মুড়ির টিন থেকে আল্লাহর কসম গেটলক

&lt;p&gt;ঢাকায় পাবলিক বাসের যাত্রা শুরু মুড়ির টিন দিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে এ অঞ্চলে মিত্রবাহিনীর ব্যবহৃত ট্রাক ও গাড়ি নিলামে বিক্রি হয়। ট্রাকগুলোর কাঠের বডিতে বাসের আদল দিয়ে তৈরি হয় নাকবোঁচা বাস। বাইরের দিকে কাঠের বডির ওপর মুড়ে দেওয়া হয় টিন। সেই থেকেই বাসটির নাম হয় মুড়ির টিন। আবার অনেকের মতে, মুড়ির মতো ভরাট হয়ে অধিক যাত্রী ওঠানোর কারণে নাম হয়েছে মুড়ির টিন&lt;/p&gt; &lt;p&gt; &lt;/p&gt; &lt;p&gt;নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ভর্তি হলাম তখন থাকতাম টঙ্গীতে। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে যাতায়াত করার চেষ্টা করতাম। কিন্তু প্রায়ই মিস হতো। তখন উঠতাম বলাকা সার্ভিসে। বলাকা সার্ভিসকে আমরা বলতাম মুড়ির টিন। বলাকায় একদিন আমার বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে করতে আসছি, বসে আছি ঠিক ড্রাইভারের পেছনের সিটে। প্রসঙ্গক্রমে আমরা বলাকাকে মুড়ির টিন বলেছি। তখন ড্রাইভার রীতিমতো রাগ করে আমাদের দিকে তাকালেন এবং যথেষ্ট ক্ষুব্ধতার সঙ্গে জানালেন, বলাকা মোটেই মুড়ির টিন নয়। যদি মুড়ির টিন দেখতে হয়, তাহলে আমাদের রামপুরা রুটে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। আমরা সত্যি সত্যিই এক সপ্তাহের মধ্যে গিয়ে উঠে পড়লাম সত্যিকার মুড়ির টিনে। অভিজ্ঞতা নেহাত মন্দ হলো না। তবে তখন উপভোগ করার বয়স, কাজেই মূলত উপভোগই করলাম। আর একটু রোমাঞ্চও হলো ঢাকার ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে। কেননা তত দিনে মুড়ির টিন যে ভবিষ্যতে থাকছে না, সেটা নিশ্চিত হয়ে গেছে।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;ঢাকায় পাবলিক বাসের যাত্রা শুরু মুড়ির টিন দিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে এ অঞ্চলে মিত্রবাহিনীর ব্যবহৃত ট্রাক ও গাড়ি নিলামে বিক্রি হয়। ট্রাকগুলোর কাঠের বডিতে বাসের আদল দিয়ে তৈরি হয় নাকবোঁচা বাস। বাইরের দিকে কাঠের বডির ওপর মুড়ে দেওয়া হয় টিন। সেই থেকেই বাসটির নাম হয় মুড়ির টিন। আবার অনেকের মতে, মুড়ির মতো ভরাট হয়ে অধিক যাত্রী ওঠানোর কারণে নাম হয়েছে মুড়ির টিন।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;শুরুতে সদরঘাট, নবাবপুর, ইসলামপুর, চকবাজার, গুলিস্তানের মধ্যে চলাচল করত মুড়ির টিন। পরে নারায়ণগঞ্জ, মিরপুর, ডেমরা, রামপুরা রুটে মুড়ির টিন বাস চলত। এ ছাড়া গুলিস্তান থেকে কালিয়াকৈর, নয়ারহাট, আরিচায়ও যাতায়াত করত। মুড়ির টিন বাস সত্তর ও আশির দশকে বেশি চলেছে। ঢাকায় ঘোড়া আর গরুর গাড়ি থাকলেও গণপরিবহন হিসেবে মুড়ির টিনই ছিল ভরসা। ইংল্যান্ড থেকে আমদানি করা হতো ইঞ্জিন। কাঠের বডি তৈরি করত স্থানীয় মিস্ত্রিরা। ভেতরে চারধারে বেঞ্চের মতো করে সিট বসানো হতো। ২০-২২ জন বসার সুযোগ পেত। ৫০ জনের বেশি যাত্রী দাঁড়িয়েই থাকত। স্টিলের জানালার পুরোটাই খোলা যেত বলে বাতাস চলাচলের সুযোগ ছিল বেশি। প্রথম দিকে হাতে হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে স্টার্ট দিতে হতো। পরে হ্যান্ডেলের পরিবর্তে চাবি সংযোজন করা হয়। গাড়ির গতি থাকত ১৫ থেকে ২৫ কিলোমিটার। স্টিয়ারিং ছিল শক্ত। পিতলের হর্ন চাপ দিয়ে বাজানো হতো।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;কন্ডাক্টরের কাঁধের একপাশে থাকত লম্বা ফিতাযুক্ত চামড়ার ব্যাগ। টাকা-পয়সা ও টিকিট রাখার জন্য আলাদা তিনটি পকেট ছিল তাতে। জগন্নাথ কলেজের (এখন বিশ্ববিদ্যালয়) পেছনের গেটে স্ট্যান্ড ছিল। সেখান থেকে ছেড়ে চিত্রামহল-নাজিরা বাজার-ফুলবাড়িয়া-গুলিস্তান-পল্টন হয়ে রামপুরা যেত। প্রতি ট্রিপে ২৫ মিনিট সময় বরাদ্দ ছিল। প্রতি মিনিট দেরির জন্য পাঁচ টাকা জরিমানা হতো। সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে সামনের নাক উঠে গিয়ে গাড়ি বড় হয়। সিটও বাড়ে। ২৫ বছরের পুরনো গাড়ির ফিটনেস বাতিল করা হলে আশির দশকের পর ঢাকা থেকে মুড়ির টিন প্রায় উঠে যায়। তবে মুড়ির টিনের পরবর্তী কাঠের তৈরি বডির গাড়ি ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত থাকে। তখন সর্বশেষ বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে এটি চলাচল করতে দেখা যায়।&lt;/p&gt; &lt;p&gt;কয়েক দিন আগেই ঢাকায় সিটিং সার্ভিস বন্ধ আবার খোলা নিয়ে যে হুজ্জতি চলল তাতে পুরনো পাবলিক বাস সার্ভিসের স্মৃতি মনে পড়ে গেল। একসময় সবাই লোকাল বাসেই যাতায়াত করত। তারপর এসব সিটিং, সিটিং গেটলক, গেটলক ইত্যাদি চালু হলো। যেকোনো সার্ভিস চালুর কয়েক দিন পর্যন্ত ভালোই চলত, তার পরই খুলত তার আসল চেহারা। তখন ভাড়াটা থাকত সিটিংয়ের আর চলত লোকালের মতো। সেই পরিস্থিতি এখনো আছে। এ কারণেই এই সার্ভিসের নাম জনগণ দিয়েছে চিটিং সার্ভিস। সর্বশেষ সিটিং সার্ভিস বন্ধের নামেও জনতার সঙ্গে আরেকবার চিটিংই করা হলো। শোনা যায়, পুরো ঘটনাই নাকি পূর্বপরিকল্পিত এবং মালিকদের সাজানো। মূলত শ্রমিকরা অতিরিক্ত যাত্রী তোলার ফলে যে আয় হয়, তা পুরোপুরি মালিকদের পকেটে যাচ্ছিল না। ফলে অফিস টাইমে যাত্রীরা বাসে উঠতে পারে না, তাদের অসুবিধা হয় ইত্যাদি দরদ দেখিয়ে তারাই প্রস্তাব করে সিটিং সার্ভিস বন্ধের। আবার তারাই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারও করায়। এর মাধ্যমে একদিকে শ্রমিকদের কাছ থেকে, অন্যদিকে যাত্রীদের কাছ থেকে অধিক আয়ের সুযোগ তৈরি হলো। এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি এ দেশের জনগণকে এতবার হতে হয়েছে যে তারা গেটলক বা সিটিং কোনো নামেই আর বিশ্বাস করে না। তাদের বিশ্বাস করানোর জন্যই সম্ভবত একসময় নাম দেওয়া হলো &lsquo;আল্লাহর কসম গেটলক&rsquo;। এদের প্রতি মানুষের অবিশ্বাস এত বেড়েছে যে আল্লাহর দোহাই পর্যন্ত তাদের দিতে হচ্ছে! আমাদের গণপরিবহনব্যবস্থা আসলে কতটা দুরবস্থার ভেতর আছে, তা এই দোহাই থেকেই স্পষ্ট। তাই জরুরি ভিত্তিতেই এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া জরুরি।&lt;/p&gt;

