গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪০০ ছাড়াল, হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিহত

বিবিসি
বিবিসি
শেয়ার
গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪০০ ছাড়াল, হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিহত
১৮ মার্চ একজন ফিলিস্তিনি নারী শিশুকে কোলে নিয়ে গাজা উপত্যকার পূর্বাঞ্চল থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন। ছবি : এএফপি

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ‘ব্যাপক হামলা’য় চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এ পরিসংখ্যান জানিয়েছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা হামাসের ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে’ আক্রমণ চালাচ্ছে। হামলা অব্যাহত রয়েছে এবং আইডিএফ নতুন করে আরো অনেক এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে।

গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির পর এটি গাজায় সবচেয়ে বড় বিমান হামলা। যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর আলোচনা কোনো চুক্তিতে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছে।

এদিকে গাজার উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ওই অঞ্চলের সর্বোচ্চ পদস্থ হামাস নিরাপত্তা কর্মকর্তা মাহমুদ আবু ওয়াফাহ নিহত হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে আরো তিনজন শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গাজার বাসিন্দারা সাহরি খাওয়ার সময় এসব বিস্ফোরণ হয়। তারা ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা দেন—চারপাশে আগুন, মৃতদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এবং আহতরা চিকিৎসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ মঙ্গলবার সকালে এই হামলার নির্দেশ দেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এটি আমাদের জিম্মিদের মুক্তি দিতে বারবার হামাসের অস্বীকৃতি জানানো এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূত স্টিভ উইটকফ ও মধ্যস্থতাকারীদের দেওয়া সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পরবর্তী পদক্ষেপ।

এখন থেকে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি প্রয়োগ করবে।’

ইসরায়েলের দাবি, হামাস এখনো ৫৯ জন জিম্মিকে আটকে রেখেছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। এদের সবাইকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ২০২৩ জিম্মি করা হয়েছিল। ইসরায়েলের জাতিসংঘ দূত ড্যানি দানন হামাসকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘আমরা আমাদের শত্রুদের প্রতি কোনো দয়া দেখাব না।’

কিন্তু জিম্মিদের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী একটি গোষ্ঠী অভিযোগ করেছে, ইসরায়েলি সরকার ‘জিম্মিদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গেছে’।

হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম এক বিবৃতিতে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে, ‘আমাদের প্রিয়জনদের ফেরানোর প্রক্রিয়াকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।’

‘ভয়ানক রাত’
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোরে গাজা সিটি, রাফা ও খান ইউনিসে ইসরায়েলি বিমান হামলা চালানো হয়। ২৫ বছর বয়সী রামেজ আলাম্মারিন এএফপিকে জানান, তিনি গাজার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আহত শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি আরো বলেন, ‘তারা আবারও গাজায় নরকের আগুন ঝরিয়েছে। মৃতদেহ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চারপাশে পড়ে রয়েছে, আর আহতরা কোনো ডাক্তার পাচ্ছে না।’

মোহাম্মদ বদেইর রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম, তারপর হঠাৎ হামলার শব্দে জেগে উঠি। আমাদের প্রতিবেশীদের বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছিল। আমরা ধ্বংসস্তূপের নিচে এই মেয়েটিকে পাই, তার মা-বাবাকেও টেনে বের করি।’

তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে তার নিজের মেয়ের দেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে পাওয়া যায়। এ ছাড়া গাজার আল-মাওয়াসিতে কর্মরত ইউনিসেফের মুখপাত্র রোসালিয়া বোলেন বিবিসি রেডিও ৪কে বলেন, ‘এটি সবার জন্য একটি ভয়ানক রাত ছিল।’

বাইরে চিৎকার ও সাইরেনের শব্দ শোনা যাচ্ছিল, আর ওপরে প্লেন উড়ছিল জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘খুব জোরে বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়, আমাদের গেস্ট হাউস কাঁপছিল। পরবর্তী ১৫ মিনিটে, প্রতি পাঁচ বা ছয় সেকেন্ডে একবার করে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল।’

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আহতদের সংখ্যা সামাল দিতে স্বাস্থ্যব্যবস্থা হিমশিম খাচ্ছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আহতের সংখ্যা ৬৬০-এর বেশি। ওই অঞ্চলের ৩৮টি হাসপাতালের মধ্যে ২৫টি সেবা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

গাজার হাসপাতালগুলোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ জাকুত বিবিসি আরবিকে জানান, আহতদের মধ্যে অনেকেরই পোড়া ও ভাঙা হাড়ের মতো গুরুতর আঘাত রয়েছে এবং অনেকে এখনো অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, ‘হামলাগুলো এত আকস্মিক হয়েছিল যে পর্যাপ্ত মেডিক্যাল স্টাফ উপস্থিত ছিলেন না এবং এই ব্যাপক হামলার মাত্রার কারণে সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত দল ডাকতে হয়েছে।’

প্রতিক্রিয়া
এদিকে জাতিসংঘ কর্মকর্তারা এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী মুহান্নাদ হাদি বলেন, ‘এটি অকল্পনীয়। যুদ্ধবিরতি অবিলম্বে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা উচিত। গাজার মানুষ অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করছে।’

হামাস এই হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করার জন্য ইসরায়েলকে বিশ্বাসঘাতক বলে অভিযুক্ত করেছে। তারা আরো বলেছে, ইসরায়েল অবশিষ্ট জিম্মিদের ‘এক অনিশ্চিত পরিণতির’ সম্মুখীন করেছে।

তবে হামাস এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার ঘোষণা দেয়নি। বরং মধ্যস্থতাকারী ও জাতিসংঘকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই হামলার আগে ইসরায়েলের সঙ্গে পরামর্শ করেছিল। ফক্স নিউজকে হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র এ তথ্য জানিয়েছেন।

অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্ব ১ মার্চ শেষ হওয়ার পর মধ্যস্থতাকারীরা নতুন সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাব করেছিল, যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্বটি এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়ানো হোক, যাতে হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তি ও ইসরায়েলে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বিনিময় অব্যাহত রাখা যায়। কিন্তু মধ্যস্থতাকারী আলোচনায় জড়িত এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল ও হামাস এই চুক্তির মূল কিছু শর্ত নিয়ে একমত হতে পারেনি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের চালানো হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছিল, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। পাশাপাশি সেই হামলায় ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল সামরিক অভিযান চালায়। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, এতে এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৫২০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। পাশাপাশি গাজার ২১ লাখ জনসংখ্যার বেশির ভাগই বাস্তুচ্যুত হয়েছে, অনেকেই একাধিকবার। প্রায় ৭০ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও আশ্রয়ের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

পাকিস্তানে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ পোস্টের অভিযোগে সাংবাদিক আটক

ডয়চে ভেলে
ডয়চে ভেলে
শেয়ার
পাকিস্তানে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ পোস্টের অভিযোগে সাংবাদিক আটক
প্রতীকী ছবি

পাকিস্তানের অনলাইন মিডিয়া চ্যানেল ‘রাফতার’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক ফারহান মল্লিককে রাষ্ট্রদ্রোহী পোস্ট ও ভুয়া তথ্য প্রচারের অভিযোগে শুক্রবার (২১ মার্চ) আদালতে তোলা হয়েছে।

সংশোধিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফআইএ তাকে গ্রেপ্তার করে। আদালত তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ফারহান মল্লিক ইচ্ছাকৃতভাবে এমন তথ্য প্রচার করেছেন, যা ‘মিথ্যা বা আতঙ্ক সৃষ্টিকারী’ হতে পারে।

সংশোধিত আইনের আওতায় এ ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

রাফতার চ্যানেল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এখন পর্যন্ত কোনো শক্তিশালী প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি, যা মল্লিক বা তার চ্যানেলের বিরুদ্ধে আনা রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগকে সমর্থন করে।’

বিগত কয়েক বছরে রাফতার চ্যানেলের বেশ কয়েকটি ভিডিও মিলিয়নের বেশিবার দেখা হয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভূমিকার বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

এই গ্রেপ্তারের পর পাকিস্তানের মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সরকারি সংস্থাগুলোর এই ধরনের পদক্ষেপ নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।’

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে পাকিস্তান বর্তমানে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫২তম অবস্থানে রয়েছে।

সংশোধিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশিষ্ট মানবাধিকার আইনজীবী ইমান মাজারি বলেছেন, ‘এই আইনের পরিবর্তনগুলো মূলত মতপ্রকাশ দমন, সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার ও সরকারের সমালোচনাকে বন্ধ করার জন্য আনা হয়েছে।

পাকিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। দেশটিতে একাধিকবার ইউটিউব, টিকটক সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এমনকি বর্তমানে সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’ নিষিদ্ধ রয়েছে।

মন্তব্য

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ক্যান্সার হাসপাতাল বিধ্বস্ত

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ক্যান্সার হাসপাতাল বিধ্বস্ত
সংগৃহীত ছবি

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় ক্যান্সার রোগীদের জন্য পরিচালিত ‘তার্কিস-প্যালেস্টিনিয়ান ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল’ ধ্বংস হয়েছে।

হাসপাতালটি নেতজারিম করিডরের সালাহ আল দীন স্ট্রিটের কাছে অবস্থিত। এটি এর আগে, ইসরায়েলি বাহিনীর কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

