যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প-পুতিনের প্রায় দুই ঘণ্টা ফোনালাপ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প-পুতিনের প্রায় দুই ঘণ্টা ফোনালাপ
ফাইল ছবি

রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধের উদ্দেশে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিন বছর আগে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাত ৮টার (বাংলাদেশ সময়) দিকে তারা ফোনে কথা বলা শুরু করেন। এই দুই নেতার মধ্যে টানা দুই ঘণ্টা আলাপ হয়।

 

সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ট্রাম্প ও পুতিন প্রায় দুই ঘণ্টা কথা বলেন। একটি সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের এ ফোনালাপের উদ্দেশ্য ছিল, পুতিনকে ৩০ দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজি করানো। যার মধ্যে আছে রুশ বাহিনীর দখল করা ইউক্রেনের বৃহৎ অঞ্চল।

চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় ইউক্রেন।

এরপর একই প্রস্তাব রাশিয়াকেও দেয় মার্কিনিরা। যদিও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এখনো এতে পুরোপুরি রাজি হননি। তবে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি কথা বললে পুতিন হয়তো যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে পারেন।

৩০ দিনের ওই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পর পুতিন গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারা যুদ্ধবিরতিতে রাজি।

তবে এই যুদ্ধবিরতিটি হতে হবে মূল সমস্যার ওপর। যেটির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে থাকা দ্বন্দ্ব নিরসন হবে। এ ছাড়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটির বিস্তারিত জানতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ট্রাম্প এরপর রাশিয়াকে ইউক্রেনের ভূখণ্ড দিয়ে দেওয়া এবং বিখ্যাত জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নিয়ন্ত্রণ দেওয়ার ইঙ্গিত দেন।

রাশিয়া জানিয়েছে, তাদের স্বার্থ রক্ষা হলেই কেবল তারা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবে।

তিন বছরের যুদ্ধে ইউক্রনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ অংশ দখল করেছে রাশিয়া। যেগুলোকে তারা নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে।

হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ডান স্কাভিনো পরবর্তীতে এক্সে আরেকটি পোস্ট করেন, সেখানে তিনি লেখেন ‘আলোচনা চলছে’। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এই ফোনালাপের ব্যাপারে খুব বেশি তথ্য জানা যাচ্ছে না। তবে ডান স্কাভিনোর পোস্টের মাধ্যমে এটি স্পষ্ট হয়েছে, ট্রাম্প ও পুতিন ৯০ মিনিটের বেশি সময় ধরে কথা বলছেন। এর কিছুক্ষণ পরই জানা যায় তাদের ফোনালাপ শেষ হয়েছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় জাতিসংঘের কর্মীরা হতাহত

বিবিসি
বিবিসি
শেয়ার
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় জাতিসংঘের কর্মীরা হতাহত
বিবিসির যাচাই করা ভিডিওতে দেখা যায়, আহতরা একটি অ্যাম্বুল্যান্স ও জাতিসংঘের গাড়িতে করে হাসপাতালে যাচ্ছেন, যাদের মধ্যে দুজন জাতিসংঘের নীল রঙের প্রতিরক্ষামূলক জ্যাকেট পরিহিত ছিলেন।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, বুধবার গাজায় তাদের একটি কম্পাউন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনায় তাদের এক কর্মী নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এই ঘটনার সঠিক পরিস্থিতি এখনো স্পষ্ট নয়। পাশাপাশি গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি ইসরায়েলের হামলার ফলে ঘটেছে এবং পাঁচজন গুরুতর আহত বিদেশি কর্মী হাসপাতালে পৌঁছেছেন। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দেইর আল-বালাহতে জাতিসংঘ কম্পাউন্ডে হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করেছে।

এর আগে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল গাজায় লড়াই ফের শুরুর ঘোষণা দেয় এবং একের পর এক হামলায় ৪০০ জনের বেশি নিহত হয় বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, তারা ‘পূর্ণ শক্তিতে লড়াই ফের শুরু করেছে।’

প্রাথমিকভাবে জাতিসংঘ জানিয়েছিল, তাদের দুজন কর্মী নিহত হয়েছেন। তবে পরে তারা স্পষ্ট করে জানায়, দ্বিতীয় ব্যক্তি জাতিসংঘের কর্মী ছিলেন না।

