<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টাকা আদায় না করেই চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের ঋণ সমন্বয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। নির্দেশক্রমে অনুরোধ করার বিষয়টা ছিল আওয়ামী সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের স্বার্থ হাসিলের কৌশল। এটি ব্যবহার করে বিগত বছরগুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করে নিয়েছেন তারা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের পরও মন্ত্রণালয় থেকে আসছে সুদ মওকুফ করে ও ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই ঋণ নবায়নের নির্দেশ।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ২৪ সেপ্টেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আফরোজা বেগম পারুল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই পাঁচ ব্যাংকে থাকা ঋণের সুদ মওকুফ করে ব্লক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের মোট বকেয়ার পরিমাণ ৯ হাজার ৩৩৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তিন মাসভিত্তিক কিস্তি পরিশোধ করলে এখন ২৯৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার প্রয়োজন। আবার সুদ মওকুফ করতে গেলে ব্যাংকের শর্ত মোতাবেক লেজার স্থিতির ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট বাবদ ১৫৯ কোটি আট লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু বিএসএফআইসির আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় দুই শর্তের কোনোটাই পালন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে কোনো রকম ডাউন পেমেন্ট ছাড়া এবং বকেয়া সুদ মওকুফ করে ঋণগুলো নবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংককে বিশেষ প্রজ্ঞাপন ও রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের উপস্থাপন এবং কার্যক্রম গ্রাহণের নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু এতে কোনো প্রতিষ্ঠানই রাজি হয়নি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে দেশের চার ব্যবসায়ী গ্রুপকে নিয়ম লঙ্ঘন করে বড় অঙ্কের সুদ মওকুফ সুবিধা দিয়েছে দুটি ব্যাংক। এস আলম, নাসা, বিসমিল্লাহ ও এননটেক্স গ্রুপকে এই সুবিধা দেওয়া হয়। এসব গ্রুপের ১৪ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে ছয় হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা মওকুফ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংক, নাসা, বিসমিল্লাহ ও এননটেক্স গ্রুপকে চার হাজার ২২৪ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করে। আর বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের তিন হাজার ৬১৮ কোটি স্থিতির বিপরীতে দুই হাজার ২৮৩ কোটি টাকা মওকুফ করা হয়েছে। এদিকে ব্যাংক খাতে গত তিন বছরে সব মিলিয়ে আট হাজার ৮০০ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করা হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হোসনে আরা শিখা কালের কণ্ঠকে জানান, নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর জন্য সুদ মওকুফ করে ব্লক হিসাবে স্থানান্তর এবং সহনীয় হারে পরিচালন ব্যয় আদায়ের সুযোগ রয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে গঠিত চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন এখন নিজেই দেশের বোঝা। দীর্ঘদিন ধরে লোকসান গুনে সংস্থাটি উল্টো বাড়িয়ে চলেছে ঋণ ও সুদের অঙ্ক। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শুধু চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন নয়, অব্যবস্থাপনা, মনিটরিংয়ের অভাব, অদক্ষ ও অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ, দুর্নীতি, জবাবদিহি ও সুশাসনের অভাবে ডজনখানেক সরকারি সংস্থার লোকসানের পরিমাণ কমানো যাচ্ছে না। ফলে প্রতিবছর বাড়ছে ভর্তুকির পরিমাণ, চাপ পড়ছে বার্ষিক বাজেটে। একই সঙ্গে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে ব্যাংকের ঋণ।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের জন্য দুর্নীতি, অদক্ষতা এবং সামর্থ্য অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন না করাকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর লোকসান করে আসছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে বড় ধরনের রিভিউ বা পরিবর্তন আনা দরকার। কোনটা কোন পদ্ধতিতে রাখলে ভালো হবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের কারণ পুরনো যন্ত্রপাতির ব্যবহারে উৎপাদন কম হওয়া, দক্ষ জনবলের অভাব। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় অনেক দুর্নীতি রয়েছে। বিষয়গুলো সার্বিকভাবে পর্যালোচনা খুব জরুরি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিল্প মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ২০২০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের ১৫টি রাষ্ট্রীয় চিনিকলের মধ্যে ছয়টিতে আখ মাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকার ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দিতে চিনিকলগুলোকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের ঋণের বিষয়ে জানতে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠির জবাবে সোনালী ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করে আদায়যোগ্য টাকা সুদবিহীন ব্লক হিসাবে স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সুদ মওকুফ নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট বাবদ ৯৯ কোটি টাকা জমা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবের অনুরোধ করে। পাশাপাশি ত্রৈমাসিক কিস্তি হিসেবে ১৭৬ কোটি ৯ লাখ টাকা জমা দিতে বলা হয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একইভাবে জনতা ব্যাংক শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিএসএফআইসির চিঠির জবাবে ঋণের সুদ মওকুফ করে আদায়যোগ্য টাকা সুদবিহীন ব্লক হিসাবে স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সুদ মওকুফ নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট বাবদ ৩১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা জমা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবের অনুরোধ করে। একই সঙ্গে ত্রৈমাসিক কিস্তি হিসেবে ৫৩ কোটি ৩১ টাকা জমা দিতে বলা হয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য সুদ মওকুফ করে ঋণ নবায়ন করা কোনো সমাধান নয়। কেউ অন্যায় আবদার নিয়ে এলে আমি কখনো সেই আবদার রাখব না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"> </p>