ঢাকা, মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫
৩ চৈত্র ১৪৩১, ১৭ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫
৩ চৈত্র ১৪৩১, ১৭ রমজান ১৪৪৬

চিনি কারসাজির নেতৃত্বে সিটি গ্রুপ

আবুল কাশেম
আবুল কাশেম
শেয়ার
চিনি কারসাজির নেতৃত্বে সিটি গ্রুপ

রোজা এলেই বাড়ে চিনির দর। রোজার মাসে ওভারহোলিংয়ের (সংস্কার) নামে মিল সপ্তাহখানেক বন্ধ রাখেন মিল মালিকরা। ফলে রোজার আগেই সরবরাহে টান পড়ে, দামও বাড়ে। পাইকারি ব্যবসায়ী, পরিবেশক ও ডিও ব্যবসায়ীরা আগে থেকে টাকা জমা দিয়ে ট্রাক ভাড়া করে চিনি আনতে যান মিল গেটে।

কিন্তু সেখানে চিনি না পেয়ে ভাড়া করা ট্রাক নিয়ে দিনের পর দিন তাঁদের বসে থাকতে হয়। এই বাড়তি ট্রাকভাড়াও যোগ হয় চিনির দামে। যার দায় নিতে নারাজ মিল মালিকরা। তাঁরা মিল গেটে যে দরে চিনি বিক্রি করা হচ্ছে তা দেখিয়ে প্রতিবারই পার পেয়ে যান।
কারসাজির বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি কিংবা ক্রেতাদের দুর্গতি, কোনো কিছুই আমলে নিচ্ছেন না তাঁরা।

বাংলাদেশে চিনি মিলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সিটি গ্রুপের মিল। তারাই চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখে। এ গ্রুপটির দেখানো পথেই হাঁটেন অন্য মিল মালিকরা।

আর সময়মতো চিনি সরবরাহ না করার বেশি অভিযোগও সিটি গ্রুপের বিরুদ্ধেই।

এবার রোজার কয়েক দিন আগেও খুচরা দোকানে চিনি বিক্রি হতো প্রতি কেজি ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়। সেই একই চিনির দাম এখন দোকানগুলোতে ৬৫ টাকা। সরকারি বিক্রয় সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব মতে, গত ২৪ মে ঢাকায় প্রতি কেজি চিনির খুচরা দর ছিল ৫৬ টাকা। ২৯ মে রোজা শুরুর সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ তা বেড়ে হয় ৬০ টাকা।

আর ১৯ জুন থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত খুচরা বাজারে চিনির দর আরো বেড়ে ৬২ থেকে ৬৫ টাকায় উঠেছে।

খুচরা দোকানিরা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকে প্রতি কেজি চিনি কিনতে তাঁদের ৬২ টাকা পড়ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন মিল থেকে চিনির সরবরাহে ঘাটতির কথা। মিল থেকে এক ট্রাক চিনি আনতে তাঁদের ক্ষেত্রবিশেষে কয়েকটি ট্রাকের ভাড়া গুনতে হয়। কারণ, দিনের পর দিন বসে থেকেও চিনি পাওয়া যায় না।

ঢাকায় ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি আড়ত মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘১০ ট্রাক চিনি চাইলে পাওয়া যায় দুই ট্রাক। তাও অপেক্ষা করতে হয় দিনের পর দিন। মিল গেটে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে লম্বা লাইনে। মিল থেকে চিনি না পেলে আমরা বাজারে দিব কিভাবে?’

দামের বিষয়ে গোলাম মাওলা বলেন, মিল গেটেই চিনির দাম পড়ে ৫০ টাকা কেজি। তার সঙ্গে যুক্ত হয় পরিবহন খরচ। সরবরাহে দেরির জন্যও খরচ বাড়ে তাঁদের, ট্রাক বসিয়ে রেখেও প্রতিদিন গুনতে হয় বাড়তি ভাড়া।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশে চিনির কোনো সংকট নেই। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (এপ্রিল পর্যন্ত) দেশে মোট চিনি আমদানি হয়েছে সাড়ে ১৭ লাখ টন। এ ছাড়া সরকারি চিনি কলগুলোয়ও রয়েছে এক লাখ টন চিনি। আর পুরো বছরে চিনির চাহিদা মাত্র ১৫ লাখ টন।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, দেশীয় চিনি শিল্পকে রক্ষায় সরকার আমদানি শুল্ক বাড়িয়েছিল। তবে এর পরও চিনির কেজি ৬০ টাকার নিচে থাকার কথা। হয়তো আকস্মিকভাবে কেউ কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা ধরাও পড়ছে। মিলগুলো ৪৮ টাকা কেজিতে চিনি বিক্রি করে। পাইকাররা কেজিতে দু-তিন টাকা ব্যবসা করলে, খুচরা বিক্রেতা পাঁচ টাকা লাভ করলে, প্রতি কেজির দাম ৫৭-৫৮ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। কেউ কারসাজি করে দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। 

ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামে বেশি দামে চিনি বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে সিটি গ্রুপসহ দুটি মিলের বিরুদ্ধে। ঢাকায় পাইকারি বাজারে সিটি গ্রুপ ৪৮ টাকা ৭৬ পয়সা কেজি দরে চিনি বিক্রি করলেও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি মার্কেটে সিটি গ্রুপ চিনির দর নিচ্ছে সবচেয়ে বেশি। গতকাল খাতুনগঞ্জে সিটি গ্রুপ প্রতি মণ চিনি বিক্রি করেছে দুই হাজার ১৩০ টাকায়। অন্য গ্রুপগুলো প্রতি মণ চিনি বিক্রি করেছে এক হাজার ৮৫২ টাকা থেকে দুই হাজার ১০০ টাকায়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সিটি গ্রুপ চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখে। তাদের দেখানো পথেই হাঁটেন অন্য মিল মালিকরা। সময়মতো চিনি সরবরাহ না করার বেশি অভিযোগও তাঁদের বিরুদ্ধে।

তবে এ অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দেন সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) বিশ্বজিৎ সাহা। সে ক্ষেত্রে বাজারে অন্য গ্রুপের চিনির চেয়ে সিটি গ্রুপের চিনির দর বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমরা তো কারখানা থেকে ৪৮ টাকা ৭৬ পয়সা কেজি দরে চিনি বিক্রি করছি। চট্টগ্রামে কেন এত বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে, তা জানি না।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার টন চিনি সরবরাহ করছি। একটি ট্রাকে ১০ টন চিনি সরবরাহ করলে প্রতিদিন ৩০০ ট্রাক লাগে। আর চিনির জন্য এসে পাইকারি ব্যবসায়ীদের যদি ১০ দিন করে অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে এত ট্রাক কোথায় অপেক্ষা করে? এ ছাড়া প্রতিদিন নিজস্ব ট্রাকে বিভিন্ন দোকানে ৫০ টাকা কেজি দরে ৯০০ টন থেকে এক হাজার টন চিনি সরবরাহ করছে সিটি গ্রুপ।’

চিনির দাম বৃদ্ধির জন্য সরকারের বর্ধিত শুল্ককর আরোপকে দায়ী করে বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আগে প্রতি কেজি চিনিতে সরকারকে শুল্ককর বাবদ দিতে হতো দুই টাকা। এখন দিতে হয় ১৮ টাকা।

গত বছর আগস্টে চিনি আমদানির ওপর ২০ শতাংশ সংরক্ষণমূলক শুল্ক আরোপ করেছে সরকার। এ ছাড়া গত ডিসেম্বরে চিনি আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।

এত আগে আরোপিত শুল্ককরের কারণে রমজান মাসে চিনির দর বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের জিএম বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘নতুন করে শুল্ককর আরোপের আগে আমদানি করা চিনি রোজার আগ পর্যন্ত আমরা সরবরাহ করেছি। ফলে তখন দাম কম ছিল। রোজার সময় থেকেই বর্ধিত ট্যারিফে আমদানি করা চিনি বিক্রি শুরু হয়েছে। ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে।’

এস আলম গ্রুপের চিনির একমাত্র বিক্রয় প্রতিনিধি মীর গ্রুপের কর্ণধার আবদুস সালাম বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ৮ জুন থেকে আমরা ৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বাজারে চিনি বিক্রি করছি। কিন্তু ঢাকার কারখানাগুলো (বিশেষ করে সিটি গ্রুপ) বিক্রি করছে এর চেয়েও অনেক বেশি দামে। ফলে চট্টগ্রামের চিনি ঢাকায় চলে যাচ্ছে।’

