ঢাকা, বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫
৫ চৈত্র ১৪৩১, ১৮ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫
৫ চৈত্র ১৪৩১, ১৮ রমজান ১৪৪৬

গ্রাহকদের ‘নিখোঁজ’ দেখিয়ে ১২ কোটি টাকা গায়েব

নাসরুল আনোয়ার, হাওরাঞ্চল
নাসরুল আনোয়ার, হাওরাঞ্চল
শেয়ার
গ্রাহকদের ‘নিখোঁজ’ দেখিয়ে ১২ কোটি টাকা গায়েব

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, একই কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল হাসানের বিরুদ্ধেও।

এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, নিজ কার্যালয়ের লেজার বই থেকে বিপুলসংখ্যক গ্রাহককে নিখোঁজ দেখিয়ে ১২ কোটি টাকার বেশি অর্থ গায়েব; যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া ১০ কিলোমিটার বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ; গ্রাহকদের জন্য বিনা মূল্যে বরাদ্দ প্রি-পেইড মিটার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায়।

নির্বাহী প্রকৌশলীর এসব দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে বিউবো।

তবে তদন্ত কমিটিতে তৌহিদুল হাসান নামে এমন একজন সহকারী প্রকৌশলীকে রাখা হয়েছে, যাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে। এই প্রকৌশলীর কারণে কমিটির তদন্তকাজ ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

লেজার বই থেকে হিসাব উধাও

কালের কণ্ঠর এ প্রতিবেদকের কাছে বাজিতপুর বিউবো কার্যালয়ের লেজার বই থেকে উধাও ২৮১ জন গ্রাহকের তথ্য থাকা কাগজপত্র এসেছে। এতে দেখা যায়, এসব গ্রাহকের কাছে পাওনা প্রায় ১১ কোটি ২৪ লাখ টাকার পুরোটাই উধাও।

এ ছাড়া বিউবোর তিন কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত মাসিক অপারেশন ডাটা বা এমওডি ফরমে আরো প্রায় এক কোটি টাকা গায়েবের তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। সব মিলিয়ে ১২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা নয়ছয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, উচ্চ পর্যায়ের বিভাগীয় তদন্তে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।

বিউবোর ২০২২ সালের মে ও জুন মাসের মাসিক অপারেশন ডাটা (এমওডি) ঘেঁটে জানা যায়, দুই মাসে অফিসের লেজার থেকে ৯৯ লাখ ১০ হাজার ১৬ টাকা বাদ দেওয়া হয়।

নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ আলী, সহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল হাসান ও উপসহকারী প্রকৌশলী লিটন চন্দ্র রায় স্বাক্ষরিত এই (এমওডি নং-৩১০/১) ফরম থেকে জানা যায়, মে মাসে বাদ দেওয়া হয় ৬১ লাখ ৩৯ হাজার ১৭৭ টাকা ও জুনে বাদ দেওয়া হয় ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ৮৩৯ টাকা।

সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ভুয়া গ্রাহকদের নামে বিল করে সিস্টেম লস কমানোর চেষ্টার ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে জানা যায়, সিস্টেম লস কমাতে নির্বাহী প্রকৌশলী ১১টি মসজিদের নামে ছয় লাখ ৭৭ হাজার ইউনিট বিল করেছেন। সাত টাকা ইউনিট হিসাবে এর মূল্য চার কোটি ৭৩ লাখ ৯ হাজার টাকার বেশি। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে এ টাকার পুরোটাই লেজার থেকে গায়েব করা হয়।

আবার একই বছরের জুনে ১৭টি সেচ প্রকল্পের ম্যানেজারের নামে চার লাখ ৫৩ হাজার ৬১০ ইউনিট বিল করা হয়। চার টাকা ১৬ পয়সা হিসাবে যার মূল্য দাঁড়ায় এক কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার ১৭ টাকা। বিলের এ টাকাও লেজার থেকে গায়েব।

বিপিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, মহাব্যবস্থাপকসহ উচ্চ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী বিলের লেজার শূন্য করার এখতিয়ার রাখেন না। এটা অবৈধ। যথাযথ অনুমোদন ছাড়া সঞ্চালন লাইনও সম্প্রসারণ করতে পারেন না।  