জাতিসংঘের প্রকল্প সেবা অফিস (ইউএনওপিএস) জানায়, ‘নিরিবিলি’ এলাকায় অবস্থিত ওই ভবনে ‘বিস্ফোরক ফেলা বা ছোড়া হয়েছিল’। এই ঘটনায় ব্যবহৃত গোলাবারুদের ধরন বা প্রকৃতি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ইউএনওপিএসের নির্বাহী পরিচালক জর্জ মোরেইরা দা সিলভা এটি ‘দুর্ঘটনা নয়’ উল্লেখ করে বলেন, ‘জাতিসংঘের কর্মী ও তাদের স্থাপনা সব পক্ষের জন্য সুরক্ষিত থাকা উচিত।’

বিবিসির যাচাই করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আহত ব্যক্তিরা একটি অ্যাম্বুল্যান্স ও জাতিসংঘের গাড়িতে করে হাসপাতালে যাচ্ছেন, যাদের মধ্যে দুজন জাতিসংঘের নীল রঙের প্রতিরক্ষামূলক জ্যাকেট পরিহিত ছিলেন।

আরো পড়ুন
জেরুজালেমে নেতানিয়াহুবিরোধী বিশাল বিক্ষোভ

জেরুজালেমে নেতানিয়াহুবিরোধী বিশাল বিক্ষোভ

 

এদিকে ইসরায়েল গাজায় লড়াই ফের শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর রাতভর বিমান হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, আল-মাওয়াসি মানবিক এলাকায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় একটি তাঁবুতে দুই বেসামরিক ব্যক্তি নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছে। সূত্র হিসেবে তারা রেড ক্রিসেন্টের চিকিৎসকদের উদ্ধৃত করেছে।

অন্যদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা হামাসের একটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে, যেখান থেকে ইসরায়েলের দিকে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। হামাস নিয়ন্ত্রিত নৌযানগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবারের তুলনায় বোমাবর্ষণের মাত্রা কিছুটা কম হলেও ইসরায়েলের নতুন হামলা অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা ও জরুরি ত্রাণ বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল টম ফ্লেচার মঙ্গলবারের হামলা সম্পর্কে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের মাত্রা এখন সম্পূর্ণ মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।’

ওয়াফা আরো জানায়, খান ইউনিসের উত্তরে রাতভর বিমান হামলায় এক নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছে, আর গাজা সিটিতে অন্য এক হামলায় চারজন নিহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৩৬ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ১৮৩ জন শিশু।

১৯ জানুয়ারি একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি-বন্দি বিনিময় চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর মঙ্গলবারের হামলাই ছিল সবচেয়ে বড় আক্রমণ। তবে ইসরায়েল ও হামাস এই চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে যেতে ব্যর্থ হয়। চুক্তিতে তিনটি ধাপ ছিল, যার দ্বিতীয় ধাপে নিয়ে আলোচনা ছয় সপ্তাহ আগে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। প্রস্তাবিত দ্বিতীয় ধাপে ইসরায়েলকে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা ছিল, তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ধাপের সময়সীমা বাড়ানোর ওপর জোর দেয়, যাতে আরো ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তির বিনিময়ে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা যায়।

নেতানিয়াহু যুদ্ধ ফের শুরুর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য হলো ‘জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা ও হামাসকে নির্মূল করা’। তবে গাজায় আটক জিম্মিদের স্বজনরা এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে বলেছে, এতে সরকার তাদের প্রিয়জনদের ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ইতিমধ্যে হাজারো ইসরায়েলি জেরুজালেমে বিক্ষোভে যোগ দিয়ে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে দুর্বল করা ও গাজায় যুদ্ধে ফের জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ তুলেছে, যা গৃহবন্দিদের পরোয়া না করেই চালানো হচ্ছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাস এখনো ৫৯ জন জিম্মিকে আটকে রেখেছে, যার মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মন্তব্য

জেরুজালেমে নেতানিয়াহুবিরোধী বিশাল বিক্ষোভ

    গণতন্ত্র ধ্বংস ও গাজায় হামলার বিরুদ্ধে স্লোগান
অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
জেরুজালেমে নেতানিয়াহুবিরোধী বিশাল বিক্ষোভ
১৯ মার্চ জেরুজালেমে জাতীয় পতাকা হাতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে ইসরায়েলিরা। ছবি : এএফপি

