<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাঝেমধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা আমাদের পুরো সমাজব্যবস্থাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে। এমনই একটি ঘটনা হচ্ছে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া। এটি নানা দিক থেকেই একটি গুরুতর অপরাধ। কিন্তু তার পরও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে দেশে। স্বাভাবিকভাবেই দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হচ্ছে আমাদের। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত বুধবার দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হন এক যুবক। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ওই ব্যক্তির নাম তোফাজ্জল। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে জানিয়েছে পরিবার। তোফাজ্জলকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ফোন করে ৩৫ হাজার টাকা দাবি করা হয় বলেও জানিয়েছে তাঁর পরিবার। এ ঘটনাকে অমানবিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওদিকে গত বুধবার বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে গত্যা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেট এলাকায় দেখতে পেয়ে তাঁকে পিটুনি দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে কিছু শিক্ষার্থী উপস্থিত হলে অন্যরা আরো বেশি মারমুখী হন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা অফিসে নিয়ে যান। সাবেক শিক্ষার্থী হওয়ায় প্রক্টরিয়াল বডি পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ প্রায় তিন ঘণ্টা পর প্রক্টর অফিসে আসে। এরই মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী চলে এলে প্রক্টরিয়াল টিম কয়েকবার চেষ্টা করেও তাঁদের আটকাতে ব্যর্থ হয়। পরে রাত সোয়া ৮টার দিকে পুলিশ এলে শামীমকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁর মৃত্যুর খবর শোনা যায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে হত্যার এ ঘটনায় আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে জাবি কর্তৃপক্ষ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় তো কেউ ঘাতক, হন্তারক, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ বা দাগি অপরাধী হিসেবে ভর্তি হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তাদের অনেকেই হন্তারক, নৃশংস খুনি বা ঘৃণ্য অপরাধী হয়ে ওঠে। তাহলে কি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘাতক হওয়ার, চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজ হওয়ার প্রশিক্ষণ হয়? কিন্তু কেন? আমাদের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তো স্বায়ত্তশাসিত। তাহলে কি আমাদের স্বায়ত্তশাসন পরিচালনায় বড় রকমের গলদ রয়েছে, যা অপরাধী তৈরিতে সহায়তা করছে? </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কালের কণ্ঠে প্রকাশিত আরেকটি খবরে বলা হয়েছে, দেশে গত দুই মাসে ৩৫ জনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে, সামাজিক অস্থিরতার কারণে গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে চলেছে। তুচ্ছ কারণে মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। গণপিটুনির ঘটনা ঘটা মানেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া। দেশের কোনো নাগরিক নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারে না। এভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা পুলিশ ও বিচারব্যবস্থার প্রতি এক ধরনের অনাস্থা। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল এই হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। এই মন্দ প্রবণতাটি রোধ করতে হবে। যারা এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক, সেটি আমরা কেউ চাই না। তাই এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। যারা পিটিয়ে মানুষ হত্যা করছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। পিটিয়ে মানুষ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।</span></span></span></span></p>