<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যশোরের হরিহর নদ। হিসাবে ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। তটসহ চওড়া গড়ে ৭০ মিটার। কিন্তু বাস্তবে ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটারে নদের বেশিষ্ট্যই এখন আর নেই। একের পর এক বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় হরিহর যেন গুচ্ছপুকুরে পরিণত হয়েছে। কেবল মাছ চাষ নয়, কোথাও কোথাও শুকিয়ে ধান চাষের পাশাপাশি বালু তুলে বিক্রি করছেন দখলকারীরা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্প্রতি ঝিকরগাছা, মণিরামপুর ও যশোর সদর উপজেলার চার-পাঁচটি গ্রাম সরেজমিনে ঘুরে এবং তীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে দখলের এই চিত্র দেখা গেছে। দুই কিলোমিটার সরেজমিনে অর্ধশত পুকুরের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আর নদজুড়ে দেড় শর বেশি বাঁধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তীরবর্তী মানুষ ও দখলমুক্ত আন্দোলনকারীরা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="" height="417" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/03.March/31-03-2023/7900.jpg" style="float:left" width="560" />দখলকারীদের দাবি, বন্দোবস্ত নিয়ে নদীর জমি ব্যবহার করছেন তাঁরা। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, অবৈধভাবে নদী দখল করে রাখার কোনো সুযোগ নেই। খনন শুরু হলে উচ্ছেদ করা হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাউবো সূত্রে জানা গেছে, হরিহর নদটি ঝিকরগাছা উপজেলার কাটাখাল নামক স্থানে কপোতাক্ষ নদ থেকে উৎপত্তি হয়ে মণিরামপুর ও সদর উপজেলা দিয়ে কেশবপুর উপজেলার আপারভদ্রা নদীতে সংযুক্ত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে এ নদীর সীমানা নির্ধারণ করা হয়। ২০২১ সালের জুন মাসে নদের উজানে ১৫ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঝিকরগাছা উপজেলার কৃত্তিপুর ও মল্লিকপুর গ্রামের মাঝ বরাবর রয়েছে হরিহর নদের রেখা। নদটির পূর্ব তীর মল্লিকপুর এবং পশ্চিম তীর কীর্তিপুর গ্রাম। গত সোম ও মঙ্গলবার ওই অংশে সরেজমিনে দেখা যায়, নদজুড়ে বিশাল বিশাল পুকুর। কোথাও কোথাও ধান চাষ হচ্ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খোঁজ নিয়ে জানা গেল, একটি পুকুরের মালিক ঝিকরগাছা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর সাইফুল আলম সুজন। কীর্তিপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি। সেখানে গিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্রিটিশ আমল থেকে আমরা নদীর ওই জায়গা ভোগদখল করছি। আমাদের কাগজপত্র আছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেখান থেকে এগিয়ে মল্লিকপুর গ্রাম। এখানে নদের তটে কয়েকটি বাড়িঘর। সেখানেও নদের বুকে সারি ধরে পুকুর। গ্রামের মধ্যপাড়ায় কথা হয় প্রবীণ রওশন আরা বেগমের সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই নদীতি আমরা সাঁতার কাটিছি, মাছ ধরিছি। আর এখন নদীরি সব দখল কইরে পুকর বানায়ে ফেইলেছে। আমাগের পানিতি নামতিও দেয় না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কথা হয় মল্লিকপুর গ্রামের বাসিন্দা তাহের আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, দখলদারদের বাঁধের কারণে তাঁরসহ অনেক কৃষকের জমির ফসল একাধিকবার ডুবে নষ্ট হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একই উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামে নদের পারে গিয়ে যায়, এখানেও নদের বুকে পুকুরের পর পুকুর। একটি পুকুরে মাছের খাবার দিচ্ছিলেন জাহাঙ্গীর নামের মাঝবয়সী এক ব্যক্তি। তিনি জানান, নদের বুকে তাঁর পুকুরটির আয়তন তিন বিঘা। পুকুরে পাবদা মাছের চাষ করেছেন। নদের বুকে কিভাবে পুকুর করলেন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানতে চাইলে তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাপ-দাদাদের কাছ থেকে পাওয়া।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নদের পারে মণিরামপুর উপজেলার স্মরণপুর ও পটি গ্রামে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। নদের বুকজুড়ে সারি সারি পুকুর। কিছু কিছু পুকুরে নদের বুকে বাঁধ শক্ত করতে দখলদাররা গাছ লাগিয়েছেন। এসব গাছ এখন বিশাল আকার ধারণ করেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্মরণপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধ দিয়ে পানি শুকিয়ে নদের একাংশ থেকে এক্সকাভেটর দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। দুটি ট্রাক্টরের পেছনে জোড়া দেওয়া ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই বালু। সেই পুকুরের পাশেই নদের বুকে একটি মাছ চাষের পুকুরে দেওয়া হচ্ছে ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা পানি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেখানে কথা হয় পটি গ্রামের ইজাহার আলী নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁর নিজ গ্রাম পটি এবং স্মরণপুরে হরিহর নদের মধ্যে এমন ৫০টির মতো পুকুর হতে পারে। এক্সকাভেটর দিয়ে যে পুকুরটি খনন করা হচ্ছে তার মালিক ইকবাল সর্দার। আর পাশের যে পুকুরে পানি দেওয়া হচ্ছে সেখানে মাছ চাষ করেন আনছার সর্দার ও শমসের মোড়ল। এর বেশি তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইজাহার আলীর কথার সূত্র ধরে ওই দুই গ্রামের দুই কিলোমিটার নদের তীর ঘুরে ৫০ থেকে ৫৫টি পুকুরের অস্তিত্ব পাওয়া গেল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একই উপজেলার এড়েন্দা গ্রামে নদের মধ্যে দেখা গেল বড় বড় গভীর গর্ত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বৃদ্ধা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নদীর মধ্যি মেশিন লাগায়ে বালি তোলে। ভয় করে কখন যে বাড়িঘর ধইসে পড়ে। বালি যারা তোলে তারা ক্ষমতাবান। ভয়তে কাউরি কতি পারিনে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যশোর সদর উপজেলার নদের পারে গোয়ালদহ বাজার। এই এলাকায়ও নদ দখলের একই চিত্র। স্থানীয়রা জানায়, এখানে পাউবোর নদসংক্রান্ত একটি সাইনবোর্ড ছিল। দখলদাররা সেই সাইনবোর্ডও তুলে ফেলেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বিষয়ে যশোর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তাওহীদুল ইসলাম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উজানে নদের ১৫ কিলোমিটার খনন সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৩০ কিলোমিটার খননের জন্য একটি প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে সিএস ম্যাপ অনুযায়ী খনন করা হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p>