শহীদ সেনা পরিবার ব্যথিত, আতঙ্কিত

কাজী হাফিজ
কাজী হাফিজ
শেয়ার
শহীদ সেনা পরিবার ব্যথিত, আতঙ্কিত
পিলখানা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো সহকর্মীর কফিন কাঁধে কান্নায় ভেঙে পড়েন সেনা কর্মকর্তারা। ২০০৯ সালে তোলা। —ফাইল ছবি

আমি যদি দেখি, যারা পিলখানায় আমার স্বামীসহ সেনা কর্মকর্তাদের পৈশাচিকভাবে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, গুলি করে হত্যা করেছে, তাঁদের লাশ ড্রেনে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে, পুড়িয়ে ফেলেছে, গর্ত খুঁড়ে মাটিচাপা দিয়েছে, আমাদের বাসায় লুটপাট চালিয়েছে, আমাদের পরিবারের নারী ও শিশুদের কোয়ার্টার গার্ডে আটকে রেখে চরম নির্যাতন চালিয়েছে, সেই অপরাধীরা কারামুক্ত হয়ে আমাদের চোখের সামনে বুক ফুলিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেতাহলে ভাবব এই দেশ আমার না, আমাদের সন্তানদের না, আমাদের সেনা পরিবারগুলোর না।

এই কথাগুলো ২০০৯ সালে পিলখানায় বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের হাতে নিহত শহীদ কর্নেল মো. মুজিবুল হকের স্ত্রী নেহরীন ফেরদৌসীর।

শহীদ সেনা পরিবার ব্যথিত, আতঙ্কিতকর্নেল মো. মুজিবুল হক সে সময় বিডিআরের ঢাকা সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। নেহরীন ফেরদৌসী গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, মুজিবুল হকের লাশ ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।

ড্রেনে ভেসে সেই লাশ কামরাঙ্গীর চরে চলে যায়। লাশটি ছিল ক্ষতবিক্ষত। মাথার খুলি ভাঙা। একাধিক ক্ষত ছিল শরীরে।
বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে এবং গুলি করে তিনতলা থেকে তাঁকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সংশ্লিষ্ট বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় সম্প্রতি অনেক বিডিআর জওয়ান জামিনে মুক্ত হয়েছেন। যদিও তাঁরা এখনো অভিযোগমুক্ত নন। কিন্তু তাঁদের কারামুক্তি নিয়ে যে ধরনের আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ হয়েছে তাতে আমরা ব্যথিত এবং আতঙ্কিত।

যাঁরা এখনো কারাবন্দি তাঁদের মুক্তির দাবি নিয়ে আন্দোলনের ঘটনাও ঘটছে। এ অবস্থায় আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। নানাভাবে হুমকিও আসছে।

শহীদ কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের পুত্র সাকিব রহমান বলেন, যাঁরা বিস্ফোরক মামলায় জামিন পেয়েছেন, জামিন তাঁদের অধিকার হলেও‌‌ তাঁদের এখনো নির্দোষ বলা যাবে না। জামিন মানেই অভিযোগমুক্ত নয়।

তাই তাঁদের পিলখানা ঘটনার ভিকটিম হিসেবে ব্যাকগ্রাউন্ডে দুঃখের মিউজিক দিয়ে গণমাধ্যমগুলো যেভাবে তাঁদের জামিনে মুক্ত হওয়ার বিষয়টি প্রচার করছে, সেটা শহীদদের জন্য অপমানজনক এবং শহীদ পরিবারের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

শহীদ মেজর মো. আব্দুস সালাম খানের সন্তান সাকিব মাহমুদ খান প্রীতমও কালের কণ্ঠকে এ বিষয়ে তাঁর উদ্বেগের কথা জানান। তিনি জানান, রাজধানীর পিলখানায় ২০০৯ সালে তৎকালীন বিডিআরে নিযুক্ত ৫৭ জন নিরস্ত্র সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা, লাশ গুম, তাঁদের বাসায় লুটপাট এবং পরিবারের সদস্যদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত-সাজাপ্রাপ্ত বিডিআর জওয়ানদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের ঘটনায় হতাশ শহীদ সেনা পরিবারের সদস্যরা।

প্রীতম বলেন, ওই অপরাধে যাঁরা অভিযুক্ত, দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং যাঁরা সাজাপ্রাপ্ত, তাঁদের নিরপরাধ দাবি করে মুক্তি চাওয়ার বিষয়টিকে আমরা মেনে নিতে পারি না।

গত বুধবারও নিজেদের এই বেদনাদায়ক অনুভূতির কথা জানাতে পিলখানায় শহীদ সেনা পরিবারগুলোর সদস্য এবং সেদিন মৃত্যুপুরি থেকে বেঁচে ফেরা সেনা কর্মকর্তারা রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।

তাঁরা বলেন, বিডিআর কোর্টের সাজা নিয়ে প্রশ্ন করা মানে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের তথা সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত বিপথগামী জওয়ানদের নিরপরাধ বলার কোনো সুযোগ নেই এবং তাঁদের মুক্তির দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমাদের একান্ত দাবি, সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের প্রাপ্য সাজা অবিলম্বে কার্যকরের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে বাহিনীটিকে কলঙ্কমুক্ত করা হোক। সঠিক বিচার না হলে ভবিষ্যতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন পিলখানায় শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুত্ফর রহমান খান এএমসির মেয়ে ডা. ফাবলিহা বুশরা।

