শহীদ সেনা পরিবার ব্যথিত, আতঙ্কিত

কাজী হাফিজ
কাজী হাফিজ
শেয়ার
শহীদ সেনা পরিবার ব্যথিত, আতঙ্কিত
পিলখানা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো সহকর্মীর কফিন কাঁধে কান্নায় ভেঙে পড়েন সেনা কর্মকর্তারা। ২০০৯ সালে তোলা। —ফাইল ছবি

আমি যদি দেখি, যারা পিলখানায় আমার স্বামীসহ সেনা কর্মকর্তাদের পৈশাচিকভাবে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, গুলি করে হত্যা করেছে, তাঁদের লাশ ড্রেনে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে, পুড়িয়ে ফেলেছে, গর্ত খুঁড়ে মাটিচাপা দিয়েছে, আমাদের বাসায় লুটপাট চালিয়েছে, আমাদের পরিবারের নারী ও শিশুদের কোয়ার্টার গার্ডে আটকে রেখে চরম নির্যাতন চালিয়েছে, সেই অপরাধীরা কারামুক্ত হয়ে আমাদের চোখের সামনে বুক ফুলিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেতাহলে ভাবব এই দেশ আমার না, আমাদের সন্তানদের না, আমাদের সেনা পরিবারগুলোর না।

এই কথাগুলো ২০০৯ সালে পিলখানায় বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের হাতে নিহত শহীদ কর্নেল মো. মুজিবুল হকের স্ত্রী নেহরীন ফেরদৌসীর।

শহীদ সেনা পরিবার ব্যথিত, আতঙ্কিতকর্নেল মো. মুজিবুল হক সে সময় বিডিআরের ঢাকা সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। নেহরীন ফেরদৌসী গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, মুজিবুল হকের লাশ ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।

ড্রেনে ভেসে সেই লাশ কামরাঙ্গীর চরে চলে যায়। লাশটি ছিল ক্ষতবিক্ষত। মাথার খুলি ভাঙা। একাধিক ক্ষত ছিল শরীরে।
বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে এবং গুলি করে তিনতলা থেকে তাঁকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সংশ্লিষ্ট বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় সম্প্রতি অনেক বিডিআর জওয়ান জামিনে মুক্ত হয়েছেন। যদিও তাঁরা এখনো অভিযোগমুক্ত নন। কিন্তু তাঁদের কারামুক্তি নিয়ে যে ধরনের আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ হয়েছে তাতে আমরা ব্যথিত এবং আতঙ্কিত।

যাঁরা এখনো কারাবন্দি তাঁদের মুক্তির দাবি নিয়ে আন্দোলনের ঘটনাও ঘটছে। এ অবস্থায় আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। নানাভাবে হুমকিও আসছে।

শহীদ কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের পুত্র সাকিব রহমান বলেন, যাঁরা বিস্ফোরক মামলায় জামিন পেয়েছেন, জামিন তাঁদের অধিকার হলেও‌‌ তাঁদের এখনো নির্দোষ বলা যাবে না। জামিন মানেই অভিযোগমুক্ত নয়।

তাই তাঁদের পিলখানা ঘটনার ভিকটিম হিসেবে ব্যাকগ্রাউন্ডে দুঃখের মিউজিক দিয়ে গণমাধ্যমগুলো যেভাবে তাঁদের জামিনে মুক্ত হওয়ার বিষয়টি প্রচার করছে, সেটা শহীদদের জন্য অপমানজনক এবং শহীদ পরিবারের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

শহীদ মেজর মো. আব্দুস সালাম খানের সন্তান সাকিব মাহমুদ খান প্রীতমও কালের কণ্ঠকে এ বিষয়ে তাঁর উদ্বেগের কথা জানান। তিনি জানান, রাজধানীর পিলখানায় ২০০৯ সালে তৎকালীন বিডিআরে নিযুক্ত ৫৭ জন নিরস্ত্র সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা, লাশ গুম, তাঁদের বাসায় লুটপাট এবং পরিবারের সদস্যদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত-সাজাপ্রাপ্ত বিডিআর জওয়ানদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের ঘটনায় হতাশ শহীদ সেনা পরিবারের সদস্যরা।

