<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বুয়েটের আবরার ফাহাদকে ঠাণ্ডা মাথায় সারা রাত পিটিয়ে হত্যার ঘটনা দেশ নাড়িয়ে দেয়। ২০১৯ সালের এই ঘটনার প্রায় সাড়ে চার বছর আগে যশোরে ঘটেছিল এর চেয়েও নারকীয় ঘটনা। বুয়েটের মতোই যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের ঘটনায় যুক্ত ছিল সম্প্রতি নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আবরারকে রাতের আঁধারে পিটিয়ে মারা হয় বুয়েটের ছাত্রাবাসে। আর যশোরে দিনের বেলা প্রকাশ্যে ধরে এনে শহীদ আসাদ হলে পিটিয়ে মারা হয় দুই ছাত্র মো. কামরুল হাসান ও মো. হাবিবুল্লাহ হোসাইনকে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠায় বুয়েটের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির রায় হয়েছে। আর যশোরের ঘটনা নিয়ে হৈচৈ না হওয়ায় </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অভিযুক্ত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> পুলিশ। উল্টো মারপিটের শিকার একজনকে নাশকতা মামলা দিয়ে জেলে ঢোকায় পুলিশ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেদিন ছিল ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, দুপুর ২টার দিকে হাবিবুল্লাহ হোসাইন ও আলী রেজা রাজু নামের দুই ছাত্র যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের অদূরে খড়কি পীরবাড়ি জামে মসজিদের পাশে বেসরকারি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আশিক ছাত্রাবাসে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নিজের কক্ষের মেঝেতে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। হঠাৎ সেখানে হানা দেয় নুর ইসলাম, ছালছাবিল আহমেদ জিসান, তৌহিদ, আরিফুল ইসলাম রিয়াদ, রাশেদ খান, শাহজামালসহ আরো কয়েক ছাত্রলীগ ক্যাডার। তারা আহাররত হাবিবুল্লাহ ও রাজুকে মারধর করতে করতে মোটরসাইকেলযোগে ধরে আনে এমএম কলেজের শহীদ আসাদ ছাত্রাবাসের ২০১ নম্বর কক্ষে; যেটি ছিল ছাত্রলীগের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টর্চার সেল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। সেখানে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সন্ত্রাসী সংগঠনটির নেতা আনোয়ার হোসেন বিপুল, রওশন ইকবাল শাহী, নাহিদুর রহমান, ইয়াসিন মোহাম্মদ কাজল, অন্তর দে শুভ, আহসানুল করিম রহমান, সজিবুর রহমান, মেহেদি হাসান রনি, বি এম জাহাঙ্গীর কবীরসহ একদল সশস্ত্র তরুণ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অল্প সময়ের মধ্যে একই সন্ত্রাসী দল </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নির্ঝর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামের আরেকটি ছাত্রাবাস থেকে শিবির সন্দেহে ধরে আনে কামরুল হাসান ও আল-মামুন নামের আরো দুই ছাত্রকে। এরপর তারা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টর্চার সেলে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লোহার রড, হাতুড়ি, হকিস্টিক দিয়ে চারজনকেই বেদম পেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে রাজু দৌড়ে পালিয়ে জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হন। অন্য তিনজনের মধ্যে হাবিবুল্লাহকে মৃত ভেবে হলের সামনের খোলা জায়গায় ছুড়ে ফেলে দুর্বৃত্তরা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খবর পেয়ে বিকেলে পুলিশ গিয়ে আসাদ হল থেকে আহত তিনজনকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ যাওয়ার পরও অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা আসাদ হলেই ছিল। কিন্তু তৎকালীন শাসকদলের লোক হওয়ায় তারা কাউকে আটক করেনি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে হাসপাতালে নেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হাবিবুল্লাহ। মারাত্মক আহত অবস্থায় কামরুলকে ঢাকায় রেফার করেন ডাক্তাররা। কিন্তু রাত ১২টার পর পাটুরিয়া ঘাটে মৃত্যু হয় তাঁর। আর আল-মামুন দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়েছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূত্র জানায়, হাবিবুল্লাহ ও কামরুলকে হত্যা এবং অন্য দুজনকে মারপিটের ঘটনায় পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে থানায় পৃথক অভিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু যেহেতু একই সঙ্গে একই স্থানে ঘটনা দুটি ঘটে, তাই সব অভিযোগ একটি মামলায় (যশোর কোতোয়ালি থানার মামলা নম্বর ৯০, তারিখ : ২৩.