বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য বর্জন বা ভারতবিরোধী প্রচারের পেছনে যারা আছে, তারা বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। গতকাল শনিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা ভারতবিরোধী প্রচারণা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফর এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক উপলক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব।
বাংলাদেশে বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীর ‘ইন্ডিয়া আউট’ বা ‘ভারত খেদাও’ প্রচারণাকে ‘কল্পনাপ্রসূত’ হিসেবে উল্লেখ করেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব।
তিনি বলেন, বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এ ধরনের প্রচারণা চালায়। এগুলো কল্পনা, বাস্তবসম্মত নয়।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিষয়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, এই সম্পর্ক ঐতিহাসিক, সময়ের পরীক্ষায় পরীক্ষিত।
এই সম্পর্কের শেকড় অনেক গভীরে।
এদিকে অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য যোগাযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। গতকাল নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে শীর্ষ বৈঠক শেষে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে বিবৃতিতে এই জোর দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতের ‘রুপে’ কার্ড এবং ভারতে বাংলাদেশের ‘টাকাপে’ কার্ড চালুর বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা গতকাল বিকেলে শীর্ষ বৈঠক ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখার বিভিন্ন দিক সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, উভয় নেতা সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ মোকাবেলায় সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছেন। অভিন্ন নদ-নদী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিস্তার পানি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভারতের কারিগরি দল বাংলাদেশে আসবে।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ভারত বাংলাদেশি পণ্যের বড় বাজার।
সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি (সেপা) নিয়ে শিগগিরই আলোচনা হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, প্রতিরক্ষা সম্পর্ক কিভাবে জোরদার করা যায়, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের শীর্ষ নেতারা আলোচনা করেছেন। আধুনিকায়ন, সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিনয় কোয়াত্রা বলেন, রেলের কানেক্টিভিটি, ট্রানজিট, ট্রায়াল রান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কানেক্টিভিটিতে দুই দেশই উপকৃত হবে।
সীমান্তে হতাহতের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, সীমান্তে হতাহতের বিষয়টি ভারত বেশ স্পর্শকাতর ইস্যু হিসেবে দেখে। মৃত্যু ঠেকাতে ভারতের পক্ষ থেকে প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। কিন্তু যখন বিএসএফ জওয়ানরা ভারতের সীমান্তে আক্রান্ত হন তখন আত্মরক্ষার্থে ব্যবস্থা নেন। এর ফলে কিছু কিছু সময় প্রাণহানির মতো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে।
বিনয় কোয়াত্রা বলেন, ‘আমি বলতে চাই, এ ব্যাপারে আমরা খুবই সতর্ক। বেশ স্পর্শকাতরতার সঙ্গে আমরা বিষয়টি দেখি। আশা করি, সীমান্তের দুই পাশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সীমান্ত রক্ষায় তাদের দায়িত্ব পালন করবে। এর ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটবে না।’
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়। অতীতে ভারত বাংলাদেশকে এ ক্ষেত্রে মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে চায়। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও বাংলাদেশ তুলেছে। মিয়ানমার প্রসঙ্গ আলোচনায় এসেছে।
ভারতে সম্প্রতি বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার ‘হত্যাকাণ্ড’ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবকে প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব একবারের জন্যও ‘হত্যাকাণ্ড’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি। তিনি বলেন, বাংলাদেশি এমপির বিষয়টি বর্তমানে তদন্তাধীন। দুই দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বর্তমানে সমন্বয় করছে। তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত বিনিময় করা হচ্ছে। তদন্তের জন্য ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তদন্তে কী ফল আসবে তা নিয়ে এই পর্যায়ে কথা বলা ঠিক হবে না।
তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীনের আগ্রহের কথা উল্লেখ করে ভারতের কারিগরি দল পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বিনয় কোয়াত্রা বলেন, কারিগরি দল গঠন করা হয়েছে তিস্তার পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের জন্য। অভিন্ন ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারিগরি দল এ বিষয়ে কাজ করবে।
ই-মেডিক্যাল ভিসার ধরন কেমন হবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ভিসা আবেদনকারীদের ২০ থেকে ৩০ শতাংশই মেডিক্যাল ভিসাপ্রত্যাশী। ই-মেডিক্যাল ভিসার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কী প্রক্রিয়ায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে সেটি ভবিষ্যতে জানানো হবে।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বিমসটেক শক্তিশালী করার বিষয়ে দুই নেতা আলোচনা করেছেন।