<p>অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমা বেশি দেখা যায়। এই ধরনের অ্যাজমা সাধাণত অল্প বয়সে শুরু হয় এবং বংশানুুক্রমে চলতে থাকে। এই রোগীদের অন্যান্য অ্যালার্জি, যেমন—সর্দি, একজিমা ইত্যাদিও একসঙ্গে থাকতে পারে।</p> <p> </p> <p><strong>অ্যালার্জি কী</strong></p> <p>যেকোনো জিনিসের সংস্পর্শে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হওয়াকেই অ্যালার্জি বলা হয়। যেমন—তরকারি হিসেবে অনেকেই বেগুন খাচ্ছে, হয়তো বেশির ভাগ মানুষের কোনো অসুবিধা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু কারোর হয়তো বেগুন খেলেই চোখ চুলকায়, নাক থেকে পানি পড়ে, শরীর চুলকায় ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। তখন বেগুনের এই অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াই অ্যালার্জি। যে জিনিস বা বস্তুর দ্বারা এই অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাকে বলা হয় অ্যালার্জিক বস্তু বা অ্যালার্জেন।</p> <p> </p> <p><strong>কারণ</strong></p> <p>দেহে কোনো বহিরাগত ক্ষতিকর জিনিস প্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে সেই বহিরাগত জিনিসকে নষ্ট করে ফেলাই দেহের ধর্ম। এই প্রতিরোধব্যবস্থা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু কখনো কখনো জন্মগতভাবে কারোর ভেতর অতিরিক্ত প্রতিরোধব্যবস্থা লুকিয়ে থাকে, কোনো নির্দোষ জিনিসের বিরুদ্ধে এই অতিরিক্ত প্রতিরোধের কারণে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হয়, এটিকেই অ্যালার্জির কারণ মনে করা হয়।</p> <p> </p> <p><strong>উপসর্গ</strong></p> <p>অ্যালার্জি যদি চোখে হয়, তবে অ্যালার্জেন চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখ লাল হবে, চুলকাবে এবং চোখ থেকে পানি পড়বে। যদি নাকে হয়, তবে হঠাৎ হাঁচি হবে, একসঙ্গে অনেক হাঁচি দেবে, আঠালো পানির মতো সর্দি হবে, নাকের ভেতরটা ফুলে উঠে নাক বন্ধ করে দেবে। চামড়ার অ্যালার্জিকে একজিমা বলে। এভাবে অ্যালার্জি যদি শ্বাসনালিতে হয়, তবে তাকে বলে অ্যালার্জির কারণে অ্যাজমা অথবা অন্য কথায় এটোপিক অ্যাজমা বলে।</p> <p>অ্যালার্জেন শ্বাসনালিতে প্রবেশ করলে তিনটি পরিবর্তন ঘটে। যেমন—সরু শ্বাসনালির চারপাশের মাংস সংকুচিত হয়ে শ্বাসনালিকে আরো সরু করে। মিউকাসজাতীয় আঠালো পানি নিঃসৃত হয়ে সরু শ্বাসনালির পথকে বন্ধ করে দেয়। শ্বাসনালির ভেতরের মিউকাস আবরণী প্রদাহের কারণে ফুলে উঠে শ্বাসনালির পথকে আরো সংকুচিত করে দেয়।</p> <p> </p> <p><strong>অ্যালার্জি অ্যাজমার কারণ</strong></p> <p>নিচের অ্যালার্জেনগুলো দ্বারা সাধারণত অ্যাজমা হতে দেখা যায়। যেমন—</p> <p><strong>ফুলের পরাগ রেণু :</strong> ফুল বা ঘাসের পরাগ রেণুতে অ্যালার্জি যাদের, তারা সাধারণত বিশেষ কোনো ঋতুতে অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়। কারণ একেক ফুল একেক ঋতুতে পরাগ রেণু ছড়ায়।</p> <p><strong>মাইট :</strong> ঘরবাড়ির ধুলা, বিশেষ করে কার্পেট, তোশক, বালিশ, লেপ, কম্বল, পাপোশ বা জানালা-দরজায় যে ধুলা থাকে, এই ধুলার ভেতর থাকা মাইট নামক এক প্রকার কীট, যা চোখে দেখা যায় না এমন কীটের বাসস্থান। এরা ধুলার সঙ্গে শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে এবং রোগীকে অ্যাজমায় আক্রান্ত করে।</p> <p><strong>পাখির পালক ও পশম : </strong>পোষা বিড়াল, কুকুরের পশম অথবা পাখির পালক দিয়ে তৈরি লেপ, তোশক, বালিশে অনেক সময় অ্যালার্জি হয়। এগুলোর দ্বারা অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়।</p> <p><strong>ছত্রাকের বীজগুটি : </strong>স্যাঁতসেঁতে বাসস্থানে ছত্রাক বেশি জন্মায়। আর এই ছত্রাকের অসংখ্য বীজ (স্পোর) বাতাসে উড়ে বেড়ায়, যা অনেকের বেলায় অ্যাজমার কারণ হয়।</p> <p><strong>কিছু খাদ্য : </strong>খাদ্যের দ্বারা যে অ্যালার্জি হয়, তাতে কদাচিৎ শ্বাসকষ্ট হতে দেখা যায়। যাদের অ্যালার্জির প্রকোপ অনেক বেশি, তাদের দেখা যায় চিংড়ি, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, হাঁসের ডিম, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, পুঁইশাক, কলা ইত্যাদি খাওয়ার পর চোখ লাল হয়, নাক থেকে পানি পড়ে, শ্বাসকষ্ট হয় এবং গায়ে লাল লাল চাকা ওঠে, যা খুব চুলকায়। তবে খাদ্যের চেয়ে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য বা রঙিন করার জন্য যে রাসায়নিক বস্তু ব্যবহার করা হয়, তার দ্বারা অ্যাজমা হয় অনেক বেশি। এ ছাড়া আছে শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত কোনো কোনো রাসায়নিক পদার্থ, কিছু ওষুধ। এসব দ্রব্য থেকে দূরে থাকলে বা এগুলো পরিত্যাগ করলে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা এড়ানো সম্ভব।</p> <p> </p> <p><strong>চিকিৎসা</strong></p> <p>অ্যালার্জির প্রাথমিক ও তাত্ক্ষণিক চিকিৎসা হিসেবে চিকিৎসকের পরামর্শে ওরাল, ইঞ্জেক্টেবল অ্যান্টিহিস্টামিনজাতীয় ওষুধ অথবা অনেক সময় স্টেরয়েড ব্যবহার করা যায়। তবে সঠিক ও উপযুক্ত চিকিৎসার পূর্বশর্ত অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী কারণটি খুঁজে বের করা এবং যথাসম্ভব তা এড়িয়ে চলা। অ্যালার্জিক জিনিসের সংস্পর্শে না এলে, অনেক ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে দেহের সংবেদনশীলতা কমে স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে।</p>