এতে বলা হয়, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই, বিডিআর কার্নেজে (গণহত্যা) অভিযুক্ত-সাজাপ্রাপ্ত সৈনিক ও তাঁদের পরিবারকে গত ১৫ বছর কোনো দাবি নিয়ে মাঠে আসতে আমরা দেখিনি, কিন্তু আজ তাঁরা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক দাবি নিয়ে বিপথগামী সৈনিকদের নিরপরাধ দাবির আন্দোলনের মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালুর অপচেষ্টা করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এই দাবির মাধ্যমে জাতির দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে প্রকৃত খুনিদের আড়াল এবং বর্তমান ছাত্র-জনতার সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এটি সেনা কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করারও অপপ্রয়াস। এই খুনিদের যথাযথ বিচার না হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে, যা মোটেও কাম্য হতে পারে না। ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত হয় পৃথিবীর ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞ। সেদিন নির্মমভাবে হত্যা করা হয় কর্তব্যরত নিরস্ত্র-নিরপরাধ ৫৭ জন বিডিআর কর্মকর্তা তথা সেনা কর্মকর্তাকে, তাঁদের লাশ বিকৃত করা হয়, লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রাকে লোড করা হয়, পৈশাচিকভাবে লাশ ক্ষতবিক্ষত করে মাটিচাপা দেওয়া হয়, ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয় এবং গুম করা হয়। কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা ও নির্যাতন করা হয়। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে নিরীহ, নিরপরাধ নারী ও শিশুদের টেনেহিঁচড়ে চরম নির্যাতনের মাধ্যমে ধরে এনে কোয়ার্টার গার্ডে বন্দি করা হয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া বেশির ভাগ কর্মকর্তাকেই শারীরিকভাবে চরম নির্যাতন করা হয়, কর্মকর্তাদের বাসস্থানে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, চুরি-ডাকাতি করা হয়। কর্মকর্তাদের গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়, ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ধ্বংসের মাধ্যমে পিলখানাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়। বিপথগামী বিডিআর জওয়ানদের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত ওই অপরাধের চাক্ষুষ সাক্ষী আমরা শহীদ পরিবার ও বেঁচে ফেরা কর্মকর্তারা। সাক্ষী মিডিয়ার ছবি ও ভিডিও, যা সারা পৃথিবী অবলোকন করেছে।

আরো বলা হয়, সেদিন পিলখানায় প্রায় পাঁচ হাজার বিডিআর সদস্য এবং চার হাজারের মতো অস্ত্র মজুদ ছিল। বিডিআর জওয়ানরা আধাঘণ্টার মধ্য অস্ত্রাগার লুট করে সব অস্ত্র বের করে নেন এবং সরাসরি কার্নেজে ব্যবহার করেন। সেদিন যে শুধু পিলখানায় বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছে তা নয়, বিপথগামী বিডিআর সৈনিকদের উসকানির মাধ্যমে সারা দেশের রাইফেল ব্যাটালিয়ন ও ট্রেনিং সেন্টারে বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পিলখানার সেই হত্যাযজ্ঞ-পরবর্তী সময়ে তৎকালীন সরকার গঠিত আনিসুজ্জামান তদন্ত কমিশন, সেনাবাহিনী গঠিত সেনা তদন্ত, সিআইডি তদন্ত এবং বিডিআর ইউনিটের তদন্তে রাজনৈতিক কারণে পেছনের ষড়যন্ত্রকারীরা বেরিয়ে আসেনি। তবে তাদের তদন্তে বিপথগামী বিডিআর জওয়ানদের সরাসরি অংশগ্রহণে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির ম্যাসাকার সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। পর্যাপ্ত প্রমাণ এবং শহীদ পরিবারের সদস্য ও বেঁচে ফেরা কর্মকর্তাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সিভিল কোর্ট ও বিডিআর কোর্টে বিপথগামী জওয়ানদের দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হয়। সিভিল আদালতে হত্যা ও অস্ত্র-গোলাবারুদের মামলা পরিচালনা করা হয়। যথাযথ বিধি অনুসরণে এবং অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে বিডিআর অর্ডন্যান্সের আওতায় বিডিআর কোর্টে বিদ্রোহের মামলায় জওয়ানদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।

বিডিআর ম্যাসাকারের পেছনে দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র জড়িত ছিল উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাতি বিশ্বাস করে, বর্তমান সরকার গঠিত তদন্ত কমিশনের অধিকতর তদন্তে বেরিয়ে আসবে ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে কারা ছিল। বিডিআর ম্যাসাকারের পেছনের পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা ও সহায়তাকারীদের চিহ্নিত করে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার জোর দাবি জানাচ্ছি আমরা। প্রয়োজনে বিদেশে অবস্থানরত দোষী ব্যক্তিদের দেশে এনে বিচার সম্পন্ন করতে হবে।

