কাজের মান রক্ষা করতে হবে

  • হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ
শেয়ার
কাজের মান রক্ষা করতে হবে

হাওরাঞ্চল দেশের প্রধান খাদ্যভাণ্ডার। বোরো ধানের এক-চতুর্থাংশই উৎপন্ন হয় এখানে। হাওরবাসীদের একমাত্র ফসলও এটি। কোনো কারণে বোরো ধানের ক্ষতি হলে তাদের দুঃখের সীমা থাকে না।

সে কারণে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, মেরামত ও সংরক্ষণে প্রতিবছরই সরকারকে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়। কারণ প্রতিবছরই বর্ষায় বাঁধের অনেক ক্ষতি হয়। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পাহাড়ি ঢল থেকে সুনামগঞ্জের ১৪টি হাওরের ফসল রক্ষায় সরকার স্থায়ী ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করছে। প্রায় ১৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এসব বাঁধ তৈরিতে ব্যয় হবে প্রায় ২৫৬ কোটি টাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠন, জরুরি সহায়তা প্রকল্প এই কাজ বাস্তবায়ন শুরু করছে। প্রকল্পে শুধু বাঁধ নির্মাণই নয়; ফ্লাড ফিউজ নির্মাণ, নদীর তীর রক্ষা, রেগুলেটর নির্মাণ ও সংস্কার, ভিলেজ ফ্লাডফরম নির্মাণ ও বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম রয়েছে। সব মিলিয়ে এতে ব্যয় হবে প্রায় ৪৬০ কোটি টাকা।

হাওরের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভিন্ন।

বছরের বেশির ভাগ সময় পানিতে ডুবে থাকে বলে এখানকার উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ সেভাবেই বিকশিত হয়েছে। পরিবেশবাদীদের দাবি, এখানে বাঁধ, সড়ক ও অন্যান্য উন্নয়নকাজও হতে হবে এখানকার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কোনো ক্ষতি না করে। অনেকের মতে, মাছ হাওরের অর্থনীতিতে ধানের চেয়েও বড় ভূমিকা রাখে। মাছের বিচরণ ও প্রজনন যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। ধারণা করা হয়, সেভাবেই পরিকল্পনা সাজিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
বাঁধের নির্দিষ্ট পয়েন্টে ফ্লাড ফিউজ নির্মাণ করা হবে। ফসল কাটার পর সেগুলো খুলে দেওয়া হবে পানি বের করা ও নৌযান চলাচলের জন্য।

শুধু বাঁধ নির্মাণ নয়, নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষা করাও জরুরি। সুনামগঞ্জের হাওরগুলোর ওপর দিয়ে প্রবাহিত বেশির ভাগ নদী সীমান্তের ওপারের পাহাড়ি এলাকা থেকে এসেছে। প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে প্রচুর বালু ও পলি এসে নদীগুলো ভরাট করছে। নিয়মিত খননের অভাবে অনেক নদী ভরাট হয়ে গেছে। এসব নদী ঢলের পানি ধারণ করতে পারে না, তখন দুই কূল উপচে পানি ফসলের মাঠে ছড়িয়ে পড়ে। পানি নামতেও বিলম্ব হয়। তাই নদীগুলোর পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পানিপ্রবাহের পথ সুগম করা জরুরি।

আমরা মনে করি, প্রকৌশলী, প্রাণিবিজ্ঞানী, কৃষিবিজ্ঞানী, মৎস্যবিজ্ঞানী, পরিবেশবিদসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে হাওরের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে এবং সে অনুযায়ী হাওরের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি বাস্তবায়িত কাজের মান ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সময় ও অর্থের এ অপচয় কেন

    কাজ শেষ না করেই প্রকল্পের সমাপ্তি
শেয়ার
সময় ও অর্থের এ অপচয় কেন

জনস্বার্থে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানামুখী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু প্রকল্প গ্রহণ থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত পুরো কাজ যদি সঠিকভাবে সম্পন্ন না হয়, তাহলে জনপ্রত্যাশা যেমন পূরণ হয় না, তেমনি রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয়। নিকট অতীতে এমন অনেক নজির রয়েছে।

গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ ছয় বছরেই কেবল ৮০৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন না করেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনোটির অগ্রগতি ছিল ২৫ শতাংশেরও কম। এসব প্রকল্প থেকে লক্ষ্য জনগোষ্ঠীও কাঙ্ক্ষিত সেবাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) থেকে এসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

এতে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার আমলের ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ছয়টি অর্থবছরের মধ্যে শেষ করা প্রকল্প পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, কাজ শেষ না করেই প্রকল্পের সমাপ্তি ঘোষণার পেছনে যেসব কারণ জড়িত, তার মধ্যে রয়েছে যেনতেনভাবে প্রকল্প হাতে নেওয়া, রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প নেওয়া, সাবেক এমপিদের চাহিদা পূরণে প্রকল্প নেওয়া এবং সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না করেই প্রকল্প গ্রহণসহ আরো কিছু কারণ। এতে সময় ও অর্থের যেমন অপচয় হয়েছে, তেমনি এসব প্রকল্পের প্রকৃত উদ্দেশ্য পূরণ হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

