ঢাকা, বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫
৫ চৈত্র ১৪৩১, ১৮ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫
৫ চৈত্র ১৪৩১, ১৮ রমজান ১৪৪৬

হতাহত ও বিচারে অনিশ্চয়তার দায় কার

নিজস্ব প্রতিবেক
নিজস্ব প্রতিবেক
শেয়ার
হতাহত ও বিচারে অনিশ্চয়তার দায় কার

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট  ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জনের প্রাণহানি এবং তিন শতাধিক মানুষের আহত হওয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা সাজিয়ে নিরপরাধ কিছু মানুষকে নির্যাতন-হয়রানির শিকার করা এবং মর্মান্তিক ওই ঘটনার বিচার অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ার দায় কাদের? এই প্রশ্ন এখন অনেকের। গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, আইনের ভিত্তিতে মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়নি। ২৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দির একটি আরেকটিকে সমর্থন করেনি। কোনো চাক্ষুষ সাক্ষী ছিল না।

মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কোনো প্রমাণযোগ্য বা আইনগত ভিত্তি নেই। কারণ জীবদ্দশায় তিনি তাঁর স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে গেছেন। ফলে বিচারিক আদালতের বিচারটিই অবৈধ।

এই রায় এমন এক সময় দেওয়া হয়, যখন দেশ স্বৈরাচারমুক্ত।

বিচার বিভাগে কর্তৃত্ববাদী কোনো শাসকের প্রভাব নেই। আলোচিত ওই রায়ের পর মামলাটি কেন ও কিভাবে সাজানো হয়েছিল, জজ মিয়া কি আসলেই সাজানো নাটক, গ্রেনেড না চেনা নিরপরাধ-নিরীহ ব্যক্তিএসব প্রশ্নের উত্তর মিলছে। জানা যাচ্ছে কিভাবে একজন সন্ত্রাসী ও ভয়ংকর অপরাধে একাধিক মামলার আসামিকে কারা জীবনে গ্রেনেড দেখিনি, থানায় মামলা নেই বলে প্রচার চালিয়ে এ মামলার প্রথম তদন্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। কোনো পত্রিকা গভীর অনুসন্ধান হিসেবে ইট ওয়াজ হাওয়া ভবন প্লট নামের প্রতিবেদন ছাপিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা এবং গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তাদের আসামি করতে আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে।

এদিকে গত ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই অভিমত দেওয়া হয় যে যথাযথ ও বিশেষজ্ঞ সংস্থার মাধ্যমে নতুন করে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এ মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত।

১ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার দিন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা উচিত বলে নিজের মত  জানান।

নতুন করে মামলাটি তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আছে কি না জানতে চাইলে গতকাল বুধবার অ্যাটর্নি জেনারেল কালের কণ্ঠকে বলেন, রায় না দেখে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। 

আলোচিত ওই মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম শাহজাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, মামলাটির তদন্ত নিয়ে হাইকোর্টের যে পর্যবেক্ষণ (পুনঃ তদন্তের), তাতে আইনে কোনো বাধা নেই। কিন্তু কথা হচ্ছে, কোনো একটি ঘটনা বা অপরাধের দুইবার বিচার হয় না।

এরই মধ্যে যেসব আসামি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন, তাঁদের আর বিচারের আওতায় আনা যাবে না।

ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ এই আইনজীবী বলেন, এক হিসাবে এই মামলার বিচার হয়নি। কারণ সব আসামিই খালাস পেয়েছেন। এর প্রধান কারণ মামলার সঠিক তদন্ত না হওয়া। ঘটনার পর পরই তখনকার ক্ষমতাসীন দল (বিএনপি) সম্পর্কে যেটা বলা হয়, তারা জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছিল। পরে যখন পটপরিবর্তন হলো, তখন তারেক রহমানসহ নিরপরাধ কিছু মানুষকে অযথাই এই মামলায় টেনে আনা হয়েছে। সব মিলিয়ে সঠিক তদন্তটা এই মামলায় হয়নি। হাইকোর্ট যে কথাটা (বিশেষজ্ঞ তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে মামলাটি নতুন করে তদন্তের পদক্ষেপ নেওয়া) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছেন, আমি মনে করি এটা যুক্তিযুক্ত। কারণ এত বড় ঘটনা, এত মানুষের জীবন গেলকাজেই এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার। নতুনভাবে যদি তদন্তের আদেশ হয়, তবে সেটা অযৌক্তি হবে না। আইনের শাসনের জন্য একটি ভালো উদাহরণ হবে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য যুক্ত হওয়ায় মামলাটির অপরাধের গুরুত্ব (গ্রাভিটি অব দ্য অফেন্স) আড়াল হয়েছে। ৬১ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর কোনো মামলায় দ্বিতীয়বার অভিযোগপত্র দেওয়ার নজির বাংলাদেশ কেন, এই উপমহাদেশের কোনো দেশে পাওয়া যাবে না।

তিনি  আরো বলেন, স্বাধীন তদন্ত বা অধিকতর তদন্ত বলতে বোঝায়, সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে যদি কোনো আসামির নাম আসে, যার বা যাদের নাম এজাহারে ছিল, পরে অভিযোগপত্র দেওয়ার সময় বাদ দেওয়া হয়েছে, তখন অধিকতর তদন্ত হতে পারে। কিন্তু এই মামলায় যেটা হয়েছে, তা হলো, ৬১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের পর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) একটা দরখাস্ত দিয়ে বললেন যে  গ্রেনেডের উৎস খুঁজে বের করতে হবে। হোতা কারা, খুঁজে বের করতে হবে। তখন আদালত ফের তদন্তের নির্দেশ দিলেন। এরপর মুফতি হান্নানকে দিয়ে দ্বিতীয়বার একটি স্বীকারোক্তি করিয়ে তারেক রহমানসহ কয়েকজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করানো হলো। কোনো মামলায় এ রকম নজির আগে-পরে ছিল না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য যোগ হওয়ায় মামলাটি মূল স্রোত থেকে সরে গেছে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এই আইজীবী বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার যদি আপিল করে, তবে হাইকোর্টের রায়টি স্থগিত হয়ে যাবে। তখন রায়ের কার্যকারিতা থাকবে না। আপিল বিভাগে মামলাটির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু করার থাকবে না।

জজ মিয়া কি আসলেই নিরীহ : বিএনপি আমলের প্রথম তদন্তে গ্রেনেড হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে জজ মিয়া নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু তখন জজ মিয়ার সংশ্লিষ্টতাকে সাজানো নাটক হিসেবে প্রচার করা হয়।

প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন সম্প্রতি ২১ আগস্ট নিয়ে ভয়ংকর নাটক সাজায় ওরা নামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে উল্লেখ করা হয়, প্রথম আলো গ্রেনেড হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার জজ মিয়া জীবনে গ্রেনেড দেখিনি, থানায় মামলা নেই বলে প্রচার করলেও আসলে তার নামে পাঁচটিরও বেশি মামলা ছিল। সূত্রাপুর থানায় (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলা ৭৩৬৯/৯১) অস্ত্র-বিস্ফোরক ও ছিনতাইয়ের মামলায় সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয় তার। ২০০১ সালের ২ সেপ্টেম্বর  ৩৮৫, ৩২৪, ৩২৬ ও ৩০৭ ধারায় তেজগাঁও থানায় ২২ নম্বর মামলা দায়ের করা হয়। ২০০১ সালের ৩০ নভেম্বর মগবাজারের টাঙ্গাইল হোটেলে বাবর হত্যা মামলার আসামি ছিল জজ মিয়া। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কয়েক মাস আগে রাজধানীতে তার বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা হয়। সিটি হচ্ছে গুলশানে রহমত হত্যা মামলা। একসময় রাজধানীর টিকাটুলীতে একটি মেসে থাকত জজ মিয়া।  সে সময় তাকে অস্ত্র ও বোমাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। সেই মামলায় তার সাত বছর জেল হয় এবং দুই বছর পর জামিনে মুক্তি পায়। জজ মিয়ার আসল নাম মোহাম্মদ জালাল আহম্মেদ হলেও একাধিক নাম ব্যবহার করত। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসন আমলে ঢাকায় উঠতি সন্ত্রাসী হিসেবে যারা পরিচিতি পেয়েছিল, তাদের অন্যতম জালাল আহম্মেদ ওরফে জজ মিয়া। নাখালপাড়ার নুরানী মসজিদের আশপাশ এলাকায় জজ মিয়া যে রায় দিত, সেটাই কার্যকর হতো। সে জন্যই তার নাম হয় জজ মিয়া। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার অভিযোগ থেকে বের হয়ে এসে জজ মিয়া বিভিন্ন সময় পেশাগত পরিচয় আড়াল করে নিজেকে কখনো সিডি ব্যবসায়ী, কখনো ফলবিক্রেতা, আবার কখনো গাড়িচালক হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।