শহীদ সেনা পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, ৫ আগস্ট-পরবর্তী নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবীরা বিডিআর মামলায় সম্পূর্ণ নতুন। এত বড় ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য তাঁদের পর্যাপ্ত সময় প্রয়োজন। বর্তমানে চলমান মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে যথাযথ আইনি লড়াই চালু রাখা এবং এর মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের যথাযথ শাস্তি প্রদানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

এ ছাড়া ২৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস ঘোষণার জন্য শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে শহীদ পরিবারের অনেকেই পিলখানায় পৈশাচিক সেই হত্যাকাণ্ড এবং তাঁদের ওপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তাঁরা বলেন, আজ যদি আপনি দেখেন খুনিরা আপনার আশপাশেই হেঁটে বেড়াচ্ছে, তখন কেমন লাগবে? আমরা শুধু বলতে চাই, চাইলেই ঢালাওভাবে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

 

হঠাৎ যেসব দাবি : অনেকের পর্যবেক্ষণ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর যখন পিলখানায় শহীদ সেনা পরিবারগুলোর সদস্যরা নিষ্ঠুরতম ওই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীদের বিচারের আওতায় আনার সম্ভাবনা দেখতে শুরু করেন, তখন অপরাধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্তরাই নিজেদের ভিকটিম দাবি করে মাঠে নেমে পড়ে।

গত ৯ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাকরিচ্যুত, অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা এই মামলায় সব কারাবন্দির মুক্তি ও মামলা বাতিলেরও দাবি জানান। তাঁরা পিলখানা হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত উল্লেখ করে বলেন, দেশবিরোধী একটি চক্রান্তের শিকার হয়েছেন বিডিআর সদস্যরা। কারাবন্দিদের মুক্তিসহ তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তাঁরা। তাঁদের এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহিন সরকার। তিনি বলেন, দাবি আদায়ে শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রা শুরু করে শাহবাগে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হবে।

গত ১৫ জানুয়ারি রাত ৮টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত এবং সব কারাবন্দির মুক্তির এক দফা দাবিতে পরদিন শাহবাগ ব্লকেড এবং পরবর্তী সময়ে মার্চ টু কোর্ট কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তার আগে দুপুরে পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিরপরাধ জওয়ানদের মুক্তির দাবিতে পদযাত্রা করেন বিডিআর পরিবারের ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। তাঁরা চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পুনর্বহাল এবং কারাগারে থাকা সদস্যদের মুক্তির দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামও দেন। এ ছাড়া জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে বিডিআর সদস্যদের দাবিগুলোও অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়। ওই দিন তাঁদের পদযাত্রায় শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মৎস্য ভবন, কাকরাইল ও সায়েন্স ল্যাব এলাকায় তীব্র যনজট সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তাঁরা শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেয়। ওই দিনও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তের দাবিতে রাতে আমরা শহীদ মিনারে অবস্থা কর্মসূচি পালন করব। যদি ন্যায়বিচার-এর ইঙ্গিত না দেখি, তাহলে আগামীকাল শাহবাগ ব্লকেড করা হবে।

এই আন্দোলন ও দাবির পর গত ১৯ জানুুয়ারি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়ায় হত্যা মামলায় নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালত থেকে খালাসপ্রাপ্ত সব আসামিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় জামিন দেওয়া হয়। কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালত শুনানি শেষে তাঁদের এ জামিন মঞ্জুর করেন।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর বোরহান উদ্দিন জানান, জামিন পাওয়ার সংখ্যা দুই শতাধিক হবে।

প্রসঙ্গত, পিলখানায় সেই হত্যাকান্ডের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা যান। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন।

অন্যদিকে, হাইকোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়। হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৭৫৬ জন কারগারে ছিলেন। তাঁদের মধ্য থেকে ১৭৮ জনের জামিনে মুক্তির পর বর্তমানে আরো ৫৭৮ জন কারাগারে আছেন।

পিলখানায় সেই সময় বিডিআর সদস্যদের অপরাধ সম্পর্কে সাবেক সচিব আনিস-উজ-জামানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, তারা শুধু সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি, তারা অস্ত্রাগার লুট করে, ১৬টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়, ১৮টি গাড়ি ভাঙচুর করে. বাড়িঘর লুটপাট, তছনছ করাসহ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবার-পরিজনের ওপর অমানবিক মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালায়। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ এবং জীবিত অফিসার ও তাঁদের পরিবার-পরিজনকে জিম্মি করে কার্যত দেশকে এক বিভীষিকাময় ও সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে নিয়ে যায়।

শহীদ সেনা পরিবার ব্যথিত, আতঙ্কিত

পিলখানায় বিদ্রোহী জওয়ানরা ভারী অস্ত্র হাতে পাহারায়। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। —ফাইল ছবি

