<p>সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ নানা খাতের বৈষম্য কমাতে পূর্ণ গণতন্ত্রিক সরকার প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলেন, সংকটে নিমজ্জিত বেসরকারি খাতের হতাশা তাড়াতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সংস্কার জরুরি। কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশের বেসরকারি খাত, রাজনীতি, অর্থনীতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন এফবিসিসিআইয়ের দুই বারের এই সাবেক সভাপতি। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুদ রুমী</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি বেসরকারি খাত। সরকার পতনের পর দেশের বেসরকারি খাতের অবস্থা কী?</p> <p>আবদুল আউয়াল মিন্টু : এটি সবাই মুখেই বলে। কোনো উদ্যোক্তা যদি কোনো বিনিয়োগ করেন, সেটা আসার কথা নিজস্ব মূলধন কিংবা পুঁজিবাজার থেকে। একসময় আইসিবি ব্যবসায় মূলধনের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থায়ন করত। সেটা চলে গেছে ব্যাংকের কাছে। আবার ব্যাংকের সব ডিপোজিট স্বল্পমেয়াদি, কিন্তু বিনিয়োগ হয় দীর্ঘমেয়াদি। যখনই স্বল্পমেয়াদি ডিপোজিটের অধীনে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ঋণ দেওয়া হয় তখন ব্যাংক বিপদে পড়ে। অনেক উদ্যোক্তা শিল্প গড়েছেন, কিন্তু মুনাফা করতে পারছেন না। ঋণ রিশিডিউল করা হয় বারবার। একটা পর্যায়ে ঋণটা খেলাপি হয়ে যায়। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের চিন্তাধারা ও অর্থায়নপ্রক্রিয়ায় সমস্যা আছে। আমরা বলি বেসরকারি খাত, কিন্তু এর বেশির ভাগই সরকার নিয়ন্ত্রিত। সরকারের পতনের আগেও বেসরকারি খাত ভালো ছিল না। বেসরকারি খাতের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো মনোযোগ দেখছি না।</p> <p>বিনিয়োগের আরেকটি ভিত্তি হলো সামাজিক মূলধন। সামাজিক মূলধনের আবার মূলভিত্তি হলো মানুষের ওপর মানুষের বিশ্বাস। কিন্তু সমাজে যদি আইন-শৃঙ্খলা সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে সামজিক মূলধন কাজে আসবে না।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : কারখানার সমস্যার পেছনে নানা ইন্ধনের কথা বলা হচ্ছে। আপনি কী বলবেন?</p> <p>আবদুল আউয়াল মিন্টু : আইন-শৃঙ্খলা সমস্যার সমাধান না হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। যারা আগের সরকারে ছিল তাদের একটি অংশ আইন-শৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটাতে পারে। আবার যারা সরকারে ছিল না তারাও এখন ব্যবসা করতে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। শ্রমিকদের দাবিদাওয়া হয়তো অনেক চাপিয়ে রাখা হয়েছিল। এগুলোর যৌক্তিক সমাধানের জন্য খুব কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। উৎপাদন না বাড়ালে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাবে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : বর্তমানে শিল্পাঞ্চলে যে অস্থিরতা চলছে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী হতে পারে?</p> <p>আবদুল আউয়াল মিন্টু : আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা করছে। আমাদের অনেক সমস্যাও আছে। হঠাৎ করে পুলিশ উধাও। আবার বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ। বেসরকারি খাত এখন ডিমরালাইজড। গত ১৫ বছরে উৎপাদনশীলতা কমতে শুরু করে। গত পাঁচ বছরে তা আরো কমে গেছে। উল্টো সামাজিক বিশৃঙ্খলা, শ্রমিক অসন্তোষ বেড়ে গেছে। কারখানাগুলোতে হামলা, আন্দোলন চলছে, যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। যেকোনো মূল্যে এই পরিস্থিতির সমাধান দরকার। মনোবল ফিরিয়ে বেসরকারি খাতকে চাঙ্গা করতে হবে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সংস্কারের কথা বলেছেন। সেটা কিভাবে হবে?</p> <p>আবদুল আউয়াল মিন্টু : আমাদের সংস্কার একটাই, সেটা হলো বেসরকারি খাতের সংগঠনগুলোকে দলীয় লেজুড়বৃত্তি থেকে বের করে আনা। যারা উৎপাদন ব্যবসায় জড়িত এবং যারা অর্থবিত্তের মালিক তারা দুই ভাগে বিভক্ত। একটি অংশ সম্পদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আরেকটি অংশ লুটপাটের সম্পদ অর্জন করেছে। তারা অর্থনীতিতে ক্ষমতাবান, রাজনীতিতেও ক্ষমতাবান। এই দুই গ্রুপের মধ্যে বিরাট ব্যবধান হয়ে গেছে। এখন একটি গোষ্ঠীই তৈরি হয়ে গেছে, যারা শুধু সম্পদ সৃষ্টি করে, সম্পদ তৈরি করে না। তারা লুণ্ঠনের টাকা আবার পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে, যার কারণে দেশে টাকাও নেই, ডলারও নেই।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : দেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য বেড়েই চলেছে। বৈষম্য কমাতে করণীয় কী?</p> <p>আবদুল আউয়াল মিন্টু : সমাজে দিনে দিনে সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ নানা ক্ষেত্রে যে বৈষম্য তৈরি হয়েছে, সেটা কমাতে বড় ধরনের উদ্যোগ দরকার। এ জন্য সামাজিক বৈষম্য কমানোই বড় চ্যালেঞ্জ। সব খাতেই বৈষম্য কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : চলমান সংস্কার নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?</p> <p>আবদুল আউয়াল মিন্টু : অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য ক্ষমতাচ্যুত সরকার সাংবিধানিক ও আইনি প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে ধ্বংস করে ফেলেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর আমাদের সমর্থন রয়েছে। আমরাও সংস্কার চাই। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কারকে সার্থক করতে রাজনৈতিক লোকদের দিয়ে সংস্কার করতে হবে।</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>