জাতিসংঘ জানিয়েছে, বুধবার গাজায় তাদের একটি কম্পাউন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনায় তাদের এক কর্মী নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এই ঘটনার সঠিক পরিস্থিতি এখনো স্পষ্ট নয়। পাশাপাশি গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি ইসরায়েলের হামলার ফলে ঘটেছে এবং পাঁচজন গুরুতর আহত বিদেশি কর্মী হাসপাতালে পৌঁছেছেন। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দেইর আল-বালাহতে জাতিসংঘ কম্পাউন্ডে হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করেছে।
এর আগে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল গাজায় লড়াই ফের শুরুর ঘোষণা দেয় এবং একের পর এক হামলায় ৪০০ জনের বেশি নিহত হয় বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, তারা ‘পূর্ণ শক্তিতে লড়াই ফের শুরু করেছে।’
প্রাথমিকভাবে জাতিসংঘ জানিয়েছিল, তাদের দুজন কর্মী নিহত হয়েছেন। তবে পরে তারা স্পষ্ট করে জানায়, দ্বিতীয় ব্যক্তি জাতিসংঘের কর্মী ছিলেন না।
জাতিসংঘের প্রকল্প সেবা অফিস (ইউএনওপিএস) জানায়, ‘নিরিবিলি’ এলাকায় অবস্থিত ওই ভবনে ‘বিস্ফোরক ফেলা বা ছোড়া হয়েছিল’। এই ঘটনায় ব্যবহৃত গোলাবারুদের ধরন বা প্রকৃতি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইউএনওপিএসের নির্বাহী পরিচালক জর্জ মোরেইরা দা সিলভা এটি ‘দুর্ঘটনা নয়’ উল্লেখ করে বলেন, ‘জাতিসংঘের কর্মী ও তাদের স্থাপনা সব পক্ষের জন্য সুরক্ষিত থাকা উচিত।’
বিবিসির যাচাই করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আহত ব্যক্তিরা একটি অ্যাম্বুল্যান্স ও জাতিসংঘের গাড়িতে করে হাসপাতালে যাচ্ছেন, যাদের মধ্যে দুজন জাতিসংঘের নীল রঙের প্রতিরক্ষামূলক জ্যাকেট পরিহিত ছিলেন।
আরো পড়ুন
জেরুজালেমে নেতানিয়াহুবিরোধী বিশাল বিক্ষোভ
এদিকে ইসরায়েল গাজায় লড়াই ফের শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর রাতভর বিমান হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, আল-মাওয়াসি মানবিক এলাকায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় একটি তাঁবুতে দুই বেসামরিক ব্যক্তি নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছে। সূত্র হিসেবে তারা রেড ক্রিসেন্টের চিকিৎসকদের উদ্ধৃত করেছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা হামাসের একটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে, যেখান থেকে ইসরায়েলের দিকে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। হামাস নিয়ন্ত্রিত নৌযানগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবারের তুলনায় বোমাবর্ষণের মাত্রা কিছুটা কম হলেও ইসরায়েলের নতুন হামলা অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা ও জরুরি ত্রাণ বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল টম ফ্লেচার মঙ্গলবারের হামলা সম্পর্কে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের মাত্রা এখন সম্পূর্ণ মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।’
ওয়াফা আরো জানায়, খান ইউনিসের উত্তরে রাতভর বিমান হামলায় এক নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছে, আর গাজা সিটিতে অন্য এক হামলায় চারজন নিহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৩৬ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ১৮৩ জন শিশু।
১৯ জানুয়ারি একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি-বন্দি বিনিময় চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর মঙ্গলবারের হামলাই ছিল সবচেয়ে বড় আক্রমণ। তবে ইসরায়েল ও হামাস এই চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে যেতে ব্যর্থ হয়। চুক্তিতে তিনটি ধাপ ছিল, যার দ্বিতীয় ধাপে নিয়ে আলোচনা ছয় সপ্তাহ আগে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। প্রস্তাবিত দ্বিতীয় ধাপে ইসরায়েলকে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা ছিল, তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ধাপের সময়সীমা বাড়ানোর ওপর জোর দেয়, যাতে আরো ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তির বিনিময়ে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা যায়।
নেতানিয়াহু যুদ্ধ ফের শুরুর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য হলো ‘জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা ও হামাসকে নির্মূল করা’। তবে গাজায় আটক জিম্মিদের স্বজনরা এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে বলেছে, এতে সরকার তাদের প্রিয়জনদের ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ইতিমধ্যে হাজারো ইসরায়েলি জেরুজালেমে বিক্ষোভে যোগ দিয়ে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে দুর্বল করা ও গাজায় যুদ্ধে ফের জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ তুলেছে, যা গৃহবন্দিদের পরোয়া না করেই চালানো হচ্ছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাস এখনো ৫৯ জন জিম্মিকে আটকে রেখেছে, যার মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।