হাজারো বিক্ষোভকারী বুধবার জেরুজালেমে সমবেত হয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। তারা অভিযোগ করে, তিনি গণতন্ত্র দুর্বল করার পাশাপাশি গাজায় হামলা ফের শুরু করেছেন, যা সেখানে আটক জিম্মিদের জীবনের তোয়াক্কা না করেই করা হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টের কাছে জড়ো হয়ে ‘তুমি নেতা, তাই দায় তোমার’ এবং ‘তোমার হাতে রক্ত’—এমন স্লোগান দেয়। এটি ছিল মাসখানেকের মধ্যে জেরুজালেমে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ।

জেরুজালেমে পার্লামেন্টের বাইরে আয়োজিত এই বিক্ষোভে গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের স্বজনরাও যোগ দেয়।

বিক্ষোভের আয়োজন করে নেতানিয়াহুবিরোধী বিরোধী দলীয় গোষ্ঠীগুলো, যারা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্তের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। নেতানিয়াহুর ওই ঘোষণার ফলে দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার হুমকি দেখা দেয়। এর মধ্যেই মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক হামলা চালায়, যা জানুয়ারি থেকে চলা নাজুক যুদ্ধবিরতির পর সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল।

 

তেল আবিব থেকে আসা ৬৮ বছর বয়সী জেভ বেরার বলেন, ‘আমরা আশা করি, ইসরায়েলের সব মানুষ এই আন্দোলনে যোগ দেবে। আমরা থামব না, যতক্ষণ না গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত হচ্ছে।’

১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থী রনি শ্যারন বলেন, ‘এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে, আমাদের আর দেশই থাকবে না—একটি গণতান্ত্রিক দেশ তো নয়ই, বরং একনায়কতন্ত্রে পরিণত হবে।’

বিক্ষোভকারীদের অনেকে ‘আমরা সবাই জিম্মি’ লেখা ব্যানার বহন করছিল।

গাজায় আটক জিম্মিদের স্বজনরা বলছে, হামলা আবার শুরু হওয়ার সিদ্ধান্ত তাদের প্রিয়জনদের বলিদান’ করার শামিল।  

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের নজিরবিহীন হামলার সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। ওই হামলার পর যুদ্ধের সূচনা হয়। এখনো ৫৮ জন গাজায় আটক রয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৪ জন মারা গেছে বলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে।  

জেরুজালেমে বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলছে, তিনি হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য ব্যবহার করছেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী এখন পর্যন্ত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর চালানো হামাসের হামলার বিষয়ে কোনো জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠনে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, আর রোনেন বারকে বরখাস্তের চেষ্টা ইসরায়েলে গভীর রাজনৈতিক সংকট ফের উসকে দিয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি নেতানিয়াহুর সরকার ইসরায়েলের অ্যাটর্নি জেনারেল ও সরকারি বিচারিক উপদেষ্টা গালি বাহারাভ-মিয়ারাকেও সরানোর উদ্যোগ নেয়। তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার দৃঢ় সমর্থক ছিলেন।

এর আগে ২০২৩ সালে একটি বিচারিক সংস্কার প্রকল্পের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা খর্বের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা দেশটিতে ব্যাপক প্রতিবাদ সৃষ্টি করেছিল। তবে ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর সেই আন্দোলন স্থগিত হয়ে যায়।

মদিন শহর থেকে যাওয়া ৫৫ বছর বয়সী ইয়ায়েল ব্যারন বলেন, ‘গত দুই বছর আমাদের জন্য এক দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে। আমরা যেন শেষ সময়ে এসে দাঁড়িয়েছি, সময় ফুরিয়ে আসছে দেশকে রক্ষার জন্য, আমাদের জন্য অক্সিজেন কমে আসছে, যেমন গণতন্ত্রও নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।’

সূত্র : এএফপি

মন্তব্য

নাগপুরে এখনো কারফিউ চলছে, আটক ৬৫

বিবিসি
বিবিসি
শেয়ার
নাগপুরে এখনো কারফিউ চলছে, আটক ৬৫
ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরে হিন্দু-মুসলিম সহিংসতার দুই দিন পর এখনো কারফিউ জারি রয়েছে। ছবি : বিবিসি

ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরে হিন্দু-মুসলিম সহিংসতার দুই দিন পর এখনো কারফিউ জারি রয়েছে। সহিংসতার অভিযোগে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬৫ জনকে। অন্যদিকে যে শহরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ইতিহাস নেই, সেখানে কিভাবে এ রকম একটা ঘটনা ঘটে গেল, সেটাই ভেবে পাচ্ছে না উভয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ।

