<p>রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতের এজলাসকক্ষ পুড়িয়ে দেওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার পিলখানার বিস্ফোরক মামলার শুনানি হয়নি। গতকাল ভোররাতে এজলাসকক্ষ পুড়িয়ে দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস গিয়ে অগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে কে বা কারা আগুন দিয়েছে সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ অবস্থায় বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে জানান প্রসিকিশন বিভাগ।</p> <p><img alt="রাতে বিশেষ এজলাসে আগুন, বিক্ষোভ" height="353" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11. january/10-01-2025/121/898999.jpg" style="float:left" width="341" />তার আগে মাদরাসা মাঠে অস্থায়ী আদালত বসানোর প্রতিবাদে রাতভর আন্দোলনের পর গতকাল সকালে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। তাঁদের আন্দোলনের মধ্যেই রাতে আগুনে পুড়েছে অস্থায়ী আদালতের এজলাসসহ বিভিন্ন অবকাঠামো।</p> <p>পরে আলিয়া মাদরাসা মাঠে বিচারকাজ পরিচালনা করা হবে না এমন আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন। আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি লালবাগ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ভোরে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। আগুনে এজলাসকক্ষের চেয়ার, টেবিল, এসিসহ সব কিছু পুড়ে গেছে।’ বুধবার রাত থেকে আলিয়া মাদরাসার মাঠে আদালত বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন শিক্ষার্থীরা। রাত থেকে তাঁরা আলিয়া মাদরাসা মাঠে অবস্থান নেন। গতকাল সকালে তাঁরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মোড়, পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার, বকশীবাজার অরফানেজ রোড ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেন। পরে পরিস্থিতে নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে যায় সেনবাহিনী ও পুলিশ। বিডিআর বিদ্রোহের বিচারের জন্য ঢাকার বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ আদালত আর বসবে না এমন আশ্বাস পেয়ে ১০ ঘণ্টা পর সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের দাবি, বিচারকাজ চলমান থাকলে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্ন হয়। এর আগে বেশ কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়ার পরও সমাধান হয়নি। তাঁরা চান এখানে যেন কোনো বিচারকাজ পরিচালনা করা না হয়। এদিকে পুড়ে যাওয়া এজলাসকক্ষ পরিদর্শন করেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়া। গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আলিয়া মাদরাসার আদালত প্রাঙ্গণে এসে পুড়ে যাওয়া এজলাসকক্ষ পরিদর্শন করেন তিনি। এ সময় তাঁর সঙ্গে প্রসিকিউশন টিম, আইনজীবী ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও ছিলেন। পরে তিনি ১২টা ১০ মিনিটে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে চলে যান। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর বোরহান উদ্দিন বলেন, আদালত পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে বিচারকার্য করা সম্ভব নয়। বিচারক এসেছিলেন। তিনি পুড়ে যাওয়া ভবন পরিদর্শন করেছেন। এরপর চলে গেছেন। এ মামলার বিচারকার্যের পরবর্তী শুনানির জন্য ১৯ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।</p> <p> </p> <p>২ ঘণ্টা শাহবাগ অবরোধ শেষে বিডিআর পরিবার সদস্যদের শহীদ মিনারে অবস্থান  : পিলখানা হত্যাকাণ্ডে সব বিডিআর জেলবন্দির মুক্তি, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মিথ্যা মামলা বাতিল, চাকরিচ্যুতদের চাকরিতে পুনর্বহাল ও পুনর্বাসন এবং প্রজ্ঞাপনের ‘ঙ’ ধারা বাতিলসহ পিলখানা হত্যা মামলায় পুনর্তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিডিআর) পরিবারের সদস্যরা। পরে দুই ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে অবরোধ তুলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন তাঁরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে তাঁরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য মাহিন সরকারের অনুরোধে বিকেল সোয়া ৩টায় দিকে তাঁরা শাহবাগ ছেড়ে শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। দুই ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের দাবির বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেলে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মাহিন।</p> <p>মাহিন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারকে বলতে চাই, আপনারা দেখেছেন শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচি; আমরা চাই না শাহবাগ থেকে আরো সামনের দিকে এগোতে। আজকের (গতকাল) মধ্যে বিডিআর পরিবারের সদস্যদের যে দাবি সে প্রসঙ্গে যদি ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত না আসে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব।’</p> <p>এর আগে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, ‘বিডিআররা আমাদের একটি চেতনা। বিডিআর ভাইয়েরা যে অবস্থান নিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে আমরা সংহতি জানাচ্ছি এবং তাঁদের যে দাবি তার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করুন। ইউনূস সরকারকে বলব, অনতিবিলম্বে আপনার একজন প্রতিনিধি শাহবাগে পাঠান এবং বিষয়টির সুরাহা করুন।’</p> <p>২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এ ঘটনায় ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে, আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা, খালাস পান ২৮৩ জন। খালাস বা সাজা ভোগ শেষে এখনো বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে রয়েছে।</p> <p> </p> <p>নতুন কর্মসূচি : শুক্র-শনিবার গণসংযোগ, রবিবার মানববন্ধন : আন্দোলনকারী বিডিআর কমিউনিটি আগামী শুক্র ও শনিবার অনলাইন এবং অফলাইনে জনসমর্থন আদায়ে গণসংযোগ করবে। আর আগামী রবিবার সব জেলায় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবে।</p> <p>গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিডিআর আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার। তিনি বলেন, বিডিআরদের অধিকার আদায়ে আন্দোলনরত সবাই আপাতত নিজ নিজ জেলায় ফিরে যাবেন। ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর সদস্যদের পক্ষে জনসমর্থন আদায়ে আগামী শুক্র ও শনিবার অনলাইন এবং অফলাইনে গণসংযোগ করবেন। লিফলেটও বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, রবিবার বিডিআর কমিউনিটির সবাই সব জেলার প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবে। পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে আবারও সবাইকে ঢাকা আসার প্রয়োজন হতে পারে।</p>