<p>‘কারফিউ রে কারফিউ/আগল খোলে কে?</p> <p>সোনার বরণ ছেলেরা দেখ/নিশান তুলেছে।</p> <p>লাল মোরগের পাখার ঝাপট/লাগলো খোঁয়াড়ে</p> <p>উটকোমুখো সান্ত্রী বেটা/হাঁটছে দুয়ারে।</p> <p>খড়খড়িটা ফাঁক করে কে/ বিড়াল-ডাকে ‘মিউ’,</p> <p>খোকন সোনার ভেংচি খেয়ে/পালালো কারফিউ।’</p> <p>কবি আল মাহমুদ মজার ছলে ছড়াটি লিখলেও কারফিউ মোটেও মজার বিষয় নয়। এটি একটি কঠিন আইন। মূলত বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার সরকারি নির্দেশ হচ্ছে কারফিউ। কারফিউ চলাকালীন সব মানুষকে অবশ্যই বাড়িতে থাকতে হয়। প্রাচীন ফরাসি শব্দ couvre-feu থেকে কারফিউ শব্দটির উৎপত্তি। এর অর্থ হলো ‘আগুন চাপা দেওয়া’। অতীতে কারফিউ বলতে অন্য কিছু বোঝানো হতো। মধ্যযুগে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘণ্টা বাজিয়ে শহরের বাসিন্দাদের সংকেত দেওয়া হতো। এই সময় তারা তাদের বাড়িতে সব আগুন ও বাতি নিভিয়ে বিশ্রাম করত। এই প্রথাকেই বলা হতো কারফিউ।</p> <p>সাধারণত যুদ্ধ কিংবা রাজনৈতিক সংকটকালে রাতের বেলায় কারফিউ জারি করা হয়। তাই এটি বাংলায় সান্ধ্য আইন নামে পরিচিত। দিনের বেলা, এমনকি টানা কয়েক দিন কারফিউ জারি করার অসংখ্য নজির আছে ইতিহাসে।</p> <p>১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় কারফিউ জারি করেছিল পাকিস্তানি শাসকরা। সেই কারফিউ ভঙ্গ করে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র-ছাত্রীরা রাজপথে নেমেছিলেন। সেদিন কারফিউ বা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার ফলে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর। তারিখটা ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি। পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন রফিক, শফিক, বরকত, জব্বারসহ আরো অনেকে। ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানেও সামরিক শাসক আইয়ুব খান কারফিউ জারি করে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করেন। স্বাধীন বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময়ে কারফিউ জারি করা হয়। সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে লাগাতার কারফিউ জারি করে আওয়ামী সরকার।</p> <p>বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারির সময়ও কারফিউ জারি করার অনেক উদাহরণ ইতিহাসে দেখা যায়। ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু, ২০০২ সালের সার্স ভাইরাস, ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু, ২০২০ সালে কভিড-১৯ মহামারির প্রকোপ দেখা দিলে পৃথিবীর বহু দেশে কারফিউ জারি করা হয় এবং জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়।</p> <p> </p> <p>♦ অলকানন্দা রায়</p>