<p>সিরিয়ায় রুশ মিত্র বাশার আল-আসাদের পতনে ক্রেমলিনের ভূমধ্যসাগরীয় ও আফ্রিকান কৌশল বিপর্যস্ত হয়েছে। এর ফলে লিবিয়াকে সম্ভাব্য কৌশলগত কেন্দ্র হিসেবে দেখতে বাধ্য হচ্ছে রাশিয়া—এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।</p> <p>রাশিয়া সিরিয়ার উপকূলে একটি সামরিক বন্দর ও বিমানঘাঁটি পরিচালনা করে, যা ভূমধ্যসাগর, মধ্যপ্রাচ্য ও সাব-সাহারান আফ্রিকা, বিশেষ করে সাহেল অঞ্চল, সুদান ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করে। তবে সিরিয়ার শাসকের আকস্মিক প্রস্থানের ফলে এই মডেল এখন ঝুঁকির মুখে।</p> <p>যদিও সিরিয়ার নতুন নেতা আহমেদ আল-শারা রাশিয়াকে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ দেশ’ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘কেউ চাইলেই আমরা রাশিয়াকে সিরিয়া থেকে চলে যেতে দিতে চাই না।’ তবু সিরিয়ার রাজনৈতিক পটপরিবর্তন রাশিয়াকে লিবিয়ায় কৌশলগতভাবে স্থানান্তরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।</p> <p>লিবিয়ায় ইতিমধ্যেই রুশ ভাড়াটে সেনারা খলিফা হাফতারের পক্ষে কাজ করছে। তিনি দেশের পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করেন এবং তার বিরোধী তুরস্ক সমর্থিত ত্রিপোলিভিত্তিক জাতীয় ঐক্য সরকার (জিএনইউ) জাতিসংঘের স্বীকৃত।</p> <p>যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংকট্যাংক রুসির জালেল হারচাউই বলেন, ‘রাশিয়ার লক্ষ্য হলো আফ্রিকায় চলমান মিশনগুলো টিকিয়ে রাখা। এটি রাশিয়ার আত্মরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া। সিরিয়ায় অবস্থানের অবনতির ঝুঁকি কমাতে তারা মরিয়া।’</p> <p>২০২৪ সালের মে মাসে সুইস তদন্তকারী কনসোর্টিয়াম ‘অল আইজ অন ওয়াগনার’ লিবিয়ার প্রায় ১০টি স্থানে রুশ কার্যক্রম শনাক্ত করে। এর মধ্যে তোব্রুক বন্দরে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল মাসে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেখানে প্রায় ৮০০ রুশ সেনা উপস্থিত ছিলেন, যা মে মাসে বেড়ে এক হাজার ৮০০তে দাঁড়ায়।</p> <p>গত ১৮ ডিসেম্বর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল লিবিয়া ও মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানায়, সিরিয়া থেকে লিবিয়ায় রুশ রাডার ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থানান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে এস-৩০০ ও এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যাটারিও রয়েছে।</p> <p><strong>উল্লেখযোগ্য স্থানান্তর  </strong><br /> হারচাউই বলেন, ৮ ডিসেম্বর আসাদের পতনের পর থেকে ‘রাশিয়া থেকে লিবিয়ায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম স্থানান্তর করা হয়েছে’। এ ছাড়াও সেনা স্থানান্তর হয়েছে।</p> <p>ইউক্রেনের গোয়েন্দারা জানান, ৩ জানুয়ারিতে মস্কো পরিকল্পনা করেছে ‘স্পার্টা ও স্পার্টা-২ কার্গো জাহাজ ব্যবহার করে লিবিয়ায় সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্র পরিবহন করার।’</p> <p>আটলান্টিক কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে বিশেষজ্ঞ ইমাদেদ্দিন বাদি বলেছেন, এই স্থানান্তর শুধু ‘একটি প্রক্সির পরিবর্তে আরেকটি প্রক্সি’ নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রচেষ্টা।</p> <p><strong>পশ্চিমা স্বার্থে বিঘ্ন ঘটানো</strong><br /> বাদির মতে, ‘আসাদ রাশিয়াকে ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তে একটি ঘাঁটি প্রদান করেছিলেন এবং সামরিক সক্ষমতা পরীক্ষার মঞ্চ তৈরি করেছিলেন।’  </p> <p>হাফতারও একই ধরনের সুযোগ তৈরি করছেন উল্লেখ করে এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা স্বার্থে বিঘ্ন ঘটানো, লিবিয়ার বিভক্ত রাজনীতি থেকে সুবিধা নেওয়া এবং আফ্রিকায় মস্কোর প্রভাব বিস্তার করার উপায়।’</p> <p>এদিকে ত্রিপোলিভিত্তিক সরকার ও লিবিয়ার সাবেক উপনিবেশিক শাসক ইতালি রুশ গতিবিধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে। কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র হাফতারকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, যাতে তিনি তোব্রুক বন্দরে রাশিয়াকে স্থায়ী অবস্থান গড়ে তুলতে না দেন, যা তারা ২০২৩ সাল থেকে কামনা করছে। তবে স্পষ্ট যে লিবিয়ায় সিরিয়ার সময়ের মতো সুবিধা পাওয়া রাশিয়ার জন্য কঠিন হবে।</p> <p><strong>লিবিয়ায় চ্যালেঞ্জ  </strong><br /> বামাকোভিত্তিক কনরাড অ্যাডেনাউয়ার ফাউন্ডেশনের সাহেল প্রগ্রামের প্রধান উলফ লেসিং বলেন, ‘সিরিয়া সুবিধাজনক ছিল। সেখানে কোনো পশ্চিমা কূটনীতিক বা সাংবাদিক ছিল না। তারা ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারত। কিন্তু লিবিয়ায় এটি অনেক বেশি জটিল হবে। এখানে সব কিছু গোপন রাখা কঠিন এবং রুশ উপস্থিতি অনেক বেশি দৃশ্যমান হবে।’</p> <p>এ ছাড়া মস্কোকে তুরস্কসহ অন্যান্য শক্তির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। তুরস্ক জিএনইউর মিত্র, আর মিসর ো সংযুক্ত আরব আমিরাত হাফতারের পৃষ্ঠপোষক।</p> <p>২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দীর্ঘদিনের নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির উৎখাতের পর থেকে লিবিয়া দুটি ভাগে বিভক্ত। লেসিং বলেন, সেখানে ‘সবাই উভয় পক্ষের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছে।’</p> <p>গত বছর তুরস্কও অর্থনৈতিক প্রকল্প ও কূটনৈতিক আদান-প্রদানের সম্ভাব্য সহযোগিতার জন্য হাফতারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছে।</p> <p>রাশিয়া লিবিয়ায় তাদের মিত্রের জন্য একটি বিকল্প পরিকল্পনা রাখার বিষয়ে সতর্ক থাকবে। ক্রেমলিনপন্থী সংবাদমাধ্যম সাজারগ্রাদের সামরিক প্রতিবেদক ভ্লাদ শ্লেপচেঙ্কো বলেন, ‘সিরিয়ায় করা ভুল পুনরাবৃত্তি করা উচিত নয়, যেখানে স্থানীয় একনায়কের ওপর বাজি ধরে বিকল্প ছাড়া এগোনো হয়েছিল।’</p> <p>হাফতারও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তার যে প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে, তা নষ্ট করতে চান না। লেসিং বলেন, ‘লিবিয়ায় রাশিয়ার সক্ষমতা সীমিত।’</p>