এসপি এবং ওসির বিরুদ্ধে তিন প্রার্থীর অনাস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
এসপি এবং ওসির বিরুদ্ধে তিন প্রার্থীর অনাস্থা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের অভিযোগ এনে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল এবং রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহার প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন তিন প্রার্থী। গতকাল মঙ্গলবার তাঁরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, বর্তমান এসপি ও ওসির নেতৃত্বে রূপগঞ্জের নির্বাচন পরিচালিত হলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এভাবে চলতে থাকলে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে সাহস পাবেন না।

নির্বাচন কমিশনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সুষ্ঠু ভোটের স্বার্থে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের এসপি ও রূপগঞ্জের ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

গত সোমবার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাহজাহান ভূঁইয়ার নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়া হয়েছে। রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের কর্মীদের এর জন্য অভিযুক্ত করেছেন শাহজাহান ভূঁইয়ার কর্মীরা। রফিক এ আসনে নৌকার প্রার্থী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পক্ষে কাজ করছেন।

এ ছাড়া গাজীর বিপক্ষে ভোট দিলে তাঁকে রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করার হুমকি দিয়েছেন তাঁর এক নারী কর্মী।

সিইসির কাছে অভিযোগ

নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দেওয়া প্রার্থীরা হলেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ও দলটির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, স্বতন্ত্র প্রার্থী রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান ভূঁইয়া এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম।

তৈমূর আলম খন্দকার তাঁর অভিযোগে উল্লেখ করেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর নিয়ন্ত্রিত সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা আমাদের কর্মীদের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে।

প্রতিবাদ করতে গেলেই তাদের ওপর নেমে আসছে বিভীষিকাময় নির্যাতন। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিতে গেলে তা নেওয়া হচ্ছে না। উল্টো ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এসব বিষয়ে বারবার নারায়ণগঞ্জের এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল এবং রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহাকে জানানোর পরেও তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। আমি তাঁদের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করছি।
অবিলম্বে তাঁদের প্রত্যাহার করা না হলে কোনোভাবেই নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। 

স্বতন্ত্র প্রার্থী ও রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের তিনবারের চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া তাঁর আবেদনে উল্লেখ করেন, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে গিয়ে আমি এবং আমার কর্মী-সমর্থকরা প্রতিনিয়ত গোলাম দস্তগীর গাজী এবং তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। তাঁর লোকেরা শুধু যে বাধা দিচ্ছে তা-ই নয়, আমার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় আয়েশা আক্তার নামের এক নারীকে মারধর করেছে। দাউদপুরে আমার অস্থায়ী নির্বাচনী প্রচারণা কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে। প্রচারণায় অংশ নেওয়া কর্মী-সমর্থকদের প্রতিনিয়ত গোলাম দস্তগীর গাজীর সন্ত্রাসীরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আর এই সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছে রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। শুধু হুমকিই নয়, কর্মীদের বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালাচ্ছে।

শাহজাহান ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো আমার কর্মী-সমর্থকদের ভয় দেখানো, এলাকা থেকে বিতাড়িত করা এবং মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে। এই কাজে সরাসরি ইন্ধন দিচ্ছেন রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা এবং নারায়ণগঞ্জের এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল। আমি তাঁদের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করছি। তাঁদের দ্রুত প্রত্যাহার করা হোক।

এসপি ও ওসির বিরুদ্ধে একপেশে ভূমিকার অভিযোগ এনেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলামও। তিনি তাঁর অভিযোগে বলেন, প্রচারণায় অংশ নিয়ে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন স্থানে হামলা করছে। নারী কর্মীদের ওপরও আক্রমণ করছে। ভোটের পর গুম-খুনের হুমকি দিচ্ছে। জমি ও বাড়ি দখল করে এলাকাছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে। বেশির ভাগ জায়গায় লাঙল প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। গোলাম দস্তগীর গাজীর নিয়ন্ত্রিত সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা অস্ত্র উঁচিয়ে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে।

সাইফুল তাঁর অভিযোগে আরো বলেন, গোলাম দস্তগীর গাজী দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় তাঁর অর্থের অভাব নেই। মানুষের ভূমি দখল করে বিক্রি এবং অনৈতিক ব্যবসা-বাণিজ্য করে অঢেল টাকার মালিক হয়েছেন। এসব কালো টাকা দিয়ে নির্বাচনে জিততে সব আয়োজন করছেন তিনি। বিষয়টি এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল এবং ওসি দীপক চন্দ্র সাহাকে বলার পরও তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি তাঁরা। তা ছাড়া এলাকার সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করছেন রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। তিনি শুধু হুমকিই নয়, কর্মীদের বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো আমার কর্মী-সমর্থকদের ভয় দেখানো, এলাকা থেকে বিতাড়িত করা এবং মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে। অবিলম্বে এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল এবং ওসি দীপক চন্দ্র সাহাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে না দিলে ৭ জানুয়ারির ভোট প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