ঢাকার খোঁজে

মুড়ির টিন থেকে আল্লাহর কসম গেটলক

আবুল হাসান রুবেল

আবুল হাসান রুবেল

প্রাসঙ্গিক

সম্পর্কিত খবর

জবিতে বহিরাগত উপাচার্যদের জন্য ‘গেটলক’

গেটলক সিস্টেম চালু, বনানীর আগে বাস থামিয়ে যাত্রী তুললেই মামলা

লাইলাতুল কদরের আলামত

সর্বশেষ সংবাদ

বাবা হারালেন রাইমা সেন-রিয়া সেন

কক্সবাজারে আত্মগোপনে ছিলেন সাবেক বস্ত্রমন্ত্রীর এপিএস, শেষ রক্ষা হলো না

ভারতে পালানোর সময় গাজীপুরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র গ্রেপ্তার

হিজবুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত

মাওলানা সাদকে ছাড়া বিশ্ব ইজতেমা হবে না, হুঁশিয়ারি অনুসারীদের

দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভয়াবহ : অর্থ উপদেষ্টা

মায়ার বাড়িতে লুটপাট ও আগুনের ঘটনায় আটক ৬

ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে মাছ শিকারের অভিযোগ

আজকের নামাজের সময়সূচি, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

এবার চাকরিচ্যুত হলেন ইউনিয়ন ব্যাংকের ২৬২ জন কর্মকর্তা

প্রতি ওয়াক্ত নামাজের জন্য নতুন করে অজু করা জরুরি?