২০১৭ সালে তুরস্ক ৩৪ মিলিয়ন ডলার অনুদানে দিয়ে হাসপাতালটি পুনর্নির্মাণ করা হয়।

শুক্রবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, আজ এটি সম্পূর্ণরূপে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ হাসপাতালে প্রতি বছর ১০,০০০ রোগীকে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ইসরায়েল নেতজারিম করিডর সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছে। এরপরই হাসপাতালটি ধ্বংস করে দেওয়া হলো।

গাজার উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের আল-রশিদ স্ট্রিট ব্যবহার করতে হবে, যা ইসরায়েলি আক্রমণের কারণে ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।

মন্তব্য

তুরস্কে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ চলছেই

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
তুরস্কে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ চলছেই
ছবি : এএফপি

তুরস্কে ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সরকারের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস এবং রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। তুরস্কে বিক্ষোভ-সমাবেশের ওপর চার দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।

দেশটির রাজনীতিতে সেক্যুলার দল হিসেবে পরিচিত রিপাবলিকান পিপলস পার্টির-সিএইচপি নেতা একরেম ইমামোগলু।

২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য দলের প্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করার কথা ছিল এ সপ্তাহের শেষের দিকে।

এর মধ্যেই গত বুধবার দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সহায়তার অভিযোগে আরো ১০৫ জনের সঙ্গে ইমামোগুলোকেও আটক করা হয়।

এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘উসকানিমূলক’ পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে আরো অনেককে আটক করে সরকার। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দ্বিতীয় দিনের বিক্ষোভ-সমাবেশ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

তার ভাষায়, নাটক করছে বিরোধীরা।

এরদোয়ান বলেন, ‘তারা এতটাই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে যে, পুলিশকে আক্রমণ এবং বিচারক ও আইনজীবীদের হুমকি দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে পৌঁছে গেছে।’

এদিকে, সিএইচপি পার্টির নেতা ওজগুর ওজেল অভিযোগ করেছেন, ১০৫ জনকে আটক করে বিরোধীদের দমনের কৌশল নিয়েছে সরকার।

ইস্তাম্বুলের সিটি হলের বাইরে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের সেই চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার জনগণের রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়েরলিকায়া ঘোষণা করেছেন অনলাইনে ২৬১ জন ‘সন্দেহভাজন অ্যাকাউন্ট ম্যানেজারকে’ শনাক্ত করেছে পুলিশ।

তাদের বিরুদ্ধে ‘মানুষকে ঘৃণা ও শত্রুতার দিকে ঠেলে দেওয়া’ এবং ‘অপরাধে প্ররোচনা দেওয়ার’ অভিযোগ রয়েছে।

ইয়েরলিকায়া বলেন, ‘৩৭ সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে এবং অন্যদেরও আটকের চেষ্টা চলছে।’

বৃহস্পতিবার ইমামোগলুর এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক বার্তায়, ‘এই অন্যায় রুখে দাঁড়াতে’ তুরস্কের জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। পরিস্থিতির জন্য এরদোয়ানের দলকে দায়ী করে বিচার বিভাগকেও সোচ্চার হওয়ার তাগিদ দেওয়া হয় ওই পোস্টে।

এতে বলা হয়, ‘পরিস্থিতি শুধু রাজনৈতিক দল ও আদর্শের প্রশ্নে আটকে নেই আর। এখন সাধারণ মানুষ ও তাদের পরিবার পরিজনের ওপরও এর প্রভাব পড়ছে। এখনই সময় আওয়াজ তোলার।’

শহরের বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনে লাউডস্পিকারে ইমামোগলুর একটি বক্তৃতার রেকর্ড বাজছে। যাত্রীরা যখন ট্রেনে উঠতে উঠতে শুনছেন, ‘আপনাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি অঙ্গীকার করছি, এই লড়াইয়ে জিতব।’

রাস্তায় মিছিল করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। তুরস্কের বিরোধীদের স্লোগান হিসেবে পরিচিত সেই কথাগুলোতে বলা হচ্ছে, ‘আমরা ভীত নই, চুপ করিয়ে রাখা যাবে না আমাদের, আমরা মানব না।’

তবে, এক কোটি ৬০ লাখের বেশি জনসংখ্যার এই শহরে বিক্ষোভকারীর সংখ্যা এখনও তুলনামূলকভাবে কম। আপাতত, ইমামোগলুকে মুক্তি দিতে এরদোগানের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়ানোর সম্ভাবনাও কম তাদের।

গত কয়েক মাসে দেশব্যাপী বড় ধরণের অভিযান চালিয়েছে তুরস্ক সরকার। বিরোধী রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং বিনোদন জগতের ব্যক্তিত্বরা ছিল সেইসব অভিযানের লক্ষ্যবস্তু। তারই ধারাবাহিকতায় ইমামোগলু এবং অন্যদের গ্রেপ্তার করা হলো।

