<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা সঞ্চিতি এখনো নড়বড়ে। এই সঞ্চিতি বহুলাংশে স্থিতিশীল রাখে প্রবাস আয়। ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের প্রবাসী কর্মীদের একটি বড় অংশ রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ায় তারা পুনরায় নতুন উদ্যমে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেছে। হয়তো তারও প্রভাব রয়েছে ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্সপ্রবাহে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য নিয়ে কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ২.৬৪ বিলিয়ন ডলার বা ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে গত বছরের ডিসেম্বরে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা, যা এর আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এসেছিল ১৯৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। একক মাস হিসেবে আগে কখনোই এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে এক হাজার ৩৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বেশি। আগের অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৮০ কোটি ডলার। রেমিট্যান্সের সুবাতাসের ধারা বজায় থাকায় এবং ঋণের অর্থছাড় হওয়ায় টানা কমতে থাকা দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা গত ৩০ জুনের পর সর্বোচ্চ। গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক ডিসেম্বরের যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে, সে অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসে যে রেমিট্যান্স এসেছে, তা ২০২৩ সালের একই মাসের চেয়ে ৩২.৬৬ শতাংশ বেশি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা সঞ্চিতি তা সত্ত্বেও অনেকটাই নড়বড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের অর্থনীতি নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। তবে এর মধ্যে অত্যন্ত আশা জাগাচ্ছে রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয়ের প্রবাহ। এই প্রবাহ সরকার পরিবর্তনের পর ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে প্রবাস আয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়লেও প্রবাস আয়ের একটি বড় অংশ এখনো ব্যাংকের মাধ্যমে না এসে হুন্ডি বা অন্যান্য মাধ্যমে আসছে। হুন্ডি বন্ধ করা গেলে রেমিট্যান্স দ্বিগুণ করা সম্ভব বলে নানা সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দামের পার্থক্য বেশি থাকলে বিদেশ থেকে অর্থ প্রেরণকারীদের কাছে হুন্ডিতে টাকা পাঠানো অনেক বেশি লাভজনক হতে পারে। তাই এই পার্থক্য কমাতে হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ প্রেরণ আরো সহজ, দ্রুত ও আকর্ষণীয় করতে হবে। আমাদের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স প্রেরকদের অবদান বিবেচনায় নিয়ে তাদের নানাভাবে সম্মানিত করা যায়। নানা রকম রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায়। এ রকম আরো কিছু পদক্ষেপ নিলে প্রবাসী কর্মীরা হুন্ডির বদলে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে আরো বেশি করে উৎসাহিত হবেন। হুন্ডির প্রভাব থেকে সরিয়ে প্রবাসীদের অর্জিত শতভাগ অর্থ কিভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রেরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়, সেটিই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ৫ আগস্টের পর থেকে রিজার্ভ কমেনি, বরং বেড়েছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। ঋণ জালিয়াতি ও অর্থপাচার ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর অবস্থানই রেমিট্যান্স বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। বেড়েছে রপ্তানি আয়ও। জুলাই-নভেম্বর সময়ে রপ্তানি আয় এসেছে এক হাজার ৯৯০ কোটি ডলার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে আরো নানা ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। রেমিট্যান্সের টাকা যাতে গ্রাহক দ্রুত পেতে পারেন এমন ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নে ব্যাংকগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সঠিক ব্যবস্থা নেবে।</span></span></span></span></p>