পশ্চিমা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের একটি নতুন চালান ইউক্রেনে পৌঁছেছে। গতকাল ১৯ মার্চ সাংবাদিকদের কাছে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি এফ-১৬ এসেছে, তবে কতগুলো এফ-১৬ যুদ্ধবিমান তারা পেয়েছেন তা বলেননি। এর আগে রাশিয়ান মিডিয়া দাবি করেছিল, সুমি ওব্লাস্টে একটি এফ-১৬ বিমান ভূপাতিত করা হয়েছে, এই দাবি ইউক্রেনের বিমান বাহিনী অস্বীকার করেছে।
জেলেনস্কি এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘অতিরিক্ত এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ইউক্রেনে পৌঁছেছে। রাশিয়ানরা মিথ্যা বলেছে যে, গুলি করে যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। তারা কিছুই গুলি করে ভূপাতিত করেনি এবং সুখবর হলো, বেশ কয়েকটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ইউক্রেনে পৌঁছেছে।’
আরো পড়ুন
নাইজারে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষে ১৩ সেনা নিহত
এদিকে জেলেনস্কি স্পষ্ট করেননি কোথা থেকে যুদ্ধবিমানগুলো সরবরাহ করা হয়েছে।
রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেন এফ-১৬-এর জন্য অনুরোধ করে আসছে, বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের অনুমোদনের পর প্রথম জেটগুলো ২০২৪ সালের আগস্টে এসে পৌঁছেছিল। সেগুলো ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস দিয়েছিল।
২০২৫ সালে নেদারল্যান্ডস আরো এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ইউক্রেনকে দেয়। তারা মোট ২৪টি যুদ্ধবিমান, তার যন্ত্রাংশ, ক্ষেপণাস্ত্র দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম ও নরওয়ে ৬০টিরও বেশি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিতে রাজি হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও রোমানিয়া ইউক্রেনের পাইলটদের এফ-১৬-র জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর ভলোদিমির জেলেনস্কি জানালেন, রাশিয়ার সঙ্গে আংশিক যুদ্ধবিরতিতে তিনি রাজি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ওয়াশিংটন ও কিয়েভের মধ্যে আংশিক যুদ্ধবিরতি নিয়ে যে মতৈক্য হয়েছে তার ফলে দ্রুত বিদ্যুৎকেন্দ্র, বন্দর, রেলের ওপর হামলা বন্ধ হবে।
তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা যতক্ষণ রাজি না হচ্ছি, যতক্ষণ আংশিক যুদ্ধবিরতি নিয়ে নথি তৈরি না হচ্ছে, ততক্ষণ সবকিছুই উড়তে থাকবে(ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র)।
’
জেলেনস্কি যা বলেছেন
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আমার খুবই ইতিবাচক, খোলাখুলি ও অর্থপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের অধীনে এই বছরের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ফেরানো সম্ভব হবে।’
জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি ও ট্রাম্প ঝাপোরিঝিয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র মার্কিন তত্ত্বাবধানে রাখা নিয়ে কথা বলেছেন। বর্তমানে রাশিয়া এটি অধিকার করে আছে। তিনি জানিয়েছেন, যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে থাকা ইউরোপের এই সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হতে দুই বছর সময় লাগবে। ইউরোপ ও ইউক্রেনের জন্য এই বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা খুবই জরুরি।
সাংবাদিকদের জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, রাশিয়ার পশ্চিম কুরস্ক অঞ্চলে যতদিন ইউক্রেনের সেনা থাকবে, ততদিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুাতন পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবেন না।
ট্রাম্প কি মস্কোর দাবি মেনে নেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন, এই প্রশ্নের জবাবে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘সেরকম কিছুই হয়নি। আপনারা জানেন আমি খোলাখুলি কথা বলি। সেরকম কিছু হলে আমি নিজে থেকেই বলতাম।’
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ‘ঘণ্টাখানেক সময় ধরে জেলেনস্কির সঙ্গে আমার খুব ভালোভাবে কথা হয়েছে। প্রসিডেন্ট পুটিনের সঙ্গে আমার যে আলোচনা হয়েছিল, তার ভিত্তিতে কথা হয়েছে। ইউক্রেন তাদের চাহিদা ও অনুরোধের কথা জানিয়েছে।’
ট্রাম্প বলেছেন, ‘নেতারা ঠিক পথেই আছেন। আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়ালটজকে বলব, যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তার বিবরণ দিতে।’
ট্রাম্প জানিয়েছেন, আলোচনার সময় তিনি প্রস্তাব দেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্র নিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলে তার সুরক্ষা নিশ্চিত থাকবে। প্রস্তাবিত মার্কিন-ইউক্রেন খনিজ চুক্তি নিয়েও কথা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লিভিট বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আংশিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি।
সূত্র : ডয়চে ভেলে, দ্য কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট