অবিলম্বে তাঁদের প্রত্যাহার করা না হলে কোনোভাবেই নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী ও রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের তিনবারের চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া তাঁর আবেদনে উল্লেখ করেন, ‘নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে গিয়ে আমি এবং আমার কর্মী-সমর্থকরা প্রতিনিয়ত গোলাম দস্তগীর গাজী এবং তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। তাঁর লোকেরা শুধু যে বাধা দিচ্ছে তা-ই নয়, আমার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় আয়েশা আক্তার নামের এক নারীকে মারধর করেছে। দাউদপুরে আমার অস্থায়ী নির্বাচনী প্রচারণা কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে। প্রচারণায় অংশ নেওয়া কর্মী-সমর্থকদের প্রতিনিয়ত গোলাম দস্তগীর গাজীর সন্ত্রাসীরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আর এই সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছে রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। শুধু হুমকিই নয়, কর্মীদের বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালাচ্ছে।’
শাহজাহান ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, ‘এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো আমার কর্মী-সমর্থকদের ভয় দেখানো, এলাকা থেকে বিতাড়িত করা এবং মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে। এই কাজে সরাসরি ইন্ধন দিচ্ছেন রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা এবং নারায়ণগঞ্জের এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল। আমি তাঁদের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করছি। তাঁদের দ্রুত প্রত্যাহার করা হোক।’
এসপি ও ওসির বিরুদ্ধে একপেশে ভূমিকার অভিযোগ এনেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলামও। তিনি তাঁর অভিযোগে বলেন, ‘প্রচারণায় অংশ নিয়ে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন স্থানে হামলা করছে। নারী কর্মীদের ওপরও আক্রমণ করছে। ভোটের পর গুম-খুনের হুমকি দিচ্ছে। জমি ও বাড়ি দখল করে এলাকাছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে। বেশির ভাগ জায়গায় লাঙল প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। গোলাম দস্তগীর গাজীর নিয়ন্ত্রিত সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা অস্ত্র উঁচিয়ে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে।’
সাইফুল তাঁর অভিযোগে আরো বলেন, ‘গোলাম দস্তগীর গাজী দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় তাঁর অর্থের অভাব নেই। মানুষের ভূমি দখল করে বিক্রি এবং অনৈতিক ব্যবসা-বাণিজ্য করে অঢেল টাকার মালিক হয়েছেন। এসব কালো টাকা দিয়ে নির্বাচনে জিততে সব আয়োজন করছেন তিনি। বিষয়টি এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল এবং ওসি দীপক চন্দ্র সাহাকে বলার পরও তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি তাঁরা। তা ছাড়া এলাকার সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করছেন রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। তিনি শুধু হুমকিই নয়, কর্মীদের বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো আমার কর্মী-সমর্থকদের ভয় দেখানো, এলাকা থেকে বিতাড়িত করা এবং মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে। অবিলম্বে এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল এবং ওসি দীপক চন্দ্র সাহাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে না দিলে ৭ জানুয়ারির ভোট প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
লাঙল প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, ‘গোলাম দস্তগীর গাজীকে নির্বাচনে জয়ী করার এজেন্ডা হাতে নিয়ে কাজ করছেন এসপি ও ওসি। আমি তাঁদের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করছি। অবিলম্বে তাঁদের প্রত্যাহার দাবি করছি।’
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের তিন প্রার্থীর অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রার্থীরা যাঁরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন, তাঁদের শোকজ করছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। এরপর জরিমানা ও মামলা করা হচ্ছে। আবার সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেও তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একাধিক ডিসি-এসপিকে বদলি করা হয়েছে। একইভাবে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থীর দেওয়া অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যা বলছেন এসপি এবং ওসি
নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এমন কোনো কাজ করিনি, যাতে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠতে পারে। যাঁরা এমন অভিযোগ করেছেন, তাঁর ঠিক বলেননি। ঢালাওভাবে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করা ঠিক নয়। অভিযোগকারীরা প্রমাণ দিক। দোষী হলে মেনে নেব।’
রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ সত্য নয়। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে নিয়মিত অভিযান চলছে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন
কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের কর্মীদের বিরুদ্ধে। গত সোমবার রাত দেড়টার দিকে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া গ্রামের ইউপি সদস্য মোশাররফ হোসেনের বাড়িতে অবস্থিত ওই ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় মোশাররফের বাড়িসহ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে সাধারণ মানুষ।
মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গত ২৯ ডিসেম্বর এই ক্যাম্প স্থাপনে বাধা দেয় রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সন্ত্রাসীরা। বাধা উপেক্ষা করে ক্যাম্প স্থাপন করায় ওই দিন রাতেই তারা ১৯টি চেয়ার নিয়ে যায় এবং গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরুদ্ধে ভোট করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়। সেখান থেকে ক্যাম্প না সরানোয় সোমবার গভীর রাতে তা পুড়িয়ে দেয়।’
‘গাজীর বিপক্ষে ভোট দিলে রাজাকার’
রূপগঞ্জের চনপাড়ার মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত স্বপ্না আক্তারের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর এক পথসভায় তিনি বক্তব্য দিচ্ছেন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘যেভাবে আমাদের নেতারা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা সেইভাবে কাজ করব। আমার কেন্দ্র হচ্ছে গাজী বিশ্ববিদ্যালয়। ওইখানে দুই হাজার ৯৮৫ ভোট আছে। এখান থেকে ১০টা ভোট যাতে কোনো দিকে না যায় আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করব মাঠে। আমাদের ১০টা ভোটও যদি অন্যদিকে যায়, তাইলে এই ১০ জন রাজাকার কোথা থেকে আসল? কারা? আমরা এটা চিহ্নিত করব নির্বাচনের পর। আমরা ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যাবেলা, গাজী সাবরে রফিক ভাইয়ের (রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান) পক্ষ থেকে পরাব বিজয়ের মালা।’
বিদেশি পিস্তলসহ গাজীর সমর্থক গ্রেপ্তার
গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থক মাহফুজকে বিদেশি পিস্তল, মাদকসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল নতুন বাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, মাহফুজের আপন বড় ভাই মাসুম সাত-আট মাস আগে গোলাকান্দাইল নতুনবাজার এলাকার মিল্লাতের ছেলে সানিকে হত্যা করেন। সেই হত্যা মামলার আসামি মাহফুজ। তিনি নতুনবাজার এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ।