<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে ঋণ কেলেঙ্কারি ও টাকা লুটের কারখানা ব্যাংকিং খাত ক্রমেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। নানামুখী সংস্কার পদক্ষেপে এরই মধ্যে খাতটিতে গতি সঞ্চার হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা ও অর্থনীতিবিদ, গবেষক ড. আহসান এইচ মনসুর গভর্নর হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাল ধরার পর বদলে যেতে শুরু করেছে পুরো ব্যাংক ও আর্থিক খাত। কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদ পরিবর্তনসহ অল্প সময়ে এই খাতের জন্য একটি সংস্কার কমিশনও করা হয়েছে। পাশাপাশি সুদের হার পরিবর্তন, রিজার্ভের সুরক্ষা দিয়ে আমদানি বাণিজ্যে গতি ফেরানোর কাজও সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন পেশাদার ও অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদকে দায়িত্ব দেওয়ায় সামনে এই খাতে আশার আলো দেখা যাচ্ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ব্যাংকিং খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির রক্তপ্রবাহ হিসেবে গণ্য হলেও গত প্রায় দেড় দশকে এই খাত ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙে চরম বিশৃঙ্খল একটি খাতে পরিণত হয়। সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে একটি চক্র গ্রাহকের আমানতের টাকা লুটপাট, নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে ব্যাংক খালি করে ফেলা, সুশাসনের ঘাটতির সুযোগে মানুষের আস্থার স্থল ব্যাংককে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার মহোৎসব চালিয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানা যায়, ব্যবসা-বাণিজ্য আর অর্থনীতির জটিল সব সমীকরণের সহজ সমাধানের নায়ক ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেন ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩তম গভর্নর হিসেবে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রথাগত আমলাতন্ত্রের বৃত্ত ভেঙে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের উদ্ভাবনী চিন্তার আরেক আবিষ্কার গভর্নর হিসেবে তাঁর যোগদান! আইএমএফের সাবেক এই ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাকে তিনি এমন এক সময়ে ডেকে এনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর করলেন, যখন মানুষ পুরো খাতকে খোলনলছে বদলে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষায় উন্মুখ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সারা জীবন বিশ্বের বহু দেশের অর্থনীতির কাঠামোগত সংস্কারে ভূমিকা রাখা অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মনসুর সত্যিকার অর্থেই একজন দেশপ্রেমিক মানুষ। দীর্ঘ কর্মজীবনে বিশ্বের সেরা ও উন্নত সব দেশে বসবাস করেও নিজ দেশের টানে ফিরে এসেছেন। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব পেয়েই তিনি ব্যাংক খাতকে বদলে দিতে নিরলস কাজ করছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োগ পেয়ে গত ১৪ আগস্ট জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেন মেধাবী, অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মনসুর। এই যাত্রা অনেক চ্যালেঞ্জের হলেও সাহসের সঙ্গে তিনি শুরু করেছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রথম দিনই তিনি অনেকটাই বাঘের মতো হুংকার দিয়ে কাজ শুরু করেন। অর্থ পাচারকারীদের ঘুম হারাম করে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। এর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই নতুন সব সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানা যায়, প্রথম ধাপেই একে একে ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিলেন। সমালোচিত-বির্তকিত এস আলম গ্রুপসহ কয়েকটি গ্রুপের লুটে নেওয়া টাকা ফেরাতে সাতটি ব্যাংকের লেনদেন ও এলসি খোলায় কড়াকড়ি করলেন। শুধু তাই নয়, ব্যাংক থেকে দুর্নীতিবাজ, বিতর্কিত রাজনীতিবিদ, আমলা আর সুবিধাবাদীরা যাতে বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে নিতে না পারেন, সে জন্য সপ্তাহে এক লাখ টাকার বেশি টাকা তোলায় নিষেধাজ্ঞা দিলেন। কয়েকজন ব্যবসায়ীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করলেন। একই সঙ্গে তাঁদের পাচারের টাকা ফেরাতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করলেন। মোটাদাগে এক মাসের মধ্যেই ব্যাংকিং খাত যে অভিভাবকহীন