<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে দেশে দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ নানামুখী চাপে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। মুনাফার বিপরীতে ব্যয়ের বোঝা বেড়ে যাওয়ায় সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে। এই পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। ফলে ভালো উদ্যোক্তারা এখন ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁঁকিতে আছেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখে আসছে বড় শিল্প গ্রুপগুলো। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে নেতৃত্বস্থানীয় এই গ্রুপগুলো এখন নানামুখী চাপে নাজুক পরিস্থিতি পার করছে। ব্যবসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন বড় ব্যবসায়ীরা। মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ীরা এখন কোণঠাসা। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">উদ্যোক্তারা জানান, করোনা মহামারিতে দেশে ও বিদেশে দীর্ঘদিন লকডাউনের কারণে ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে আর্থিক ক্ষতিতে পড়ে ব্যাংক ঋণ পুনঃ তফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত করলেও ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে। এর পরই শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণে বহির্বিশ্বে কাঁচামালের দাম বেড়ে যায় এবং জ্বালানি তেলের দাম ওঠানামার কারণে দেশের ব্যবসা আরো সংকটে পড়ে যায়। এতেও ঋণ পরিশোধে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমে বাড়ছে। খেলাপি ঋণ কমাতে নানা নীতির ঘোষণা দিলেও কার্যত তা কমছে না। খেলাপি নামক এই ক্যান্সার বৃদ্ধির প্রভাব গিয়ে পড়েছে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, নীতিগত ভুলের কারণে ভালো উদ্যোক্তারাও ঋণখেলাপি হচ্ছেন। মোটাদাগে ব্যাংকঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, ডলারের দামের উল্লম্ফন এবং উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার প্রভাব পড়েছে মোট খেলাপি ঋণে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সংশ্লিষ্ট ব্যক্তদের তথ্য মতে, পদ্ধতিগত কারণেই ব্যাংকিং খাতে ঋণখেলাপির পরিমাণ বাড়ছে। যাচাই-বাছাই করে ঋণ না দেওয়ায় তা আর ফেরত আসে না। বছর শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। এতে হতাশ হয়ে পড়েন ভালো গ্রাহক। ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ভুলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো ব্যাংক খাত। আগ্রহ হারিয়ে ঋণখেলাপি হয়ে পড়েন ভালোরাও। একটি প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হলে ধীরে ধীরে পতনের দিকে যায়। এতে শুধু ওই কারখানাই শেষ হয়ে যায় না, একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পেও বিরূপ প্রভাব পড়ে। ব্যাংকের বিনিয়োগও আটকা পড়ে। শেষ পর্যন্ত দেশের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সমাজের আরেক শ্রেণির ব্যবসায়ী রয়েছেন, যাঁরা স্বেচ্ছায় খেলাপি হন। তাঁরা অযাচিত হস্তক্ষেপ করে ঋণ অনুমোদনসহ সরকারের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা ভোগ করেছেন। একটা সময় তাঁরা ইচ্ছা করেই খেলাপি হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের কারণে প্রকৃত উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন না। পাশাপাশি নিয়মিত ঋণ পরিশোধের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন নিয়মিতরা।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চের শেষে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ১১.১১ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৯ শতাংশ। দেশে এর আগে খেলাপি ঋণ বেড়ে কখনো এতটা হয়নি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">একজন শিল্পপতি তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাংকের ঋণ গ্রহণ করে ব্যবসা শুরু করতে চান। তিনি প্রজেক্ট প্রফাইলের মাধ্যমে প্রাক্কলিত মোট ব্যয়ের ৭০ শতাংশ জমি বা সম্পদ বন্ধকের বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেন এবং ৩০ শতাংশ নিজের অর্থ জোগান দিয়ে শিল্প স্থাপন করেন। কিন্তু সরকারি অসহযোগিতা ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সময়ক্ষেপণের কারণে সুদসহ পুঞ্জীভূত ঋণ বেড়ে যায়। এদিকে জ্বালানিসংকট আরো বড় সমস্যা। জ্বালানির অভাবে সময়মতো উৎপাদন করতে না পারলে স্বাভাবিকভাবেই খেলাপি হয়ে পড়েন ওই উদ্যোক্তা।