এ বিষয়ে এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত  এএসপি এম এ  রশীদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, জজ মিয়াকে নিরীহ বলে প্রমাণ করা হয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে।  গ্রেনেড হামলার আগে তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক রাখা এবং ছিনতাইয়ের অভিযোগে অনেক মামলা ছিল।

নতুন গল্পের  সেই প্রতিবেদন : আদালত সূত্র জানায়, ২০০৭-৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আলোচিত গ্রেনেড হামলা মামলাটির পুনঃ তদন্ত শুরু হলে মুফতি হান্নান ও বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনের নাম উঠে আসে। সে সময় তদন্তকারীরা প্রচার করেন, মাওলানা তাজউদ্দিনের সহায়তায় মুফতি হান্নানের  নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়। সে সময় তত্ত্বাবধায় সরকার  সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরিবারের ওপর দমন-পীড়ন চালালেও  ২১ আগস্টের  গ্রেনেড হামলায় হাওয়া ভবন  কিংবা তারেক রহমানকে সংশ্লিষ্ট করার অপচেষ্টা করেনি। ২০০৮ সালের ১১ জুন হত্যার অভিযোগ এবং বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির। হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে সেখানে আসামি করা হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করে তাঁদের বিচারও শুরু হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই মামলার অধিকতর তদন্তের উদ্যোগ  নেয়। ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ডেইলি স্টারে প্রকাশ করা হয়, কথিত গভীর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ইট ওয়াজ হাওয়া ভবন প্লট। এতে কোনো প্রমাণ ছাড়াও উচ্চপর্যায়ের সূত্রে বলা হয়, হাওয়া ভবনে গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা নিয়ে অন্তত ৯ জনের একাধিক বৈঠক হয়। বিএনপি নেতা তারেক রহমান, হারিস চৌধুরী লুত্ফুজ্জামান বাবর, একজন শীর্ষ জামায়াত নেতাসহ   গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তারাও ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ওই বছরের ১৫ আগস্ট হাওয়া ভবনে আবার তাঁদের বৈঠক হয়।  এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর শুরু হয় অধিকতর তদন্ত। সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ (তিনি পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন) অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই আসামির তালিকায় আরো ৩০ জনকে যোগ করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। সেখানে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ চারদলীয় জোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের নাম আসে, যাঁদের নাম ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল।

উলফাকে দায়ী করে প্রচার :  ২০০৭ সালের ১৯ জানুয়ারি বিডিনিউজ২৪ডটকমে উলফা কমান্ডার অ্যাডমিটস অ্যাটাকিং হাসিনা র‌্যালি ইন ২০০৪ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিডিনিউজের ভারতের গুয়াহাটির প্রতিবেদক স্মিতা মিশ্রর লেখা ওই প্রতিবেদনে আসাম পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান খগেন শর্মাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, পল্লব সইকিয়া নামের এক উলফা জঙ্গি আসাম পুলিশ ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা আইবির জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, উলফার সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়ার নির্দেশে তারা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলা করেন। পল্লব সইকিয়া ২০০৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর শিলংয়ে গ্রেপ্তার হন। তিনি আসাম পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং ভারতের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানান, উলফার সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়ার সুস্পষ্ট নির্দেশনায় এই হামলা চালানো হয়। তাঁর নেতৃত্বে উলফার ১১ জন যোদ্ধা গ্রেনেড ও অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে ওই হামলা চালান। ঢাকার গুলশানের একটি বাড়িতে বসে পরেশ বড়ুয়া ওই বছরের ২৬ জুলাই হামলার পরিকল্পনার কথা বলেন। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তা ওই হামলা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেন। তবে পল্লব সইকিয়া তাঁদের চেনেন না।

