<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চিরবিদায় নিয়েছেন সমকালীন বাংলা কবিতার কিংবদন্তি কবি হেলাল হাফিজ। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি এই দ্যুতিময় পঙক্তির স্রষ্টা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হেলাল হাফিজ কয়েক বছর ধরে ঢাকার শাহবাগের সুপারহোম নামের একটি হোস্টেলে থাকতেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে তিনি বাথরুমে পড়ে গিয়ে অচেতন হন। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে বিএসএমএমইউর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। অকৃতদার কবি গত ৭ অক্টোবর ৭৭ বছরে পা রাখেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে গ্লকোমায় আক্রান্ত ছিলেন। পাশাপাশি কিডনির জটিলতা, ডায়াবেটিস ও স্নায়ু জটিলতায়ও ভুগছিলেন তিনি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আজ শনিবার সকাল ১১টায় বাংলা একাডেমিতে নিয়ে যাওয়া হবে কবির মরদেহ। সেখানে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বাদ জোহর কবির প্রিয় প্রাঙ্গণ জাতীয় প্রেস ক্লাবে নেওয়া হবে মরদেহ। সেখানে আরেক দফা জানাজার পর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হবে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রধান উপদেষ্টার শোক</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এক শোকবার্তায় মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দ্রোহ ও প্রেমের কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যু বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। প্রধান উপদেষ্টা কবির পরকালীন জীবনের শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, কবি হেলাল হাফিজ ছিলেন তারুণ্যের শক্তি এবং স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক সাহসী কণ্ঠ। তার কালজয়ী কবিতার মতোই তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হেলাল হাফিজ ছিলেন উদ্দীপ্ত তারুণ্যের প্রেরণা। তার কবিতা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তারুণ্যের শক্তি জুগিয়েছে। তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হেলাল হাফিজের মৃত্যুতে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীসহ শিল্প-সংস্কৃতিজগতের আরো অনেকে শোক প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ এবং সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া পৃথক বিবৃতিতে কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনুপ্রেরণার কবি</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হেলাল হাফিজের কবিতা প্রেরণা জুগিয়েছে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধীসহ প্রগতিশীল সব আন্দোলনে। উনসত্তরের সর্বগ্রাসী ও সর্বপ্লাবী গণ-অভ্যুত্থানের সময় হেলাল হাফিজ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সেই অভ্যুত্থানের সময়ে লেখেন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শিরোনামের কবিতাটি। ১৯৬৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি লেখা এ কবিতার প্রথম দুই লাইন এক রাতে আহমদ ছফা ও হুমায়ূন কবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে চিকা মেরে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতারাতি তারকাখ্যাতি পেয়ে যান হেলাল হাফিজ। দেয়াললিখন হিসেবে এ কবিতার প্রথম দুই চরণ প্রচারিত হওয়ার পর প্রথম প্রকাশিত হয় একটি ছোট কাগজে। এরপর এই একটি কবিতাই তার জীবনধারা আমূল বদলে দেয়। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুক্তিযুদ্ধের সময় এই কবিতা রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছে। কালজয়ী এই কবিতা আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ইংরেজি, হিন্দি, জার্মান, ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে কবিতাটি। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যে জলে আগুন জ্বলে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">র প্রথম কবিতা এটি। এ বইয়ের কবিতাগুলো ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে লেখা। এই একটি বই দিয়েই মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নেন হেলাল হাফিজ। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির ৩৩টি মুদ্রণ হয়েছে। ২০১২ সালে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যে জলে আগুন জ্বলে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কাব্যগ্রন্থের কবিতার সঙ্গে কিছু কবিতা যুক্ত করে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কবিতা একাত্তর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তৃতীয় কবিতার বই </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বেদনাকে বলেছি কেঁদো না</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। এত কমসংখ্যক প্রকাশিত কবিতা নিয়ে তার মতো আর কেউ এত জনপ্রিয়তা পাননি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায় হেলাল হাফিজের জন্ম। ১৯৬৫ সালে নেত্রকোনা দত্ত হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে ১৯৭২ সালে দৈনিক পূর্বদেশে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পূর্বদেশ ও দৈনিক দেশ পত্রিকায় তিনি সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল দৈনিক যুগান্তর।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হেলাল হাফিজ ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। তার আগে খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কারসহ নানা সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>