<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী লীগ শাসন আমলে রাউজানকে আলাদা রাজ্য বানিয়ে রেখেছিল আওয়ামী লীগদলীয় বিনা ভোটের সাবেক এমপি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। প্রায় ১৭ বছর রাজত্বকালে তাঁর কথা ছাড়া কেউ রাউজানে টুঁ শব্দ করতে পারেনি। তাঁর সন্মতি ছাড়া কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার এমনকি স্কুল কমিটির সভাপতি পর্যন্ত হতে পারেননি। রাউজানের প্রায় সাত লাখ সাধারণ মানুষ তাঁর কাছে জিন্মি ছিল। ১৭ বছর ধরে মানুষকে জিম্মি করে তাঁর বাহিনী দিয়ে রাজত্ব কায়েম করেন তিনি। গত ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় বিজিবির হাতে গ্রেপ্তার হন ফজলে করিম। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাবেক এমপি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী তাঁর সময়ে উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে ভোটবিহীন উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নুরু হত্যা, সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. আবু জাফর গুম, শ্রীকান্ত রক্ষিত, প্রবাসী মো. মুসা, হাশেম হত্যাসহ অসংখ্য অপকর্ম করেছেন তিনি। যেকোনো কাজে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ টাকা আদায়সহ তাঁর বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। তাঁর অত্যাচার-নির্যাতনে এলাকা ছাড়তে হয়েছে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। নিজ দলের অন্য নেতার মতাদর্শীদেরও হুমকি, ধমকি, মারধর এবং মামলা দিয়ে রাউজানের বাইরে রেখেছেন। ফজলে করিম ও তাঁর দলের লোকজনের বিরুদ্ধে মানুষের সম্পত্তি দখল, সরকারি জায়গা দখলসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ মানুষের মুখে মুখে। তবে এত দিন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষ ফজলে করিমের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অভিযোগ রয়েছে, ফজলে করিম বিগত ইউপি নির্বাচনে ১৪ ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাঁদের চেয়ারম্যান করেছেন। তাঁর নির্দেশে মেম্বারদের কাছ থেকে তাঁর রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠরা বিভিন্ন অ্যামাউন্টের টাকা নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেম্বার নির্বাচিত করেছেন। স্কুল, মসজিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কমিটির সভাপতি, সম্পাদক হতেন তাঁর পছন্দের মানুষ। পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাগানবাড়িতে সরকারি জায়গা দখল করেছেন তিনি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি নামে একটি তরিক্বতভিত্তিক সংগঠনের লোকজনকে নির্যাতন চালিয়ে এলাকা ছাড়া করেছেন। ইউনিয়ন, পৌরসভা ও ওয়ার্ডভিত্তিক তাঁদের পাকা, সেমিপাকা ঘর ভেঙে ধূলিসাৎ করেছেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাউজানের ফজলে করিম আমলের নানা অপকর্মের চিত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহমেদ বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাউজানে ফজলে করিমের রাজত্ব ছিল ভয়ংকর। সে ছিল রাউজানের হিটলার। প্রতিটি উন্নয়নমূলক কাজে ১০ শতাংশ চাঁদা তাকে দেওয়া ছাড়া কোনো উন্নয়ন হয়নি। এটি রাউজানে নিয়মে পরিণত করে সে। প্রকল্প অফিস, ইউএনও অফিস, সাবরেজিস্ট্রারি অফিসও তাকে টাকা দিত। দীর্ঘ ১৭ বছর ফজলে করিম রাউজানে আওয়ামী লীগ নয়, করিম লীগ গড়ে তোলে। আওয়ামী লীগ আমলে বিভীষিকাময় জীবনযাপন করতে হয়েছে রাউজানবাসীকে। বিএনপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে ঘরবাড়ি ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াওয়ের মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের আত্মীয়-স্বজনদের পর্যন্ত বাড়িঘর ছাড়া করেছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে যারা তার বিরুদ্ধে ছিল, তারাও নির্যাতিত হয়েছে। ১৭ বছর সীমাহীন যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে সবাইকে। বিশেষ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসিতে তাঁর ভূমিকা ছিল। ফজলে করিম বাধ্য করে বিভিন্নজনকে দিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে। বিএনপি কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মিথ্যা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করতে সহযোগিতা করে তাঁকে দেশ ছাড়া করতে ইন্ধন দেয় ফজলে করিম। অথচ একসময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীই শ্রীকান্ত রক্ষিত হত্যা মামলা থেকে রক্ষা করে ফজলে করিমকে। ফজলে করিমের নির্দেশে রাউজানে ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নুর, হাশেমসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ফজলে করিমের অপকর্মের হোতা শাহাজান ইকবালের নেতৃত্বে ছয় মাস আগে প্রবাসী মো. মুসাকে হত্যা করা হয়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উত্তর জেলা যুবদলের সহসভাপতি সাবের সুলতান কাজল বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফজলে করিমের দুঃসহ শাসন আমল রাউজানের মানুষ কখনো ভুলতে পারবে না। তাঁর অত্যাচার-নির্যাতনে আমরা আওয়ামী লীগ আমলে কখনো এলাকায় আসতে পারিনি। আমরা চাই জুলুমবাজ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা যাতে বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে। এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের বাসিন্দা ইউসুফ তালুকদার বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাউজানে যাঁরা বিএনপি নেতাকর্মী ছিলেন, তাঁদের রাউজান থেকে বের করে দিয়েছে। এমনকি আমার নামে ১৬টি মামলা দিয়েছে। আমার মতো শত শত নেতাকর্মীকে রাউজান থেকে বের করে দিয়েছে। ঘর নির্মাণ, বিয়ে-শাদি অনুষ্ঠান করতে গেলে টাকা দিতে হতো। পিংক সিটির নামে এবং উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছে। ফজলে করিমের কথা ছাড়া ওয়াজ মাহফিল পর্যন্ত করতে পারেনি কেউ। প্রবাসীদের চাঁদা দিতে হয়েছে। কেউ সমাজসেবামূলক কাজ করতে গেলে তাদের টাকা নিয়ে নেওয়া হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মর্তুজা বলেন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি আওয়ামী লীগের অন্য গ্রুপের সঙ্গে জড়িত থাকায় ফজলে করিমের লোকজন আমাকে পার্টি অফিসে এনে মারধর করেছে। আমার দোকানপাট কেড়ে নিয়েছে। কাশখালীকূলে আমার পরিবারকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। আমার বাড়িঘর দখল করে নিয়েছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চট্টগ্রাম উত্তরজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৭ বছর রাউজানে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বাড়ি-ঘরে যেতে পারেনি। মা-বাবার মৃত্যুর পর জানাজায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। মা-বাবার কবর জেয়ারত করতে যেতে পারেনি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p>