<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, গুলশান ও কামরাঙ্গীর চরে কোনো কৃষিজমি নেই। আবাদ হয় না কোনো ফসলও। কিন্তু কৃষিকাজ দেখাশোনার জন্য রয়েছেন ৪২ জন কৃষি কর্মকর্তা। এ ছাড়া একাধিক স্পেয়ার মেকানিকসহ রয়েছেন আরো ২৯ জন কর্মচারী। এই কৃষি কর্মকর্তাদের কাজ কী বা তাঁরা করেনই বা কী? তাঁদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে এমন প্রশ্ন করা হলে সহজ উত্তর মেলে, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কেন, তাঁরা ছাদবাগানের বিষয়ে পরামর্শ দেন।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এই প্রতিবেদন তৈরির জন্য কৃষিতে আগ্রহ রয়েছে এমন অন্তত ৫০ জনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা জানেনই না, ঢাকার কৃষি দেখাশোনার জন্য এতসংখ্যক কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। আর যাঁরা জানেন, তাঁদের অভিজ্ঞতাও সুখকর নয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মিরপুরের এক বাসিন্দার বারান্দা-বাগানের একটি শস্যে পোকার আক্রমণ হয়। তিনি ওয়েবসাইট থেকে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের কৃষি কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ফোনে আক্রান্ত গাছের ছবিও তুলে পাঠান। ওই কর্মকর্তা ওষুধের নাম হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। পরে তিনি অনেক চেষ্টা করেও একজন কৃষি কর্মকর্তা বা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার সহায়তা পাননি। নিরাশ হয়ে ওই ব্যক্তি গাছটিই কেটে ফেলে দেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ঢাকার কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তা পেয়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যা নগণ্য। ইয়াসিন আলী, মিরপুরের বাসিন্দা। ঢাকায় ছাদবাগানের বিষয়ে পরামর্শ বা  সহায়তার জন্য কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন, তা তিনি জানেনই না।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">উত্তরার মাহমুদ হোসেন, মোহাম্মদপুরের রশিদ আল রুহানী, রামপুরার আলামিন সিকদার, মতিঝিলের ইব্রাহিম পাহলান, গুলশানের আব্দুল আজিজের শখ ছিল ছাদে বা বারান্দায় বাগান করা। তাঁরা নার্সারির সহায়তা নিয়ে কিছু গাছ লাগিয়েছেন। কিন্তু সঠিক পরিচর্যা এবং আবাদের কৌশল না জানার কারণে গাছগুলো মরে যায়। ফলে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন তাঁরা।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ঢাকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় ঢাকার কৃষির জন্য ছয়টি কৃষি মেট্রোপলিটন অঞ্চল রয়েছে। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, গুলশান, উত্তরা, তেজগাঁও ও কামরাঙ্গীর চর। তেজগাঁওয়ে ১৭৭ বর্গকিলোমিটার এলাকার চার হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসল আবাদ হয়। এর বাইরে পাঁচটি অঞ্চলে কোনো আবাদি জমি নেই।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সম্প্রসারণ) সরকার শফি উদ্দীন আহমেদ বলেন, কৃষি কর্মকর্তারা ছাদবাগানের পরামর্শ দেন। এই কর্মকর্তারা ছাদবাগান তদারকি করেন কি না</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদারকি করবেন না, পরামর্শ দেবেন। ঢাকায় ছাদের ওপর যে সবুজায়ন দেখছেন, তাতে কৃষি কর্মকর্তাদের অবদান রয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ঢাকা মহানগরীতে চার হাজার ৬০০ ছাদবাগান রয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তবে এই বক্তব্যের সঙ্গে এক মত নন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন। তিনি ছাদবাগান নিয়ে গবেষণা করেন, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেন ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিনা মূল্যে চারা বিতরণ করেন। তিনি বলেন, ঢাকার কৃষি কর্মকর্তা ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কোনো কাজ করেন না। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">একই ধারণা হার্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. জসীম উদ্দিনের। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ কৃষি কর্মকর্তাদের সম্পর্কে জানেন না। তাঁরা নার্সারি থেকে গাছ কিনে সেখান থেকেই পরামর্শ নেন। ছাদবাগান যাঁরা করেন, তাঁরা এখন অভিজ্ঞ।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কোথায় কত জনবল : মিরপুর মেট্রোপলিটন কৃষি অফিসে দুজন কৃষি কর্মকর্তা ও ছয়জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। রয়েছেন স্পেয়ার মেকানিকসহ আরো সাতজন কর্মচারী। মোহাম্মদপুর মেট্রোপলিটন কৃষি অফিসে দুজন কৃষি কর্মকর্তা ও সাতজন উপসহকারী কর্মকর্তা রয়েছেন। এর বাইরেও কর্মচারী রয়েছেন পাঁচজন। দুজন কৃষি কর্মকর্তা ও সাতজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন উত্তরায়। এখানে রয়েছেন আরো ছয়জন কর্মচারী। কামরাঙ্গীর চরে কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন দুজন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ছয়জন। রয়েছেন আরো ছয়জন কর্মচারী। গুলশান কৃষি অফিসে দুজন কৃষি কর্মকর্তা, ছয়জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। রয়েছেন আরো ছয়জন কর্মচারী। তেজগাঁও থানা কৃষি সার্কেল ২৪ জনবলের একটি বহর। এই সার্কেলের অধীন চার হাজার ২০০ একর আবাদি জমি রয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ঢাকার খামারবাড়ির সন্নিকটেই মিরপুর, উত্তরা, গুলশান ও কামরাঙ্গীর চরের কার্যালয়। দুই তলাবিশিষ্ট ভবনে চারটি মেট্রোপলিটন কৃষি অফিস ও জেলা অফিসের কার্যালয়। ফলে পাঁচটি অফিস একই ভবনে থাকায় কর্মচারীতে ঠাসা থাকে এই ভবন। একপ্রকার কাজহীন এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বসে আড্ডা দেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। ঢাকায় থাকার জন্য বদলি হয়ে আসেন এখানে। পাঁচজন নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন পাঁচটি অফিসের একটি ছোট ভবনের নিরাপত্তার জন্য। বিভিন্ন ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মনিটর করার কথা কৃষি কর্মকর্তাদের। কিন্তু সঠিকভাবে মনিটরিং হয় না বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদরাই।   </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সরকারি সংস্থা কৃষি তথ্য সার্ভিস জানিয়েছে, দেশের কৃষকদের এবং কৃষি সম্পর্কিত সবার মধ্যে কৃষিভিত্তিক সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, সেবা এবং তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কৃষি কল সেন্টার</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> কাজ করছে। কৃষি কল সেন্টারের শর্ট কোড নম্বর ১৬১২৩-এ যেকোনো অপারেটরের মোবাইল ফোন থেকে প্রতি মিনিটে ২৫ পয়সা হারে (ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ব্যতীত) কল করে কৃষকরা কৃষি বিষয়ে যেকোনো সমস্যার তাত্ক্ষণিক বিশেষজ্ঞ পরামর্শ পাচ্ছেন। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, তাহলে পরামর্শের জন্য এই কৃষি কর্মকর্তাদের প্রয়োজন কী? </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ঢাকার কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে নগর কৃষি উন্নয়নের নামে ২০১৮ সালে একটি পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু ছাদবাগান প্রদর্শনী করা হয়েছিল। রাজনীতিবিদ ও প্রকল্প পরিচালকদের স্বজন ও কিছু আগ্রহী ব্যক্তির বাড়ির ছাদে সরকারি অর্থায়নে ছাদবাগান করা হয়েছিল। কিন্তু পরে এই প্রকল্পের অব্যস্থাপনার কারণে সাফল্য আসেনি।  </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কৃষিবিজ্ঞনী ড. কামরুজ্জামান বাবুর মতে, ঢাকার কৃষির জন্য নতুন পরিকল্পনা এবং সবুজায়নের জন্য নতুন নতুন কর্মসূচি নিতে হবে। পুনর্বিন্যাস করতে হবে জনবলেরও। দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""> </span></span></p> <p> </p>