পল্লব সইকিয়া জানান, হামলায় তাঁর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন রুবুল আলী। রুবুল ২০০৬ সালের মে মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক সংঘর্ষে মারা যান। ২১ আগস্টে হামলাকারী উলফার ১১ জনের মধ্যে ছয়জন ওই সময় জীবিত ছিলেন বলেও দাবি করেন পল্লব।

ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিডিনিউজকে বলেন, বাংলাদেশের যেকোনো বাহিনী চাইলে পল্লবকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। তবে যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়, সে জন্য তারাও ওই সময় থাকতে চান। চাইলে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলও তাঁকে জেরা করতে পারে।

তবে পল্লবের দেওয়া ওই তথ্য অস্বীকার করে উলফা। উলফার মুখপাত্র রুবি ভুঁইয়া বিডিনিউজকে বলেন, তিনি হয়তো প্রলাপ বকছেন, নয়তো তাঁকে চাপ দিয়ে এসব বলতে বাধ্য করা হয়েছে। আমরা অন্য কোনো দেশের রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাই না। আমরা আসামকে ভারতের ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে সংগ্রাম করছি।

বিডিনিউজে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদপত্রেও প্রকাশ করা হয়।

তবে দেশের সাবেক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে, ২১ আগস্টের ওই হামলায় উলফার সংশ্লিষ্টতার খবরের সূত্র ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা; নিরপেক্ষ কোনো সূত্রের তথ্য নয়। ওয়ান-ইলেভেন-পরবর্তী সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং তার পরের আওয়ামী লীগ সরকার এ বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেএমন তথ্যও প্রকাশ পায়নি।

২০ বছর আগের প্রশ্নগুলো আবার উঠছে : ২০ বছর আগেই প্রশ্ন উঠেছিল, আওয়ামী লীগ সেদিন সমাবেশের স্থান মুক্তাঙ্গন থেকে হঠাৎ কেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেওয়া হয়েছিল? পূর্বঘোষিত কর্মসূচি থাকলেও কেন ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিলেন শেখ হাসিনা? শুধু কি গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়েছিল, নাকি প্রাণঘাতী নয়এমন বোমাও ছিল? শেখ হাসিনার বক্তব্যের মাঝে হামলা না করে কেন হামলাকারীরা বক্তব্য শেষ করার সুযোগ দিয়েছিল? ট্রাকের পেছনে যে বোমা বিস্ফোরিত হয়েছিল তাতে হতাহত না হওযার কারণ কী? শেখ হাসিনা ট্রাক থেকে নেমে কিছু দূর হেঁটে নিজের গাড়িতে ওঠার সময় প্রশিক্ষিত হামলাকারীদের গুলি কিভাবে এড়াতে পারলেন? একমাত্র আইভী রহমান ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মৃত্যু এড়াতে পারলেন কিভাবে? শেখ হাসিনা মার্সিডিজ গাড়ির কাচে যে চিহ্ন দেখানো হয়েছিল তা কি আসলেই গুলির চিহ্ন? এ হামলার জন্য আসলে করা দায়ী?

ঘটনা তদন্তে বিচারপিত জয়নুল আবেদীন কমিশনের প্রতিবেদনে  এ ঘটনার জন্য প্রতিবেশী দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করা হয়। অবসরপ্রাপ্ত  এএসপি এম এ রশীদও গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদেরও মনে হয়েছিল, ওই ঘটনায় প্রতিবেশী দেশের হাত রয়েছে। তবে নানা ধরনের সমালোচনা ও প্রতিবন্ধকতার  কারণে  বিস্তারিত তদন্ত করতে পারিনি।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য গুরুতর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য গুরুতর