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

পাকিস্তান-ভারত মুখোমুখি আজ

ক্রীড়া প্রতিবেদক
ক্রীড়া প্রতিবেদক
শেয়ার
পাকিস্তান-ভারত মুখোমুখি আজ

ঘরের মাঠে টুর্নামেন্ট, অথচ ক্রিকেট বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করা ভারতের জেদের কাছে একপ্রকার নত হতে হয়েছে পাকিস্তানকে! সে জন্য আয়োজক হয়েও নিজেদের মাঠে রোহিত শর্মাদের বিপক্ষে খেলা হচ্ছে না মোহাম্মদ রিজওয়ানদের। আজ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে মুখোমুখি হবে পাকিস্তান-ভারত। এ জন্য নিজ দেশের সমর্থক আর সাবেক ক্রিকেটারদের কাছে সমালোচিত হতে হচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে। তবে এসব সমালোচনা কানে তোলার সময় কোথায় বাবর আজমদের! জয়ের দিকে সব দৃষ্টি দলটির খেলোয়াড়দের।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির লড়াইয়ে টিকে থাকতে ২ পয়েন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের কাছে।

ভারতকে হারিয়ে ২০১৭ সালে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। এরপর বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ মিলিয়ে রোহিতদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে কোনো জয় পাননি রিজওয়ানরা, ছয় ম্যাচের পাঁচটি হার, অন্যটি পরিত্যক্ত হয়েছে। যদিও সার্বিক পরিসংখ্যানে এগিয়ে পাকিস্তানই, ১৩৫ বার লড়াইয়ে ৭৩টি জয় দলটির, ভারত জিতেছে ৫৭টি ওয়ানডে।

তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচ জিতে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে ভারত। উল্টো অবস্থান পাকিস্তানের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু করেছে দলটি।

তবে অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে চান না বলে জানান পাকিস্তানি পেসার হারিস রউফ।

তিনি বলছিলেন, যা হয়ে গেছে, তা এখন অতীত। আমরা সবটুকু মনোযোগ দিচ্ছি ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে। আগের ম্যাচের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নেব আমরা এবং চেষ্টা করব সেগুলোর পুনরাবৃত্তি না করতে। আমাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ এক লড়াই, অনেকটা বাঁচা-মরার ম্যাচ। সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ বাঁচিয়ে রাখতে জেতাটা জরুরি।

দুই দলের ধ্রুপদি লড়াইয়ের আগে অবশ্য কৌশলী পথে হাঁটলেন ভারতের ওপেনার শুভমান গিল, ভারত-পাকিস্তান মানেই বড় ম্যাচ। ফাইনাল হলে তো আরো বড়। আমরা ভালো খেলছি। তার মানে পাকিস্তানকে ছোট করে দেখার কোনো কারণ নেই। আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যে দল বেশি চাপ সামলাতে পারবে, তারাই জিতবে। ওয়ানডে এমন একটি সংস্করণ, যেখানে খেলতে নামলে মনে হয় হাতে খুব বেশি সময় নেই। আউট হলে মনে হয়, হাতে কত সময় ছিল। তাই স্কোরবোর্ডের দিকে তাকিয়ে খেলতে হবে।

ম্যাচের ভেন্যু দুবাইয়ের কন্ডিশনে স্পিনাররা বাড়তি সাহায্য পেয়ে থাকেন। কিন্তু এই বিভাগে ঘাটতি রয়েছে পাকিস্তানের। স্কোয়াডে থাকা একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার আবরার আহমেদ। কিউইদের বিপক্ষে হাত ঘোরানো অনিয়মিত দুই স্পিনার খুশদিল শাহ ও সালমান আগা ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিংয়ের বিপক্ষে কতটা কার্যকর হতে পারেন, তা নিয়ে সংশয় থাকছে। এদিকে ভারত পাঁচজন স্পিনার নিয়ে এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে এসেছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনজনকে খেলিয়েছে তারা। এসব হিসাব করে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের কোনো সুযোগই দেখছেন না দেশটির সাবেক ক্রিকেটার সঞ্জয় মাঞ্জরেকর, ভারতের মানের ধারেকাছেও নেই পাকিস্তান। সম্প্রতি তাদের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য করছে ভারত। এবার পাকিস্তানকে আরো দুর্বল দেখাচ্ছে। তবে এর পরও এই লড়াই নিয়ে উন্মাদনায় ভাটা পড়েনি। পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডার শোয়েব মালিক অবশ্য উত্তরসূরিদের হয়ে ব্যাট করেছেন, ভারতের বিপক্ষে জেতার সামর্থ্য আমাদের দলের আছে। কিন্তু দায়িত্বটা খেলোয়াড়দের নিতে হবে, বিশেষ করে সিনিয়রদের। ভেবে দেখো, ভারতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচটা যদি কেউ জেতায়, তাহলে রাতারাতি মহাতারকা হয়ে যাবে। তাই চাপ থাকলেও এটাকে সুযোগ হিসেবে নাও।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

দ্রুত পদোন্নতি মিলেছে ‘নৈশভোটের’ সহযোগী এসপিদের

ওমর ফারুক
ওমর ফারুক
শেয়ার
দ্রুত পদোন্নতি মিলেছে ‘নৈশভোটের’ সহযোগী এসপিদের

২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি) ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুব কাছের। তাঁদের দাপটও ছিল বেশ। শুধু দাপটই নয়, পুরো পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ বদলি পদোন্নতিসহ প্রায় সব কিছুতেই তাঁদের হাত থাকত। তাঁদের অনেকে পেয়েছেন দ্রুত পদোন্নতি।

