<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই অভিযোগপত্র দেন। ওই অভিযোগপত্রে আসামির তালিকায় নতুন ৩০টি নাম যুক্ত করা হয়েছিল। সেখানে বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ চারদলীয় জোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও বিএনপি-জামায়াতের বেশ কজন নেতার নাম আসে। দুই মামলায় মোট ৫২ জন আসামির বিচার শুরু হলেও অন্য মামলায় তিনজনের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় মোট ৪৯ জন আসামির বিচার করেন বিচারিক আদালত।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ ঘোষণা করে গতকাল রবিবার তা বাতিল করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ রায়ের ফলে বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিচারিক আদালত যাদের সাজা দিয়েছিলেন, তাদের সবাই খালাস পেয়েছেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুফতি আবদুল হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও ২৫ জন শ্রুত সাক্ষীর জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে বিচারিক আদালত এই রায় দিয়েছেন। এই ২৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দির একটি আরেকটিকে সমর্থন করেনি। কোনো চাক্ষুষ সাক্ষী ছিল না। কে গ্রেনেড সরবরাহ করেছে তা চার্জশিটে দেখাতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা। আর গ্রেনেড কে ছুড়েছে তার কোনো চাক্ষুষ সাক্ষী নেই। যেসব সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের কেউ তা বলতে পারেননি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কোনো প্রমাণযোগ্য বা আইনগত মূল্য নেই। কারণ জীবদ্দশায় তিনি তার স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে গেছেন। এই স্বীকারোক্তি জোর করে নেওয়া হয়েছিল দাবি করা হয়েছে। তা ছাড়া মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিটি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা যথাযথ পরীক্ষা এবং গ্রহণ করা হয়নি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী এস এম শাহজাহান রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সাংবাদিকদের বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২০০৮ সাল থেকে আমি এই মামলার সঙ্গে যুক্ত আছি। প্রথম যখন এই মামলা শুরু হলো, তখন থেকে আজ (গতকাল) পর্যন্ত গত ১৬ বছর এই মামলায় আসামিপক্ষের হয়ে আমি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি। হাইকোর্টের যেই বেঞ্চ আজ (গতকাল) মামলাটির নিষ্পত্তি করলেন, সেই বেঞ্চকে সাধুবাদ জানাই। আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রায় বাতিলে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সাক্ষ্য এবং আইন, কোনো দিক থেকেই এই মামলা প্রমাণিত হয়নি। আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন, কোনো আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে অন্য আসামিকে সাজা এবং দণ্ডবিধির ১২০(খ) ধারার বিধান (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের শাস্তি) প্রমাণ করা যায় না। আর সাক্ষ্য আইনের ১০ ধারা অনুযায়ী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রমাণ করতে হলে ষড়যন্ত্রকারীর কথা বা কাজ নিরঙ্কুশ হতে হবে। এই মামলার ক্ষেত্রে তা হয়নি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ফৌজদারি আইনজ্ঞ এস এম শাহজাহান বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মুফতি হান্নানের প্রথম স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করে প্রথম অভিযোগপত্র আনা হয়েছিল। ফলে যাদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে ওই স্বীকারোক্তি ছাড়া আর কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাননি হাইকোর্ট। দ্বিতীয় অভিযোগপত্রে তারেক রহমানসহ অন্য যাদের আসামি করা হলো, তাদের বেলায়ও দেখা গেছে মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছাড়া আর কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। তা ছাড়া দুটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিই মুফতি হান্নান জীবদ্দশায় প্রত্যাহার করে গেছেন। ফলে প্রত্যাহার করা স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করে কাউকে সাজা দেওয়া যায় না। এমনকি বেঁচে থাকলেও এই স্বীকারোক্তি প্রযোজ্য হতো না। আদালত বলেছেন, দ্বিতীয় অভিযোগপত্র (সম্পূরক অভিযোগপত্র) অতিমাত্রায় বেআইনি। কারণ আইনের বিধান অনুসারে মামলার তদন্ত বা বিচার পর্যায়ে নতুন কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা সম্পূরক অভিযোগপত্র দিতে পারেন। কিন্তু এই মামলায় দ্বিতীয় অভিযোগপত্রটি (সম্পূরক অভিযোগপত্র) এসেছে পাবলিক প্রসিকিউটরের আবেদনে। পাবলিক প্রসিকিউটরের আবেদন মঞ্জুর করে বিচারিক আদালত মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য পাঠিয়েছিলেন। তা ছাড়া পুনঃ তদন্তের প্রতিবেদন আসার পর সেই অভিযোগপত্র কোনো ম্যাজিস্ট্রেট গ্রহণ করেননি। সরাসরি তা মহানগর দায়রা জজ আদালতে দাখিল করা হয় এবং আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৩ ধারা অনুসারে আমলে নেন।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে এ বিষয়টি স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন জানিয়ে আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৩(১) অনুসারে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগ আমলে না নিলে মহানগর দায়রা আদালতে দাখিল হতে পারে না। হাইকোর্ট রায়ে এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে বলেছেন, দ্বিতীয় অভিযোগপত্রটি আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রে ১৯৩(১) ধারা অনুসরণ করা হয়নি। ফলে দ্বিতীয় অভিযোগপত্রটি আমলে নেওয়া বেআইনি এবং আইনের চোখে তার কোনো কার্যকারিতা নেই। তা ছাড়া প্রথম অভিযোগপত্রটিও গ্রহণযোগ্য না। কারণ হচ্ছে, ওই অভিযোগপত্রটিও মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করেই দেওয়া হয়েছে, যা তিনি পরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এই আইনজীবী তার যুক্তি তুলে ধরে সাংবাদিকদের বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট বাদ দিয়ে ২৫ জন সাক্ষী দিয়েছেন এই মামলায়। তাদের কেউ-ই বলেননি তারা কাউকে গ্রেনেড ছুড়তে দেখেছেন। ফলে প্রকৃত খুনি কে, সেটি সাক্ষ্য-প্রমাণে স্পষ্ট নয়। যে কারণে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুসারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায় না। আইনের ছাত্র হিসেবে আমি একটা কথা বলতে পারি, অপরাধের গুরুত্ব বা নৃশংসতা যত তীব্রই হোক, আসামিকে সাজা দিতে হলে অপরাধের সঙ্গে আসামির সম্পৃক্ততা দেখতে হবে, প্রমাণ করতে হবে। এ মামলায় বাদীপক্ষ তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এস এম শাহজাহান বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২১ আগস্ট যে ঘটনা ঘটেছে ওই ঘটনার নিন্দা জানাই আমরা। কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এই মামলার তদন্ত হয়েছে, অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে এবং বিচার হয়েছে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তিনি বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে যারা আপিল করেননি, তাদেরসহ হাইকোর্ট সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন। ফলে তারেক রহমানসহ যারা আপিল করেননি তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে। আমরা আদালতের কাছে কৃতজ্ঞ।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা উচিত। রায় পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।</span></span></span></span></span></p> <p> </p>