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং ইসলামী খেলাফতকে কেন্দ্র করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড যে মন্তব্য করেছেন, সেটি গুরুতর বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যে প্রতিক্রিয়া (তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের) জানিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান ওটাই। তাঁর (তুলসী গ্যাবার্ড) মন্তব্য গুরুতর।

গত সোমবার নয়াদিল্লিতে এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ক্যাথলিক ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্ভাগ্যজনক নিপীড়ন, হত্যা ও অন্যান্য নির্যাতন যুক্তরাষ্ট্র সরকার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের উদ্বেগের একটি প্রধান ক্ষেত্র। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা মাত্র শুরু হচ্ছে, কিন্তু এটি উদ্বেগের মূল জায়গার একটি হয়ে রয়েছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় গত সোমবার রাতেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা গভীর উদ্বেগ ও হতাশার সঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য লক্ষ্য করেছি, যেখানে তিনি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন ও হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বলেছেন, ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক তৎপরতা একই আদর্শ ও লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত হয়। সেই আদর্শ ও লক্ষ্য হলো ইসলামপন্থী খেলাফতের মাধ্যমে শাসন করা।

তুলসী গ্যাবার্ডের এ মন্তব্য বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চার জন্য সুপরিচিত এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় সময় সোমবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে করা প্রশ্নে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নবনিযুক্ত মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস সরাসরি কোনো জবাব দেননি। একজন সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের কয়েক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এখন নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নিয়েছে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রায় ৬০ দিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন কী? তিনি এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

এ প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র ট্যামি ক্রুস বলেন, আপনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথা বলছেন, যিনি অন্য দেশের ঘটনাবলি কিভাবে দেখেন, তা নিয়ে কথা বলেছিলেন। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও এ বিষয়ে তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেন। কূটনৈতিক আলোচনা এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে কথোপকথনের বিষয়ে আমি কোনো পূর্বানুমান করতে চাই না। এসব বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

সাংবাদিক পুনরায় একই প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাইলে মুখপাত্র ব্রুস বলেন, সরকার থেকে সরকার পর্যায়ে কূটনৈতিক আলোচনা বা কোনো নির্দিষ্ট দেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি সম্পর্কে সরাসরি মন্তব্য করা আমার কাজ নয়।

আমি কোনো পূর্বানুমানও করতে চাই না।

 

মন্তব্য

আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ ৫ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
শেয়ার
আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ ৫ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার
আতাউল্লাহ

মায়ানমারের রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহকে পাঁচ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১। গত সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভূমিপল্লী আবাসন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার তাঁদের দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে আদালত পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে আরসার প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীর (৪৮) বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মামলা রয়েছে।

গতকাল বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পৃথক দুই মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ড চাইলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঈনউদ্দিন কাদির পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম খান এর সত্যতা নিশ্চিত করেন।

গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন মোস্তাক আহমেদ (৬৬), সলিমুল্লাহ (২৭), মো. আসমতউল্লাহ (২৪), হাসান (৪৩) ও মনিরুজ্জামান (২৪)। এঁদের মধ্যে মনিরুজ্জামান ছাড়া সবাই রোহিঙ্গা।

মনিরুজ্জামানের বাড়ি সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসন এলাকায়।

নারায়ণগঞ্জ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি খোরশেদ আলম মোল্লা জানান, আসামিরা নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আগে থেকেই বিভিন্ন সময়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করার জন্য গোপন বৈঠক করতেন। গত সোমবার র‌্যাব গোপনে খবর পায় যে আসামিরা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসন এলাকার একটি বহুতল ভবনে গোপন বৈঠক করছেন। পরে র‌্যাব-১১-এর সদস্যরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে মায়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মামলা রয়েছে।

জুনুনীর গ্রেপ্তারের খবরে রোহিঙ্গারা খুশি : এদিকে বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার জানান, আতাউল্লাহ আবু জুনুনীর গ্রেপ্তারের খবরে ক্যাম্পগুলোর সাধারণ রোহিঙ্গারা ব্যাপক খুশি। প্রতিনিয়ত আরসা সন্ত্রাসীদের হাতে হত্যার শিকার হওয়ার আতঙ্কে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। অন্যদিকে কমান্ডারের গ্রেপ্তারে আরসা সন্ত্রাসীরা হতবাক হয়ে পড়েছে।

