হাওরাঞ্চল দেশের প্রধান খাদ্যভাণ্ডার। বোরো ধানের এক-চতুর্থাংশই উৎপন্ন হয় এখানে। হাওরবাসীদের একমাত্র ফসলও এটি। কোনো কারণে বোরো ধানের ক্ষতি হলে তাদের দুঃখের সীমা থাকে না।
হাওরাঞ্চল দেশের প্রধান খাদ্যভাণ্ডার। বোরো ধানের এক-চতুর্থাংশই উৎপন্ন হয় এখানে। হাওরবাসীদের একমাত্র ফসলও এটি। কোনো কারণে বোরো ধানের ক্ষতি হলে তাদের দুঃখের সীমা থাকে না।
হাওরের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভিন্ন।
শুধু বাঁধ নির্মাণ নয়, নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষা করাও জরুরি। সুনামগঞ্জের হাওরগুলোর ওপর দিয়ে প্রবাহিত বেশির ভাগ নদী সীমান্তের ওপারের পাহাড়ি এলাকা থেকে এসেছে। প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে প্রচুর বালু ও পলি এসে নদীগুলো ভরাট করছে। নিয়মিত খননের অভাবে অনেক নদী ভরাট হয়ে গেছে। এসব নদী ঢলের পানি ধারণ করতে পারে না, তখন দুই কূল উপচে পানি ফসলের মাঠে ছড়িয়ে পড়ে। পানি নামতেও বিলম্ব হয়। তাই নদীগুলোর পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পানিপ্রবাহের পথ সুগম করা জরুরি।
আমরা মনে করি, প্রকৌশলী, প্রাণিবিজ্ঞানী, কৃষিবিজ্ঞানী, মৎস্যবিজ্ঞানী, পরিবেশবিদসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে হাওরের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে এবং সে অনুযায়ী হাওরের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি বাস্তবায়িত কাজের মান ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
সম্পর্কিত খবর
জনস্বার্থে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানামুখী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু প্রকল্প গ্রহণ থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত পুরো কাজ যদি সঠিকভাবে সম্পন্ন না হয়, তাহলে জনপ্রত্যাশা যেমন পূরণ হয় না, তেমনি রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয়। নিকট অতীতে এমন অনেক নজির রয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) থেকে এসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
আইএমইডির সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রথম দিকে দেখা যায়, অনেক সময় তড়িঘড়ি করে প্রকল্প নেওয়া হয়।
আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আওতায় মোট ৩২৫টি প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য ছিল। বাস্তবায়িত হয় ২৭৭টি এবং লক্ষ্যের বাইরে থেকে যায় ২৪টি প্রকল্প। এগুলোর মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ না করেই বিভিন্ন পর্যায়ে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় ১২৯টি প্রকল্প।
আমরা চাই, রাষ্ট্রীয় অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হোক। প্রকল্পের সম্পূর্ণ ও মানসম্মত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ ও বর্বর নির্যাতনের কারণে দলে দলে রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। এই জনগোষ্ঠীর বিপুলসংখ্যক মানুষের ভার বহন করতে গিয়ে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে। ওদিকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা তাদের মাতৃভূমি মায়ানমারে ফিরে যেতে চায়।
বাংলাদেশে আশ্রিত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য বিশ্বের সাহায্য-সমর্থন প্রয়োজন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, রোহিঙ্গা শিবির ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় সম্প্রদায়গুলো জলবায়ু সংকটের ঝুঁকিতে প্রথম সারিতে আছে। এটি ঠিক যে কক্সবাজার অঞ্চলের স্থানীয় মানুষের জীবন রীতিমতো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। একটি জেলার একটি অংশে ১০ লাখ অতিরিক্ত মানুষ আশ্রয় নেওয়ায় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
গত শুক্রবার ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বৈঠক প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে ঢাকার সংস্কার এজেন্ডার প্রতি জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং বিশ্বের ‘সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীর’ জন্য তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের ‘ব্যাপক কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেছেন গুতেরেস।
