রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে গতকাল মঙ্গলবার সৌদি আরবের জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইউক্রেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিয়েভের জন্য নিরাপত্তা সহায়তা চালুর পাশাপাশি গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করবে যুক্তরাষ্ট্র।
বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, তাৎক্ষণিকভাবে ৩০ দিনের অন্তর্বর্তী যুদ্ধবিরতি কার্যকরের মার্কিন প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে ইউক্রেন, যার মেয়াদ রাশিয়া ও ইউক্রেনের পারস্পরিক সম্মতিতে বাড়ানো যাবে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র অবিলম্বে ইউক্রেনের ওপর থেকে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগির স্থগিতাদেশ তুলে নেবে এবং ইউক্রেনের জন্য পুনরায় নিরাপত্তা সহায়তা চালু করবে।
বৈঠক শেষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দিয়েছে এবং ইউক্রেন তা গ্রহণ করেছে। প্রস্তাবটি এখন রুশদের কাছে উপস্থাপন করা হবে এবং আশা করছি তারা সম্মত হবে। বল এখন রাশিয়ার কোর্টে।
’
ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ চুক্তি কেন স্বাক্ষরিত হয়নি, জানতে চাইলে রুবিও বলেন, খনিজ চুক্তি আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল না।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এবং ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমাকসহ দুই দেশের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নিয়েছেন। যদিও জেলেনস্কি বা রাশিয়ার কোনো প্রতিনিধি অংশ নেননি।
এদিকে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ায় সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা করেছে ইউক্রেন।
গতকাল মঙ্গলবার ভোরে মস্কো অঞ্চলে চালানো হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধে সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের বৈঠক শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে এই হামলা করা হয়।
গতকাল ভোরে রাজধানী মস্কোর উপকণ্ঠে বহুতল আবাসিক ভবনে ইউক্রেনীয় ড্রোন আঘাত হানে। এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দূরপাল্লার বিমান হামলা বন্ধের আহবান মেনে নিতে বাধ্য হবেন বলে মনে করছে কিয়েভ।
আবাসিক ভবনকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর নিন্দা জানিয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ দাবি করেন, ‘রুশ বাহিনী শুধু সামরিক অবকাঠামোতে আঘাত করেছে।
’ যদিও ইউক্রেনের বেসামরিক এলাকায় প্রায় প্রতিদিন রুশ হামলায় অনেক মানুষ হতাহত হচ্ছে।
রুশ সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ৩৪৩টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে এবং কিছু ড্রোন আবাসিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামোতে আছড়ে পড়েছে।
মস্কোর মেয়র সের্গেই সবিয়ানিন এটিকে মস্কোর ওপর সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা আখ্যা দিয়েছেন। ড্রোনগুলো মস্কোর আশপাশের এলাকায় আঘাত হেনেছে। মস্কোর দোমোদেদভো বিমানবন্দর ও রামেনস্কয়ে বিমানঘাঁটির পাশেও আছড়ে পড়ে কিছু ড্রোন।
রাশিয়ার বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে চারটি বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। মস্কো অঞ্চলের গভর্নর আন্দ্রেই ভোরোবিয়ভ বলেন, তিনজন নিহত হয়েছে, আহত বেশ কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি আছে।
ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী বলেছে, তারা মস্কোর একটি তেল শোধনাগার কেন্দ্রসহ বেশ কিছু কৌশলগত স্থানে হামলা চালিয়েছে। এটি বছরে এক কোটি ১০ লাখ টন তেল শোধন করে থাকে। এ ছাড়া অরলভের একটি তেল উৎপাদন কারাখানায় হামলা করা হয়েছে, যা সেন্ট পিটার্সবার্গের একটি সমুদ্রবন্দরে তেল সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হামলার বিষয়ে ইউক্রেনের আইন প্রণেতা ওলেক্সি গনচারেংকো বলেন, এই হামলার মধ্য দিয়ে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে রাশিয়ায় বড় ধরনের হামলা চালাতে সক্ষম ইউক্রেন।
অন্যদিকে পূর্ব ইউক্রেনের দোনেত্স্ক অঞ্চলে রাশিয়ার হামলায় শিশুসহ অন্তত ছয়জন ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছে। সূত্র : এএফপি, বিবিসি