়সী টিমারম্যান বলেছেন, বিপুলসংখ্যক মানুষের সঙ্গে তিনি কারাগার থেকে বের হন এবং জর্দানে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কয়েক মুহূর্তের জন্য খুব ভয় পেয়েছিলেন। তিনি জানান, এরপর একটা ঘুমানোর জায়গা খুঁজছিলেন। পরে তিনি স্থানীয় লোকজনের কাছে খাবার ও অন্যান্য সহায়তার জন্য অনুরোধ করেন। স্থানীয় লোকজন তাকে সহায়তা করেন বলে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন।</p> <p>সিরিয়ার নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গতকাল বৃহস্পতিবার টেলিগ্রাম মেসেজিং সার্ভিসের একটি বার্তায় নিশ্চিত করেছে, টিমারম্যানকে ‘মুক্ত ও সুরক্ষিত’ করা হয়েছে। এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, টিমারম্যানকে দেশে ফিরিয়ে নিতে কাজ করছে ওয়াশিংটন।</p> <p>বিদ্রোহীদের জোট আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান আহমেদ আল-শারা (তিনি আল-জুলানি নামেও পরিচিত) এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধে জড়িত ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের সিনিয়র সামরিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি যারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, তাদেরও ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।</p> <p>সূত্র : বিবিসি</p>