ক্যাম্পে এত দিন জুনুনীর শক্তি নিয়ে খুনখারাবিতে লিপ্ত আরসা সন্ত্রাসীদের অনেকেই গাঢাকা দিতেও শুরু করেছে।

আরসা কমান্ডার জুনুনীর গ্রেপ্তারের খবরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে রীতিমতো আনন্দের বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। কেননা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত রোহিঙ্গা আতাউল্লাহ আবু জুনুনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোসহ মায়ানমার সীমান্তে আসার পর থেকেই রক্তাক্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা জানান, জুনুনীবিহীন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ছিল অত্যন্ত শান্ত। এত খুনাখুনির ঘটনাও ছিল না। জুনুনী পাকিস্তান থেকে এসে আরসার নেতৃত্ব নেওয়ার পরই রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শুরু হয় একের পর এক খুনাখুনির ঘটনা। জুনুনীর কারণেই ক্যাম্পগুলোতে অস্ত্রধারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, জুনুনী বাংলাদেশে বিচারের সম্মুখীন হওয়া থেকে রেহাই পেতে পাকিস্তানে পালিয়ে যাচ্ছিলেন।

আরসার সদস্যদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় র‌্যাবের মামলা : ময়মনসিংহ নগরীতে র‌্যাবের অভিযানে আটক আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে কোতোয়ালি থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি করেন র‌্যাব-১১-এর নায়েক সুবেদার হারুনুর রশীদ।

এর আগে রবিবার রাতে নগরীর নতুনবাজার এলাকার গার্ডেন সিটি নামের একটি বহুতল ভবনে অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ টাকা। অভিযানে চারজনকে আটক করা হলেও মামলা করা হয়েছে মোট ১০ জনের নামে। আসামিরা হলো জুনুনী, মোস্তাক আহম্মেদ , মনিরুজ্জামান, সলিমুল্লাহ, হোসনা, হাসান-১, আসমত উল্লাহ, হাসান-২, শাহীনা ও ছিনুয়ারা।

মন্তব্য

শিশু আছিয়ার বাবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শিশু আছিয়ার বাবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন তারেক রহমান
তারেক রহমান

মাগুরায় শিশু আছিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়া বাবাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ঢাকার একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে আছিয়ার বাবাকে ভর্তি করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম নয়ন।

রবিউল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, সোমবার আমরা মাগুরায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করি।

তখন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বললেন আছিয়ার বাবাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে। আমরা ওই দিন রাতেই মাগুরা থেকে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে এসে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করেছি। আছিয়াকে হারানোর কারণে তার বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন, এখন তাঁর চিকিৎসা চলছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ মার্চ নিজ বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় আট বছরের শিশু আছিয়া।

পরদিন তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১৩ মার্চ দুপুরে মারা যায় শিশু আছিয়া।

৫ মার্চের ঘটনার পর থেকেই আছিয়ার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারেক রহমান।

আছিয়া হাসপাতালে থাকা অবস্থায় তার মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন তিনি। এই পরিবারকে চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও আইনজীবী সেল গঠন করে দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

 

 

মন্তব্য

চলে গেলেন কালের কণ্ঠের আলী হাবিব

    বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের শোক
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
চলে গেলেন কালের কণ্ঠের আলী হাবিব

প্রতিদিনের মতো গতকাল মঙ্গলবারও সকাল ১১টায় অফিসে ঢুকে নিজের কাজগুলো করছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কালের কণ্ঠের সহকারী সম্পাদক আলী হাবিব। বিকেলে নিয়মিত পাতা দেখার অংশ হিসেবে সম্পাদকীয় পাতাও তিনিই দেখে দিচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে অসুস্থবোধ করলে সহকর্মীরা প্রেসার পরীক্ষা করেন। এ সময় প্রেসার সঠিক না থাকায় সহকর্মীরা তাঁকে রোজা ভেঙে স্যালাইন পান করতে বলেন।