তবে প্রতিবছর রোজায় চিনির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পরও দোষী মিল মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই সরকারের। মোহাম্মদ ফারুক খান বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালে রোজায় চিনির দাম আকাশ ছুঁয়েছিল। ওই সময়ও সিটি গ্রুপসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মিল বন্ধ রাখে ওভারহোলিংয়ের নাম করে। তখন মিল মালিকদের শোকজ করা হলেও শুধু একটি চিনি কলের আমদানি লাইসেন্স স্থগিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ বছরও রোজার শুরুতে সিটি গ্রুপসহ আরো কয়েকটি চিনিকল মালিক ওভার হোলিংয়ের নাম করে উৎপাদন বন্ধ রেখে বাজারে সরবরাহ সংকট সৃষ্টি করে। তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাবস্থায় ফারুক খান জাতীয় সংসদে চিনির দাম বৃদ্ধির পেছনে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি একটি গ্রুপের নাম উল্লেখ করে বলেন, ওই গ্রুপ চিনি আমদানির পর চিনিভর্তি জাহাজটি আর বাংলাদেশে ভেড়ায়নি। বরং বেশি দামে তৃতীয় কোনো দেশে সেই চিনি বিক্রি করে দিয়েছে।

পরে এ বিষয়ে আর কোনো তদন্ত কিংবা আইনি পদক্ষেপ নেয়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তখন ডিও প্রথা বাতিল করে পরিবেশক প্রথা চালু করে আইন সংশোধন ও নীতিমালা জারি করা হয়। সে সময় প্রকাশ্যে মিল মালিকদের বলতে শোনা গেছে, দাম বাড়ায় ডিও ব্যবসায়ীরা। তাই ডিও প্রথা বাতিল করে পরিবেশক প্রথা চালু করলে কোনো অবস্থাতেই পণ্যের দাম বাড়বে না। আর কোনো কারণে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে, এর দায় নেবেন মিল মালিকরা। পরে ডিও প্রথা বাতিল করে পরিবেশক প্রথা চালু করতে গিয়ে সেই মিল মালিকদের বাধার কারণে সেটিও কার্যকর করতে পারেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বাভাস সেলের প্রধান মাসুদুল মান্নান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, চিনির দর নিয়ন্ত্রণে এবার সরকারি চিনিকলের গুদামে থাকা এক লাখ টন চিনি বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের প্রতি কেজি চিনির দর ৪৮ টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভাবছে, এখনই ওই চিনি বিক্রির উপযুক্ত সময়। এতে বেসরকারি মিল মালিকরা চাপে পড়ে সরবরাহ বাড়াবেন। ভোক্তারাও এর সুফল পাবে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে খুব শিগগির সিদ্ধান্ত হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের ভিড়

শেয়ার
ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের ভিড়
ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের ভিড়। গতকাল রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে। ছবি : লুৎফর রহমান
মন্তব্য

গরমের তীব্রতা

শেয়ার
গরমের তীব্রতা
গরমের তীব্রতা বাড়ছে। একটু স্বস্তি পেতে পানিতে নেমে সাঁতার কাটছে দুই শিশু। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে তোলা। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য
জামায়াতের আমির

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য থাকা উচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য থাকা উচিত
শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকতে পারে। তবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকা উচিত। গতকাল রবিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দ্য ফোরাম অব ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।

শফিকুর রহমান বলেন, ভিন্নমত গণতন্ত্রের সৌন্দর্যের অংশ, যাকে সম্মান জানিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, দেশে প্রতিহিংসার অবসান ঘটবে এবং মানবিক মূল্যবোধের বিজয় হবে।

তিনি বলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের রায় হাইকোর্টে প্রত্যাশিতভাবে এসেছে। তিনি এ রায় দ্রুত কার্যকর করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এর মাধ্যমে আবরারের পরিবার কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।

শফিকুর রহমান বলেন, আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন।

মানুষকে তিনি ভালো-মন্দের জ্ঞান বা বিবেক দিয়েছেন। প্রকৌশলীরা হচ্ছেন মানুষের মধ্যে অন্যতম সেরা মেধাবী। কিন্তু একজন মানুষের মাঝে শুধু জ্ঞান ও দক্ষতা থাকলেই হবে না, তাকে একই সঙ্গে সত্ হতে হবে। তাহলেই তার দ্বারা দেশ এবং জাতি উপকৃত হবে।

ফোরামের সভাপতি প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় ইফতার মাহফিলে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও দ্য ফোরাম অব ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল আলম খান মিলন ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

 

 

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক মানের ভোট চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন : সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আন্তর্জাতিক মানের ভোট চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন : সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। ইসিও এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে নিরপেক্ষভাবে কাজ করছি আমরা।