লাঙল প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, গোলাম দস্তগীর গাজীকে নির্বাচনে জয়ী করার এজেন্ডা হাতে নিয়ে কাজ করছেন এসপি ও ওসি। আমি তাঁদের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করছি। অবিলম্বে তাঁদের প্রত্যাহার দাবি করছি।

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের তিন প্রার্থীর অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রার্থীরা যাঁরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন, তাঁদের শোকজ করছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। এরপর জরিমানা ও মামলা করা হচ্ছে। আবার সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেও তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একাধিক ডিসি-এসপিকে বদলি করা হয়েছে। একইভাবে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থীর দেওয়া অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

যা বলছেন এসপি এবং ওসি

নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো কাজ করিনি, যাতে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠতে পারে। যাঁরা এমন অভিযোগ করেছেন, তাঁর ঠিক বলেননি। ঢালাওভাবে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করা ঠিক নয়। অভিযোগকারীরা প্রমাণ দিক। দোষী হলে মেনে নেব।

রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ সত্য নয়। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে নিয়মিত অভিযান চলছে।

 

স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন

কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের কর্মীদের বিরুদ্ধে। গত সোমবার রাত দেড়টার দিকে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া গ্রামের ইউপি সদস্য মোশাররফ হোসেনের বাড়িতে অবস্থিত ওই ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় মোশাররফের বাড়িসহ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে সাধারণ মানুষ।

মোশাররফ হোসেন বলেন, গত ২৯ ডিসেম্বর এই ক্যাম্প স্থাপনে বাধা দেয় রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সন্ত্রাসীরা। বাধা উপেক্ষা করে ক্যাম্প স্থাপন করায় ওই দিন রাতেই তারা ১৯টি চেয়ার নিয়ে যায় এবং গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরুদ্ধে ভোট করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়। সেখান থেকে ক্যাম্প না সরানোয় সোমবার গভীর রাতে তা পুড়িয়ে দেয়।

 

গাজীর বিপক্ষে ভোট দিলে রাজাকার

রূপগঞ্জের চনপাড়ার মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত স্বপ্না আক্তারের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর এক পথসভায় তিনি বক্তব্য দিচ্ছেন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, যেভাবে আমাদের নেতারা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা সেইভাবে কাজ করব। আমার কেন্দ্র হচ্ছে গাজী বিশ্ববিদ্যালয়। ওইখানে দুই হাজার ৯৮৫ ভোট আছে। এখান থেকে ১০টা ভোট যাতে কোনো দিকে না যায় আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করব মাঠে। আমাদের ১০টা ভোটও যদি অন্যদিকে যায়, তাইলে এই ১০ জন রাজাকার কোথা থেকে আসল? কারা? আমরা এটা চিহ্নিত করব নির্বাচনের পর। আমরা ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যাবেলা, গাজী সাবরে রফিক ভাইয়ের (রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান) পক্ষ থেকে পরাব বিজয়ের মালা।

 

বিদেশি পিস্তলসহ গাজীর সমর্থক গ্রেপ্তার

গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থক মাহফুজকে বিদেশি পিস্তল, মাদকসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল নতুন বাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানায়, মাহফুজের আপন বড় ভাই মাসুম সাত-আট মাস আগে গোলাকান্দাইল নতুনবাজার এলাকার মিল্লাতের ছেলে সানিকে হত্যা করেন। সেই হত্যা মামলার আসামি মাহফুজ। তিনি নতুনবাজার এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঢাকার কেরানীগঞ্জ

জুলাই আন্দোলনে শহীদ সায়েমের কবর ভাঙচুর

কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি
কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি
শেয়ার
জুলাই আন্দোলনে শহীদ সায়েমের কবর ভাঙচুর

ঢাকার কেরানীগঞ্জে জুলাই আন্দোলনে শহীদ সায়েমের কবর ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার জুমার নামাজের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম বেশ কিছু লোক নিয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলার তেঘরিয়া ইউনিয়নের রসুলপুর কবরস্থানে যান। পরে সেখানে তাঁরা শহীদ সায়েমের নির্মীয়মাণ কবরটি ভাঙচুর করেন।

শহীদ সায়েমের মা শিউলি আক্তার জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তাঁর এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে সায়েম গত ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কাজলা টোল প্লাজার সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। এরপর তাকে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ার রসুলপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। গত দুই দিন আগে উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে সরকারি খরচে কবরটি পাকা করার কাজও সম্পন্ন হয়। এ খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন কবরটি ভেঙে দিয়েছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শহীদ সায়েমের মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