তিনি আরেকটু অপেক্ষা করে ঠিক হয় কি না দেখতে চান। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিনি নিজের টেবিলের ওপর মাথা রেখে হেলে পড়েন। এরপর সহকর্মীরা তাঁকে গাড়িতে তুলে নিকটস্থ এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখেন।
অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাঁকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করান। পরে সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এভাবেই গতকাল কালের কণ্ঠের সম্পাদকীয় পাতায় শেষ ছোঁয়া রেখে গেলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর।
তিনি স্ত্রী, একমাত্র ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। 

আলী হাবিবের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কাদের গনি চৌধুরী, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া। শোকবার্তায় তাঁরা আলী হাবিবের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গত রাতে এক শোক বার্তায় প্রয়াত আলী হাবিবের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নারী অধিকার আদায়ের আন্দোলনে মহিলা পরিষদের অন্যতম এক সুহূদ ছিলেন আলী হাবিব।

আলী হাবিব জাতীয় প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে সাবেক সহকর্মী ও বন্ধুদের অনেকেই কালের কণ্ঠ কার্যালয়ে ছুটে আসেন। সবার মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া।

কালের কণ্ঠের আর্ট অ্যান্ড গ্রাফিকস বিভাগের সিনিয়র গ্রাফিকস ডিজাইনার মো. সাফিউল্লাহ ছোটন বলেন, ১৬ বছর ধরে আলী হাবিব ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করছি। আজও (গতকাল) তিনি সম্পাদকীয় পাতা দেখে দিয়েছিলেন। কে জানত আজকে তিনি শেষবারের মতো পাতা দেখছেন। এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।

আলী হাবিবের মরদেহ গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড প্রাঙ্গণে আনা হয়। কালের কণ্ঠ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি কবি হাসান হাফিজ প্রয়াত আলী হাবিবের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের কথা স্মরণ করেন।

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত জানাজায় অংশ নেন বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা আবু তৈয়ব, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু তাহের, নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা মামুন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল বায়েস, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার ছাড়াও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের সব গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও সহকর্মীরা।

আজ বুধবার বাদ জোহর ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাদার কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হবে।

আলী হাবিব ছিলেন নন্দিত ছড়াশিল্পী। কথাসাহিত্যেও তাঁর সমান বিচরণ ছিল। ছড়া দিয়ে লেখালেখি শুরু করেছিলেন তিনি। ছড়ার জগতে অভিষিক্ত হয়েছিলেন ষাটের দশকের শেষার্ধে, স্কুলজীবনেই।

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে ১৯৬৪ সালের ২৩ মার্চ জন্মেছিলেন আলী হাবিব। একসময় শুধুই বক্তব্যধর্মী ছড়া লিখতেন তিনি। নিটোল শিশুতোষ ছড়ায় তাঁর স্বাচ্ছন্দ্য ছিল। ছোটদের জন্য লেখা তাঁর গল্পগুলোও সহজে ছুঁয়ে যায় সবাইকে। ছড়ার পাশাপাশি তিনি রম্য গল্পচর্চা করেছেন। নিয়মিত লিখেছেন ব্যঙ্গ কলাম। তাঁর বেশ কটি ছড়ার বই ও রম্য গল্পও প্রকাশিত হয়েছে।

আলী হাবিব দৈনিক জনকণ্ঠে সম্পাদকীয় সহকারী হিসেবে যোগদান করেন ১৯৯৩ সালে। পরে ২০০১ সাল থেকে সহকারী সম্পাদক। ফিচার বিভাগের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন। রঙ্গভরা বঙ্গদেশ ও ঝিলিমিলি ফিচার পাতার বিভাগীয় সম্পাদক।

আলী হাবিব কালের কণ্ঠে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কর্মরত ছিলেন। তিনি পত্রিকাটির উপসম্পাদকীয় বিভাগে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখালেখি করতেন।

চলে গেলেন কালের কণ্ঠের আলী হাবিব

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড প্রাঙ্গণে গতকাল রাতে আলী হাবিবের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।     ছবি : কালের কণ্ঠ

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