বৈধতা ছাড়াই সঞ্চালন লাইন

বাজিতপুরে পাউবোর আওতাধীন এলাকায় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন বা দরপত্র আহবান ছাড়াই কমপক্ষে দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন (১১-কেভি) বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর একটি উপজেলার পিরিজপুর বাজার থেকে ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে গজারিয়া পর্যন্ত। অপরটি সরারচর-পিরিজপুর সড়কের মধ্য দলদলিয়া সেতু থেকে বিলপাড় জোয়ারিয়া পর্যন্ত। প্রথমটি ৬০ খুঁটির এবং দ্বিতীয়টি প্রায় ১৬ খুঁটির লাইন। দুটি লাইনের দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিমি।

পিডিবির বাজিতপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মর আলী দাবি করেছেন, লাইনের জন্য কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনের সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন ডিও লেটার (আধাসরকারিপত্র)  দিয়েছেন। এমপি সাহেবের সম্মান রক্ষার জন্যই লাইনটি করা হয়েছে।

এমপি মো. আফজাল হোসেন ডিও লেটার দেওয়ার কথা অস্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, এই অননুমোদিত লাইনের জন্য আমি ডিও লেটার দিইনি। না বুঝে কখনোই কোনো ডিও লেটার দিই না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষ সুবিধা নিয়ে আরআরপি ইউনিক ফুড মিলে সংযোগ দিতে টেন্ডার ছাড়াই ৬০ খুঁটির লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলেছে, এ ক্ষেত্রে ঘুষ লেনদেন হয়েছে কমপক্ষে ৩৯ লাখ টাকা। লাইনটি বিউবোর প্রকল্পের আওতাভুক্ত নয়। এ ব্যাপারে কোনো দরপত্রও আহবান করা হয়নি।

বিউবোর তালিকাভুক্ত ঠিকাদার মেসার্স রায় ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ছানা রায় বলেন, টেন্ডার ছাড়া লাইন হয় কিভাবে?

বিউবোর বাজিতপুর অফিসের লাইন হেলপার দুলাল ফরাজীর ভাষ্য, আরআরপির ম্যানেজার সাদেক তাঁর সঙ্গে প্রথমে লাইনটি নেওয়ার ব্যাপারে কথা বলেন। পরে তাঁকে বাদ দিয়ে সাদেক আরেক লাইন হেলপার মনিরের মাধ্যমে সরাসরি নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে চুক্তি করেন।

তবে আরআরপির ব্যবস্থাপক এ বি এম সাদেকুর রহমান বলেন, বিশেষ এ লাইনের জন্য তাঁর কম্পানি কোনো ঘুষ লেনদেন করেনি। ব্যাংকে কেবল সংযোগ নেওয়ার টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। শুধু আরআরপি পর্যন্ত লাইন টানার কারণ জানতে চাইলে তিনি নিরুত্তর থাকেন।

দেখা যায়, বিলপাড় জোয়ারিয়ার লাইনটির দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিমি। প্রায় অর্ধেক লাইনের তারই গাছে বেঁধে টানানো। আবার পাঁচ-ছয় ফিট উঁচু আরসিসি পিলারেও লাইনের তার বাঁধা। স্থানীয়রা বলছেন, হাতের নাগালের কাছেই লাইনের তার থাকায় যেকোনো মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

জোয়ারিয়া হাটের রাইস মিল মালিক শফিকুল ইসলাম জানান, লাইনটি নিতে তাঁদের সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এই লাইন থেকেই তিনটি সেচ প্রকল্প ও একটি পোলট্রি ফার্ম চালানো হচ্ছে। খুঁটি ও তারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম পিডিবি দিয়েছে। অফিসের লাইন সাহায্যকারী (হেলপার) মনির হোসেন লাইনের কাজ করে দিয়েছে।

যাদের টাকা লেজার থেকে উধাও

অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুৎ চুরির কারসাজি সামলাতে নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের নামে ভুয়া ইউনিট দেখিয়ে মোটা অঙ্কের বিদ্যুৎ বিল করে তা পরে মুছে দেওয়া হয়। অনেকে এ কারসাজির কথা জানেনও না।

উপজেলার লৌহগাঁওয়ের কৃষক মো. নান্নু মিয়া একটি সেচ প্রকল্প চালাতেন। তিন বছর আগেই তিনি সেচ প্রকল্পের লাইন (গ্রাহক নং-৭৩২৯৪৯৪০) বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর নামে ২০২২ সালের জানুয়ারি-এপ্রিল এ চার মাসে মোট তিন লাখ ৯৩ হাজার ৫৪৮ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ দেখিয়ে ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৪ হাজার বিল করা হয়েছে। এ তথ্য মো. নান্নু মিয়ার কাছে নেই।

চার মাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকার বিল এসেছে শুনে কৃষক মো. নান্নু মিয়া আকাশ থেকে পড়েন। তিনি জানান, এর আগের বছরই (২০২১) বোরো মৌসুম শেষে প্রকল্প বন্ধ করে দেন। এরপর আর চালাননি। এত টাকা বিল করায় তিনি বলেন, আমি তো মিটার জমা দিয়া লাইন বন্ধ কইরা দিছি। আমার নামে বিল আইব ক্যান?