প্রীতম বলেন, ওই অপরাধে যাঁরা অভিযুক্ত, দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং যাঁরা সাজাপ্রাপ্ত, তাঁদের নিরপরাধ দাবি করে মুক্তি চাওয়ার বিষয়টিকে আমরা মেনে নিতে পারি না।

গত বুধবারও নিজেদের এই বেদনাদায়ক অনুভূতির কথা জানাতে পিলখানায় শহীদ সেনা পরিবারগুলোর সদস্য এবং সেদিন মৃত্যুপুরি থেকে বেঁচে ফেরা সেনা কর্মকর্তারা রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।

তাঁরা বলেন, বিডিআর কোর্টের সাজা নিয়ে প্রশ্ন করা মানে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের তথা সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত বিপথগামী জওয়ানদের নিরপরাধ বলার কোনো সুযোগ নেই এবং তাঁদের মুক্তির দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমাদের একান্ত দাবি, সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের প্রাপ্য সাজা অবিলম্বে কার্যকরের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে বাহিনীটিকে কলঙ্কমুক্ত করা হোক। সঠিক বিচার না হলে ভবিষ্যতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন পিলখানায় শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুত্ফর রহমান খান এএমসির মেয়ে ডা. ফাবলিহা বুশরা।

এতে বলা হয়, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই, বিডিআর কার্নেজে (গণহত্যা) অভিযুক্ত-সাজাপ্রাপ্ত সৈনিক ও তাঁদের পরিবারকে গত ১৫ বছর কোনো দাবি নিয়ে মাঠে আসতে আমরা দেখিনি, কিন্তু আজ তাঁরা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক দাবি নিয়ে বিপথগামী সৈনিকদের নিরপরাধ দাবির আন্দোলনের মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালুর অপচেষ্টা করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এই দাবির মাধ্যমে জাতির দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে প্রকৃত খুনিদের আড়াল এবং বর্তমান ছাত্র-জনতার সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এটি সেনা কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করারও অপপ্রয়াস। এই খুনিদের যথাযথ বিচার না হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে, যা মোটেও কাম্য হতে পারে না। ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত হয় পৃথিবীর ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞ। সেদিন নির্মমভাবে হত্যা করা হয় কর্তব্যরত নিরস্ত্র-নিরপরাধ ৫৭ জন বিডিআর কর্মকর্তা তথা সেনা কর্মকর্তাকে, তাঁদের লাশ বিকৃত করা হয়, লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রাকে লোড করা হয়, পৈশাচিকভাবে লাশ ক্ষতবিক্ষত করে মাটিচাপা দেওয়া হয়, ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয় এবং গুম করা হয়। কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা ও নির্যাতন করা হয়। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে নিরীহ, নিরপরাধ নারী ও শিশুদের টেনেহিঁচড়ে চরম নির্যাতনের মাধ্যমে ধরে এনে কোয়ার্টার গার্ডে বন্দি করা হয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া বেশির ভাগ কর্মকর্তাকেই শারীরিকভাবে চরম নির্যাতন করা হয়, কর্মকর্তাদের বাসস্থানে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, চুরি-ডাকাতি করা হয়। কর্মকর্তাদের গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়, ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ধ্বংসের মাধ্যমে পিলখানাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়। বিপথগামী বিডিআর জওয়ানদের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত ওই অপরাধের চাক্ষুষ সাক্ষী আমরা শহীদ পরিবার ও বেঁচে ফেরা কর্মকর্তারা। সাক্ষী মিডিয়ার ছবি ও ভিডিও, যা সারা পৃথিবী অবলোকন করেছে।

