<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি-বেসরকারি জমি, হাটবাজার, মৎস্য খামার, নৌবন্দর দখল ও অবৈধ বালু উত্তোলন করে জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু ও তাঁর ছেলে সাবেক পৌর মেয়র রঞ্জন আত্মসাৎ করেছেন শত শত কোটি টাকা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অথচ পাবনার বেড়া পৌর সদরের বৃশালিখা মহল্লায় মাত্র ১০ বছর আগেও টুকুর ছিল আধাপাকা টিনের বাড়ি। বড় ছেলে আসিফ শামস রঞ্জন ছিলেন পাবনা শহরের কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০০৮ সালে টুকু আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথমে সংসদ সদস্য এবং পরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী হন। এর পরই পাল্টে যায় তাঁদের ভাগ্য। টুকুর সম্পদ বাড়তে থাকে জ্যামিতিক হারে। জমি, বাড়ি, গাড়ি কেনেন নিজের ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টুকু টানা ১৬ বছর পাবনা-১ (বেড়া-সাঁথিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। এর আগে তিনি ছিলেন পাবনা জজকোর্টের সাধারণ এক আইনজীবী। কয়েক দফায় এমপি হয়ে তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় শামসুল হক টুকু বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৮ টাকা। নবম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় অস্থাবর সম্পদ ছিল তিন লাখ ৪৩ হাজার টাকার। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তা হয়েছে পাঁচ কোটি ২৫ লাখ চার হাজার ৫৫৩ টাকা। অর্থাৎ অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে দেড় শ গুণেরও বেশি।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এলাকাবাসী জানায়, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই টুকু বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখায় গড়ে তোলেন প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে রাজকীয় ডুপ্লেক্স বাড়ি। বিদ্যুৎ প্লান্টে কমিশন বাণিজ্য করেও প্রচুর অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন তিনি। পরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে পুলিশে নিয়োগ বাণিজ্য, মাদক পাচারসহ নানা কায়দায় কোটি কোটি টাকা আয় করেন তিনি ও তাঁর ছেলে রঞ্জন। ২০১৪ সালে টুকুর বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করে ১৬১ কোটি টাকা অবৈধ আয়ের প্রমাণ পায়। কিন্তু পরে সেই মামলা ধামাচাপা পড়ে, ফাইলও গায়েব হয়ে যায়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টুকুর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগেরই সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ। টুকু জয়ী হওয়ার পর সাইয়িদ সমর্থকদের অর্ধশতাধিককে পিটিয়ে আহত করা হয়। দুই শতাধিক ব্যবসায়ীর দোকান বন্ধ করা হয়। কোনো কোনো দোকানে চলে লুটপাট। আবার অনেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নেওয়া হয় মোটা অঙ্কের চাঁদা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যবসায়ী ফজলুল হক বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত সংসদ নির্বাচনে টুকুর পক্ষে মিছিলে অংশ নিতে বলেছিল। আমি যাইনি। নির্বাচনের পর রঞ্জনের লোকজন এসে আমার দোকানে তালা মেরে দেয়। শেষ পর্যন্ত ৭০ হাজার টাকারও বেশি চাঁদা দিয়ে ৪৮ দিন পর আমার দোকান খুলতে পারি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকায় ভিশন টেল লিমিটেড নামের কম্পানি খুলে রঞ্জন শুরু করেছিলেন অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিটিআরসি ২৭০ টাকা কোটি টাকা কর ফাঁকির মামলাও করে। অবৈধ আয়ে রঞ্জন কোটি কোটি টাকা পাচার করে লন্ডনে একাধিক বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। স্ত্রী, সন্তানসহ হয়েছেন সেখানকার নাগরিক। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লন্ডনপ্রবাসী রঞ্জনকে ২০২০ সালের দিকে দেশে নিয়ে আসেন টুকু। আপন ভাই সাবেক বেড়া পৌর মেয়র আব্দুল বাতেনকে সরিয়ে ছেলে রঞ্জনকে বেড়া পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেন। ভোট ডাকাতি করে জয়ী হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই রঞ্জন বিতর্কিত একটি সম্মেলনের মাধ্যমে হয়ে যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। পৌর মেয়র নির্বাচনে রঞ্জনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল তাঁরই আপন চাচা আব্দুল বাতেনের। নির্বাচনে জয়ী হয়ে রঞ্জন তাঁর চাচার সমর্থকদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা ও হামলা চালান।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এর পর থেকেই বাড়তে থাকে রঞ্জনের দাপট। বাবার নির্বাচনী এলাকা বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার হাটবাজার ও নৌঘাটের ইজারা থেকে শুরু করে যমুনা হুরাসাগর নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, স্কুল-কলেজের নিয়োগ, বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেন্ডার বাণিজ্যসহ সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ নেন তিনি। যমুনা নদী ও হুরাসাগর নদী থেকে বালু উত্তোলন ব্যবসা দখলে নিয়ে নেন। স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীদের তথ্যানুযায়ী, গত তিন বছরে এসব জায়গা থেকে শতকোটি টাকা কামিয়েছেন রঞ্জন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিআইডব্লিউটিএ থেকে বৃশালিখা নৌঘাট ইজারা নিয়েছিলেন মেসার্স বেড়া ট্রান্সপোর্টের মালিক নজরুল ইসলাম। তাঁকে তাড়িয়ে রঞ্জন দীর্ঘদিন এই ঘাটের টোল আদায় করেছেন। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশু ও সবজির হাট করমজা চতুরহাট ও কাশীনাথপুর হাটেরও দখল নেন তিনি। সেখান থেকে নিজের বাহিনীর লোকজন দিয়ে আদায় করেছেন কয়েক কোটি টাকার খাজনা। এ ছাড়া সাঁথিয়ার সরকারি মৎস্য প্রজননকেন্দ্র দখল করে সেখানে গড়ে তোলেন সমন্বিত খামার। সেই খামারে ১৫-১৬টি পুকুর ছাড়াও ছিল শতাধিক গরু। সরকার পতনের পর সব লুট হয়ে যায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বেড়া ট্রান্সপোর্টের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ক্ষমতার জোরে রঞ্জন আমার ইজারা নেওয়া ঘাট দখল করেন। তাঁর বাহিনী বুলডোজার দিয়ে আমার পাকা অফিস ভবন ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা করে টুকুর বাড়িতে। রাজকীয় ওই বাড়ি থেকে সব কিছু লুটপাট করার পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বাড়ির দরজা, জানালা এমনকি সীমানাপ্রাচীরের ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে লোকজন। পরদিন লোকজন রঞ্জনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে বেড়া পৌর ভবনেও ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৪ আগস্ট রাতে শামসুল হক টুকু গ্রেপ্তার হন। ১৩ দিন পুলিশ রিমান্ডে থাকার পর এখন তিনি জেলহাজতে রয়েছেন। অন্যদিকে সরকারের পতনের দিন থেকে আসিফ শামস রঞ্জন আত্মগোপনে রয়েছেন।</span></span></span></span></p>