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কমায় বৈদেশিক মুদ্রার মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে হয় টাকার অবমূল্যায়ন। যুদ্ধের আগে ডলারের দাম যেখানে ৮৫ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে ছিল, সেটি এখন বেড়ে ১১৮ টাকায় দাঁড়িয়েছে। হিসাব অনুযায়ী, দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৭.৩৬ শতাংশ দাম বেড়েছে ডলারের। যদিও যুদ্ধের আগে থেকেই ডলারের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। কভিডের পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাস, সারসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। ইউক্রেন যুদ্ধ সেই দাম বাড়াকে আরো উসকে দিয়েছে। এতে কাঁচামালের দাম ও জ্বালানি তেলের দাম এক-তৃতীয়াংশ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু ওই অনুপাতে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ানো সম্ভব হয়নি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ব্যবসায় ব্যয় বর্ধিত চাপের মধ্যে ব্যাংকগুলোতে বাড়ানো হয় সুদের হার, যা ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল মিরসরাইসহ অন্যান্য ইজেডে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ মেলেনি। ফলে নতুন প্রকল্পে উৎপাদন চালু করা সম্ভব হয়নি। এতেও ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা হারিয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে কলকারখানার কাঙ্ক্ষিত কাঁচামাল, স্পেয়ার পার্টস ও নতুন প্রকল্পের যন্ত্রপাতি আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এই কারণে অনেক শিল্প প্রায়ই বন্ধ রাখতে হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ব্যবসায় নানামুখী সংকট এসেছে। ধারাবাহিকভাবে সব পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এখন ব্যবসা ব্যয়ের চাপে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা এর মধ্যেও ব্যবসা চালিয়ে নিয়ে প্রতিকূলতা দূর করার চেষ্টা করছেন। যাঁরা ভালো ব্যবসায়ী, তাঁরা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে আসছেন। তাঁদের এখন ভিন্নভাবে দেখতে হবে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বর্তমানে চাপে থাকা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সুবিধা দিতে হবে, কম সুদে দীর্ঘ মেয়াদে যাতে পরিশোধ করতে পারেন। তবে এই সুবিধা আইন করে ঢালাওভাবে নয়। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সরকারি কিছু নীতিমালার কারণে অনেক ব্যবসায়ী খেলাপি না হলেও সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। দেশের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ব্যবসা পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছেন। ঋণের সুদহার ৯ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ অতিক্রম করেছে। সব মিলিয়ে চাপের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তিনি বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ব্যবসা পরিচালনার জন্য উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে সরকার কিছু অকার্যকর পাওয়ার স্টেশনকে ভর্তুকি দিয়ে আসছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের জ্বালানি খরচ কমাতে হবে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতি সচল রাখার কথা উল্লেখ করে মেয়াদি ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় আরো ছয় মাস বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। </span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">যে খেলাপিদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সৎ ব্যবসায়ীরা </span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গত দেড় দশকে ভোগ্য পণ্য ও জাহাজ ভাঙা শিল্পের উত্থান-পতনসহ বিভিন্ন কারণে অনেক ব্যবসায়ী খেলাপি হয়েছেন। তবে করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় সবচেয়ে বেশি ঋণখেলাপি হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবসায়ী। তাঁরা বলছেন, স্বেচ্ছায় যাঁরা ঋণখেলাপি, তালিকা করতে হবে। বিনিয়োগ করেও গত ১৫ বছরেও ব্যবসা করতে পারেনি</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে প্রণোদনার আওতায় আনতে হবে। প্রকৃত ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে হবে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সংসদে