<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের প্রভাব কী হবে তা অনুমান করা কঠিন। কারণ ট্রাম্প সম্পর্কেই অনুমান করা কঠিন। অতীতে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ট্রাম্প যা যা করেছেন তা থেকে তাঁর কর্মকাণ্ড ও নীতি সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে ধারণা করা যায়। কিন্তু এবার যে তিনি ভিন্ন কিছু করবেন না তা তো কেউ নাকচ করতে পারে না।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ট্রাম্প সম্পর্কে যেমনটা জানি তার ভিত্তিতে আমি ধারণা করি, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে; বিশেষ করে জলবায়ুর মতো ইস্যুতে ট্রাম্পের নিজস্ব অবস্থান আছে। জলবায়ু ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যে উদ্যোগ নেবে তা বাইডেন প্রশাসনের চেয়ে অনেক ভিন্ন। জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমনের মতো ইস্যুতে তিনি খুব গুরুত্ব দেননি। এ কারণে আমার মনে হয়, যে দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো জলবায়ু পরিবর্তন, সহযোগিতা, অভিযোজন ও প্রশমন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরো নেতৃস্থানীয় ভূমিকা আশা করে, তারা এখনই উদ্বিগ্ন হবে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ও অংশীদারের ব্যাপারে ট্রাম্প অতীতে গতানুগতিক অবস্থান নেননি। আমার মনে হয়, ট্রাম্পের আবারও ক্ষমতায় ফেরার প্রভাব ন্যাটো  জোটের ওপর কী হতে পারে তা নিয়ে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো খুবই দুশ্চিন্তায় থাকবে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ এশিয়ার দেশগুলোও তাদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন থাকবে। বড় ইস্যু হলো, ট্রাম্প প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের মধ্যে বোঝা ভাগাভাগি, বিশেষ করে অর্থনৈতিক বোঝা ভাগাভাগির ওপর জোর দিয়েছেন। ট্রাম্প এবার ক্ষমতায় আসার পর আবারও মিত্রদের বিভিন্ন ইস্যুতে আর্থিক বোঝা ভাগাভাগির চাপ পুনর্জীবিত করবেন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমনটি আমি ধারণা করতেই পারি। আমরা হয়তো দেখব, সহযোগিতার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে আর্থিক বোঝা না নিয়ে এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প মিত্র দেশ বা জোটের বাকি শরিকদেরও ভূমিকা প্রত্যাশা করবেন। অঞ্চল হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রভাব খুব বেশি বলব না। আমার ধারণা, বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্কের ধারাবাহিকতা মোটাদাগে প্রায় অভিন্ন থাকবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির আলোকেই আবর্তিত হয়েছে। আর এ বিষয়টি খুব স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি রিপাবলিকান, ডেমোক্র্যাট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুই পক্ষই সমর্থন করে। ট্রাম্প যখন প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি বা কৌশলের আনুষ্ঠানিক উদ্ভব হয়েছিল। ওই নীতি নেওয়া হয়েছে চীনকে মোকাবেলার জন্য। আমরা আশা করতে পারি, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবারও চীনকে মোকাবেলায় ওই নীতি অনুসরণ করে যাবেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের আলোকে ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে দেশগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে কাজ করবে। বিশেষ করে এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব কমাতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়াতে দৃষ্টি থাকবে ট্রাম্পের। আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিযোগিতার পটভূমিতে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশ যাতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চীনের খুব কাছে না যায় তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে ট্রাম্প প্রশাসন। সুনির্দিষ্ট কিছু দেশের ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের কাজ করার ধরন বদলাবে। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভারত। বাংলাদেশের প্রতিবেশী ওই দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সম্পর্কের অগ্রাধিকারে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতে সহযোগিতাকেও ট্রাম্প প্রশাসন অগ্রাধিকার দিতে চাইবে বলেও আমি নিশ্চিত নই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বাণিজ্যক্ষেত্রে বিশ্বে যে উত্তেজনা ছিল তা আবার নতুন করে দেখা দিতে পারে। তবে রাশিয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান উত্তেজনা কিছুটা কমতেও পারে বলে আমার ধারণা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের জোরালো সম্পর্ক আছে। এটি বাইডেন প্রশাসনের কাছে উদ্বেগের বিষয় ছিল। বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর নয়াদিল্লি-মস্কো জোরালো সম্পর্ক বাইডেন প্রশাসন ভালোভাবে নেয়নি। তবে আমার ধারণা, রাশিয়া নিয়ে ট্রাম্প বাইডেনের চেয়ে আরো সংযত অবস্থান নেবেন। রাশিয়া ফ্যাক্টর, ভারত-রাশিয়া জোরালো সম্পর্কের কারণে ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কের মধ্যে রাশিয়া বড় ইস্যু না-ও হতে পারে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তানে নাজুক মানবাধিকার পরিস্থিতি সত্ত্বেও আমরা হয়তো দেখব, ট্রাম্প প্রশাসন আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি বলব, ট্রাম্পের বিজয়ের প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পড়তে পারে বাংলাদেশে। শেখ হাসিনার সরকার উত্খাত হওয়ার পর সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে পুরোপুরি নতুনত্ব এসেছে। বাংলাদেশ স্থিতিশীল, পুনর্গঠিত ও সংস্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহযোগিতা, মানবিক সহায়তা গুরুত্ব পাচ্ছে। আমার মনে হয় না, ট্রাম্প প্রশাসন এই সম্পর্ককে এই কাঠামোতে রাখার চেষ্টা করবে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিযোগিতাকে গুরুত্ব দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে বেশি গুরুত্ব দেবে। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অতীতে ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করেছেন। তাঁদের দুজনের রাজনীতির ধরন এক নয়। রাজনীতি ও বৈশ্বিক বিষয়ে তাঁদের দুজনের ভাবনায় অনেক পার্থক্য আমার মনে হয়, এ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি মনে করি, ট্রাম্প প্রশাসন ও ড. ইউনূসের সরকার</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উভয়েই সফল ও স্বাভাবিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দেখতে চাইবে। তবে এই সম্পর্কের শুরুর দিকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : </span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যুক্তরাষ্ট্রের</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>