<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সমান অধিকার নিশ্চিত হলে সেখানে বৈষম্যের সুযোগ থাকে না। তবে বৈষম্য দূর করে সবার জন্য সমান সুযোগের ধারণাটি বাংলাদেশে সঠিকভাবে প্রয়োগ হয় না। সমান সুযোগ নিশ্চিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর আইন এখনো এক দেশে দুই আইনের প্রতিনিধিত্ব করে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্ত ব্যক্তিরা, বিচার বিভাগের বিচারক কিংবা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আয়কর দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ছাড় পেলেও বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের সব ধরনের আয়ের ওপর আয়কর দিতে হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আয়কর আইন অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল বেতন ও উৎসব ভাতার ওপর কর দিতে হয়। তবে চাকরিতে থাকাকালে মূল বেতনের বাইরের অন্য সুবিধা কিংবা অবসরকালীন পাওয়া সব সুবিধা আয়করের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকার, এমপিসহ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা এই সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে আরো এককাঠি সরেস। তাঁরা শুধু মূল বেতন বা সম্মানির ওপর আয়কর দেন। বাকি সব আয় করমুক্ত। একই সুবিধা নেয় বিচার বিভাগ। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকদেরও মূল বেতন বাদে সব আয় করমুক্ত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কর প্রদানে এক দেশে দুই ধরনের আইনের প্রয়োগকে সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক, বৈষম্যমূলক, ন্যায্যতার পরিপন্থী এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, আগের সরকার বিভিন্ন অন্যায্য সিদ্ধান্ত নিলেও বর্তমানে এসব বৈষম্যমূলক আইন বাতিলের উপযুক্ত সময়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশন, আনুতোষিক, স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিল, বার্ধক্য তহবিল, স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণকালে প্রাপ্ত যেকোনো অর্থ, পেনশনারস সেভিংস সার্টিফিকেট থেকে গৃহীত সুদ/মুনাফা আয়করমুক্ত। তাঁরা শুধু মূল বেতন ও উৎসব ভাতা বাবদ যে টাকা পান সেই টাকার ওপর কর দিতে হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ছাড়া এনবিআরের আয়কর বিভাগ এসআরও জারি করে মেয়াদহীনভাবে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং মন্ত্রী পদমর্যাদার উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্যদের মূল বেতন ছাড়া প্রাপ্ত উৎসব ভাতা, সব ধনরের ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাকে আয়কর অব্যাহতি দিয়েছে। আরেকটি এসআরওর মাধ্যমে একই ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকদের।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে বেসরকারি চাকরিজীবীদের যেকোনো আয়কে আয়করের আওতার মধ্যে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন বেসরকারি চাকরিজীবীরা। তাঁরা মনে করছেন, মন্ত্রী-এমপিরা জনগণের সেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যাপক পরিসরে করছাড় নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁরাও এ দেশের নাগরিক। তাঁদের এই অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের প্রবণতা বৈষম্যমূলক এবং করদাতাদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশের সংবিধান বলছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। সেহেতু আইন কার্যকর হলে তা সবার জন্যই হওয়া উচিত এবং এর ব্যত্যয় ঘটলে তা সুস্পষ্ট বৈষম্য বলে মনে করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">“</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে পরিষ্কার করেই বলা আছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। অর্থাৎ আইন যখন কার্যকর হবে, তখন সবার জন্য সমানভাবেই কার্যকর হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আলাদাভাবে সুবিধা দেওয়ার পদ্ধতি চালু করেছিল আগের সরকার। আমার মনে হয়, এসব বাতিলের উদ্যোগ নেওয়ার এটা খুব উপযুক্ত সময়। এখনকার সরকারের এমন কোনো দায় নেই। এগুলো বাতিলের প্রস্তাব খুবই যুক্তিযুক্ত এবং এমন বৈষম্যমূলক প্রক্রিয়াগুলো থাকা উচিত নয়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">”</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিচারকরা বিশেষ সুবিধা নেওয়ার পরিবর্তে তাঁদের এ বিষয়ে আরো স্বচ্ছ থাকা উচিত বলে মনে করেন এই আইনজীবী। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা বৈষম্য বিলোপের কথা বলছি, কিন্তু এমন মূর্তিমান বৈষম্যগুলো সঙ্গে রেখে বৈষম্য বিলোপের আলাপ তুলতে পারবেন না। বিচারিক জায়গায় বিচারকরা কেন এমন বিশেষ সুবিধা ভোগ করবেন? তাঁদের বরং কর দেওয়া এবং এ বিষয়গুলোতে আরো স্বচ্ছ থাকার দায়বদ্ধতা বেশি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কালের কণ্ঠ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">র সঙ্গে আলাপকালে একই ধরনের মত পোষণ করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও এনবিআরের সাবেক সদস্য (করনীতি) ড. সৈয়দ আমিনুল করিম।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কর সবারই দেওয়া উচিত এবং সবার জন্য একই রকম হওয়া উচিত। বেতন-ভাতাসহ সরকারের যেকোনো খরচ হচ্ছে জনগণের টাকায়। জনগণের টাকায় বেতন-ভাতা নিয়ে আয়কর রেয়াত নেওয়া ন্যায্যতার ভিত্তিতে সঠিক নয়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ড. সৈয়দ আমিনুল করিম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক দেশে দুই আইন থাকতে পারে না। এটা বৈষম্যমূলক এবং এটা এখনই সংশোধন করার সময়। এসব অসংগতি দূর করতে হবে। কোনো রকম সন্দেহ নেই, এটা বৈষম্য এবং এ রকম বৈষম্য থাকতে পারে না। বেসরকারি চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর একটা কর আছে, কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের সেটা নেই। এটাও থাকতে পারে না। দুজনই যেহেতু রাষ্ট্রের নাগরিক, সেহেতু এটা থাকতে পারে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এনবিআর বর্তমানে বিনিয়োগ, জনকল্যাণ, ক্রীড়া, উন্নয়ন প্রকল্প, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য, রাজনৈতিক, সাংবিধানিকসহ বেশ কিছু খাতে অনেক প্রতিষ্ঠানকে এসআরও জারি করে স্থায়ীভাবে আয়কর অব্যাহতি দিয়ে রেখেছে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কিছু ক্ষেত্রে স্থায়ী সুবিধা অব্যাহত রেখে বাকি ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এই সুবিধা স্থায়ীভাবে বাতিল করা প্রয়োজন। এতে একদিকে রাজস্ব আদায়ে গতি ফিরবে, অন্যদিকে সমান অধিকার নিশ্চিত হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানা গেছে, সাংবিধানিক পদে থাকা দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ও রাজনৈতিক দলের আয়ের ওপর স্থায়ীভাবে দেওয়া আয়কর অব্যাহতি তুলে দিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কাজ করেছিলেন তৎকালীন আয়করনীতি শাখার দ্বিতীয় সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তৎকালীন চেয়ারম্যানও এই প্রস্তাবে একমত ছিলেন। তবে আমলাতন্ত্র ও বিচার বিভাগকে তুষ্ট রাখতে এই প্রস্তাব বাতিল করে দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমদানি করা গাড়িতেও বৈষম্য</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর কোনো ধরনের শুল্ক ছাড়াই বিদেশ থেকে গাড়ি আমদানি করতে পারেন সংসদ সদস্যরা। তবে দেশের সাধারণ একজন নাগরিককে সিসিভেদে একই গাড়ি কিনতে গেলে ৮৯ থেকে ৮৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। সেই হিসাবে একটি গাড়ির দাম এক লাখ টাকা হলে তা আমদানির জন্য অন্তত আরো ৮৯ হাজার টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। আর সর্বোচ্চ হার ধরা হলে শুল্ক দাঁড়ায় আট লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে এমপিদের জন্য শুল্ক পরিশোধে কোনো খরচ নেই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরামর্শে এনবিআর চলতি অর্থবছরের বাজেটে এমপিদের গাড়ি আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব দিলেও বৈষম্য ধরে রাখতে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। এনবিআর সূত্র জানায়, ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এমপিরা ৩১৬টি গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করেছেন। এসব গাড়ির মূল্য ২৬০ কোটি টাকা। সর্বোচ্চ ৮৫০ শতাংশ শুল্ক হিসাব করলে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে দুই হাজার ২১০ কোটি টাকা।</span></span></span></span></p>