<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গাজী শাহিদুজ্জামান লিটন ফরিদপুর কোর্টের নিয়মিত একজন আইনজীবী। জরুরি প্রয়োজনে তাঁকে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া লাগে। বাসে করে ঢাকা এলে দেড় ঘণ্টায় পৌঁছে যান। কিন্তু ফরিদপুর থেকে কোনো ট্রেন না থাকায় তাঁর জীবনে পদ্মা সেতুর রেলপথ কোনো কাজে আসেনি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একই কথা জানান পুরান ঢাকার ইসলামপুরে আসা কাপড় ব্যবসায়ী সুরুজ মিয়া। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমার জন্য ৩টার ট্রেনে আসা কঠিন। আর যদি ১২টার টেনে আসি, ঢাকায় পৌঁছতে আড়াইটা থেকে ৩টা বেজে যায়। তখন আর কোনো কাজ করা যায় না। তাই আমার জন্য বাসই সুবিধা।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লিটন বা সুরুজ মিয়ার মতো যাঁরা প্রায় নিয়মিত বিভিন্ন কাজে ঢাকায় আসেন, তাঁদের জন্য রেলপথ কোনো কাজে আসেনি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত সাড়ে ১৫ বছরে হাসিনা সরকারের স্বপ্ন দেখানো এমন কয়েকটি মেগাপ্রকল্প উন্নয়নের শ্বেতহস্তী হিসেবে অভিহিত হয়েছে। পদ্মা রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পায়রা বন্দর প্রকল্পে খরচ করা হচ্ছে এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। অথচ এখন পর্যন্ত এসব মেগাপ্রকল্পের অর্থনৈতিক আউটপুট শূন্য। ঢাকা-ভাঙ্গা রেলের নেই চাহিদা, লক্ষ্যমাত্রার পাঁচ ভাগের এক ভাগ গাড়ি চলে কর্ণফুলী টানেলে। জ্বালানিসংকটে চালুর পর বারবার বন্ধ হয় মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। উদ্দেশ্য সফল হয়নি দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন নির্মাণের। ফলে প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন করা জনগণের করের টাকা পুরোটাই জলে গেছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লাভজনক হওয়া নিয়ে শঙ্কা ৩৯ হাজার কোটির পদ্মা রেল প্রকল্পে</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সড়ক যোগাযোগে পদ্মা সেতু বিল্পব ঘটালেও পদ্মা রেল সেতুর ৩৯ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ পুরোই জলে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সহজলভ্য বাস, ভাড়া অপেক্ষাকৃত বেশি, সময়মতো ট্রেন না ছাড়াসহ কয়েকটি কারণে ট্রেনের চেয়ে বাসকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে ফরিদপুর ও ভাঙ্গার মানুষ। ফলে ওই পথে লোকসান গুনছে রেলওয়ে। নতুন এই রেলপথে দৈনিক ২৪ জোড়া বা ৪৮টি যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করার কথা থাকলেও চলছে মাত্র ১০টি যাত্রীবাহী ট্রেন। মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, রেলের অনেক প্রকল্পই নেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। এর মাধ্যমে জনগণের কতটা লাভ হবে বা অর্থনৈতিকভাবে এই প্রকল্প থেকে কতটা সফলতা আসবে তা চিন্তা করা হয়নি। ফলে এত বড় বিনিয়োগ করেও অর্থনীতিতে তার কোনো ভূমিকা নেই।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতিদিন লোকসান গুনছে সাড়ে ১০ হাজার কোটির কর্ণফুলী টানেল </span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত কর্ণফুলী টানেল এখন ঘাড়ের ওপর বোঝা হয়ে উঠেছে। বেশির ভাগ সময় টানেল থাকে ফাঁকা। নেই যানবাহনের চাপ। নির্মাণের আগে জরিপে ২০ হাজারের বেশি গাড়ি চলবে বলা হলেও এখন গড়ে দৈনিক সাড়ে চার হাজার গাড়ি চলছে। দিনে গড়ে আয় হচ্ছে ১২ লাখ টাকার মতো। অথচ দিনে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। এর বাইরে চীনের ঋণ পরিশোধের দায় তো রয়েছেই। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরেই শুরু হয়েছে ঋণ পরিশোধ। বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা টানেলের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মইনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টানেলের উপযোগী সিস্টেম গড়ে ওঠেনি। পরিবহনব্যবস্থা না করে টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করা হলে এর পাশে নানা ধরনের শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। এসব কারখানার পণ্যবাহী যানবাহন টানেলের ভেতর দিয়ে চলাচল করবে। যদি তা না হয়, টানেল একরকম অব্যবহৃত থেকে যাবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাতারবাড়ী ৫১ হাজার কোটির বিদ্যুৎ প্রকল্পে শুধুই অপচয় </span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জ্বালানির নির্ভরযোগ্য সংস্থান ছাড়াই ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে মাতারবাড়ী এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লা আমদানির অনিশ্চয়তায় যার উৎপাদন বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের একটি পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে ও আরেকটি পরীক্ষামূলক উৎপাদনে রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বললেও এখনো এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করতে পারেনি। গড়ে এর উৎপাদন ৯০০ মেগাওয়াট।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে প্রকল্প পরিচালকের দুর্নীতিতে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে কয়লা আমদানি। আগস্টের পর আর কয়লা আমদানি হয়নি। তিন বছরের কয়লা সরবরাহের জন্য কোল পাওয়ার জেনারেশন কম্পানি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। তবে প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ মেঘনা গ্রুপের ইউনিক সিমেন্ট কনসোর্টিয়ামকে সুবিধা দিতে ১০ মাস দেরি করেন। শেষ পর্যন্ত অনিয়মের অভিযোগ তুলে হাইকোর্ট কয়লা আমদানিতে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন গত জুলাই মাসে। যদিও সরকারের হস্তক্ষেপে পরে তুলে নেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্প্রতি মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে একে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রকল্প বিলাস</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বলে অভিহিত করেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সাধারণ মানুষ খুব বেশি উপকৃত হচ্ছে না। মূল প্রকল্পের ধারণা অনুসারে গভীর সমুদ্রবন্দর, শিল্প-কারখানা, রেল ও সড়ক সংযোগ না করেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দোহাজারী-ঘুমধুম রেলের সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিফলে</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকায়। গত ডিসেম্বরে নতুন এই রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে ১০ মাস ধরে ট্রেন চলাচল করলেও প্রত্যাশিত সংখ্যায় যাত্রী না পাওয়ায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। পরিকল্পনা অনুযায়ী দৈনিক ২৬টি ট্রেনের পরিবর্তে বর্তমানে মাত্র ছয়টি ট্রেন চলাচল করছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ট্রান্স এশিয়ান রেল যোগাযোগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হলেও এর উদ্দেশ্য ছিল অবাস্তব। মায়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তের অংশের পুরোটাই পাহাড়ে ঘেরা। এই পাহাড় ভেদ করে মায়ানমারের মূল অংশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ অবাস্তব স্বপ্ন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিকল্পনা কমিশনের রেল উইংয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ও এখানের শিল্প-কারখানা চালু হলে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে আয় বাড়বে। যদিও এ জন্য সময় লাগবে। তত দিন রেলকে এই রুটে লোকসান গুনতে হবে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রকল্পগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়নি। গল্প বলা হয়েছিল অতিরঞ্জিত করে। তবে প্রকল্প শেষ হলেও এই এলাকাগুলোতে এখনো তেমন কোনো শিল্প গড়ে ওঠেনি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"> </p>