এবারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে ৫৬টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, কার্যালয় ও সংস্থা সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রায় ৩৫০টি প্রস্তাব এসেছে। গত বছর এই প্রস্তাবের সংখ্যা ছিল ২৪৫টি। ফলে গত বছরের চেয়ে এবার এক শর বেশি প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। প্রতিবছর বেশির ভাগ প্রস্তাব থাকে ডিসি ও ইউএনওদের ক্ষমতা বা দায়িত্বের পরিধি বাড়ানো ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসংক্রান্ত।
এবারও প্রস্তাব বাড়ার সঙ্গে ক্ষমতার পরিধি ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রসঙ্গ বেশি এসেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এবারের ডিসি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিবরা তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন ও পরামর্শ দেবেন। এ জন্য সম্মেলনের প্রথম দিন আগামী রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ‘উন্নয়নে মাঠ প্রশাসন’ শীর্ষক এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে।
আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিবরা।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা কালের কণ্ঠকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে তাঁকে জানানো হয়েছে। প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।
ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা করব। এতে সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে একটা আন্ত সংযোগ তৈরি হবে।
মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিবরা তাঁদের বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে পারেন। প্রয়োজনীয় বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। এতে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপকৃত হবেন।
ডিসি সম্মেলনের গুরুত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিসি সম্মেলনের আলোচনাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিরা মাঠের বাস্তবতা জানার সুযোগ পেয়ে থাকেন। আবার ডিসিরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তাত্ক্ষণিক কিছু নির্দেশনা পান।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. আমিন উল আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিবদের সঙ্গে আলোচনাসভার বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদসচিব নিজেই দেখভাল করছেন। এবারের ডিসি সম্মেলনে প্রায় সাড়ে তিন শ প্রস্তাব এসেছে। এসব প্রস্তাব নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
আগামী ৩ থেকে ৬ মার্চ ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর এই সম্মেলন তিন দিন হলেও এবার চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিসি সম্মেলন-২০২৪-এর উদ্বোধন করবেন এবং ভাষণ দেবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মাঠ প্রশাসন সম্পৃক্ত বিষয়াদি নিয়ে মুক্ত আলোচনা হবে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের। প্রথম কার্য অধিবেশন হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সম্পর্কে। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। এবারের ডিসি সম্মেলনে মোট ৩০টি অধিবেশন রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দিন রয়েছে সাতটি, দ্বিতীয় দিন ৯টি, তৃতীয় দিন সাতটি ও চতুর্থ দিন সাতটি অধিবেশন। প্রথম দিন স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, সমাজকল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তিনটি অধিবেশন হবে। একইভাবে অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন ডিসি-বিভাগীয় কমিশনাররা। এ সময় প্রতি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিব এবং অধিদপ্তর ও সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতি জেলার অর্থনীতির উন্নয়নে বিশেষ করে আলোচনা হবে। জিআই পণ্য ব্র্যান্ডিং করা, বিদেশি শ্রমিকদের টাকা সঠিক মাধ্যমে আসা, ইকোনমিক জোন ও বিসিক শিল্পনগরীর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ জন্য শেষদিন হবে ফিডব্যাক অধিবেশন ও সম্মেলনের মূল্যায়ন বিষয়ে একটি অধিবেশন রয়েছে। ডিসিরা সম্মেলনে কী পেলেন এবং মাঠে গিয়ে কী কাজ করবেন সে বিষয়ে একটি পরিকল্পনা ঠিক করে দেওয়া হবে।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ডিসি-বিভাগীয় কমিশনারদের সাক্ষাৎ হচ্ছে না
প্রতিবছর ডিসি সম্মেলনের সময় ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি মাঠ প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বেশ কিছু নির্দেশনা দেন। কিন্তু এবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ডিসি-বিভাগীয় কমিশনাররা সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন না। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শনিবার রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। আর ডিসি সম্মেলন শুরু হবে পরদিন রবিবার সকাল সাড়ে ৮টায়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের সাক্ষাতের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপতি দেশের বাইরে যাওয়ায় সম্ভব হচ্ছে না। জানা যায়, ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা এবার সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং মতবিনিময় করবেন। এরপর নৈশ ভোজে অংশ নেবেন। শেষ দিন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ সময় বিচার বিভাগ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন প্রধান বিচারপতি। এরপর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নৈশ ভোজে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে শেষ হবে এবারের ডিসি সম্মেলন।