এসপি থেকে দুই-তিন বছরের মাথায় ডিআইজি পদে পদোন্নতি মিলেছে কারো কারো।

তাঁদের একজন সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। এমনকি প্রভাব খাটিয়ে দুই ভাইকেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় জনপ্রতিনিধি করারও সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নুরুল ইসলামসহ কয়েকজন পলাতক বলে জানা গেছে।

  

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি রাতের ভোট হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। মূলত রাতের ভোটের কারিগর হিসেবে ওই সময় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারদের দায়ী করা হয়ে থাকে। তাঁদের মধ্যে ঝালকাঠি জেলার এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জুবায়েদুর রহমান কিছুদিন আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। 

গত শুক্রবার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, আওয়ামী লীগের সময় ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেশের ৬৪ জেলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপারদের ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে।

এই স্ট্যাটাস দেওয়ার পর বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় আসে। এদিকে বিগত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত) দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) মধ্যে যাঁদের চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে, তাঁদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ অবস্থায় আসিফ ভূঁইয়ার এই স্ট্যাটাস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই সময় যাঁরা এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তাঁদের প্রত্যেকে ২০১৮ সালের বিপিএম-পিপিএম পুরস্কারে ভূষিত হন। এ ছাড়া র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ডিএমপির সাবেক পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম, পুলিশ সদর দপ্তরের সাবেক ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, সিআইডির সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল কাহার আকন্দ বিপিএম পুরস্কার পান।

২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় সৈয়দ নুরুল ইসলাম কুমিল্লার এসপি ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি এসপি হিসেবে পদোন্নতি পান। এর পর তিনি নিজ জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনে তাঁর সমর্থিত একটি পক্ষ তৈরি করে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন। এক ভাইকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং অপর ভাইকে পৌর মেয়র বানান তিনি। পুলিশ কর্মকর্তা হয়েও প্রকাশ্যে তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলতেন।  সৈয়দ নুরুল ইসলাম ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি থাকাকালে পোশাক পরে বড় ভাই সৈয়দ নজরুল ইসলামের জন্য সংসদ সদস্যের মনোনয়ন চাইতে গিয়েছিলেন। এ বিষয়েও তখন সমালোচনা হয়েছিল। মো. শহিদুল্লাহ ওই সময় ছিলেন রাজশাহীর এসপি। সম্প্রতি তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। ডিএমপির ডিবি এবং উত্তরা বিভাগের ডিসিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন এই কর্মকর্তা।

নির্বাচনের সময় কক্সবাজারের এসপি ছিলেন এ বি এম মাসুদ হোসেন। তাঁর সময় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় তিনি ছিলেন ব্যাপক আলোচিত। পরে তাঁকে এসপি হিসেবে রাজশাহীতে বদলি করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে পুরস্কার হিসেবে তাঁকে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিও দেওয়া হয়।

ওই এসপিদের আরেকজন ছিলেন শাহ মিজান শাফিউর রহমান। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা। ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় তিনি ঢাকা জেলার এসপি ছিলেন। বর্তমানে তিনি ডিআইজি হিসেবে রেলওয়ে পুলিশে সংযুক্ত আছেন।

৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগ পর্যন্ত তিনি সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি ছিলেন। ২০০১ সালে পুলিশে যোগ দিলেও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাঁর ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। ২০১৪ সালে লক্ষ্মীপুরের এসপি হওয়ার পর থেকে তাঁর দ্রুত উন্নতি ঘটে।

২০তম ব্যাচের আরেক এসপি জিহাদুল কবির  ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় চাঁদপুর জেলার এসপি ছিলেন। এর আগে তিনি ২০১২ সালে পুলিশ সুপার হিসেবে মাগুরা জেলার দায়িত্ব পান। পরে রাজবাড়ী ও পাবনা জেলার এসপি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বাগেরহাট জেলার কাড়াপাড়া গ্রামের ছেলে জিহাদুল কবির ২০১৮ সালের পর দ্রুত অতিরিক্ত ডিআইজি ও ডিআইজি পদে পদোন্নতি পান। বর্তমানে তিনি  পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকায় কর্মরত। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশের কমিশনার ছিলেন। এর আগে তিনি মেট্রো রেল (এমআরটি) পুলিশের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মোহাম্মদ নূরে আলম মিনা চট্টগ্রামের এসপি ছিলেন। পরে তিনি পদোন্নতি পেয়ে ডিআইজি হন। বর্তমানে তিনি পুলিশ একাডেমি সারদায় আছেন।

নূরে আলম মিনা ২০১২ সালে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পান। ২০১৩ সালের ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলায় এবং ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত সিলেট জেলার পুলিশ সুপার পদে ছিলেন। সাইফুল ইসলাম ছিলেন বরিশালের এসপি। পরে তিনিও ডিআইজি পদে পদোন্নতি পান। 