রকস্টার হয়ে সমুদ্রসৈকতে তৌসিফ

রাসুল (সা.) যেভাবে অন্যের ভুল সংশোধন করতেন

তিতুমীর কলেজে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন

আজ আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস

পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ গেল করিমন চালকের

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

মুসলিম সভ্যতায় হাম্মাম সংস্কৃতি

আদালতে কামরুলের ছেলে, ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা

ফার্মগেট নয়, ফারামগেট : সোহেল মণ্ডল

সব ধরনের অপকর্মে জড়িত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী কামরুল : ডিবি পুলিশ

চায়ের দেশে চমক দেখালেন মোহন রবিদাস

নিশো-তমার সঙ্গে যোগ দিলেন সুনেরাহ

রাজশাহীতে বৃক্ষপালনের নামে কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

বাংলাদেশের রাকিব এখন আমেরিকান স্কাউটসের কমিটি মেম্বার

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নামল ১৫.৬ ডিগ্রিতে

চীনে ফের ভিড়ের মধ্যে গাড়ি চালিয়ে দিলেন চালক

সব দিন তো এক যায় না, সামনে ভালো দিন আসবে

সঞ্জীবহীন ১৭ বছর

গাজায় প্রায় ১০০ ত্রাণবাহী ট্রাকের বহরে লুটপাট

সর্বাধিক পঠিত

সারজিস আলম সম্পর্কে সতর্কতা

১, ২ ও ৫ টাকার কয়েন নিয়ে নতুন নির্দেশনা

চাকরি ফিরে পেলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন ২ কর্মকর্তা

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ফিঞ্জাল’

জামিন পেয়ে রাতে ফিরলেন বাড়ি, সকালে খুন যুবলীগকর্মী

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বছর করে প্রজ্ঞাপন

মৃত্যু আমাদের ছুঁয়ে গেছে, এ যুদ্ধ হবেই : মাহফুজ আলম

শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবেশের সব নিরাপত্তা পাস স্থগিত

‘১০ বছর ধরে সংস্কার চলবে, চার বছরের মধ্যে নির্বাচন অসম্ভব’

পুলিশ ভেরিফিকেশনে থাকছে না রাজনৈতিক পরিচয়

মহাখালীতে শিক্ষার্থীদের মিছিল থেকে ট্রেনে ঢিল, শিশুসহ আহত অনেকে

শ্রমিকদের দেওয়া আগুনে পুড়ছে পোশাক কারখানা

দলের প্রার্থী হতে তৃণমূলের ভোটে জিতে আসতে হবে

দোয়া চাইলেন পলক, হাত নাড়লেন ইনু

কারাগারেও তৎপর ‘দরবেশ’

২০২৫ সালের ছুটির তালিকা জানাল বাংলাদেশ ব্যাংক

কোনো কম্পানিই বন্ধ করা হবে না : গভর্নর

দেড় শ কোটি টাকার সম্পদের মালিক মুহিবপত্নী রেখা

শেখ হাসিনার বিচারের প্রথম দিন ট্রাইব্যুনালে যা দেখা গেল

৪৬তম বিসিএসের ফল ফের প্রকাশের সিদ্ধান্ত

অন্তর্বর্তী সরকার যত বেশিদিন থাকবে, তত সমস্যা বাড়বে : ফখরুল

বাংলাদেশের ঋণমান ‘স্থিতিশীল’ থেকে এবার ‘নেতিবাচক’

স্বাস্থ্যসহ ৫ সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করল সরকার

সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা, সচিবালয়ে প্রতিনিধিদল

তিন দেশে বাড়ি আছে দুর্নীতির ‘মহারাজ’ নিক্সনের

ঢামেকে গ্রেপ্তার ভুয়া চিকিৎসক পাপিয়া কারাগারে

বিদেশে বন্ধু নেই, বাংলাদেশকে ‘না’ বলতে শিখতে হবে

সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গ্রেপ্তার

কলেজ ‘শাটডাউন’ ঘোষণা, আজ ফের অবরোধ

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর সত্যতা স্বীকার কাম্য : ক্রীড়া উপদেষ্টা

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন