কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুই প্রার্থীর লড়াই বেশ জমে ওঠেছে। মোস্তাক আহমদ চৌধুরী পরিষদের বিদায়ী প্রশাসক এবং এ এইচ সালাউদ্দিন মাহমুদ এরশাদ সরকারের আমলের চেয়ারম্যান ছিলেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাকের প্রতীক আনারস এবং জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) সমর্থিত সালাউদ্দিনের প্রতীক মোটরসাইকেল। আগামীকাল বুধবার ভোটগ্রহণ।
মোস্তাক আহমদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা এবং এ এইচ সালাউদ্দিন মাহমুদ জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) নেতা। দুজনের মধ্যে বেশ কিছু মিল রয়েছে। দুজনই মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। কারো নামে নেই কোনো ফৌজদারি মামলা।
দুই প্রার্থীই ব্যাংকের কাছে ঋণী। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় তাঁরা এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী তিনবার সংসদ সদস্য ছিলেন। অন্যদিকে এরশাদের আমলে কক্সবাজার জেলার সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) সমর্থিত প্রার্থী সালাহউদ্দিন মাহমুদ।
ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য। এছাড়া উপমন্ত্রীর পদমর্যাদায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছিলেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুই প্রার্থীই নির্বাচনী হলফনামায় সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। মোস্তাক আহমদ চৌধুরী ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় এসএসসি পাস উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু এবারের হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি স্বশিক্ষিত।
দুজনই কৃষিখাত থেকে তাঁদের আয় দেখিয়েছেন। যা বর্তমান বাজারদরের চাইতে অনেক কম। মোস্তাক চৌধুরীর নামে আছে পাঁচ একর কৃষিজমি। তাঁর কৃষিখাত থেকে আয় মাত্র ৫৫ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, সালাহউদ্দিন মাহমুদের নামে পাঁচ একর এবং স্ত্রীর নামে ১০ একরসহ যৌথ মালিকানায় দুই একর মিলিয়ে মোট ১৭ একর (সাড়ে ৪২ কানি) কৃষিজমি আছে। তিনি সেই জমি বর্গা দিয়ে আয় করেন মাত্র ১৫ হাজার টাকা!
হলফনামায় মোস্তাক চৌধুরী উল্লেখ করেন, তাঁর স্ত্রীর কাছে ৩০ ভরি স্বর্ণ আছে। আর সালাহউদ্দিন মাহমুদের স্ত্রীর আছে ১০ ভরি। স্বর্ণের বাজারমূল্য কোনো প্রার্থীই উল্লেখ করেননি।
মোস্তাক চৌধুরীর নামে ব্যাংক হিসাবে জমা রয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকা! আর সালাহউদ্দিন মাহমুদের ব্যাংক হিসাবে আছে তিন লাখ টাকা। কৃষিজমি ছাড়া মোস্তাক চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য কোনো আয় নেই। কক্সবাজারের ঈদগাঁও, চৌফলদণ্ডি ও খুরুশকুল ইউনিয়ন এবং কক্সবাজার শহরজুড়ে বিপুল পরিমাণ ভূ-সম্পত্তির মালিক মোস্তাক চৌধুরী।
চৌফলদণ্ডির বিখ্যাত জমিদার খান বাহাদুর মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরীর একমাত্র নাতি খান বাহাদুর মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবে মাত্র ১০ হাজার টাকা জমা থাকা নিয়ে এলাকার মানুষ হতবাক।
অপরদিকে, সালাহউদ্দিন মাহমুদ ব্যবসা থেকেই বছরে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা আয় করেন। সালাহউদ্দিন মাহমুদ যাঁদের ওপর নির্ভরশীল (সাধারণত স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের নির্ভরশীল বলা হয়) তাঁরা বছরে চার লাখ টাকা আয় করেন। বিষয়টি তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেন। আর মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর ছেলে ও মেয়ে বিদেশে অবস্থান করলেও তিনি তাঁদের আয়ের বিষয়টি হলফনামায় এড়িয়ে গেছেন।
সালাউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমি জমিদার নই, ব্যবসায়ীও নই। কিছু কৃষিজমি ও মাছের খামার আছে। সেখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার। মাঝে মধ্যে খরচ কমিয়ে কিছু টাকা ব্যাংকে জমাই দুর্দিনের সম্বল হিসেবে।’
মোস্তাক চৌধুরী বলেন, ‘বাপ-দাদা জমিদার হলেও আমি জমিদার নই। মানুষ রাজনীতি করে সম্পদশালী হতে। আর আমি জমি বিক্রি করেই রাজনীতি করছি। জনগণই আমার সম্পদ।’
প্রসঙ্গত, আসন্ন নির্বাচনে জেলার ৭১ ইউনিয়ন, চার পৌরসভা ও আট উপজেলার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মোট ৯৯৯ জন ভোটার রয়েছেন। ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলা পরিষদের ১৫টি সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্যের মধ্যে তিনজন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্যের পাঁচটি আসনে একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ সদস্যের অপর ১২টির জন্য ৫১ জন এবং চারটি নারী আসনের জন্য ১৫ প্রার্থী লড়ছেন।