১১.২০১৫) রূপান্তরিত হয়। মামলাটির বাদী ছিলেন কোতোয়ালি থানার তৎকালীন এসআই সাহাবুল আলম। তিনি এজাহারে নিহত দুই তরুণকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিবির সমর্থক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> উল্লেখ করলেও হত্যাকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নাম-পরিচয় না দিয়ে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুষ্কৃতকারী</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> উল্লেখ করেন। মামলাটি পর্যায়ক্রমে তদন্ত করেন এসআই মো. নাসির উদ্দীন ও এসআই শেখ হাবিবুর রহমান। তাঁরা কোনো অভিযুক্তকে আটক করেননি, যদিও তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াত, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিত। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আসামি শনাক্ত করতে না পারায়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ২০১৭ সালের ৬ জুন আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে দায়িত্ব শেষ করে পুলিশ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় কর্মরত এসআই সাহাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঘটনার সময় এমএম কলেজ এলাকায় প্যাট্রল ডিউটিতে থাকার কারণে আমি আদেশপ্রাপ্ত হয়ে আসাদ হলে যাই এবং আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিই। পরে মামলার বাদীও হই। কিন্তু তদন্তের দায়িত্ব আমার ছিল না। সে কারণে আসামি শনাক্ত করতে না পারার দায় আমার কাঁধে পড়ে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> দুই তদন্তকারী কর্মকর্তা যথানিয়মে যশোর থেকে বদলি হয়ে গেছেন। বর্তমান কর্মস্থল জানতে না পারায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে আসাদ হলে পৈশাচিক নির্যাতনে নিহত হাবিবুল্লাহর বাবা মো. নেয়ামত আলী দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে নারাজি পিটিশন দিয়েছেন। তাঁর আইনজীবী আলমগীর সিদ্দিকী কালের কণ্ঠকে জানান, আসামিরা সবাই তৎকালীন সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ক্যাডার হওয়ায় সেই সময় পুলিশ তদন্তের নামে তামাশা করেছে। এখন পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তারা মামলাটি পুনঃতদন্তের আবেদন করেছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই মামলা দেখাশোনায় শিবিরের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত আব্দুল্লাহ আল-মামুন কালের কণ্ঠকে বলেন, পুলিশ সে সময় হত্যার অভিযোগে করা মামলার তদন্ত তো করেইনি, উল্টো ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের মারপিটে আহত আল-মামুনের নামে নাশকতা মামলা করে। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তাঁকে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে হয়েছে ওই ভুয়া মামলায়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্তরা কেউ কেউ সেই সময়ই ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন, কেউ কেউ পরে সন্ত্রাসী সংগঠনটির নেতা হন। তাঁদের মধ্যে ছালছাবিল আহমেদ জিসান ও আনোয়ার হোসেন বিপুল যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, আরিফুল ইসলাম রিয়াদ ও রওশন ইকবাল শাহী সাবেক সভাপতি। হাসিনা সরকার পতনের পর আত্মগোপনে যাওয়ায় তাঁদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হত্যাকাণ্ডের শিকার মো. হাবিবুল্লাহ হোসাইন শার্শা উপজেলার তেবাড়ীয়া গ্রামের ডা. নিয়ামত আলী এবং মো. কামরুল হাসান বাঘারপাড়ার ছোটখুদড়া গ্রামের মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে। দুজনই এমএম কলেজে অর্থনীতি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। কামরুল শিবিরের সাথি এবং হাবিবুল্লহ কলা অনুষদের সভাপতি ছিলেন বলে সংগঠনটি সূত্রে জানা যায়। হাবিবুল্লাহর পরিবার জামায়াত এবং কামরুলের পরিবার আওয়ামী লীগ সমর্থক।</span></span></span></span></p>