উপজেলার হাওরপারের জেলেপল্লীর কচুয়াখোলা গ্রামের স্বপন চন্দ্র দাসের সেচ প্রকল্পের অনুকূলে (গ্রাহক নং-৭৩২৫৮১০৭ ও ৭৩২৫৮০৯৪) দুটি সংযোগে বিল করা হয় মোট এক লাখ ৯০ হাজার ইউনিট। যার মূল্য ৯ লাখ ৬৮ হাজার ৬৬৬ টাকা। স্বপন চন্দ্র দাসের তথ্য মতে, কর্মকর্তারা তাঁর নামে আসা বিলের টাকার মোটা অঙ্কের ভাগ চেয়েছিলেন। তিনি দিতে রাজি না হওয়ায় পরে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন। 

কুকরারাই গ্রামের কৃষক মো. ফজলু মিয়ার নামে (গ্রাহক নং-৭৩২৫৮৪৯৯) বিল করা হয় এক লাখ ৬৪ হাজার ৩৩৩ ইউনিটের। যার মূল্য ৯ লাখ ৬১ হাজার ৮৪৫ টাকা। এই দুজনের লেজার থেকেও টাকা বাদ দেওয়া হয়েছে।

কথিত নিখোঁজ গ্রাহকদের ভুয়া তালিকা

অফিসের লেজার বুকের কোটি কোটি টাকা রহস্যজনকভাবে গায়েবের ঘটনা নিয়ে কালের কণ্ঠ অনুসন্ধান শুরুর পর বাউবো বাজিতপুর অফিস কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। তারা তৎপর হয়ে ২৮৭ জন কথিত নিখোঁজ গ্রাহকের একটি তালিকা তৈরি করে বিউবোর কেন্দ্রীয় মহাব্যবস্থাপকের (বাণিজ্যিক পরিচালন) কার্যালয়ে পাঠিয়েছে। এই তালিকাটিও কালের কণ্ঠর হাতে এসেছে।

প্রি-পেইড মিটারে ঘুষের অভিযোগ

বাজিতপুর বিউবোর তথ্য অনুযায়ী, সেখানে গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। গ্রাহকদের মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য দেওয়া প্রি-পেইড মিটার থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, মিটার চার্জ বাবদ প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে তিন-চার হাজার টাকা। অফিসের জন্য বরাদ্দ প্রায় চার হাজার মিটার থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে।

সহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল হাসানের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বাজিতপুর পৌর শহরের মথুরাপুরের গ্রাহক কৃষক মো. বিল্লাল মিয়া বলেন, অফিসের ইঞ্জিনিয়ার তৌহিদ স্যার আমার বাড়িতে দুইটা প্রি-পেইড মিটার পাল্টে দিয়ে আট হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল হাসান বলেন, বললেই তো আর হলো না। প্রমাণ দেখাক তারা।

নির্বাহী প্রকৌশলীর অনিয়ম তদন্তে কমিটি

নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে বিপিডিবির মহাব্যবস্থাপকের দপ্তর (বাণিজ্যিক পরিচালন) চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এতে বিউবোর ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক চন্দন কুমার দে ও ঢাকার উপপরিচালক মাকসুদা খাতুনকে যথাক্রমে কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব করা হয়েছে।

বিউবো ঢাকার এনার্জি অডিটিংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক চৌধুরী হাসান শরীফ ও বাজিতপুর অফিসের সহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল হাসানকে কমিটিতে সদস্য রাখা হয়। কমিটিকে সব অভিযোগ তদন্ত করে সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কমিটির আহ্বায়ক চন্দন কুমার দে গত শুক্রবার কালের কণ্ঠকে জানান, কমিটি তদন্ত কাজ শুরু করেছে। যথাসময়ে প্রতিবেদন  দেওয়া হবে। কমিটির এক সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার তথ্য পেয়ে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।  

অভিযোগের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর ভাষ্য

নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ আলী তাঁর বিরুদ্ধে তোলা অনিয়ম ও দুর্নীতির সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। দরপত্র আহবান না করে এবং যথাযথ অনুমোদন না নিয়ে ১০ কিমি সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এর একটি লাইন বার্ষিক কর্মপরিকল্পনায় (এপিপি) আছে।

লেজার বুক থেকে কোন ক্ষমতাবলে কোটি কোটি টাকা উধাও করলেন? কাজটি কি অবৈধ নয়?