আরো বলা হয়, সেদিন পিলখানায় প্রায় পাঁচ হাজার বিডিআর সদস্য এবং চার হাজারের মতো অস্ত্র মজুদ ছিল। বিডিআর জওয়ানরা আধাঘণ্টার মধ্য অস্ত্রাগার লুট করে সব অস্ত্র বের করে নেন এবং সরাসরি কার্নেজে ব্যবহার করেন। সেদিন যে শুধু পিলখানায় বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছে তা নয়, বিপথগামী বিডিআর সৈনিকদের উসকানির মাধ্যমে সারা দেশের রাইফেল ব্যাটালিয়ন ও ট্রেনিং সেন্টারে বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পিলখানার সেই হত্যাযজ্ঞ-পরবর্তী সময়ে তৎকালীন সরকার গঠিত আনিসুজ্জামান তদন্ত কমিশন, সেনাবাহিনী গঠিত সেনা তদন্ত, সিআইডি তদন্ত এবং বিডিআর ইউনিটের তদন্তে রাজনৈতিক কারণে পেছনের ষড়যন্ত্রকারীরা বেরিয়ে আসেনি। তবে তাদের তদন্তে বিপথগামী বিডিআর জওয়ানদের সরাসরি অংশগ্রহণে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির ম্যাসাকার সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। পর্যাপ্ত প্রমাণ এবং শহীদ পরিবারের সদস্য ও বেঁচে ফেরা কর্মকর্তাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সিভিল কোর্ট ও বিডিআর কোর্টে বিপথগামী জওয়ানদের দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হয়। সিভিল আদালতে হত্যা ও অস্ত্র-গোলাবারুদের মামলা পরিচালনা করা হয়। যথাযথ বিধি অনুসরণে এবং অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে বিডিআর অর্ডন্যান্সের আওতায় বিডিআর কোর্টে বিদ্রোহের মামলায় জওয়ানদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।

বিডিআর ম্যাসাকারের পেছনে দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র জড়িত ছিল উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাতি বিশ্বাস করে, বর্তমান সরকার গঠিত তদন্ত কমিশনের অধিকতর তদন্তে বেরিয়ে আসবে ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে কারা ছিল। বিডিআর ম্যাসাকারের পেছনের পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা ও সহায়তাকারীদের চিহ্নিত করে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার জোর দাবি জানাচ্ছি আমরা। প্রয়োজনে বিদেশে অবস্থানরত দোষী ব্যক্তিদের দেশে এনে বিচার সম্পন্ন করতে হবে।

শহীদ সেনা পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, ৫ আগস্ট-পরবর্তী নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবীরা বিডিআর মামলায় সম্পূর্ণ নতুন। এত বড় ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য তাঁদের পর্যাপ্ত সময় প্রয়োজন। বর্তমানে চলমান মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে যথাযথ আইনি লড়াই চালু রাখা এবং এর মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের যথাযথ শাস্তি প্রদানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

এ ছাড়া ২৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস ঘোষণার জন্য শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে শহীদ পরিবারের অনেকেই পিলখানায় পৈশাচিক সেই হত্যাকাণ্ড এবং তাঁদের ওপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তাঁরা বলেন, আজ যদি আপনি দেখেন খুনিরা আপনার আশপাশেই হেঁটে বেড়াচ্ছে, তখন কেমন লাগবে? আমরা শুধু বলতে চাই, চাইলেই ঢালাওভাবে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

 

হঠাৎ যেসব দাবি : অনেকের পর্যবেক্ষণ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর যখন পিলখানায় শহীদ সেনা পরিবারগুলোর সদস্যরা নিষ্ঠুরতম ওই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীদের বিচারের আওতায় আনার সম্ভাবনা দেখতে শুরু করেন, তখন অপরাধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্তরাই নিজেদের ভিকটিম দাবি করে মাঠে নেমে পড়ে।

গত ৯ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাকরিচ্যুত, অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা এই মামলায় সব কারাবন্দির মুক্তি ও মামলা বাতিলেরও দাবি জানান। তাঁরা পিলখানা হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত উল্লেখ করে বলেন, দেশবিরোধী একটি চক্রান্তের শিকার হয়েছেন বিডিআর সদস্যরা। কারাবন্দিদের মুক্তিসহ তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তাঁরা। তাঁদের এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহিন সরকার। তিনি বলেন, দাবি আদায়ে শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রা শুরু করে শাহবাগে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হবে।