সংবাদ সংস্থা এএনআই ও পিটিআই জানিয়েছে, নাগপুর শহরের ১০টি থানা এলাকায় এখনো কারফিউ জারি করে রেখেছে পুলিশ।

অন্যদিকে সোমবার রাত থেকে যে সহিংসতা শুরু হয়েছিল সেখানে, তার প্রেক্ষিতে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি এফআইআর করা হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, অস্ত্র আইন, জনসম্পত্তি ক্ষতিসাধন রোধ আইনসহ বিভিন্ন আইনের ধারায় ওই এফআইআর করা হয়েছে। এফআইআরে ৫১ জনের নাম করে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নাবালক আছে বলেও জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই।
তারা আরো জানিয়েছে, অভিযুক্তরা মূলত শহরের জাফরনগর, তাজবাগ, মোমিনপুরা ও ভালাদাপুরা অঞ্চলের বাসিন্দা।

পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, মূল চক্রান্তকারীকে হিসেবে ফাহিম খান নামের এক স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার উসকানিমূলক ভাষণের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। তার ভিত্তিতেই বুধবার দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে।

নারী পুলিশের ওপরে হামলা
এদিকে পুলিশের করা এফআইআরের উদ্ধৃতি দিয়ে এএনআই জানিয়েছে, ‘পুলিশ সদস্যদের দিকে পাথর আর পেট্রল বোমা ছোড়ার পরই বিক্ষোভটি সহিংস হয়ে ওঠে।

পুলিশ বারবার সতর্ক করলেও ওই জমায়েত থেকে সহিংসতা চালানো হতে থাকে, ফলে পুলিশ সদস্য ও বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়ে পড়ে।’

এ ছাড়া অন্ধকারের সুযোগ নারী পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় এবং তাদের গায়ে হাত দেওয়া হয়। অশালীন অঙ্গভঙ্গিও করা হয় নারী পুলিশ সদস্য-কর্মকর্তাদের কয়েকজনের উদ্দেশে—এমনটাই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই।

নাগপুর শহরে যা দেখল বিবিসি
সোমবার রাতের সহিংসতার পর কেমন আছে শহর—তা দেখতে নাগপুরের নানা এলাকায় ঘুরেছেন বিবিসি সংবাদদাতা ভাগ্যশ্রী রাউত। তিনি জানিয়েছেন, যেসব এলাকায় সহিংসতা হয়েছিল, সেখানে এখন পরিস্থিতি শান্ত।

তবে দোকানপাট বন্ধ। চারদিকেই পুলিশের পাহারা আছে। তবে সহিংসতার চিহ্ন চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে।

কোনো দোকানের জানালা ভেঙে ঝুলছে। আবার কোথাও পাথর আর ইটের টুকরা জড়ো করে রাখা আছে। যেসব গাড়ি বা বাইক আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে জনতা, সেসব গাড়ির কঙ্কাল পড়ে আছে রাস্তার পাশে। এর মধ্যে বসেই শহরের কয়েকজন সাধারণ মানুষ বিবিসিকে বলেছে, নাগপুর শহর আগে কখনো এ রকম সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দেখেনি।

কী বলছে সাধারণ মানুষ?
ভাগ্যশ্রী রাউত কথা বলেছেন হিন্দু ও মুসলিম—দুই সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে। মুসলমানপ্রধান একটি এলাকার বাসিন্দা পেশায় উকিল রাকেশ দাভরিয়া বলছিলেন, ‘এই শহরের জন্য এটা আশ্চর্যজনক দৃশ্য, কিছু বুঝতেই পারছি না। দোকান খোলা আছে অথচ খদ্দের নেই। সবাই কি সেদিন দেশের আইনকানুন ভুলে গিয়েছিল? ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের সম্পর্ক ভুলে গেল সবাই?’