এমন প্রশ্নের উত্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, এগুলো টেম্পরারিলি ডিস-কানেক্টেড  (সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন) করে রাখা হয়েছে। বিল মওকুফ করা হয়নি। এসব হচ্ছে পুঞ্জীভূত বকেয়া। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তথা বোর্ডের নির্দেশে লেজার বুক জিরো করে রাখা হয়েছে।

লেজার বুক খালি করার বিষয়ে বোর্ডের নির্দেশের কপি চাইলে তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন। এ ছাড়া দাপ্তরিক কোনো নির্দেশের কপি দেখাতে রাজি হননি তিনি।

এ বিষয়ে বিউবোর ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল-২) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, লেজার বুক শূন্য করে দেওয়ার জন্য কোনো নির্দেশনা নেই।

বিউবোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভাষ্য

বিউবোর সূত্র জানায়, লাইনটি বৈধ ও অনুমোদিত হলে ১২ মিটার উচ্চতার বেশি উঁচু খুঁটি স্থাপনের কথা নয়। এ ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে।

এ বিষয়ে বিউবোর ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল-১) এ কে এম জসীম উদ্দিন বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ার বাইরে এত বড় সঞ্চালন লাইন নির্মাণের সুযোগ নেই। এটি অবৈধ।

বিউবোর চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের চিফ স্টাফ অফিসার (সিএসও) প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, বিনা টেন্ডারে বড় কোনো সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। লেজার শূন্য করারও কোনো এখতিয়ার নেই তাঁর (নির্বাহী প্রকৌশলীর)।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বিশেষ লেখা

বাংলাদেশ কি সত্যিই খাদের কিনারে?

    অদিতি করিম
শেয়ার
বাংলাদেশ কি সত্যিই খাদের কিনারে?

বিলেতের প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক হান্না এলিস পিটারসেন সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত্ হয়। এই সব কিছু মিলিয়ে সম্প্রতি তিনি দ্য গার্ডিয়ানে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এই প্রতিবেদনটি দেশে-বিদেশে সাড়া ফেলেছে।

এই প্রতিবেদনের এক জায়গায় হান্না বলেছেন, ঢাকার রাজপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তাঁর মনে হয়েছে, বাংলাদেশ এখন খাদের কিনারে।

তাঁর এই সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনটি নিয়ে এ দেশের রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো বটেই, বিভিন্ন রাজনৈতিক আলোচনায়ও হান্না এলিস পিটারসেনের এই উক্তিটি নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। অনেক রাজনীতিবিদ তাঁর উক্তিকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের সংকট মোকাবেলার জন্য আশু এবং জরুরি পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছেন।

বাস্তবতা কী বলে? বাংলাদেশ কি সত্যি খাদের কিনারে, নাকি হান্না এলিস পিটারসেনের বক্তব্য একটু বাড়াবাড়ি?

এ কথা ঠিক যে, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন সরকার খুব একটা স্বস্তিতে নেই। এই সরকারের মধুচন্দ্রিমা সময় পার হয়েছে। এখন এই সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশার চাপ দিন দিন বাড়ছে। প্রত্যাশা পূরণ না হলে হতাশাও তৈরি হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে।

বাংলাদেশের মানুষ ৫ আগস্টের পর অনেক বড় রকম একটা প্রত্যাশার ফানুস নিয়ে নতুন সরকারের দিকে তাকিয়ে ছিল। ১৫ বছরের দম বন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তির পর এ দেশের জনগণ তাদের পুঞ্জীভূত বঞ্চনার অবসান চাচ্ছে খুব দ্রুত। আর এ কারণেই দাবি-দাওয়ার চাপ অনেক বেশি। বিশেষ করে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের গত ১৭ বছর জমে থাকা অভাব-অভিযোগ, বঞ্চনা, নিপীড়ন ইত্যাদি পূরণের জন্য তারা চটজলদি পথ খোঁজে রাজপথে নামার মাধ্যমে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর এই সরকার সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে তা হলো কথায় কথায় রাজপথ দখল এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়ক অবরোধ।

এটি জনজীবনকে রীতিমতো অতিষ্ঠ করে তোলে। বিভিন্ন সড়ক অবরোধ হওয়ার ফলে মানুষের কর্মজীবনে এক ভয়ংকর বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হয়। আমরা জানি যে শেখ হাসিনার পতনের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এই বাহিনীর একটা বড় অংশ দলীয়করণের কারণে রীতিমতো আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। অনেকে গণ-অভ্যুত্থানের পর জনরোষের ভয়ে পালিয়ে যায়। ফলে পুলিশ প্রশাসনের কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। বেশ কিছুদিন পুলিশের কোনো কার্যক্রমই ছিল না।

নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর একটি ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে পুলিশ প্রশাসনকে নতুন করে গড়ে তুলছে। এই প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। এই গণ-অভ্যুত্থান সামগ্রিক ভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা পুলিশের মনোবলকে দুর্বল করে ফেলেছে। পুলিশের বেশ কিছু সদস্য এই গণ-অভ্যুত্থানে মারা গেছেন। এটিও গোটা বাহিনীর মনোবল ভেঙে যাওয়ার একটি বড় কারণ। ফলে ৫ আগস্টের পর তাঁরা আগের মতো উদ্যম এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন না। তাঁদের মধ্যে একটা ঢিলেঢালা ভাব। এক ধরনের আতঙ্ক এবং হতাশাগ্রস্ত মনোভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। এ কারণে বিভিন্ন রাস্তায় কথায় কথায় অবরোধ এবং অবস্থান কর্মসূচিগুলোতে পুলিশ বাহিনী নিরাপদ দূরত্বে থাকছে। গা বাঁচিয়ে তামাশা দেখছে। পুলিশের এই হতাশাজনক অবস্থা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার প্রধান কারণ।

আমরা জানি, ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন থানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র লুট হয়েছিল। এসব অস্ত্র এখনো সন্ত্রাসীদের দখলে। অস্ত্র উদ্ধারের নামে যে অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, সেই অভিযান মোটেও সফল হয়নি। ফলে সন্ত্রাসীদের হাতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। পাশাপাশি ৫ আগস্টের পর বেশ কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী কারাগার থেকে মুক্তি পায়। তারা নতুন করে তাদের নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। ফলে সারা দেশে চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি ইত্যাদি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বিচার নিজের হাতে তুলে নেওয়া এবং মব জাস্টিসের নামে এক ধরনের মতলববাজি সারা দেশে রীতিমতো আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তরা এই সুযোগে যে যার মতো দখল বাণিজ্যে শামিল হয়ে প্রতিপক্ষের জমিজমা, ঘাট, হাট-বাজার ইত্যাদি সব দখল করে নিচ্ছে। দখল-পাল্টাদখল নিয়েও চলছে হানাহানি-খুনাখুনি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সারা দেশে নির্বিচারে নারী নিপীড়নের ঘটনা। বিশেষ করে মাগুরার আছিয়া গোটা বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে বিদায় নিয়েছে। এ রকম একটা নাজুক পরিস্থিতিতে শুধু সেনাবাহিনীর উপস্থিতির কারণে এখনো মানুষের মধ্যে কিছুটা আশা আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি একই রকম অবস্থান একটা পর্যায়ে মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে, হতাশ করে তোলে এবং মানুষ বিরক্ত হতে শুরু করছে। যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে কিছু দর্বৃত্ত মব করে হামলা চালাচ্ছে, লুটপাট করছে, আগুন লাগিয়ে বিচার নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, রাস্তায় কাউকে প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে পেটানো হচ্ছে ইত্যাদি ঘটনাগুলো একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশে। এসব উদ্বেগজনক।

এ রকম একটি নাজুক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণেই দেশের অর্থনীতিতেও সৃষ্টি হয়েছে স্থবিরতা। ব্যবসায়ীরা কেউ নতুন বিনিয়োগ করছেন না। সাম্প্রতিক প্রধান উপদেষ্টা অর্থ মন্ত্রণালয়ের জন্য একজন বিশেষ সহকারী নিয়োগ দিয়েছেন। ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী একজন দক্ষ অর্থনীতিবিদ। দেশে-বিদেশে তিনি বিভিন্ন উদ্ভাবনী অর্থনৈতিক চিন্তার জন্য আলোচিত। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই একটি মতবিনিময়সভায় তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কে ব্যবসা করতে চাইবে? এই সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে মানুষের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। এই সরকার কত দিন টিকবে, সেটা মানুষ জানে না।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই সরকারের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য কী, সে সম্পর্কে একটা অস্পষ্টতা থাকার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ যেমন কমছে, তেমনি বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তারাও বিনিয়োগে আগ্রহী নন। আমরা জানি, ৫ আগস্টের পর থেকে বহু শিল্প-কারখানা আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে দর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। অনেকে নিরুপায় হয়ে শিল্প-কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে লাখ লাখ শ্রমিক এখন বেকার। বেতন-ভাতার দাবিতে প্রতিদিনই বিভিন্ন সড়ক অবরোধ হচ্ছে। সাধারণ চোখে আমরা মনে করতে পারি, বাংলাদেশ একটা নাজুক সময় পার করছে। দেশটির সার্বিক অবস্থা ভালো নয়।

কিন্তু আমরা যদি বিশ্বের যেকোনো দেশের বিপ্লবের তাৎপর্য অনুভব করি এবং বিপ্লবের পরবর্তী পরিস্থিতিগুলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করতে চাই, তাহলে দেখব, বিপ্লবোত্তর সমাজে এই ঘটনাগুলো স্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষ করে বিপ্লবের ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে নতুন সভ্যতার সূচনা হয়। নতুন দিন বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয়। বাংলাদেশ এখন সেই নতুন বিনির্মাণের প্রাক-স্তরে রয়েছে। বাংলাদেশের গত ১৫ বছরে যে বিধিব্যবস্থা এবং আইন-প্রশাসন ইত্যাদি ছিল, সবই ছিল ভঙ্গুর, দলীয়করণে দুষ্ট। একটি নির্দিষ্ট দলকে ক্ষমতায় রাখার অভিপ্রায়ে আবর্তিত। এই অবস্থা থেকে একটি জনগণের সরকার এবং জনগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা অনেক কঠিন কাজ। ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ আসলে সেই কঠিন সময়টা পার করেছে। এ কারণেই হয়তো ঢাকার রাস্তায় ঘুরতে গিয়ে গার্ডিয়ানের সাংবাদিক হান্না এলিস পিটারসেনের মনে হয়েছে, বাংলাদেশ খাদের কিনারে। সে জন্যই জনগণের মধ্যে সাময়িক অস্থিরতা, হতাশা। কিন্তু এই অস্থিরতা ও হতাশা বেশি দিন থাকবে না। অতীত ইতিহাস তাই বলে। হান্না এলিস পিটারসেন যদি বাংলাদেশ সম্পর্কে আরো একটু গভীরভাবে অনুসন্ধান করতেন, এ দেশের মানুষের মনমানসিকতা, চেতনা, ঐতিহ্য এবং আকাঙ্ক্ষাগুলোকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতেন, তাহলে কিন্তু তিনি বাংলাদেশকে খাদের কিনারে দেখতেন না। তখন তিনি বাংলাদেশকে দেখতেন একটি নতুন অভিযাত্রার বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। তখন তিনি তাঁর লেখায় কবি সুকান্তকে উদ্ধৃত করতেন।

সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী

অবাক তাকিয়ে রয়:

জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার

তবু মাথা নোয়াবার নয়।

বাংলাদেশ যেন সেই রকমই একটি ঐতিহ্যকে ধারণ করে। যে দেশটি জ্বলে-পুড়ে ছারখার হওয়ার পরও আবার মাথা তুলে দাঁড়ায়। আবার ঘুরে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে অফুরন্ত প্রাণশক্তি। স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটার অফুরন্ত সাহস। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রাজনৈতিক দুর্যোগ যাই হোক না কেন, বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করে, ঘুরে দাঁড়ায়, হারে না, বাংলাদেশের মানুষ দমে না। নতুন স্বপ্নের জাল বোনে। এটাই হলো বাংলাদেশের ইতিহাস।

মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর আক্রমণ, হত্যা, লুণ্ঠন এবং অপারেশন সার্চলাইটের পরও বাংলাদেশ হারেনি। তখনো বাংলাদেশ খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের অকুতোভয় বীর জনগণ সেই খাদের কিনারা থেকে এক অভূতপূর্ব মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশকে মুক্ত করেছে। আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ।