আগামীতে এমন অভিযানের অংশ হিসেবে আরও অনেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হবে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। ভয় দেখাতেই তাদের আটক করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অবশ্য গ্রেপ্তারের জন্য এরদোয়ানকে দায়ী করার সমালোচনা করেছে বিচার মন্ত্রণালয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়েছে তারা।

গত বছর দ্বিতীয় মেয়াদে ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন একরেম ইমামোগলু। সেই স্থানীয় নির্বাচনে ইস্তাম্বুল এবং আঙ্কারায় জয়ী হয় তার দল সিএইচপি।

এরদোয়ান ক্ষমতায় আসার পর ওই নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো তার দল সারা দেশে ব্যালট বাক্সের হিসাব-নিকাশে পরাজিত হয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে এরদোয়ানের জন্যও ধাক্কা ছিল এটি। তার রাজনৈতিক বেড়ে ওঠা বিশেষ করে ক্ষমতায় আসার পথে একসময় ইস্তাম্বুলের মেয়রও ছিলেন তিনি।

২২ বছর ধরে তুরস্কের ক্ষমতার শীর্ষে আছেন এরদোয়ান। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি উভয় পদেই দায়িত্ব পালন করেছেন এরদোয়ান।

মেয়াদের বাধ্যবাধকতার কারণে, সংবিধান পরিবর্তন না করলে তিনি ২০২৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। অন্যদিকে, আগামী রবিবার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রার্থী নির্বাচন করবেন সিএইচপির ১৫ লাখ সদস্য। যেখানে, ইমামোগলুই একমাত্র প্রার্থী।

এ ছাড়াও দলটি একটি প্রতীকী নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। তুরস্কের বিভিন্ন জেলায় ব্যালট বাক্স রাখার পরিকল্পনা করেছে তারা। আটক মেয়রের প্রতি সমর্থন জানাতে ওই ব্যালট বাক্সগুলোতে নাগরিকদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

সূত্র : বিবিসি

মন্তব্য

ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ইলন মাস্কের এক্সের মামলা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ইলন মাস্কের এক্সের মামলা
সংগৃহীত ছবি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কন্টেন্ট অপসারণ করতে বেআইনি আদেশের অভিযোগে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্ম এক্স। মুম্বাই থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।

বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত ভারত বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে একটি, যারা সরকারিভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কন্টেন্ট অপসারণের জন্য সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অনুরোধ জানায়।

মামলাটি ভারত সরকারের সেন্সরশিপ ক্ষমতার বিরুদ্ধে এক্সের সর্বশেষ চ্যালেঞ্জ।

এমন সময়ে এই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, যখন ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্টারলিংক ও টেসলা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতে প্রবেশের প্রস্ততি নিচ্ছে।

মামলাটি ভারতের তথ্য প্রযুক্তি আইনের একটি বিধানকে কেন্দ্র করা হয়েছে, যার অপব্যবহার করে সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কন্টেন্ট ব্লক করার আদেশ দিয়ে থাকে।

আইনি সংবাদ সম্পর্কিত ভারতীয় ওয়েবসাইট ‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ‘এক্সের মতে এই বিধানটি তথ্য ব্লক করার ক্ষেত্রে একটি বেআইনি সমান্তরাল কৌশল হিসেবে অপব্যবহার করা হচ্ছে।’

এই সপ্তাহের শুরুতে মামলাটির সংক্ষিপ্ত শুনানিতে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।

আগামী ২৭ মার্চ দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের একটি আদালতে এই মামলার শুনানি হবে।

ভারতে কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আইনি লড়াইয়ে মাস্কের এই প্ল্যাটফর্মটি নতুন নয়। ২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমালোচনাকারী টুইট ও অ্যাকাউন্টগুলো অপসারণের আদেশকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করে টুইটার (এক্স-এর আগের নাম)। তখন ভারতীয় আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে প্ল্যাটফর্মটিকে ৬১ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা করে।

প্রায় এক বছর পর এক্স জানায়, নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট ও পোস্টগুলোতে সরকারের ব্লক করার আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট আপিল বিচারাধীন রয়েছে।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানিটি এক পোস্টে বলেছিল, ‘আমাদের অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভারত সরকারের ব্লকিং আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট আপিল এখনো বিচারাধীন রয়েছে। আমরা আমাদের নীতি অনুসারে প্রভাবিত ব্যবহারকারীদের এই পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে নোটিশও দিয়েছি।’

পোস্টে আরো বলা হয়, আইনি বিধিনিষেধের কারণে আমরা নির্বাহী আদেশগুলো প্রকাশ করতে পারছি না। তবে আমরা বিশ্বাস করি, স্বচ্ছতার জন্য সেগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করা অপরিহার্য।

না প্রকাশ করলে জবাবদিহিতার অভাব ও স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে পরিচালিত করতে পারে।’

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