<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্লাস্টিক দূষণ আজ সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ। এই দূষণ এমনভাবে বাড়ছে যে তা রীতিমতো মানব অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। নদী, খাল-বিল, জলাশয় প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। চূড়ান্তভাবে গিয়ে জমা হচ্ছে সাগরগর্ভে। নদী-জলাশয়ে প্লাস্টিক আস্তরণের কারণে ভূগর্ভে পানি প্রবেশ ব্যাহত হচ্ছে। কৃষিজমি উর্বরতা হারাচ্ছে। নানা মাধ্যমে প্লাস্টিক কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিক মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর দেহে প্রবেশ করছে। রক্ত পরীক্ষায়ও মিলছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি। তাই সারা পৃথিবী প্লাস্টিক দূষণ কমাতে উঠেপড়ে লেগেছে। আর আমরা যেন এখনো ঠিক তার উল্টো স্রোতেই গা ভাসিয়ে চলেছি। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণের এক ভয়াবহ চিত্র।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্ববিখ্যাত গবেষণা সাময়িকী এলসেভিয়ারে সম্প্রতি ঢাকার আশপাশের নদী ও জলাশয়ের প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়। ওই গবেষণায় ১৯টি স্থান থেকে পানি ও পলির তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে তুরাগ নদ, বুড়িগঙ্গা নদী, শীতলক্ষ্যা নদী, বালু নদ, ডেমরা খাল, টঙ্গী খাল ছাড়াও হাতিরঝিল, ধানমণ্ডি ও গুলশান লেক। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের ঢাকা শহরের হ্রদ এবং আশপাশের নদীতে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের ঝুঁকি মূল্যায়ন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শীর্ষক ওই প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের টঙ্গী খালের প্রতি ঘনমিটার পানিতে ৬০ হাজারের বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে; যেখানে বাংলাদেশেরই আত্রাই, করতোয়া নদীতে এই কণার পরিমাণ ১০০ থেকে ১৫০-এর মধ্যে। শহরের অন্য জলাশয়গুলোতেও এর পরিমাণ অনেক বেশি, গড়ে ৩৬ হাজারের মতো। জানা যায়, বৈশ্বিক প্লাস্টিক দূষণের প্রায় আড়াই শতাংশই হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় এক কোটি টন পলিথিন-প্লাস্টিকের ব্যবহার হচ্ছে। উন্নত দেশগুলো যেখানে ৮০ শতাংশের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকল বা পুনঃপ্রক্রিয়া  করে, সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ৩৭ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়া করা সম্ভব হয়। এসব কারণে এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স (ইপিআই) বা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭তম।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতা এখন ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর প্রধান ভোগান্তি। এর মূল কারণ পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমে ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং বৃষ্টির পানি নামতে না পারা। তখন সাধারণ মানুষ সরকারকে দোষ দেয় আর সরকার যত্রতত্র পলিথিন ফেলার জন্য মানুষকে দোষ দেয়। চলতে থাকে দোষারোপের খেলা। অন্তর্বর্তী সরকার প্লাস্টিক দূষণ রোধে কিছু পদক্ষেপ নিলেও বাস্তবে তার খুব একটা প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। এর একটি বড় কারণ প্লাস্টিক ব্যাগের সুবিধাজনক বিকল্প সহজলভ্য না হওয়া। সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক এখনো প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। মানুষের মধ্যেও প্লাস্টিকের ক্ষতিকারকতা নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য পড়ে থাকাই তার প্রমাণ। মানুষকে সচেতন করা গেলে এবং গৃহস্থালি বর্জ্য থেকে আলাদাভাবে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করার পর পুনঃপ্রক্রিয়া করা গেলে প্লাস্টিক দূষণ অনেকটাই কমিয়ে আনা যেত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা চাই, প্লাস্টিক দূষণ রোধে আরো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হোক। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করে সেসব উদ্যোগে সম্পৃক্ত করতে হবে।</span></span></span></span></p>