গতকাল রবিবার বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা বলেন তিনি।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এ বৈঠকে সিইসির সঙ্গে ইসি সচিবও উপস্থিত ছিলেন।

ইইউ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সিইসি বলেন, মূলত আগামী নির্বাচনে আমাদের প্রস্তুতি কী আছে, তা উনারা জানতে চেয়েছিলেন। আমরা যা যা করছি তাঁদের জানিয়েছি। নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতির সব কিছু জানিয়েছি।

উনারা জানতে চেয়েছিলেন, ভোটের বাজেট কত, টাকা-পয়সা ঠিকমতো আছে কি না, কোনো রকম অসুবিধা আছে কি না। আমরা বলেছি, আমাদের টাকা-পয়সার কোনো অসুবিধা নেই। সরকারের কাছে বাজেট চেয়েছি। তবে উনারা (ইইউ) আমাদের সাহায্য করতে চান।

সিইসি বলেন, আমাদের কী প্রয়োজন, সেটি জানতে চান তাঁরা। আমরা বলেছি, ইউএনডিপি এরই মধ্যে একটা নিড অ্যাসেসমেন্ট করেছে। একটা টিম পাঠিয়েছিল, কী কী সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে, এরই মধ্যে প্রজেক্টও বানিয়েছে। নির্বাচনের জন্য যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন হবে তা দিতে তাঁরা প্রস্তুত আছেন। নির্বাচন কমিশনকেই শুধু নয়, বাংলাদেশের উন্নয়নেও সহায়তা করতে চান তাঁরা।

এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, তাঁরা আগামী মাসে একটি কর্মশালা করবেন। এতে ইসি সচিবসহ ইসির প্রতিনিধিরা যাবেন। সেখানে সিভিল সোসাইটি থাকবে। আমরা জোর দিয়েছি দলের পোলিং এজেন্ট, ভোটার এডুকেশন ও স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে।

সিইসি জানান, ইসি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক দলের এজেন্টদের কিভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় সে বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। ভোটার এডুকেশন ও পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছেন তাঁরা। আরো সহায়তা লাগলে জানানো হবে, সর্বতোভাবে সহায়তায় প্রস্তুত রয়েছেন তাঁরা।

সিইসি বলেন, উনারা চান যে আন্তর্জাতিক মানের একটি নির্বাচন হোক। আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন উনারা দেখতে চান। আমরাও তো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখানে আমাদের দ্বিমত নেই। তাঁরা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান, যেটা আমাদেরও ওয়াদা। এটা আমরাও চাই। নিরপেক্ষভাবে আমরা কাজ করব, এটা তো আমরা ঘোষণা দিয়েছি। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছি।

যা বললেন মিলার : ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের প্রধান মাইকেল মিলার সাংবাদিকদের জানান, এটি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তাঁদের দ্বিতীয় সভা।

তিনি বলেন, আমরা আলোচনা করেছি এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বর্তমানে যে কাজ করছে সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে জানতে পেরেছি।

মিলার বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ তার রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেহেতু (সিইসির কাছে) তিনটি বার্তা পেশ করেছি। প্রথমত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই দেশের জন্য একটি দৃঢ় অংশীদার এবং আমরা এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সময়ে আপনার পাশে আছি। দ্বিতীয়ত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে তার অংশীদারিকে সব দিকে শক্তিশালী করতে চায় এবং আমরা এখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করতে এসেছি, যাতে তারা গত বছর আপনার নিজস্ব নাগরিকদের প্রকাশিত প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে এবং তৃতীয় বার্তাটি হলো, প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই দেশে নির্বাচন পরিচালনাকে সমর্থন করবে।

মিলার জানান, নির্বাচন কমিশনকে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দিয়ে সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক বিষয়েও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে ইইউ। বিদেশি পর্যবেক্ষক মোতায়েনের বিষয়েও নির্বাচন কমিশনকে অবগত করা হয়েছে।

আজ ওআইসি মিশনপ্রধানদের বৈঠক : আজ সোমবার ইসলামী সহযোগিতা সংস্থাভুক্ত (ওআইসি) দেশগুলোর বাংলাদেশ মিশনপ্রধানদের কাছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে ইসির সঙ্গে বৈঠক হতে যাচ্ছে।

এই বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার জন্য আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, ব্রুনেই দারুসসালাম, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিশনপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