২০১৮ সালে কিশোরগঞ্জে এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মাশরুকুর রহমান খালেদ। পরে তাঁকে পদোন্নতি দিয়ে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজির দায়িত্ব দেওয়া হয়। মাদারীপুরের তৎকালীন এসপি মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পান।  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মোকতার হোসেন ছিলেন ভোলার এসপি। সেখানে কর্মরত থাকাকালে জড়িয়ে পড়েন নারী কেলেঙ্কারিতে। নারী কনস্টেবলের সঙ্গে তাঁর অনৈতিক সম্পর্কের একাধিক অডিও ভাইরাল হওয়ার পরও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পান।

ইলিয়াছ শরীফ ছিলেন নোয়াখালীর এসপি। পরে তিনি পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি ও ডিআইজি হন। জাহাঙ্গীর আলম সরকার ওই সময় ছিলেন ফেনীর পুলিশ সুপার। মাদরাসাছাত্রী নুসরাত হত্যার ঘটনায় তিনি ছিলেন ব্যাপক সমালোচিত।

একদশ নির্বাচনের সময় গাজীপুরের এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সামসুন্নাহার। এর আগে ওই জেলার এসপি ছিলেন ব্যাপক আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ। বর্তমানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে। হারুনের বিরুদ্ধে বিএনপির তরফ থেকে অভিযোগ করার পর নির্বাচনের আগে তাঁকে সরিয়ে সেখানে এসপির দায়িত্ব দেওয়া হয় শামসুন্নাহারকে। ওই সময় সামসুন্নাহারের সৎ হিসেবে বেশ প্রশংসাও ছিল। কিন্তু নির্বাচনে তিনি সেই সততা দেখাতে পারেননি বলে এক পুলিশ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন।

সিরাজগঞ্জের এসপি টুটুল চক্রবর্তী একসময় কুমিল্লার এসপি ছিলেন। ওই সময় তাঁর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা পড়লেও তাঁকে সরাতে সক্ষম হয়নি তৎকালীন কর্তৃপক্ষ। তিনি কুমিল্লার এসপি হলেও পুলিশ বাহিনীতে প্রভাব বিস্তার করতেন বলে জানা গেছে। নির্বাচনের আগে তাঁকে সিরাজগঞ্জে বদলি করা হয়।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

উদ্যোক্তাদের আস্থা ফেরাতে ঋণের সুদহার কমানো জরুরি

    ডিসিসিআইয়ের সেমিনারে বক্তারা বললেন, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমার হার ‘উদ্বেগজনক’
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
উদ্যোক্তাদের আস্থা ফেরাতে ঋণের সুদহার কমানো জরুরি

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি উদ্বেগজনক হারে কমেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ। তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি খুবই এলার্মিং সিচুয়েশন দেখেছে। প্রায় ২৫ শতাংশ কমে গিয়ে ৭.৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ঋণের সুদহার হ্রাস একান্ত অপরিহার্য।

২০২৪ সালের জুন শেষে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯.৮ শতাংশ। ডিসেম্বর নাগাদ তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৩ শতাংশ। তাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে ২৫.৫১ শতাংশ।

বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন।

তিনি বলেন, স্মুথ অপারেশন নিশ্চিত করার জন্য শিল্পের সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি প্রয়োজন। এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সরবরাহ-উৎপাদন, ব্যবসা পরিচালনা এবং স্মুথ সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা ধরে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

শনিবার ডিসিসিআই আয়োজিত বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা শীর্ষক বক্তব্যে এসব কথা বলেন তাসকীন আহমেদ।

ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের হার ডাবল ডিজিটে উন্নীতকরণ, মন্দ ঋণ কমাতে নজরদারি বাড়ানো, আর্থিক খাতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা আনা এবং ঋণের সুদহার হ্রাস অপরিহার্য।

ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ ওই সেমিনারে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতির ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, অবৈধ সিন্ডিকেট ভাঙতে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং নিত্যপণ্যের ভ্যাট হ্রাসের পাশাপাশি বিলাসবহুল পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি।

এ ছাড়া স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণে নীতি সহায়তার ধারাবাহিকতা, অবকাঠামো খাতের সমন্বিত উন্নয়ন এবং বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে আফ্রিকার বাজারে মনোনিবেশের ওপর তিনি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন। এ জন্য বিকল্প অর্থায়ন ব্যবস্থার প্রবর্তন ও ডিজিটাল ফিন্যান্সিং ব্যবস্থার সম্প্রসারণ অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন তাসকীন আহমেদ। সেই সঙ্গে জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং শিল্প খাত ও সাধারণ ভোক্তাদের জন্য সহনীয় জ্বালানি মূল্য নির্ধারণের ওপর তিনি জোরারোপ করেন।

     

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আব্দুর রহিম খান বলেন, আমাদের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে মাত্র ৪০ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব আহরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। অটোমেশন ও ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো সঠিকভাবে কার্যকর না হওয়ায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি জানান, লজিস্টিক পলিসি ও বাণিজ্য সহায়তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে সামগ্রিক বাণিজ্য ব্যয় ১০-১৫% কমানো সম্ভব।

