<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত দেড় দশকে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ব্যাংক খাতে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক জিম্মি ছিল সরকারের কাছে। এমনই পর্যবেক্ষণ দিয়েছে সরকারের অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র কমিটি। কমিটি আরো মনে করে, বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাংক আইন পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নীতিমালাও। স্বতন্ত্র পরিচালকরা তাদের দায়িত্ব পালন করেননি। এমনকি অভ্যন্তরীণ ও বহির্নিরীক্ষক যথাযথ ভূমিকা রাখেননি। নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়, যার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জিম্মি করে ফেলা হয়। নতুন সরকার গঠিত হওয়ায় ব্যাংক খাতকে স্বজনতোষী পুঁজিবাদ থেকে রক্ষা করার সুযোগ হয়েছে। এটা নিশ্চিত করতে হবে যে নতুন কোনো স্বজনতোষী পুঁজিবাদ যাতে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ না নিতে পারে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত রবিবার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ১০টি ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেছে। এর মধ্যে দুটি সরকারি ব্যাংক এবং আটটি বেসরকারি ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকের বেশির ভাগ শরিয়াভিত্তিক। এই ১০ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পুরো খাতের ৩৩ শতাংশ ঋণ, আর ৩২ শতাংশ আমানত। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বলেছে, এসব ব্যাংক কারিগরিভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে এবং তাদের তারল্য নেই। তবে তা তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়নি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যাংক খাতকে কৃষ্ণগহ্বরের (ব্ল্যাক হোল) সঙ্গে তুলনা করেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। দেশের ব্যাংক খাতে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ এখন ছয় লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা, যে অর্থ দিয়ে ১৪টি মেট্রো রেল বা ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। গত দেড় দশকে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ব্যাংক খাতে, ফলে খাতটি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ব্যাংক খাতের দুর্নীতিবাজরা সবাই ছিলেন প্রভাবশালী।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কমিটি আরো জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে রাষ্ট্রীয় সংস্থার সহায়তায় ব্যাংক দখল করা হয়েছে। শুধু একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতেই সাতটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হয়েছিল। এরপর বড় অঙ্কের অর্থ দেশের বাইরে পাচার করা হয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন রবিবার দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করে। কমিটির প্রধান ছিলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তার নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ আগামী দিনে মোট ঋণের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশে পৌঁছে যাবে। এসব ঋণের বড় অংশই ২০১৭ সালের পর দেওয়া হয়েছে, যার একটি বড় অংশই পাচার হয়ে গেছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যাংক খাতে গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। একই সময়ে পুনঃ তফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ ছিল দুই লাখ ৭২ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। অবলোপন করা ঋণের স্থিতি ছিল ৭৫ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা, স্পেশাল মেনশন হিসেবে ছিল ৩৯ হাজার ২০৯ কোটি টাকা, আদালতের স্থগিতাদেশে খেলাপিমুক্ত ছিল ৭৬ হাজার ১৮৫ কোটি টাকার ঋণ। ফলে জুন মাস শেষে মোট দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ ছিল ছয় লাখ ৭৫ হাজার ৩০ কোটি টাকা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। ফলে খেলাপি ঋণ ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শ্বেতপত্র হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আহসান এইচ মনসুর বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা দেশের আর্থিক খাতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। সামনে খেলাপি ঋণ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশে পৌঁছে যাবে, এখন যা সাড়ে ১২ শতাংশ। আগামী মাসে তা ১৫ শতাংশ, এরপর ১৭ শতাংশ হয়ে ধীরে ধীরে ৩০ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে। খেলাপি আগেই হয়ে আছে, এখন তা হিসাবে আসবে। এটা কমিয়ে আনতে আমরা কাজ শুরু করেছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তদারকি জোরদার করতে হবে, যে কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। ব্যাংকগুলোর সম্পদের মান পরীক্ষা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দিয়ে করা হচ্ছে। ১১ ডিসেম্বর এই কাজ শুরু হবে। প্রথমে ১২টি ব্যাংক এবং পরে ২০টি ব্যাংকে নিরীক্ষা করা হবে। এতে তাদের প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আহসান এইচ মনসুর বলেন, এরপর এসব ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানতকারীদের রক্ষা করতে পদক্ষেপ নেবে, তাদের সুরক্ষা দেওয়া হবে। ব্যাংকগুলোকে টাকা দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে গ্রাহক আস্থা ফিরে আসবে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>