ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য একটি ‘ইউরোপীয় সেনাবাহিনী’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আর ইউরোপকে সহায়তা করতে না-ও আসতে পারে।
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় জেলেনস্কি আরো বলেন, ইউক্রেন ‘কখনোই আমাদের পেছনে কোনো চুক্তি হলে তা মেনে নেবে না’।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে শান্তি আলোচনার সিদ্ধান্তের পরপরই তার এ মন্তব্য এলো।
অন্যদিকে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স শুক্রবার দেওয়া এক ভাষণে ইউরোপীয় গণতন্ত্রের সমালোচনা করে বলেন, প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে ইউরোপকে ‘বড় ভূমিকা নিতে হবে’।
জেলেনস্কি আরো বলেন, ‘আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, সময় এসেছে—ইউরোপের সেনাবাহিনী গঠন করতে হবে।’
আরো পড়ুন
‘ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ছাড়া যুদ্ধ প্রকৃত অর্থে শেষ হবে না’
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘গতকাল মিউনিখে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে বলেছেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের পুরনো সম্পর্কের যুগ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন থেকে সব কিছু বদলে যাবে এবং ইউরোপকে এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।
’
এর আগে এই সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় হামলা ন্যাটোর জন্য এক ধরনের ‘ফ্যাক্টরি রিসেট’, যা প্রমাণ করে, জোটটিকে আরো ‘শক্তিশালী’, ‘বলিষ্ঠ’ ও ‘বাস্তবসম্মত’ হতে হবে।
জেলেনস্কি শনিবার বলেন, “চলুন, বাস্তবতা স্বীকার করি। এখন আমরা এ কথা উড়িয়ে দিতে পারি না যে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা কোনো ইস্যুতে ‘না’ বলে দিতে পারে। অনেক নেতা বহুবার বলেছেন, ইউরোপের নিজস্ব সামরিক বাহিনী প্রয়োজন।
একটি সেনাবাহিনী, ইউরোপের সেনাবাহিনী।”
ইউরোপীয় সেনাবাহিনীর ধারণাটি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁসহ আরো অনেক নেতা প্রস্তাব করেছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব সামরিক সক্ষমতা তৈরির পক্ষে কথা বলে আসছেন।
আরো পড়ুন
মস্কো ও কিয়েভ আসলে কী চায়
জেলেনস্কি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাকে পুতিনের সঙ্গে তার কথোপকথনের কথা জানান। একবারও তিনি উল্লেখ করেননি, যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপকে আলোচনার টেবিলে প্রয়োজন—এটা অনেক কিছুই বলে দেয়। পুরনো সেই দিন শেষ, যখন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে সমর্থন করত শুধু আগেও তাই করেছিল বলে।
’
যখন ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন তিন বছরে পড়তে যাচ্ছে, ট্রাম্প ও হেগসেথ—দুজনই বলেছেন, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা কম। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরো বলেছেন, ইউক্রেনের ২০১৪ সালের আগের সীমান্তে ফিরে যাওয়াও বাস্তবসম্মত নয়। অন্যদিকে জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্য পদ পাওয়ার বিষয়টি আলোচনার বাইরে রাখবেন না।
ট্রাম্প গত সপ্তাহে পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন, যেখানে তারা ইউক্রেন ইস্যুতে শান্তি আলোচনা নিয়ে আলোচনা করেন। তবে এতে গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের উপেক্ষা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের পাশাপাশি ইউরোপেরও আলোচনার টেবিলে থাকা উচিত, ‘যখন ইউরোপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’।
এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি ও পুতিন সৌদি আরবে সাক্ষাৎ করার পরিকল্পনা করছেন এবং তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, দুজনেই পরস্পরকে তাদের নিজ নিজ রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, পুতিন একক আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে বিচ্ছিন্ন করার ‘একটি খেলা’ খেলছেন।
জেলেনস্কি বলেন, ‘পরবর্তী ধাপে, পুতিন চেষ্টা করবেন যাতে ৯ মে এই বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট রেড স্কয়ারে দাঁড়িয়ে থাকেন—একজন সম্মানিত নেতা হিসেবে নয়, বরং তার নিজস্ব প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে।’
ট্রাম্পের মস্কো সফরের কোনো তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। রাশিয়া ৯ মে ‘বিজয় দিবস’ উদযাপন করে, যেদিন তারা ১৯৪৫ সালে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে বিজয় অর্জনের স্মরণ করে।
ইউক্রেনের আলোচনায় অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ গত সপ্তাহে বলেন, ‘কিয়েভ অবশ্যই কোনো না কোনোভাবে আলোচনায় অংশ নেবে।’
এ ছাড়া জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ বলেন, তার দেশ কখনো চাপিয়ে দেওয়া শান্তি মেনে নেবে না। পাশাপাশি পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টুস্ক বলেন, ইউরোপের ইউক্রেন ইস্যুতে নিজেদের পরিকল্পনা থাকা দরকার, ‘অন্যথায় বিশ্বের অন্য শক্তিগুলো আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।’
সূত্র : বিবিসি