আলোচনায় অংশ নিয়ে পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে বিলম্ব ও অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর কারণে বিগত দিনগুলোতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। যদিও ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ার কারণে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, রিজার্ভ সংকটের কারণে কাঁচামালের আমদানি ও মেশিনারিজ আমদানিতে বিধি-নিষেধের ফলে আমাদের সাপ্লাই চেইনে স্বল্পতা দেখা দেয়, যার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে এবং চলতি বছরের মধ্যে রিজার্ভ ২৫ থেকে ২৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হলে শিল্প খাতে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিস্বল্পতা কেটে যাবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার সক্ষমতা, কার্যকর উদ্যোগ ও বাস্তবায়ন জরুরি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং আগামী অর্থবছরে গতানুগতিক বাজেট প্রণয়ন করা হলে বিদ্যমান সংকট সমাধান করা সম্ভব নয়।

বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিল্প খাতে আমাদের কমপ্লায়েন্স বাড়ানোর পাশাপাশি গবেষণার ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারি খাতের মধ্যকার সমন্বয়ও বাড়াতে হবে। এ ছাড়া সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও জয়েন্টভেঞ্চারের ওপর জোরারোপ করা উচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. সায়েরা ইউনুস বলেন, বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতার কারণে আমাদের পণ্য আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে এবং সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা নীতিহার সমন্বয়ের মাধ্যমে সেটা মোকাবেলার চেষ্টা করেছে, তবে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে পণ্য আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হ্রাস পায়নি। ২০২৬ সালে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে এবং আগামী বছর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ডাবল ডিজিটে উন্নীত হবে।

ইআরডির অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম জাহাঙ্গীর বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত, পরিকল্পনা কমিশনের সচিবের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট খাতের সমন্বয়ের মাধ্যমে এরই মধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং সবার মতামতের ভিত্তিতে পজিশন পেপার তৈরির পর সরকার এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। তবে এলডিসি উত্তরণ আমাদের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা নির্ধারণ করে সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগ ও সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

ঢাকা চেম্বারের সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মান এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ সরকারি-বেসরকারি খাতের আমন্ত্রিত অতিথিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন

আগামী জুনেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্ভব

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
আগামী জুনেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্ভব

সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একসঙ্গে করার প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া আগামী জুনের মধ্যে দেশের সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব বলে জানিয়েছে তারা। গতকাল শনিবার কমিশনের প্রকাশিত প্রাথমিক রিপোর্টে এসব সুপারিশ করা হয়েছে।

সুপারিশে বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশে কার্যত কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নেই।

এই মুহূর্তে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব। আগামী জুনের মধ্যে সব সমতল ও পাহাড়ের ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যেতে পারে।

সুপারিশে আরো বলা হয়, বর্তমানে নতুন একটি স্বচ্ছ ক্যানভাসে নতুন ছবি আঁকা সম্ভব। নতুবা নির্বাচনের আগে অনেক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আইনি জটিলতার উদ্ভব হতে পারে।

স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় সংসদীয় পদ্ধতি চালু করার আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে জনপরিসরে থাকলেও কোনো সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। এখন সে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আগামী মার্চ-এপ্রিলের (২০২৫) মধ্যে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি একীভূত এই স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যেতে পারে।

গত ১৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারীবিষয়ক এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনসহ আরো পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে এই সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। তাঁর নেতৃত্বে কাজ করেছেন সাতজন সদস্য।

একই সঙ্গে ভোট, আইন একীভূত করার সুপারিশ 

সংস্কারের সুপারিশে বলা হয়, একই তফসিলে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন অংশগ্রহণ করবে। প্রতিজন ভোটার নিজ নিজ ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটির ওয়ার্ডের জন্য একটি ব্যালট পেপার, উপজেলার জন্য একটি এবং জেলার জন্য একটি ব্যালট পেপার পাবেন। তিনটি ব্যালটে তিনটি বা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) একাধিক ভোট দিয়ে তাঁদের ভোট শেষ করবেন।

সুপারিশে বলা হয়, ১৯৭২ সালের পর পাঁচটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য পারস্পরিক সম্পর্কবিহীন যে পাঁচটি পৃথক আইন ও অসংখ্য বিধিমালা বিভিন্ন সময় জারি করা হয়েছে, সে সব আইন ও বিধিসমূহ বাতিল করে সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ দুটি একীভূত ও একক স্থানীয় সরকার আইন ও প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন করে সব পরিষদের মধ্যে আন্ত প্রতিষ্ঠান সম্পর্ক ও সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এ রকম দুটি আইন করা হলে ওই আইন বলে পাঁচটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো হবে একই ধাঁচের সংসদীয় পদ্ধতির। তখন নির্বাচনব্যবস্থাটিও হবে সহজ, ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী।

 

 

থাকবে স্থানীয় সরকার সার্ভিস

গ্রাম ও নগরের সর্বত্র সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো হবে সমরূপ। স্থানীয় সরকারের স্থানীয় সরকার সার্ভিস নামে একটি নিজস্ব সার্ভিস কাঠামো থাকবে। সেই সার্ভিসের অধীন জনবলের ঊর্ধ্বমুখী ও নিম্নমুখী পদায়নের সুযোগ থাকবে। কর্মচারীদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত অভিগম্যতা থাকলে পদোন্নতি ও পদায়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। মন্ত্রণালয়ের নামও পরিবর্তন স্থানীয় সরকার, জনসংগঠন ও জনপ্রকৌশল সেবা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

