<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টেন্ডার ছাড়াই এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে টাইগার আইটি নামের একটি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান। কোনো প্রতিযোগিতা ছাড়াই বিআরটিএর আরএফআইডি ভেহিক্যাল নাম্বার প্লেট এবং ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রকল্পে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে করে প্রতিষ্ঠানটি অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সমালোচনা রয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের ছত্রচ্ছায়ায় বছরের পর বছর বিআরটিএকে নিয়ন্ত্রণ করছেন টাইগার আইটির চেয়্যারম্যান জিয়াউর রহমান।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানা যায়, জাল, অবৈধ ও ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠেকাতে ২০১১ সালে ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রবর্তন করা হয়। শুরু থেকেই বিআরটিএ প্রকল্পে যুক্ত টাইগার আইটি। ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে বিআরটিএ। কিন্তু তার পরও সফটওয়্যার, সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে নতুন প্রতিষ্ঠানকে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের সঙ্গে চুক্তি হলেও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে যায় টাইগার আইটি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি টেন্ডার ছাড়াই চার লাখ ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স কিনতে ১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় হাসিনার মন্ত্রিসভা। প্রতিটি লাইসেন্স প্রায় ১০ গুণ বেশি দামে কেনা হয় উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে। প্রতিটি স্মার্ট কার্ডের বাজারমূল্য ৫০ টাকা হলেও প্রকল্পে প্রায় ৫০০ টাকা (৪৭২.৬০ টাকা) করে কেনা হয়। বিগত বছরগুলো ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যুর পরিসংখ্যান ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ চাহিদা বিবেচনা করে প্রতিবছর গড়ে তিন লাখ স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নির্বাচন কমিশনের স্মার্ট কার্ড মুদ্রণসংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পেও দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে টাইগার আইটির বিরুদ্ধে। দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংক টাইগার আইটিকে সাড়ে ৯ বছরের জন্য কালোতালিকাভুক্ত করেছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানকে সাড়ে ছয় বছরের জন্য কালোতালিকাভুক্ত করে। কালোতালিকাভুক্ত হিসেবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের কোনো টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে না টাইগার আইটি। এ ছাড়া ২০২৫ সাল পর্যন্ত কোনো প্রকার আন্তর্জাতিক টেন্ডারে অংশ নিতে পারবেন না প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানও। কালোতালিকাভুক্ত হলেও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর প্রভাবে ১৩ বছর যাবৎ বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণ করছে টাইগার আইটি। এ সময় প্রভাব খাটিয়ে নতুন করে কোনো টেন্ডারের আয়োজনও বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূত্র বলছে, বিশ্বব্যাংকের কালোতালিকাভুক্ত হওয়া ২০১৯ সালের আগস্টে টাইগার আইটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে বিআরটিএ। ২০২০ সালের ২৯ জুলাই মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সকে প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োগ দেয় বিআরটিএ। কিন্তু স্মার্ট কার্ডের সার্ভার এবং ডাটাবেইস হস্তান্তরে গড়িমসি করে টাইগার আইটি। চুক্তি বাতিল হলেও বিআরটিএর প্রকল্প থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দুই কোটি ২০ লাখ টাকা মুনাফা করে কম্পানিটি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনুসন্ধানে জানা যায়, বিআরটিএর স্মার্ট কার্ডসহ অন্যান্য সরকারি প্রকল্পে নতুন করে যুক্ত হতে চেষ্টা অব্যাহত রাখেন তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর স্ত্রী শাহনাজ সিদ্দিকী। সূত্র বলেছে, চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকায় ওরাকল, সিসকোর মতো মার্কিন প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটির সঙ্গে কাজ করছে না। নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে কাজ করার জন্য ইউরোপে কয়েকটি শেল কম্পানি (মূলত মুদ্রা পাচারের লক্ষ্যে) খুলেছেন জিয়াউর রহমান। নির্বাচন কমিশন, ঢাকা ওয়াসা, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, এনআইডি অনুবিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে আইবিসিএস-প্রাইমেক্সে নামে ছদ্মবেশী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কয়েক শ কোটি টাকার কাজ করেছে টাইগার আইটি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, ক্ষমতার বলয়ে থেকে প্রকল্প ধরতে প্রতিষ্ঠানটিতে এ এইচ এম রাশেদ সরোয়ার নামের একজনকে এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) পদে বসান বিশ্বব্যাংকের কালোতালিকাভুক্ত উদ্যোক্তা জিয়া। রাশেদুলের শ্বশুর আওয়ামী লীগের কুষ্টিয়া জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালা বদলের পর রাশেদুল সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি জমান।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিআরটিএর প্রকল্পে প্রতিযোগিতা ছাড়াই কাজ করা প্রসঙ্গে টাইগার আইটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানের মন্তব্যের জন্য কয়েকবার খুদে বার্তা ও ফোন করা হলেও উত্তর মেলেনি। মার্কিন পাসপোর্টধারী জিয়া দুবাই থেকেই বাংলাদেশের সব প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টাইগার আইটির মতো কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের হাতে দেশের নাগরিকদের তথ্য থাকাটাকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> মনে করেন এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টারের (এপনিক) নির্বাহী কমিটির সদস্য সুমন আহমেদ সাবির। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একটা প্রতিষ্ঠানের হাতে দেশের ১৮ কোটি নাগরিকের তথ্য থাকাটা অপরাধ নয়, তবে তারা কোনো প্রকার জবাবদিহিতার মধ্যে না থাকাটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে। একটা প্রতিষ্ঠান এক দশকের বেশি সময় ধরে কোনো প্রকার প্রতিযোগিতা ছাড়া কাজ করছে, এটা উন্নত বিশ্বে অস্বাভাবিক হলেও আমাদের দেশে এ ধরনের প্র্যাকটিস অনেক দিন ধরে হয়ে আসছে ক্ষমতার বলয় থেকে। যেকোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় কাজ দেওয়া উচিত।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ বণিক সংগঠন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিআরটিএর প্ল্যাটফরম ম্যানেজের জন্য অনেক দেশি প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কাজ করতে সক্ষম। সেখানে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানকে ডিরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথডে (সরাসরি কেনাকাটা) যুক্ত করাটা অমূলক। এখানে জবাবদিহি না থাকার কারণে তথ্য ফাঁস কিংবা অন্য টেকনিক্যাল সমস্যা হলে আইনের আওতায় আনা কঠিন হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p>