আইএমইডির সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রথম দিকে দেখা যায়, অনেক সময় তড়িঘড়ি করে প্রকল্প নেওয়া হয়।

এ ছাড়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও ঠিকমতো হয় না। ফলে শেষ দিকে এসে অনেক কাজ না করেও প্রকল্প শেষ করতে হয়। এমন কাজ বেশির ভাগ হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া প্রকল্পের ক্ষেত্রে। দেখা গেছে, প্রয়োজন না থাকলেও নানা ধরনের কম্পোনেন্ট যুক্ত করে প্রকল্প নেওয়া হতো।...এসব কাজ অবশ্যই পরিকল্পনা ও শৃঙ্খলার পরিপন্থী।

আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আওতায় মোট ৩২৫টি প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য ছিল। বাস্তবায়িত হয় ২৭৭টি এবং লক্ষ্যের বাইরে থেকে যায় ২৪টি প্রকল্প। এগুলোর মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ না করেই বিভিন্ন পর্যায়ে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় ১২৯টি প্রকল্প।

আমরা চাই, রাষ্ট্রীয় অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হোক। প্রকল্পের সম্পূর্ণ ও মানসম্মত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেই সমাধান

    কক্সবাজারে জাতিসংঘ মহাসচিব
শেয়ার
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেই সমাধান

ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ ও বর্বর নির্যাতনের কারণে দলে দলে রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। এই জনগোষ্ঠীর বিপুলসংখ্যক মানুষের ভার বহন করতে গিয়ে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে। ওদিকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা তাদের মাতৃভূমি মায়ানমারে ফিরে যেতে চায়।

বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মনে করেন নিরাপদে, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়াই এই সংকটের প্রাথমিক সমাধান। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখে মায়ানমারের সব পক্ষের প্রতি সর্বোচ্চ সংযম অনুশীলন করার আহবান জানিয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসারে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও সহিংসতার আরো উসকানি রোধ করে গণতন্ত্রের পথ প্রশস্ত করতে বলেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিশ্ব একটি গভীর সংকটের দ্বারপ্রান্তে।
কারণ আর্থিক সহায়তা কমার ফলে ২০২৪ সালে মানবিক সহায়তার তুলনায় ২০২৫ সালে সহায়তা নাটকীয়ভাবে ৪০ শতাংশে নেমে আসার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এটি একটি নিরবচ্ছিন্ন বিপর্যয় হবে। মানুষ কষ্ট পাবে এবং মানুষ মারা যাবে।

বাংলাদেশে আশ্রিত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য বিশ্বের সাহায্য-সমর্থন প্রয়োজন।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এখানে এসেছে। তারা তাদের সুরক্ষা, পরিবারের জন্য মর্যাদা, নিরাপত্তা চায়।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, রোহিঙ্গা শিবির ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় সম্প্রদায়গুলো জলবায়ু সংকটের ঝুঁকিতে প্রথম সারিতে আছে। এটি ঠিক যে কক্সবাজার অঞ্চলের স্থানীয় মানুষের জীবন রীতিমতো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। একটি জেলার একটি অংশে ১০ লাখ অতিরিক্ত মানুষ আশ্রয় নেওয়ায় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

ওদিকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে নানা ধরনের উগ্র ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জন্ম নিয়েছে। স্বাভাবিক আয়-রোজগারের সুযোগ কম থাকায় রোহিঙ্গারা মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। আশ্রয়শিবিরগুলোতে প্রায়ই খুনখারাবির ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বাড়ছে। আর সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশ এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।

গত শুক্রবার ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বৈঠক প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে ঢাকার সংস্কার এজেন্ডার প্রতি জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং বিশ্বের সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীর জন্য তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের ব্যাপক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন গুতেরেস।

নিরাপদে, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়াই রোহিঙ্গা সংকটের প্রাথমিক সমাধানএ বাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তাই রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসনে জোর দিতে হবে। এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশ ও আঞ্চলিক সংস্থাকে এই সংকট সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের প্রত্যাশা, জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তরিক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মন্তব্য

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক

    না-ফেরার দেশে শিশু আছিয়া
শেয়ার
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক

মাগুরায় নির্মম যৌন নির্যাতনের শিকার আট বছর বয়সী শিশুটি দেশের অগণিত মানুষকে কাঁদিয়ে গত বৃহস্পতিবার চলে গেছে না-ফেরার দেশে। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টায় মাগুরার নোমানী ময়দানে শিশুটির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তার লাশ বাড়ির কাছে শ্রীপুরের সোনাইকুণ্ডি গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্ষণের যেসব সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে, তা যেকোনো বিবেকবান মানুষকেই উদ্বিগ্ন এবং আতঙ্কিত করছে।

ধর্ষণের মতো সামাজিক ব্যাধি যেন চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। মাগুরায় আট বছরের নিষ্পাপ শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় পুরো জাতি হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল। তার মৃত্যুতে সবাই শোকাভিভূত। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে সামাজিক মূল্যবোধের চরম অধঃপতনের  চিত্রই যেন ফুটে ওঠে।
 