দেওয়া অর্থমন্ত্রীর ঋণখেলাপির তালিকায় শীর্ষ ২০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চট্টগ্রামের ১০ প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১৯৪৭ সালে চট্টগ্রামের হাবিব উল্লাহ মিয়া হাবিব ট্রেডিং নামে ভোগ্য পণ্য আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা শুরু করেন। পরে গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, জাহাজ ভাঙা, ইস্পাত, সিমেন্ট ও কাগজ শিল্পে ব্যবসা সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন হাবিব গ্রুপ। সাত দশক সুনামের সঙ্গে ব্যবসাও করেন। তবে গত এক দশকে সার, বিদ্যুৎ উৎপাদন, এভিয়েশন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণের কারণে লোকসানের পথে গ্রুপটি। গ্রুপটির ৩১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশির ভাগেরই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এই গ্রুপের কাছে ব্যাংকের পাওনা এখন প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হাবিব গ্রুপের পরিচালক এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সালমান হাবিব জানান, করোনা মহামারিতে তাঁদের বড় অঙ্কের আর্থিক লোকসান হয়েছে। এভিয়েশন খাতে তাঁদের লোকসানের পরিমাণ বেশি। ওই সময়ে গার্মেন্টসের বেশির ভাগ কার্যাদেশ বাতিল হয়েছিল। এ ছাড়া বাংলাদেশের সিআইবি (কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) আইনের কারণে তাঁদের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো ঋণপত্র খুলে ব্যবসা করতে পারেনি। এই আইন গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করে সংশোধন করা উচিত। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">চট্টগ্রামের টেরিবাজারের ব্যবসায়ী ছিদ্দিক ছাতার মালিক আবু সায়িদ সম্রাট জানান, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ব্যবসার জন্য ১৫০ কোটি টাকা ঋণ নেন তিনি। ২০০৭ সালে নেওয়া এই ঋণের বিপরীতে ছয় বছরে সুদ দিয়েছেন ৪২ কোটি টাকা। আসল টাকারও বেশির ভাগ পরিশোধ করেছেন। এর পরও ৫৬ কোটি টাকা পাওনার দাবিতে প্রদত্ত সিকিউরিটি চেকের বিপরীতে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মামলা করেছে। অথচ এই ঋণের বিপরীতেই ব্যাংকের কাছে মর্টগেজ দেওয়া আছে তাঁর ৫৫৬ শতক মূল্যবান জমি, যার মূল্য ঋণের টাকার প্রায় দ্বিগুণ হবে। কিন্তু জমিটিও ব্যাংক ছাড় করছে না। এ অবস্থায় তিনি না পারছেন মর্টগেজ দেওয়া সম্পদ বিক্রি করতে, না পারছেন ব্যাংকের সুদের টাকা পরিশোধ করতে। এ কারণে তাঁর মতো চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা দাঁড়াতে পারছেন না। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের (আরএসআরএম স্টিল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গত ১৫ বছর আমরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এর মধ্য বিগত সরকার ঘন ঘন নীতি পরির্বতন, বারবার গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, বিশেষ গোষ্ঠীকে অসীম সহযোগিতা করা এবং সরকারি ব্যাংকগুলো পুনঃ তফসিল করেছিল, কিন্তু নতুন করে অর্থায়ন করেনি। এমনকি আওয়ামী লীগের লিংক ছাড়া ব্যাংকগুলো ঋণ দেয়নি, সরকারি দপ্তরগুলো ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেনি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহাফুজুল হক শাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, করোনা মহামারিকালে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে স্থবিরতা চলে এসেছিল। সেই স্থবিরতা কাটাতে সরকার প্রণোদনা দিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শুরু হয় ডলারের সংকট। ফলে ব্যবসায়ীরা আবারও কঠিন সময়ে পড়ে যান, যা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এর মধ্যে অনেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে সেই ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে খেলাপি হয়েছেন। এখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হওয়ায় ব্যবসায়ীরা অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। তিনি বলেন, এই সংকট থেকে বাঁচাতে হলে নতুন করে ব্যবসায়ীবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করে সৎ ব্যবসায়ীর একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। তাঁদের প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেটা না হলে অনেক মানুষ বেকার হবে।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p>