মন্তব্য

বরিশালে ধর্ষণচেষ্টা মামলার আসামিকে পিটিয়ে হত্যা

নিজস্ব প্রতি‌বেদক, ব‌রিশাল
নিজস্ব প্রতি‌বেদক, ব‌রিশাল
শেয়ার
বরিশালে ধর্ষণচেষ্টা মামলার আসামিকে পিটিয়ে হত্যা

রিশাল নগরে এক শিশু ধর্ষণচেষ্টা মামলার আসামিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় লোকজনের বিরুদ্ধে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম সুজন (২৩)। তিনি শহরের ধান গবেষণা রোডে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

পেশায় অটোরিকশাচালক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় লোকজন সুজনকে পিটিয়ে আহত করে। পরে তারা গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে থানায় হস্তান্তর করে। পুলিশ তাঁকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, শুক্রবার ধান গবেষণা রোডের এক শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন সুজন। এ ঘটনায় ওই দিনই শিশুর পরিবার থানায় সুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা করে। ঘটনার পর থেকে সুজন আত্মগোপনে ছিলেন। গতকাল সন্ধ্যার দিকে ধান গবেষণা রোডে স্থানীয় লোকজন তাঁকে ধরে বেধড়ক পিটুনি দিয়ে থানায় হস্তান্তর করে।

থানা পুলিশ সুজনকে রাত ৮টার দিকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।

মন্তব্য

ঢাকায় জাতিসংঘ হাউস উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঢাকায় জাতিসংঘ হাউস উদ্বোধন

সফররত জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল শনিবার ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক কার্যালয়ের নতুন অফিসের (ইউএন হাউস ইন বাংলাদেশ) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সকালে এই উদ্বোধন শেষে বাংলাদেশে জাতিসংঘের কান্ট্রি টিমের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে তিনি ভবনটি পরিদর্শন করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বাংলাদেশ-জাতিসংঘ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতিসংঘ ভবন প্রাঙ্গণে আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন গুতেরেস। তিনি জাতিসংঘের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানেও অংশ নেন।

পরে তিনি জাতিসংঘের বাংলাদেশ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয় ও গৃহায়ণ এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস।

বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের কথা স্মরণ করে গুতেরেস বলেন, তারা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এ সময় তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা করেন।

মন্তব্য

কক্সবাজারে সমন্বয়কের বাবাকে গুলি করে হত্যা

বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার
বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার
শেয়ার
কক্সবাজারে সমন্বয়কের বাবাকে গুলি করে হত্যা
হাবিবুল হুদা চৌধুরী

কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের গুলিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সাবেক সমন্বয়কের বাবা নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, গত শুক্রবার রাতে ইসলামাবাদ ইউনিয়নের সিকদারপাড়ায় জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে সৃষ্ট সংঘর্ষে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

ঈদগাঁওয়ে নিহত ব্যক্তির নাম হাবিবুল হুদা চৌধুরী ওরফে কালু (৬০)। তিনি ইসলামাবাদ ইউনিয়নের সিকদারপাড়ার শামসুল হুদা চৌধুরীর ছেলে।

তাঁর ছেলে সাদিদুল হুদা ঈদগাঁও উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক। নিহতের ছেলে অ্যাডভোকেট আবিদুল হুদা ও সাদিদুল হুদা জানান, তাঁদের সঙ্গে ইসলামাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাকদের জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। এর জের ধরে গত শুক্রবার পৌনে ১০টার দিকে আবদুর রাজ্জাকের লোকজন হাবিবুলের বাড়িতে আক্রমণ করে।

আবিদুল ও সাদিদুল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ নেতা কিছুদিন আগে জেলখানা থেকে বেরিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাঁদের বাবাকে হত্যা করেছেন।

হামলাকারীরা তাঁদের ঘরে গিয়ে বেশ কয়েকটি গুলি ছোড়ে। এ সময় তাঁদের ঘরের আরো দুই নারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁরা জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

প্রতিপক্ষের রিদওয়ানুল হক জানান, তাঁদের কেনা একটি জায়গা নিয়ে হাবিবুল হুদাদের সঙ্গে বিরোধ চলছে।

এর জের ধরে শুক্রবার দুপুরে ঈদগাঁও থানা পুলিশের উপস্থিতিতে প্রতিপক্ষ জায়গাটি দখলের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় তাঁর ভাই সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বাধা দিলে পুলিশের সামনে তাঁকে মারধর করা হয়। পরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। এর জের ধরেই রাতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয় এবং হাবিবুল হুদা চৌধুরী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মারা গেছেন বলে রিদওয়ানুল পরে জেনেছেন।

এদিকে সাবেক সমন্বয়ক সাদিদুলের বাবাকে হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবার মধ্যরাতের পর ছাত্ররা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি করেছেন।

ঈদগাঁও থানার ওসি মশিউর রহমান জানান, জমির বিরোধের জের ধরে সৃষ্ট সংঘর্ষে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। হামলাকারীরা সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের লোক বলে তিনি প্রাথমিক তথ্যে জেনেছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