আমাদের সমাজের পরিচয়টি যেন পাল্টে যাচ্ছে। পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সহনশীল সমাজের বন্ধন আজ আর নেই। নৈতিকতাও যেন নির্বাসিতপ্রায়। মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে, কিন্তু ধর্ষণ বন্ধ হয়নি। প্রায় প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ছোট শিশুরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। দেশজুড়ে অব্যাহত ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় পুরো দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ।

কিছু ঘটনা সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। শিশু আছিয়া ধর্ষণের ঘটনাটি তেমনই একটি ঘটনা। আলোড়ন থাকতে থাকতেই এই ঘটনার বিচার হওয়া দরকার। গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, সাত দিনের মধ্যে মাগুরার শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার শুরু হবে। উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মাগুরায় বলেছেন, এ ধরনের অপরাধের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে আইন সংশোধনের সুপারিশ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিশুটির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এই মামলার আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন। শিশু আছিয়া ধর্ষণের ঘটনার বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

যখন মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছে, সমাজ থেকে নৈতিকতা নির্বাসনে যায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় রাষ্ট্রের দুর্বলতা বড় হয়ে দেখা দেয়; তখনই নারী নির্যাতন, ধর্ষণ-নিপীড়ন বেড়ে যায়। এ ধরনের সামাজিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে অপরাধীদের দ্রুততম সময়ে মামলা নিষ্পত্তি এবং কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আশা করি, ধর্ষণকারীদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।

 

মন্তব্য

নীতি সহায়তা দিতে হবে

    বেতন-বোনাসের চাপে শিল্প
শেয়ার
নীতি সহায়তা দিতে হবে

আর কিছুদিন পরই পবিত্র ঈদুল ফিতর। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করার জন্য অনেকেই ঢাকা ছেড়ে যাবে। ঈদের ছুটির দিন যত এগিয়ে আসছে, শিল্প মালিকরা ততই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হচ্ছেন। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, উৎসবের সময় শিল্প-কারখানার সক্ষমতা থাকুক বা না থাকুক কর্মীদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা সব শিল্প মালিকের জন্য বাধ্যতামূলক।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সরকার পরিবর্তনের পর প্রায় সব শিল্প-কারখানা রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। ওদিকে বড় বড় সরকারি প্রকল্প স্থবির হয়ে সরকারি ব্যয়ও কমে গেছে। আর এতে নির্মাণসহ অনেক সংযোগ শিল্প খাত রুগ্ণ হওয়ার পথে।
কারখানায় উত্পাদন কমে গেছে, লোকসান বেড়েছে। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন শিল্প-কারখানার মালিকরা। অনেক কারখানায় উত্পাদন কমে গেছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।

দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাক শিল্প কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও কম দামে কার্যাদেশ নেওয়া, কারখানায় জ্বালানিসংকট এবং কাঁচামাল আমদানিতে ডলার সংকটে তারাও চাপে আছে।

সরকারের দেওয়া প্রণোদনার বড় অঙ্ক এখনো আটকে রয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের একাংশের দুর্ভাগ্য যেন কোনোমতেই পিছু ছাড়ে না। তাদের বেতন-ভাতা-বোনাস নিয়ে ঝামেলা হয়। ঈদের আগে বেতন-বোনাসের দাবিতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে হয়। এবার বড় দুশ্চিন্তার কারণ একই সময়ে দুই মাসের (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) মজুরি এবং ঈদ বোনাস দিতে হবে কারখানার মালিকদের।
এদিকে অনেক মালিক ব্যাংকের ঋণ না পাওয়ায় এই খাত থেকেও সুবিধা নিতে পারছেন না। এর মধ্যেই শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, বোনাসসহ সব পাওনা আগামী ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।

সরকারের কাছে ১৫ রমজানের মধ্যে সাত হাজার কোটি টাকা সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। তাদের দাবি, অর্থ সহায়তা না পেলে ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে চরম বিপাকে পড়তে পারে পোশাক খাত। নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ঈদের আগে শ্রমিকদের মজুরি, বোনাস দিতে তাঁরা অঙ্গীকারবদ্ধ। কোনো শ্রমিক তাঁদের পাওনা না নিয়ে বাড়ি যাবেন না। এর জন্য সরকারকে আরেকটু সহনীয় হতে হবে। সরকারের কাছে এখনো প্রণোদনার সাত হাজার কোটি টাকা পাওনা। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে আরো অন্তত তিন হাজার কোটি টাকা ছাড় দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সংকট রয়েছে। রাজনৈতিক সংকটের ফলেও অনেক বড় কারখানা সংকটে পড়েছে। বিজিএমইএর নেতাদের মতে, কিছু সংকট দেখা দিয়েছে কোনো কোনো কারখানার মালিকদের নিজস্ব কারণেও। এ সময় ব্যাংকগুলোও খুব একটা এগিয়ে আসেনি। এ কারণে কারো কারো জন্য বেতন-বোনাস পুরোপুরি পরিশোধ করা একটু কষ্টকর হবে।

আমরা চাই না সারা বছর কাজ করার পর ঈদের আগে শ্রমিকরা বেতন-বোনাসের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসুন। এর আগেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন, এমনটাই প্রত্যাশিত।

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