তিনি আরো বলেন, ‘৪০০ বছর আগে এক সম্রাট না হয় কিছু একটা করেছিলেন। কিন্তু আমরা তো থাকি বর্তমানে। আমার মুসলমানদের সঙ্গে ব্যবসা করি। আমাদের বাচ্চারা ওদের বাচ্চাদের সঙ্গে পড়াশোনা করে। তো তাদের ক্ষতি করে তো আমরা নিজেদেরই ক্ষতি করছি।’

আবার চিটনিস পার্কের কাছে দোকান মালিক আব্দুল খালেক তো কথা বলতে বলতে কেঁদেই ফেললেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমি তো আমার জীবনেও এ রকম কোনো ঘটনা দেখিনি। আমাদের শহরে তো এ রকম ঘটনা হয় না। দেশের অন্যান্য শহরে যা-ই হোক না কেন এখানে কোনো প্রভাব পড়ে না কখনো। সেদিন রাতের সহিংসতার পর থেকে আমার দোকান বন্ধ। রোজা রাখার পরে সন্ধ্যায় মসজিদে গিয়েছিলাম। ফেরার সময়ে দেখি চারদিকে সহিংসতা শুরু হয়ে গেছে।’

কুণ্ডা যাদব নামের এক বাসিন্দা বিবিসিকে জানান, সহিংসতার সময়ে বাড়িতে শুধু নারীরাই ছিলেন। তাদের বাড়িতে পাথর ছোড়া হয়েছে, কাচের বোতল ছোড়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম ওই সময়টায়।’

মন্তব্য

শান্তিচুক্তির পরও উত্তপ্ত মণিপুর

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
শান্তিচুক্তির পরও উত্তপ্ত মণিপুর
ভারতের মণিপুরে সেনাবাহিনীর টহল। ছবি : সংগৃহীত

মার ও জোমি আদিবাসীদের সংঘর্ষে আরো একবার উত্তপ্ত হলো ভারতের মণিপুর রাজ্য। চুরাচান্দপুর জেলায় চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই মারদের এক নেতার ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে অশান্তি শুরু হয়। সেই আবহে মঙ্গলবার রাতে ফের দুই আদিবাসী গোষ্ঠীর সংঘর্ষ বাধে জেলার বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, সোমবার এলাকায় কারফিউ জারি হওয়ার পরই বৈঠকে বসেছিলেন মার ও জোমিদের প্রতিনিধিরা। দীর্ঘ বৈঠকের পর দুই পক্ষে শান্তিচুক্তিও হয়। কিন্তু তার ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই ফের সংঘর্ষ বাধে।

স্থানীয় সূত্রে জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত থেকে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে চুরাচান্দপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা।

ছোড়া হয় পাথর, ভাঙচুর করা হয় বহু যানবাহন। কোথাও কোথাও গোলাগুলিও চলেছে। তবে ওই ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।

গত রবিবার সন্ধ্যায় চুরাচান্দপুরের জেনহাঙে ভিকে মন্টেসরি স্কুল চত্বরের ভেতর মারদের সংগঠন মার ইনপুইয়ের সাধারণ সম্পাদক রিচার্ড মারের ওপর হামলা চালায় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতিরা।

সেই হামলার পর থেকেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন মাররা। গোটা জেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। 
অভিযোগ, রিচার্ডের গাড়িতে ধাক্কা মেরেছিল আরেকটি গাড়ি। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিবাদ শুরু হয়। বিবাদ বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে রিচার্ডের ওপর হামলা চালানো হয়।

রিচার্ডের ওপর হামলার খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রতিবাদে রাস্তায় নামে মাররা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবার সকাল থেকে ওই জেলায় ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার (বিএনএসএস) ১৬৩ ধারা জারি করা হয়। চুরাচান্দপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক জানিয়ে দেন, নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকাকালীন অনুমতি ছাড়া কোনো মিছিল, সমাবেশের আয়োজন করা যাবে না। কেউ লাঠি, পাথর বা কোনো রকমের অস্ত্রও বহন করতে পারবে না।

২০২৩ সাল থেকেই কুকি ও মেইতেইদের দ্বন্দ্বে অশান্ত মণিপুর। রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পর পরিস্থিতি খানিক নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো বিক্ষিপ্ত অশান্তি চলছে রাজ্যজুড়ে। চলতি মাসের শুরুতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ‘অবাধ চলাচল’ নির্দেশের প্রতিবাদে মণিপুরের কুকি অধ্যুষিত এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। গত ১৩ মার্চ ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হলেও কুকিরা জানিয়ে দেয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ তারা মানবে না৷ কুকিদের দাবিদাওয়া পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা ‘অবাধ চলাচলের’ বিরোধিতা করে যাবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