অর্থনীতিবিদরা বলতেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভারাক্রান্ত বাংলাদেশ কখনো উন্নতি করতে পারবে না। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের একটি মডেল। যুক্তরাষ্ট্রের দুজন অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, বাংলাদেশ যদি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে, তাহলে সেটিই হবে বিশ্বের একটি মডেল। বিশ্বে তাহলে আর কোনো দেশেই ক্ষুধা-দারিদ্র্য থাকবে না। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও শ্রম তাদের ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণ করেছে। স্বাধীনতার পর কেউ চিন্তা করেনি, বাংলাদেশ ক্ষুধা-দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশ সারা বিশ্বকে যেন অবাক করে দেওয়ার জন্যই জন্ম হয়েছে। আমরা দেখি, ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ পেরিয়ে বাংলাদেশ একটি সুখী-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের পথে অভিযাত্রা করেছে। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। এই দেশের ১৮ কোটি মানুষ অফুরন্ত প্রাণশক্তি দিয়ে খাদ্য উৎপাদন যেমন বাড়িয়েছে, তেমনি শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থনীতিকেও নিয়ে গেছে একটি সম্ভাবনার দুয়ারে। যার ফলে বাংলাদেশ সম্পর্কে স্বাধীনতার পর যে মূল্যায়ন করা হতো, সেই মূল্যায়ন ৫৩ বছর পর এসে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের সাফল্য। বাংলাদেশ সম্পর্কে তাই কোনো পূর্ব অনুমান ঠিক নয়। এ দেশের মানুষ আবেগপ্রবণ, ভালোবাসার আলিঙ্গনে আপনার জন্য সব কিছু উজাড় করে দেবে। এ দেশের মানুষ হাসতে হাসতে মরতে পারে। ধ্বংসস্তূপের অন্ধকারে নতুন স্বপ্নের সকাল গড়ে। বাংলাদেশ নিয়ে হতাশার মুহূর্তে এ দেশের জনগণ নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করে। আর এ কারণেই বাংলাদেশ নিয়ে আজ যে হতাশা বা দুর্ভাবনা, সেটি হয়তো শেষ বিচারে সঠিক হবে না। কারণ এ দেশের মানুষ পরাজয় মানে না, হার মানে না। একাত্তরে যেমন বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, তেমনি প্রমাণ করেছে চব্বিশে। বাংলাদেশ খাদের কিনারে নয়, বাংলাদেশ এখন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের দুর্গম পথে। তবে এ দেশের জনগণের জয় অনিবার্য।

 

লেখক : নাট্যকার ও কলাম লেখক

auditekarim@gmail.com

 

মন্তব্য

সস্ত্রীক বিদেশ যেতে বাধা নেই ওরিয়ন চেয়ারম্যানের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সস্ত্রীক বিদেশ যেতে বাধা নেই ওরিয়ন চেয়ারম্যানের

ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম ও তাঁর স্ত্রী মিসেস আরজুদা করিমের বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসা ও ওমরাহ হজ পালনের জন্য বিদেশ যেতে অনুমতি চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেন ওবায়দুল করিম, তাঁর স্ত্রী আরজুদা করিম ও তাঁর মেয়ে জেরীন করিম। শুনানি শেষে আদালত ওবায়দুল করিম ও তাঁর স্ত্রীর বিদেশ যাওয়ার অনুমতির আদেশ দেন।

এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওবায়দুল করিমসহ পরিবারের সদস্যদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন আদালত। আবেদনে বলা হয়, ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গোপন সূত্রে জানা যায়, অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ ত্যাগ করে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

তাদের বিদেশ গমন রহিত করা প্রয়োজন।

 

মন্তব্য
ডা. শফিকুর রহমান

শহীদ সেলিম ও মন্টু দাসের পরিবারের পাশে জামায়াত

ঝালকাঠি ও বরগুনা প্রতিনিধি
ঝালকাঠি ও বরগুনা প্রতিনিধি
শেয়ার
শহীদ সেলিম ও মন্টু দাসের পরিবারের পাশে জামায়াত
শফিকুর রহমান

রাজধানীতে জুলাইয়ে শহীদ সেলিম তালুকদারের শ্বশুরবাড়ি ঝালকাঠি শহরের কবিরাজবাড়ি এলাকায় গিয়ে তাঁর স্ত্রী-সন্তানের খোঁজখবর নিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল সোমবার দুপুরে ওই পরিবারকে সান্ত্বনা জানিয়ে শিশুটির দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

এর আগে গতকাল সকালে বরগুনায় নির্যাতিত শিশু এবং তার বাবা নিহত মন্টু চন্দ্র দাসের বাড়িতে গিয়ে অসহায় পরিবারটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জামায়াতের আমির।

