<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনেক জাতীয় নেতারই রাজনৈতিক জীবনের শুরু ছাত্র আন্দোলন বা ছাত্ররাজনীতির মধ্য দিয়ে। ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, স্বাধীনতাযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ জাতির অনেক ক্রান্তিকালে এ দেশের ছাত্রসমাজ গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে। আবারও একই ভূমিকা পালন করা হয়েছে ২০২৪ সালে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটাতে। আর এসব ক্ষেত্রে বৈধভাবে নির্বাচিত ছাত্রসংসদগুলোর ভূমিকা ছিল অগ্রণী। কিন্তু কালক্রমে ছাত্রসংসদগুলোর ভূমিকা গৌণ হতে থাকে। দলীয়, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী ছাত্রসংগঠনগুলো চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে ছাত্রদের গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে ম্লান করতে থাকে। সাধারণ ছাত্ররাও তাদের কাছে নিপীড়িত হয়। সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ও ছাত্ররাজনীতির একই চরিত্র দেখা গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের গুণ্ডাবাহিনী হামলা চালায় সাধারণ ছাত্রদের ওপর।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুধু নেতৃত্ব বিকাশ নয়, সাধারণ ছাত্রদের চাওয়া-পাওয়া, অভাব-অনটন, সুবিধা-অসুবিধার কথা প্রশাসনের কাছে তুলে ধরার জন্যও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি নির্বাচিত ছাত্রসংসদ অত্যন্ত জরুরি। আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তার প্রয়োজন আরো অনেক বেশি। অথচ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে কোনো নির্বাচিত ছাত্রসংসদ নেই। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ২০১৯ সালে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯২ সালে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯০ সালে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৯ সালে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ২০০১ সালে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৮ সালে এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৭ সালে ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদের (জকসু) কোনো নির্বাচনই হয়নি। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এমনটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবির মধ্যেও অন্যতম একটি দাবি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসংসদের কার্যক্রম শুরু করা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ মাস অতিক্রান্ত হলেও এ ব্যাপারে খুব একটা অগ্রগতি নেই। এরই মধ্যে একমাত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপই ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা আলটিমেটামও দিয়েছেন। একইভাবে আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবি তুললেও প্রশাসন চলছে ঢিমে তালে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি ও ছাত্রসংসদের রূপরেখা নির্ধারণের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা আশা করি, দেশে যে গণতান্ত্রিক আবহের সূত্রপাত হয়েছে, তার ছাপ শিক্ষাঙ্গনেও পড়বে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।</span></span></span></span></p>