নিরাপদে, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়াই রোহিঙ্গা সংকটের প্রাথমিক সমাধান—এ বাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তাই রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসনে জোর দিতে হবে। এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশ ও আঞ্চলিক সংস্থাকে এই সংকট সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের প্রত্যাশা, জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তরিক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মাগুরায় নির্মম যৌন নির্যাতনের শিকার আট বছর বয়সী শিশুটি দেশের অগণিত মানুষকে কাঁদিয়ে গত বৃহস্পতিবার চলে গেছে না-ফেরার দেশে। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টায় মাগুরার নোমানী ময়দানে শিশুটির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তার লাশ বাড়ির কাছে শ্রীপুরের সোনাইকুণ্ডি গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্ষণের যেসব সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে, তা যেকোনো বিবেকবান মানুষকেই উদ্বিগ্ন এবং আতঙ্কিত করছে।
আমাদের সমাজের পরিচয়টি যেন পাল্টে যাচ্ছে। পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সহনশীল সমাজের বন্ধন আজ আর নেই। নৈতিকতাও যেন নির্বাসিতপ্রায়। মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে।
কিছু ঘটনা সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। শিশু আছিয়া ধর্ষণের ঘটনাটি তেমনই একটি ঘটনা। আলোড়ন থাকতে থাকতেই এই ঘটনার বিচার হওয়া দরকার। গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, সাত দিনের মধ্যে মাগুরার শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার শুরু হবে। উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মাগুরায় বলেছেন, এ ধরনের অপরাধের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে আইন সংশোধনের সুপারিশ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিশুটির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এই মামলার আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন। শিশু আছিয়া ধর্ষণের ঘটনার বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
যখন মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছে, সমাজ থেকে নৈতিকতা নির্বাসনে যায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় রাষ্ট্রের দুর্বলতা বড় হয়ে দেখা দেয়; তখনই নারী নির্যাতন, ধর্ষণ-নিপীড়ন বেড়ে যায়। এ ধরনের সামাজিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে অপরাধীদের দ্রুততম সময়ে মামলা নিষ্পত্তি এবং কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আশা করি, ধর্ষণকারীদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।
আর কিছুদিন পরই পবিত্র ঈদুল ফিতর। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করার জন্য অনেকেই ঢাকা ছেড়ে যাবে। ঈদের ছুটির দিন যত এগিয়ে আসছে, শিল্প মালিকরা ততই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হচ্ছেন। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, উৎসবের সময় শিল্প-কারখানার সক্ষমতা থাকুক বা না থাকুক কর্মীদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা সব শিল্প মালিকের জন্য বাধ্যতামূলক।
দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাক শিল্প কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও কম দামে কার্যাদেশ নেওয়া, কারখানায় জ্বালানিসংকট এবং কাঁচামাল আমদানিতে ডলার সংকটে তারাও চাপে আছে।
সরকারের কাছে ১৫ রমজানের মধ্যে সাত হাজার কোটি টাকা সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। তাদের দাবি, অর্থ সহায়তা না পেলে ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে চরম বিপাকে পড়তে পারে পোশাক খাত। নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ঈদের আগে শ্রমিকদের মজুরি, বোনাস দিতে তাঁরা অঙ্গীকারবদ্ধ। কোনো শ্রমিক তাঁদের পাওনা না নিয়ে বাড়ি যাবেন না। এর জন্য সরকারকে আরেকটু সহনীয় হতে হবে। সরকারের কাছে এখনো প্রণোদনার সাত হাজার কোটি টাকা পাওনা। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে আরো অন্তত তিন হাজার কোটি টাকা ছাড় দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সংকট রয়েছে। রাজনৈতিক সংকটের ফলেও অনেক বড় কারখানা সংকটে পড়েছে। বিজিএমইএর নেতাদের মতে, কিছু সংকট দেখা দিয়েছে কোনো কোনো কারখানার মালিকদের নিজস্ব কারণেও। এ সময় ব্যাংকগুলোও খুব একটা এগিয়ে আসেনি। এ কারণে কারো কারো জন্য বেতন-বোনাস পুরোপুরি পরিশোধ করা একটু কষ্টকর হবে।
আমরা চাই না সারা বছর কাজ করার পর ঈদের আগে শ্রমিকরা বেতন-বোনাসের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসুন। এর আগেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন, এমনটাই প্রত্যাশিত।