গতকাল দুপুরে হেলিকপ্টারে ঝালকাঠি শহরের পৌর মিনি স্টেডিয়ামে নামেন তিনি।

এ সময় জেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দ তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে শহীদ সেলিম তালুকদারের বাড়িতে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা নবজাতক কন্যাসন্তানটির নাম রেখেছি সাইমা সেলিম রোজা। তার বেড়ে ওঠা, বিকশিত হওয়া, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিয়ে পর্যন্ত সব দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি।

দুপুরে ঝালকাঠি পৌর মিনি স্টেডিয়ামের সামনে এক পথসভায় জামায়াতের আমির বলেন, শহীদরা এ জাতির সম্পদ।

আমরা সবাই শহীদ পরিবারের সদস্য। জামায়াতে ইসলামী জুলাই-আগস্টের সব শহীদ পরিবারের প্রতি নৈতিক দায়িত্ব পালন করবে। 

তিনি বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি কল্যাণকর এবং মানবিক রাষ্ট্র গড়তে চাই। কোরআনের ভিত্তিতে একটি মানবিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি আমরা।

সেই অভিযাত্রায় দেশবাসীকে পাশে থাকার আহ্বান জানাই।

জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে পথসভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বক্তব্য দেন ঝালকাঠি-২ আসনে জামায়াতের প্রার্থী শেখ নেয়ামুল করিম, বরিশাল জেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল জব্বার প্রমুখ। 

এর আগে, সকাল ১০টায় জামায়াতের আমির ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে বরগুনা সার্কিট হাউস মাঠে পৌঁছান। এরপর শহরের কালীবাড়ি এলাকায় মন্টু দাসের বাড়িতে গিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে উপহারসামগ্রী দেন। এরপর সকাল এগারোটায় বরগুনা শহীদ মিনারে এক পথসভায় অংশ নেন তিনি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আল্লাহ আল-কোরআনে বলেছেন, যারা ধর্ষণ করে, তারা পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট। আমরা সামাজিকভাবে মজলুমের পাশে দাঁড়ালে, জুলুমকারী ভয় পাবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাড. মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, বরগুনা জেলা আমির অধ্যাপক মহিবুল্লাহ হারুন প্রমুখ।

 

মন্তব্য
এনডিটিভিকে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র

    গ্যাবার্ডের মন্তব্য সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়নি : অন্তর্বর্তী সরকার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র
তুলসী গ্যাবার্ড

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও সহিংসতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটির গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বজুড়ে ইসলামী সন্ত্রাসবাদকে হারাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গতকাল সোমবার  সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়েছে।

এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন, হত্যা ও নিপীড়ন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।

এদিকে তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সরকার স্পষ্ট করে বলেছে, তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যে আমরা গভীর উদ্বিগ্ন হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তিনি তাঁর মন্তব্যে অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন ও হত্যা চলছে এবং বাংলাদেশের আদর্শ ও লক্ষ্যে ইসলামী সন্ত্রাসবাদীদের মূল নিহিত, যারা বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। তাঁর এই বিবৃতি যেমন বিভ্রান্তিকর, তেমনি বাংলাদেশের সুনামের প্রতি অবিচার।

কারণ এই জাতি ঐতিহ্যগতভাবে ইসলামী রীতিনীতি অনুশীলন করে এবং সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে দেশটির প্রশংসনীয় অবস্থান রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, গ্যাবার্ডের মন্তব্য কোনো প্রমাণ ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়নি। তাঁর মন্তব্য পুরো জাতির ওপর কলঙ্ক লেপে দিয়েছে। বাংলাদেশ যেকোনো ধরনের ইসলামী খেলাফত ব্যবস্থার নিন্দা জানায়।

তুলসী গ্যাবার্ড বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তবে এটি আমাদের উদ্বেগের কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে।

এ সময় তিনি বাংলাদেশে ইসলামী চরমপন্থা ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উত্থানের কথা উল্লেখ করেন।

সাক্ষাৎকারে তুলসী গ্যাবার্ড ইসলামী খিলাফত-এর আদর্শের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বজুড়ে চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো এমন একটি ফলাফল অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে। ইসলামী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক প্রচেষ্টা একই আদর্শ ও লক্ষ্যে নিবদ্ধ, যা হলো ইসলামী খিলাফতের মাধ্যমে শাসন বা শাসন করা।

তিনি আরো বলেন, এটি স্পষ্টতই অন্য যেকোনো ধর্মের মানুষকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে যারা তাদের গ্রহণযোগ্য ধর্মের বাইরে। তারা এটিকে সন্ত্রাস ও সহিংসতার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে চায়। সূত্র : এনডিটিভি

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