<p>আমাদের পেছনে কোমরে আছে শিমের বিচি আকৃতির দুটি কিডনি।</p> <p>পাঁজরের খাঁচার নিচে ও শিরদাঁড়ার দুই ধারে এদের অবস্থান। আকারে ছোট, ওজন মাত্র চার-ছয় আউন্স। ছোট হলেও হার্ট যে পরিমাণ রক্ত ছেড়ে দেয় এর ২০-২৫ শতাংশ গ্রহণ করে কিডনি।</p> <p> </p> <p>কিডনির যত কাজ</p> <p>♦ রক্তকে পরিশুদ্ধ ও বর্জ্য নিষ্কাশন করা</p> <p>♦ পুষ্টি উপকরণ শুষে নেওয়া</p> <p>♦ রক্তের অসমোলারিটি ও রক্তের তরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা</p> <p>♦ দেহের পিএইচ বজায় রাখা</p> <p>♦ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা</p> <p>♦ এনজাইম রেনিন উৎপাদন করা, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর</p> <p>♦ লোহিত কণিকা উৎপাদনে ভূমিকা রাখা</p> <p>♦ ভিটামিন ‘ডি’ সক্রিয় করা</p> <p>♦ ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখা।</p> <p> </p> <p>নিয়ন্ত্রণে রাখুন ক্রনিক রোগ</p> <p>এত কাজের কাজি কিডনিও ধীরে ধীরে কার্যকারিতা হারাতে পারে। কার্যক্ষমতা কমতে কয়েক বছর আবার কয়েক মাসও লাগতে পারে। রোগীভেদে কিডনির কর্মক্ষমতা হারানোর সময় নির্ধারিত হয়। ক্রনিক রোগ যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও স্থূলতা থাকলে কিডনি দ্রুত বিকল হয়ে যেতে পারে। তাই এসব ক্রনিক রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি।</p> <p>মানুষ এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন। তাই কিডনি স্ক্রিনিং বেশি হচ্ছে এবং রোগও ধরা পড়ছে বেশি। তবে দুর্ভাগ্যবশত ‘ক্রনিক কিডনি ডিজিজ’ বা ‘সিকেডি’ বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে ৮০০ মিলিয়ন লোক ‘সিকেডি’তে আক্রান্ত, এটি হলো মৃত্যুর নবমতম কারণ।</p> <p> </p> <p>রোগ নির্ণয়</p> <p>প্রাথমিক পর্যায়ে সিকেডি নির্ণয় করা হয় মূলত ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে।</p> <p> </p> <p>উপসর্গ</p> <p>♦ বমি বমি ভাব</p> <p>♦ ক্লান্তি, ক্ষুধা হ্রাস</p> <p>♦ ওজনহানি</p> <p>♦ শ্বাসকষ্ট</p> <p>♦ চুলকানি</p> <p>♦ বুক ব্যথা</p> <p>♦ প্রস্রাবে পরিবর্তন</p> <p>♦ পা ফুলে যাওয়া</p> <p>♦ ঘুম ঘুম ভাব</p> <p>♦ রক্তের ইউরিয়া</p> <p>♦ প্রোটিন ক্রিয়েটিনিন</p> <p>♦ প্রস্রাবে রক্ত, প্রোটিনের উপস্থিতি।</p> <p>অনেক সময় আল্ট্রাসাউন্ড ও বায়োপসির প্রয়োজন হতে পারে। দুটোই করতে হবে কিডনি স্পেশালিস্টের নির্দেশে।</p> <p> </p> <p>সতর্কতা</p> <p>কিডনির জন্য প্রধান ঝুঁকি হলো উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস। এ ছাড়া স্থূলতা, হৃদরোগ, পারিবারিক ইতিহাস ও রোগীর বয়স বেশি হলে ঝুঁকি বাড়ে। এসব ঝুঁকি থাকলে একজন নেফ্রলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া ভালো। আগাম চিহ্নিত করা আর চিকিৎসা করা হলে রোগীর ধকল কমে।</p> <p> </p> <p>চিকিৎসা</p> <p>আগাম চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে রোগের অগ্রগতি কমে যাবে। সিকেডি হওয়ার পেছনে থাকে অন্তর্নিহিত অন্য রোগ, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা ইত্যাদি চিকিৎসা সবার প্রথমে দরকার। সিকেডি এড়াতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, সুষম খাবার, ব্যায়াম, ধূমপান বর্জন ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। মাঝেমধ্যে নেফ্রলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। ক্রনিক রোগ পুরোপুরিভাবে কখনো না সারলেও রোগের অগ্রগতি কমানো যাবে। তবে এন্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ হলে ওষুধে কাজ হবে না। তখন আলোচনা করে বিশেষজ্ঞ বলে দেবেন ডায়ালিসিস নাকি কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে।</p> <p>লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ</p> <p>চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ</p>