<p>চুনাপাথর এক ধরনের পাললিক শিলা, যা প্রধানত ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO<sub>3</sub>) দ্বারা গঠিত। ক্যালসিয়াম কার্বনেটে প্রধানত তিনটি উপাদান—কার্বন, অক্সিজেন ও ক্যালসিয়াম থাকে। পাথর বা শিলার মধ্যে এটি একটি সাধারণ উপাদান এবং মুক্তা, সামুদ্রিক প্রাণীর খোলস, শামুক, ডিমের খোসা ইত্যাদির প্রধান উপাদান। প্রকৃতিতে বিশুদ্ধ চুনাপাথর খুবই কম পাওয়া যায়। বালি, কাদা প্রভৃতি মিশ্রণ এবং লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সিলিকন, ফসফরাস, সালফার প্রভৃতি মৌলে চুনাপাথর অপদ্রব্য হিসেবে মিশ্রিত থাকে।</p> <p>চুনাপাথরের কাঠিন্য ৩.০ এবং আপেক্ষিক গুরুত্ব ২.৬ থেকে ২.৮। জৈব অথবা অজৈব উভয় প্রক্রিয়ায় চুনাপাথর গঠিত হতে পারে। বেশির ভাগ চুনাপাথরই উচ্চমাত্রায় জীবাশ্মসমৃদ্ধ এবং সুস্পষ্টভাবে প্রাচীনকালের ঝিনুকরাজি অথবা প্রবাল বলয়ের সঞ্চয়নকে উপস্থাপন করে থাকে। চুনাপাথর প্রধানত চুন তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া সিমেন্টের মূল উপাদান হচ্ছে চুনাপাথর। নির্মাণ, রাসায়নিক ও কাচ শিল্পে চুনাপাথর ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। চুনাপাথরের ব্যবহার ধাতু নিষ্কাশন এবং চিনিশিল্পেও লক্ষ করা যায়।</p> <p>বাংলাদেশে চুনাপাথরের ভূপৃষ্ঠীয় এবং অন্তর্ভূপৃষ্ঠীয় বা ভূগর্ভস্থ উভয় প্রকার মজুদ রয়েছে। কক্সবাজার জেলার সেন্ট মার্টিন দ্বীপ এবং সুনামগঞ্জ জেলার ভাঙ্গেরঘাট-লালঘাট-টাকেরঘাট এলাকায় চুনাপাথরের ভূপৃষ্ঠীয় ও ভূপৃষ্ঠের স্বল্পগভীরতায় মজুদ রয়েছে। জয়পুরহাট জেলার জয়পুরহাটে রয়েছে চুনাপাথরের অন্তর্ভূপৃষ্ঠীয় বা ভূগর্ভস্থ মজুদ।</p> <p>বাংলাদেশে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ১৯৫৭ সালে সর্বপ্রথম চুনাপাথরের ভূপৃষ্ঠীয় মজুদ আবিষ্কৃত হয়। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর বা জিএসপি ১৯৫৮ সালে এ মজুদ এলাকায় জরিপ চালায় এবং প্রায় ০.০৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১.৮ মিলিয়ন টন ঝিনুক খোলস ও প্রবালসমৃদ্ধ চুনাপাথরের মজুদ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। ভূপৃষ্ঠীয় মজুদের পর ১৯৫৯ সালে বাংলাদেশে ভূগর্ভস্থ চুনাপাথরের সর্বপ্রথম মজুদ আবিষ্কৃত হয়। আমেরিকার স্ট্যান্ডার্ড ভ্যাকুয়াম অয়েল কম্পানি বগুড়া জেলার কুচমায় তেল অনুসন্ধান কূপ খননকালে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৯৬৭ মিটার নিচে এ চুনাপাথর স্তরের সন্ধান পায়। বাংলাদেশে প্রথম চুনাপাথর উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬৫ সালে।         </p>