<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আয়নাঘরের মূল পরিকল্পনাকারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারিক ও তাঁর স্ত্রী শাহনাজ সিদ্দিকী। শেখ হাসিনার প্রশ্রয়ে বিপুল অর্থ আয় ও পাচার করেছেন তাঁরা। দেশের একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তাঁদের গোপন বিনিয়োগ রয়েছে বলেও জানা গেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকদের ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনৈতিকভাবে আড়ি পাতার কাজ করে আসছিল বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। এই কাজে প্রতিষ্ঠানটিকে কারিগরি সহায়তা ও অবৈধ যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় থাকা প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি। মূলত শাহনাজ সিদ্দিকীর হাত ধরে এনটিএমসিতে যুক্ত হয় টাইগার আইটি। এ ছাড়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানটি। বেসরকারি বিমান সংস্থার অনুমোদন, ব্যবসা সম্প্রসারণে ঋণ ও বিনিয়োগের সরাসরি মদদও দিয়েছেন এই দম্পতি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এসব তথ্য বেরিয়ে আসছে।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানা গেছে, তারিক আহমেদ সিদ্দিক শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিকের ছোট ভাই। বিরোধীদলীয় নেতা থাকাকালে হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাপ্রধান ছিলেন তারিক সিদ্দিক। ২০১৪ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুনরায় তাঁকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে গত জানুয়ারিতে উপদেষ্টা পদে নিয়োগের অবসান হলেও একই দিনে তাঁকে মন্ত্রী পদমর্যাদায় উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন শেখ হাসিনা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনুসন্ধানে জানা গেছে, তারিক আহমেদ সিদ্দিক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাকলেও প্রভাব বেশি ছিল স্ত্রী শাহনাজের। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার জা হিসেবে বড় প্রভাব রাখতেন তিনি। মূলত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সরকারি কাজ বণ্টন হতো তাঁর বারিধারার ১২২/২ নম্বর বাড়ি থেকে। আওয়ামী লীগের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্লোগানের সুবিধাভোগী ছিল পরিবারটি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে কোনো টেন্ডার হলেই তা পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে দিতেন তারিক সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রী শাহনাজ সিদ্দিকী। এ জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পেতেন মোটা অঙ্কের কমিশন কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে মালিকানা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনুসন্ধানে জানা যায়, নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত ফাঁসে এনটিএমসির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের সহযোগী ছিলেন টাইগার আইটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান। সরকার পরিবর্তনের পর এনটিএমসির শীর্ষ কর্মকর্তারা আইনের আওতায় এলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন বিতর্কিত উদ্যোগের কোর টেকনিক্যাল সেবা দেওয়া টাইগার আইটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান। তারিক-শাহনাজ দম্পতির আশীর্বাদে টাইগার আইটি, আইবিসিএস-প্রাইমেক্স এবং কম্পিউটার সার্ভিস লিমিটেড (সিএসএল) যুক্ত হয় এনটিএমসির আড়ি পাতা প্রকল্পের কারিগরি উন্নয়নে। এ সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ যন্ত্রপাতি আমদানিতেও কমিশন নিতেন তাঁরা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, তারিক সিদ্দিকের প্রতাপে বছরের পর বছর বিআরটিএ নিয়ন্ত্রণ করেন টাইগার আইটির চেয়্যারম্যান জিয়াউর রহমান। নির্বাচন কমিশনের স্মার্ট কার্ড মুদ্রণ সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংক টাইগার আইটিকে সাড়ে ৯ বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করে। আর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানকে কালো তালিকাভুক্ত করে সাড়ে ছয় বছরের জন্য। কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় টাইগার আইটি ২০২৭ সাল ও জিয়াউর রহমান ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের কোনো টেন্ডারে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের প্রভাবে ১৩ বছর ধরে বিআরটিএ নিয়ন্ত্রণ করেছে টাইগার আইটি। এই সময়ে প্রভাব খাটিয়ে নতুন করে টেন্ডারের আয়োজনও বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত হওয়া টাইগার আইটির সঙ্গে ২০১৯ সালের আগস্টে চুক্তি বাতিল করে বিআরটিএ। ২০২০ সালের ২৯ জুলাই মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সকে প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োগ দেয় বিআরটিএ। কিন্তু স্মার্ট কার্ডের সার্ভার ও ডাটাবেইস হস্তান্তরে গড়িমসি করে টাইগার আইটি। চুক্তি বাতিল হলেও বিআরটিএর প্রকল্প থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দুই কোটি ২০ লাখ টাকা মুনাফা করে কম্পানিটি। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন, ঢাকা ওয়াসা, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, এনআইডি অনুবিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে আইবিসিএস-প্রাইমেক্সকে কাজ দিয়েছেন তারিক দম্পতি। এর মাধ্যমে প্রকল্প থেকে তাঁরা হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনুসন্ধানে জানা যায়, তুসুকা গ্রুপ নামের একটি শিল্পগোষ্ঠীতে বিনিয়োগ রয়েছে তারিক দম্পতির। তাঁদের ইশারায় ওই প্রতিষ্ঠানের একজন পরিচালককে ২০২০ সালে একটি বেসরকারি ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি তুসুকা গ্রুপের আরেক পরিচালককে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংসদ সদস্য বানানো হয়। এই ব্যাবসায়িক গ্রুপের মাধ্যমে বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন তারিক দম্পতি। এই সময়ে তাঁরা কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ নিজেদের সেকেন্ড হোমে এই টাকা পাচার করেছেন। এ বিষয়ে জানতে তুসুকা গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।</span></span></span></span></p>