<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ছিলেন ব্যবসায়ী, আওয়ামী লীগের টিকিটে ২০০৮ সালে প্রথমারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একের পর এক বিতর্কিত নির্বাচনে টানা প্রায় ১৬ বছর সংসদ সদস্য থেকে হয়ে যান বেপরোয়া। একাধিক কলেজের অধ্যক্ষ পেটানো, প্রতিপক্ষকে মামলা ও জেল দিয়ে ঘায়েল, নিয়োগ বাণিজ্য, দলীয় পদ বাণিজ্য, মাদক সিন্ডিকেটের পৃষ্ঠপোষকতাসহ এন্তার অভিযোগ তাঁর নামে। তিনি হলেন রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এমপি ফারুক তোয়াক্কা করতেন না কাউকেই। বিভিন্ন প্রয়োজনে এলাকার কেউ তাঁর কাছে গেলেও খারাপ আচরণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতে জোর করে শিক্ষকদের উপস্থিত থাকতে বাধ্য করতেন তিনি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২০২২ সালে ৭ জুলাই এই সংসদ সদস্য গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে লাথি, কিল-ঘুষি ও হকিস্টিক দিয়ে ১৫ মিনিট ধরে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। অধ্যক্ষ সেলিম রেজা কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমি এখনো আতঙ্কে আছি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিজয়ের দিনে ওমর ফারুকের সমর্থিত কয়েকজন শিক্ষক বাসায় এসে আমাকে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে যান। আমি দুই মাস ধরে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। এই হামলার অভিযোগে আমার স্ত্রী বাদী হয়ে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় একটি মামলা করেছে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট গোদাগাড়ী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানকে কলেজের ভেতরেই এমপি ফারুকের উপস্থিতিতে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করলেও ফারুকের নাম দেওয়ার সাহস পাননি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গোদাগাড়ী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী আমার কাছে কলেজে শিক্ষক নিয়োগ বাবদ এক কোটি টাকা দাবি করেন। তখন কলেজ তহবিল, শিক্ষকদের কাছ থেকে নেওয়া ডোনেশনের টাকা ও নিজ থেকে মিলিয়ে মোট ৬৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু চাহিদামতো এক কোটি টাকা না পেয়ে এমপি ক্ষিপ্ত হন, আমাকে কলেজের কিছু শিক্ষক দিয়ে মারধর করান।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রশ্ন উঠেছে, এক নিয়োগে এক কলেজ থেকেই এমপি যদি ৬৫ লাখ টাকা নিয়ে থাকেন, তাহলে ১৬ বছরে তাঁর নির্বাচনী দুই উপজেলার শতাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে কী পরিমাণ টাকা তিনি ঘুষ গ্রহণ করেছেন? </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নাম না বলার শর্তে এলাকার একজন বলেন, ওমর ফারুক যে ক্ষমতায় থেকে টাকার পাহাড় গড়েছেন, তাঁর বহুতল দৃষ্টিনন্দন থিম ওমর প্লাজার দিকে তাকালেই তা অনুমান করা যায়। টানা চারবার সংসদ সদস্য থাকার সুযোগে ওমর ফারুক কয়েক হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করেছেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আভিযোগ রয়েছে, গোদাগাড়ীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারার মাধ্যমে আদায় করেছেন কয়েক শ কোটি টাকা। তাদের কাছ থেকে নিয়েছেন দামি গাড়িসহ মূল্যবান উপঢৌকনও। ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রতিবেদনে সংসদ সদস্য ফারুককে মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও উল্লেখ করেছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ফারুক তাঁর মালিকানাধীন থিম ওমর প্লাজায় গোদাগাড়ী ও তানোরের অর্ধশতাধিক মাদক ব্যবসায়ী, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকে দোকান ও ফ্ল্যাট নিতে বাধ্য করেন বলেও অভিযোগ আছে। এর মধ্যে অনেকে নিয়েছেন একাধিক দোকান ও ফ্ল্যাট। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি দোকানের জন্য আদায় করা হয়েছিল ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা। আর ফ্ল্যাটের জন্য কোটি টাকা। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নির্বাচনী এলাকায় টিআর ও কাবিখা প্রকল্প আসত বছরে তিনবার। এ বাবদ বরাদ্দ ছিল ছয় কোটি টাকা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মসজিদ-মাদরাসাসহ সামাজিক সংগঠনকে এই টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি ফারুক যথাযথভাবে দেননি। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে এই বরাদ্দের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) দুই উপজেলায় আসত প্রতিবছর চার কোটি টাকা। এই বরাদ্দ থেকেও ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ টাকা হাতিয়ে নিতেন ফারুক। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ওমর ফারুকের রোষানলের শিকার আরেক ভুক্তভোগী বিএনপি নেতা আব্দুল হামিদ বাবলু কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ফারুকের প্রস্তাবে আওয়ামী লীগে যোগ না দেওয়ায় আমার নামে মোট ২৬টি মামলা দিয়েছেন। আমাকে ১০ বার জেলে যেতে হয়েছে, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে হাত-পায়ের নখ তুলে ফেলা হয়েছে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গত ৫ আগস্ট গোদাগাড়ীতে আন্দোলন করার সময় বিএনপি নেতা হামিদের পায়ে গুলি লাগে। তিনি পলাতক সাবেক এমপি ওমর ফারুকসহ ৪৪ জনের নামে মামলা করেছেন বলেও জানান। তানোর থানায়ও বল প্রয়োগ ও নির্যাতনের অভিযোগে আরেকটি মামলা হয়েছে ফারুকসহ ১৫৬ জনের বিরুদ্ধে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গোদাগাড়ীর অরেক বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম শাওয়াল কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর নির্বাচনে ক্যাম্পেইনের সময় বিএনপির প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের গাড়ি থেকে নামিয়ে থানায় নিয়ে যায় আমাকে। পরে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। ২০২৪ সালের নির্বাচনে মাঠে না থাকলেও আমাকে মামলা দিয়ে কাবু করতে চেয়েছে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে পরাজিত হয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ওমর ফারুক চৌধুরী ও তাঁর সহযোগীরাও গাঢাকা দেন। ফলে তাঁদের বক্তব্য নেওয়ার সুযোগ হয়নি।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p>