<p>মুজিববর্ষ উপলক্ষে ক্রীড়াঙ্গনে অনেক টুর্নামেন্ট হচ্ছে এবার। তবে বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ ফুটবলের মাহাত্ম্য আলাদা। কারণ জাতির জনকের নামে ষষ্ঠবারের মতো আন্তর্জাতিক এই আসর বসছে ঢাকায়। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ বিকেল ৫টায় বাংলাদেশ-ফিলিস্তিন ম্যাচ দিয়ে যার পর্দা উঠছে। </p> <p>বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর এই আয়োজনে অবশ্য যেমন জাঁকজমকের আশা করা হয়েছিল, তেমনটি হচ্ছে না। জৌলুস বাড়ে আসলে দলগুলোর মানে। সেই মানের দল যে আসেনি। গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফিলিস্তিনও এসেছে তাদের রিজার্ভ দল নিয়ে। মরিশাস, বুরুন্ডি, সিশেলসের ফুটবলের কথা বাংলাদেশের কয়জন মানুষই বা জানে। তা ছাড়া ছয় দলের এই আসরে  দুটি দলই র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের নিচে। বাংলাদেশের র্যাংকিংই যেখানে ১৮৭, সেখানে অন্য দলগুলোর মান আন্দাজ করাই যায়। মাঠের ফুটবল অবশ্য অনেক সময়ই র্যাংকিংয়ের হিসাব-নিকাশ মানে না। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ১০০ ধাপ ওপরে থাকা ভারত বা কাতারকেও তাই চমকে দেয় বাংলাদেশ। সে হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি আসরের পাশাপাশি ভালো ফুটবলের আশা করা যায়ই। গত আসরে ফিলিস্তিনের যে দলটি চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছিল ঢাকা থেকে, তাদের সঙ্গে আসলে বাংলাদেশ ধারে-ভারে কোনোভাবেই কুলিয়ে উঠতে পারেনি। এবার তারা তুলনামূলক দুর্বল দল আনাতেই সাফল্যের হিসাব-নিকাশে জামাল ভুঁইয়াদের সম্ভাবনা আঁকা যাচ্ছেই। র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকা সিশেলস, শ্রীলঙ্কাকে বাদ দিলে এরপর বুরুন্ডি ও মরিশাসের বিপক্ষে জামালদের পরীক্ষা। কাল টুর্নামেন্ট-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এসে মরিশাস কোচ ফ্রান্সিসকো ফিলহো তাঁর দলের শক্তিমত্তা সম্পর্কে যেমন বলেছেন তাতেও আবার আশাবাদী হতে পারেন জেমি ডে, ‘আমরা এখানে মূল দলটা নিয়ে আসতে পারিনি। আমাদের দেশে পেশাদার লিগ না থাকায় খেলোয়াড়দের বেশির ভাগই বিভিন্ন চাকরি করে, ফিফা উইন্ডোতে না থাকায় তারাও ছুটি পায়নি এই টুর্নামেন্টটার জন্য। এখানে যারা এসেছে, বেশির ভাগই তরুণ। অনূর্ধ্ব ১৭ বছরেরই আছে ছয়জন। বাকিদের সবাই অনূর্ধ্ব-২৩।’ আফ্রিকার এই দেশটির বর্তমান র্যাংকিং ১৭২, অর্থাৎ বাংলাদেশের চেয়ে ১৫ ধাপ এগিয়ে। মোজাম্বিকের কাছে হেরে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে অবশ্য খেলতে পারছে না দলটি, আফ্রিকান কাপ অব নেশনসে খেলার অভিজ্ঞতা একবার, সেই ১৯৭৪ সালে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধু কাপের প্রথম যে দুটি আসর হয়েছিল নব্বইয়ের দশকে, সেখানে আফ্রিকান দেশের প্রতিনিধিত্ব থাকলেও ২০১৫ থেকে নতুন আঙ্গিকে শুরু হওয়া এ টুর্নামেন্টে এই প্রথম এশিয়ার বাইরের দল এলো। মরিশাস প্রকৃতপক্ষে আফ্রিকার মূল ভূখণ্ড থেকে দুই হাজার কিলোমিটার দূরে ভারত মহাসাগরের ভেতর একটা দ্বীপপুঞ্জ। সিশেলসও তাই। আফ্রিকার মূল ভূখণ্ড থেকে সেটি এক হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরের দ্বীপপুঞ্জ। বাংলাদেশ শুধু নয়, দক্ষিণ এশিয়াতেই প্রথমবার খেলতে এসেছে দলটি। তাদের চেনা চেনা বরং মরিশাস ও বুরুন্ডি। সহাকারী কোচ ডন এনাকোরা যেমন বলছিলেন, ‘বুরুন্ডি ও মরিশাস নিয়ে আমাদের ধারণা অছে, তবে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা বা ফিলিস্তিন আমাদের কাছে নতুন। তবে এখানে শুধু নতুন অভিজ্ঞতা নিতেই নয়, জিততেই এসেছি আমরা।’ দেশটির বর্তমান র্যাংকিং ঠিক ২০০, বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার প্লে অফে রুয়ান্ডার কাছে ১০ গোল হজম করেছে, নেশনস কাপের প্রাক-বছাইয়েও দক্ষিণ সুদানের কাছে হার। তুলনায় বুরুন্ডি শক্তিশালী।</p> <p>টুর্নামেন্টে ফিলিস্তিনের পরই দ্বিতীয় সেরা দল বুরুন্ডি ১৫১ র্যাংকিং নিয়ে। আফ্রিকান নেশনস কাপের সর্বশেষ আসরেও খেলেছে তারা। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গ্রুপ পর্বে অবশ্য ওঠা হয়নি তানজানিয়ার কাছে প্লে অফের শ্যুট আউটে হেরে যাওয়ায়। সে কারণেই হয়তো ফিফা উইন্ডোর বাইরের এই টুর্নামেন্টটি খেলতে এসছে দলটি। মূল জাতীয় দলই মাঠে নামানোর কথা তাদের। আট দলের মধ্যে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও ফিলিস্তিনই বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের দল। শ্রীলঙ্কা অবশ্য গুয়ামের কাছে হেরেও দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলছে গুয়াম প্লে অফের দ্বিতীয় লেগে শ্রীলঙ্কা সফর করতে না যাওয়ায়। ফিলিস্তিন নিজেদের গ্রুপে বাংলাদেশের মতোই আছে তলানিতে। তবে ৪ পয়েন্ট তাদের। শক্তিশালী উজবেকিস্তানকে হারিয়েছে তারা, রুখে দিয়েছে সৌদি আরবকেও। গতবার বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপে শিরোপা জেতানো কোচ নুরুদ্দীনই আছেন দায়িত্বে। তবে ঢাকায় আসেননি তিনি, মূল দলের জন্য খেলোয়াড় দেখতে পাঠিয়েছেন মাকরাম বাবৌবকে। উজবেকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ বাছাইয়ের খেলা একাদশের মাত্র একজন আছেন ঢাকায় আসা মাকরামের দলে। স্কোয়াডের ১২ জনই অভিষেকের অপেক্ষায়। অনূর্ধ্ব ২৩ বছর বয়সী আছেন ছয়জন। সে হিসাবে এই ফিলিস্তিনের বিপক্ষে আজ কিছু করে দেখানোর আশা করতেই পারে বাংলাদেশ। তাতে পুরো টুর্নামেন্টই সহজ হয়ে যাওয়ার কথা জামালদের জন্য। বঙ্গবন্ধুর নামে এই টুর্নামেন্ট হলেও আগের পাঁচবারের একবারও যে শিরোপা জেতা হয়নি লাল-সবুজের। এবার সে অপেক্ষা ফুরাবে? দলগুলো টুর্নামেন্টের আকর্ষণ না বাড়ালেও স্বাগতিকদের সম্ভাবনা বাড়িয়েছে—এটা ঠিক।</p> <p> </p>