নয়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সবাইকে এই বার্তা দিতে থাকলেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেওয়া ব্যাংকের একটি ন্যাশনাল ব্যাংক। এতে স্বতন্ত্র পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সীমান্ত ও এনআরবি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মুখলেসুর রহমান। তিনি বলেন, নতুন প্রেক্ষাপটে তিনি ব্যাংকটির সংস্কারে যুক্ত হয়েছেন। নতুন গভর্নর চেষ্টা করছেন। তিনিও কার্যপরিধির মধ্যে ব্যাংকটিকে খাদের কিনার থেকে টেনে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তারল্য সহায়তা পাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্যারান্টার হয়ে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছে। এসব উদ্যোগ ব্যাংক খাতকে এগিয়ে নেবে বলেও জানান তিনি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যাংক খাতের বিশ্লেষকরা জানান, নতুন গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ব্যাংকে আস্থা ফিরতে শুরু করে। এর প্রতিফলন দেখা যায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে। ওই মাসেই ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায় রেমিট্যান্স-প্রবাহ। রিজার্ভ সুসংহত হওয়া শুরু করে। আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের কাছে ঋণ সহায়তা চাওয়া হয়। আগের সরকারের সময়ে নেওয়া বিপুল অঙ্কের ঋণ থাকার পরও সংস্থাগুলো সরকারের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে সাড়া দিয়ে সংস্কারে পাশে থাকার আশ্বাস দেয়। গভর্নর রিজার্ভ থেকে অবাধে ডলার বিক্রি করা বন্ধ করে দেন। আগের সরকারের সময় ক্রমেই পতনে থাকা রিজার্ভ বেড়ে এখন প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে এসে থেমেছে। তা সামনে আরো বাড়বে বলে আশা করা যায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশকে ডলার সহায়তা বাড়াতে একটি ঋণ থাকার পরও গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে সাড়া দিয়ে আইএমএফ আরো তিন বিলিয়ন ডলারের নতুন ঋণ দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। সংস্থার একটি মিশন গত দুই দিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তারা বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার সম্ভাবতা যাচাই করছে। তারা ইতিবাচক বলে জানা গেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নতুন গভর্নর প্রথম থেকেই ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। একই সঙ্গে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিও জারি রেখেছেন। এতে ডলারের অনিয়ন্ত্রিত দর অনেকটাই স্থিতিশীল হয়েছে। পাচারের টাকা ফেরাতে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি কার্যকর করা হয়েছে। তারা এখন বেশ তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছে। অনেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব এবং ক্ষেত্রবিশেষে জব্দ করা হচ্ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নতুন গভর্নর ব্যাংক খাতের সংস্কারে নেওয়া বড় পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন নিয়েও কাজ করছেন। ছয় সদস্যের একটি কমিটি এরই মধ্যে গঠিত হয়েছে। এটি ব্যাংকিং খাতের ঋণ কেলেঙ্কারি, খেলাপি ঋণ পরিস্থিতিসহ আরো নানা দিক নিয়ে সুশাসন ফেরাতে কাজ করবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আরো পৃথক দুটি টাস্কফোর্স গঠন করবেন। এই টাস্কফোর্সগুলো ব্যাংক খাতে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা ও সম্পদ পুনরুদ্ধারে কাজ করবে। দায়িত্ব নিয়েই নতুন গভর্নর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে হাত দিয়েছেন। তিনি বাজারে টাকার প্রবাহ কমাতে নীতি সুদহার সাড়ে ৯ শতাংশ করে দিয়েছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ রকম আরো অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যেগুলো বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের উন্নতি ত্বরান্বিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। গভর্নর ড. মনসুর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিয়েও কাজ করছেন। এটিও বহুল কাঙ্ক্ষিত একটি চাওয়া। আশা করা যায়, সামনে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, অপরাধীদের শাস্তি দেওয়াসহ যুগান্তকারী আরো অনেক সিদ্ধান্ত আসবে নতুন গভর্নরের হাত ধরে।</span></span></span></span></p>