 

পৃথক অধিদপ্তর গঠনের সুপারিশ 

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন স্থানীয় সরকার বিভাগে বর্তমানে কার্যরত পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন অধিদপ্তরকে অধিকতর শক্তিশালী করে একটি পুনর্গঠিত নতুন অধিদপ্তর গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত সব প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম এই অধিদপ্তরের আওতাধীন হবে। বিভাগীয় কমিশনার অফিসের পরিচালক স্থানীয় সরকার এবং ডেপুটি কমিশনার অফিসের সঙ্গে সংযুক্ত উপপরিচালক স্থানীয় সরকারের পদসমূহ বিলুপ্ত হবে। একজন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার অধীনে অন্যূন ১০ জনের একটি সংগঠন ওপরে বিবৃত অধিদপ্তরের অধীনে প্রতিটি জেলায় কাজ করবে।

 

স্থানীয় সরকারের স্তর কমানোর সুপারিশ

আগামী ১০ বছরের মধ্যে স্থানীয় সরকারের স্তরসংখ্যা হ্রাস করে গ্রাম-শহরের পার্থক্য কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নতুন পদ্ধতির অধীনে নিম্নলিখিত তিনটি নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয় সুপারিশে। বর্তমানে ১৯৬০-এর দশকের (পাকিস্তান আমলের) জেনারেল আইয়ুব খান প্রবর্তিত রাষ্ট্রপতিব্যবস্থার আদলের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংসদীয় পদ্ধতির আদলে পুনর্বিন্যস্ত করা হবে। তিনটি পৃথক আইনের বদলে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদকে একটি একক আইনের অধীনে আনা হবে। একইভাবে পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোকে ভিন্ন একটি একক আইনের অধীনে আনা হবে। বর্তমানে বিরাজিত পাঁচটি পৃথক আইনের স্থলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুটি মৌলিক আইনের অধীনে আনা যেতে পারে।  নতুন আইনের অধীনে একই তফসিলে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির অধীনে আনয়নের সুপারিশ করা হয়।

 

স্থানীয় সরকারকে সংসদীয় আদলে পরিচালনার সুপারিশ 

জাতীয় সংসদে যেমন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা থাকেন সব সংসদীয় কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু, গ্রাম ও নগর নির্বিশেষে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সদস্য বা কাউন্সিলররা হবেন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রধান নিয়ামক। সুপারিশে বলা হয়েছে, গ্রাম-নগর নির্বিশেষে প্রতিটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সংগঠন কাঠামো দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত থাকবে, (১) বিধানিক অংশ এবং (২) নির্বাহী অংশ। বিধানিক অংশের প্রধান হবেন সভাধ্যক্ষ (জাতীয় সংসদের স্পিকারের অনুরূপ) এবং নির্বাহী অংশের প্রধান হবেন চেয়ারম্যান বা মেয়র। তিনি পরিষদ বা কাউন্সিল নেতা হিসেবেও থাকবেন। সভাধ্যক্ষ জাতীয় সংসদের স্পিকারের অনুরূপ দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শক্রমে পরিষদের সভা-অধিবেশন আহবান করবেন। সব সদস্য-সদস্যা যাতে তাঁদের মতামত দিতে পারেন, কোনো বিশেষ বিষয়ে বিতর্কে অংশ নিতে পারেন, সেসব বিষয় তিনি নিশ্চিত করবেন। তেমনিভাবে সব স্থায়ী কমিটি গঠন ও সভা নিয়মিত অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সভাধ্যক্ষকে সহায়তা করবেন একজন পূর্ণকালীন সচিব এবং পাঁচ সদস্যের একটি সচিবালয়। সাধারণ নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গেজেট প্রকাশের পর সদস্যরা আইনে নির্ধারিত একটি শপথনামা উপস্থিত একটি ভোটার সমাবেশে নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থে হাত রেখে একে একে উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করে সেটিতে স্বাক্ষর করবেন এবং সদস্যদের জন্য রক্ষিত আসনে আসন গ্রহণ করবেন।

পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট সাংবিধানিক মর্যাদাসম্পন্ন একটি স্থায়ী স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন করার সুপারিশ করা হয়।

 

সব উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপনের সুপারিশ

সুপারিশে আরো বলা হয়েছে, দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের পাশাপাশি একই পদমর্যাদায় প্রতিটি উপজেলায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একজন সিনিয়র সহকারী জজ এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির পূর্ণাঙ্গ কার্যালয় স্থাপন করা। ইউনিয়ন পরিষদের অধীন গ্রাম আদালত বিলুপ্ত করে ওয়ার্ড পর্যায়ে সালিসি ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দান এবং সালিসসমূহের তত্ত্বাবধান, সালিসকারদের প্রশিক্ষণ ও সালিসের আপিল শুনানির জন্য এডিআর আদালতের বিচারকের এখতিয়ার ও প্রশাসনিক সহায়তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