<p>বটগাছের আয়ু বেশ লম্বা—পাঁচ শ থেকে ছয় শ বছর! পথের ধারে কিংবা জনবিচ্ছিন্ন এলাকায় বিশাল মহীরুহের মতো দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো যেন এক-একটা গল্পের ঝুলি। বটগাছের আকার আর দীর্ঘজীবন সত্যিই কৌতূহলের বিষয়। কত গল্প, কবিতা, উপন্যাসে যে বটগাছের কথা এসেছে, তার ইয়ত্তা নেই! বাংলা সংস্কৃতিতেও বটগাছের রয়েছে বিস্তর অবদান। একসময় গ্রামীণ হাট-বাজার, মেলা থেকে শুরু করে সালিস-বিচার, লোকগানের আসর, জনসভা, বানর খেলা, সাপ খেলার আয়োজন হতো বটগাছের নিচে। এখনো হয়, তবে খুব কম। পত্র-পল্লববেষ্টিত থাকায় শামিয়ানা টাঙানোর দরকার পড়ে না। গরমকালে বিশাল আকৃতির এই ছায়াদানকারী বৃক্ষ অনেক উপকারে আসে।</p> <p>বটগাছের ইংরেজি নাম Indian banyan। বৈজ্ঞানিক নাম <em>Ficus benghalensis</em>। এটি চিরহরিৎ সাইকাস জাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। ফাইকাস বা ডুমুরজাতীয় গোত্রের সদস্যও। এই গাছের আদি নিবাস এ অঞ্চলই। অর্থাৎ বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে এই গাছের জন্ম।</p> <p>এটি বৃহদাকারের উদ্ভিদ। অনেক জায়গাজুড়ে সমান্তরাল শাখা-উপশাখা বিস্তার করে বেড়ে ওঠে। এর বিস্তৃত ডালপালা স্তম্ভমূলের ওপর ভর রেখে দাঁড়িয়ে থাকে। কাণ্ড থেকে স্তম্ভমূল বের হয়ে বাতাসে ঝোলে। পরে বড় হয়ে মাটি ছুয়ে মাটির ওপরের অংশ বিটপে পরিণত হয়।</p> <p>বটগাছের পাতা একান্তর, ডিম্বাকৃতি, মসৃণ ও উজ্জ্বল সবুজ। স্থান-কাল ভেদে পাতার আয়তন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। অল্প বয়স থেকেই বটগাছের ঝুরি নামতে শুরু করে। একসময় ঝুরিগুলো মাটিতে গেঁথে নিজেরাই একেকটা কাণ্ডে পরিণত হয়। এভাবে ধীরে ধীরে চারপাশজুড়ে বিশাল মহীরুহে পরিণত হয় বটগাছ।</p> <p>বসন্তকালে বটগাছে নতুন পাতা গজায়। গ্রীষ্মে ফল পাকতে শুরু করে। ফলগুলো খুবই ছোট। পাখিরা এর ফল খেয়ে বীজ ছড়িয়ে দেয়। পাখিবাহিত বীজ দালানের কার্নিশ, ফাটল ও অন্য কোনো গাছের কোটরে সহজেই অঙ্কুরিত হয় ও আশ্রয়কে গ্রাস করে। এ জন্য উপগাছা হিসেবেও এর বেশ খ্যাতি।</p> <p>বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে এখনো কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে অনেক বটগাছ। কোনো কোনো গাছ দর্শনীয় স্থান হিসেবেও জনপ্রিয়। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসব বটগাছ দেখতে ছুটে যায়। সবচেয়ে বড় বটগাছটির অবস্থান ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মল্লিকপুরে। বটগাছকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পবিত্র মনে করে। প্রায়ই এ গাছের নিচে মন্দির বানানো হয়। ভারতের জাতীয় গাছও এটি।</p> <p> </p> <p>♦ আতিফ আতাউর</p>