গত ১৫ জানুয়ারি রাত ৮টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত এবং সব কারাবন্দির মুক্তির এক দফা দাবিতে পরদিন শাহবাগ ব্লকেড এবং পরবর্তী সময়ে মার্চ টু কোর্ট কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তার আগে দুপুরে পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিরপরাধ জওয়ানদের মুক্তির দাবিতে পদযাত্রা করেন বিডিআর পরিবারের ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। তাঁরা চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পুনর্বহাল এবং কারাগারে থাকা সদস্যদের মুক্তির দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামও দেন। এ ছাড়া জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে বিডিআর সদস্যদের দাবিগুলোও অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়। ওই দিন তাঁদের পদযাত্রায় শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মৎস্য ভবন, কাকরাইল ও সায়েন্স ল্যাব এলাকায় তীব্র যনজট সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তাঁরা শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেয়। ওই দিনও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তের দাবিতে রাতে আমরা শহীদ মিনারে অবস্থা কর্মসূচি পালন করব। যদি ন্যায়বিচার-এর ইঙ্গিত না দেখি, তাহলে আগামীকাল শাহবাগ ব্লকেড করা হবে।

এই আন্দোলন ও দাবির পর গত ১৯ জানুুয়ারি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়ায় হত্যা মামলায় নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালত থেকে খালাসপ্রাপ্ত সব আসামিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় জামিন দেওয়া হয়। কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালত শুনানি শেষে তাঁদের এ জামিন মঞ্জুর করেন।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর বোরহান উদ্দিন জানান, জামিন পাওয়ার সংখ্যা দুই শতাধিক হবে।

প্রসঙ্গত, পিলখানায় সেই হত্যাকান্ডের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা যান। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন।

অন্যদিকে, হাইকোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়। হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৭৫৬ জন কারগারে ছিলেন। তাঁদের মধ্য থেকে ১৭৮ জনের জামিনে মুক্তির পর বর্তমানে আরো ৫৭৮ জন কারাগারে আছেন।

পিলখানায় সেই সময় বিডিআর সদস্যদের অপরাধ সম্পর্কে সাবেক সচিব আনিস-উজ-জামানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, তারা শুধু সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি, তারা অস্ত্রাগার লুট করে, ১৬টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়, ১৮টি গাড়ি ভাঙচুর করে. বাড়িঘর লুটপাট, তছনছ করাসহ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবার-পরিজনের ওপর অমানবিক মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালায়। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ এবং জীবিত অফিসার ও তাঁদের পরিবার-পরিজনকে জিম্মি করে কার্যত দেশকে এক বিভীষিকাময় ও সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে নিয়ে যায়।

শহীদ সেনা পরিবার ব্যথিত, আতঙ্কিত

পিলখানায় বিদ্রোহী জওয়ানরা ভারী অস্ত্র হাতে পাহারায়। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। —ফাইল ছবি

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

হাসিনাকে নিয়ে ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ দশায় এখন ভারত

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
হাসিনাকে নিয়ে ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ দশায় এখন ভারত

ভারতে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে নিয়ে শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থায় পতিত হয়েছে ভারত। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে হাসিনার প্রত্যর্পণের সম্ভাব্য প্রক্রিয়া ও এর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছে সংবাদমাধ্যমটি। সেখানে বলা হয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে বাংলাদেশ ভারতকে একটি নোট ভার্বালের (কূটনৈতিক নোট) মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ অনুরোধ জানালেও এখন পর্যন্ত ভারত কোনো উত্তর দেয়নি। নয়াদিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এখনো সংযত অবস্থান বজায় রেখেছে এবং বারবার অনুসন্ধান করা হলেও তারা প্রাথমিক স্বীকৃতির বাইরে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত এবং ২০১৬ সালে সংশোধিত বাংলাদেশ-ভারত প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাওয়ার আইনি অধিকার রাখে। তবে এই চুক্তি কার্যকর করা শুধু আইনি প্রক্রিয়ায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি এক জটিল ভূ-রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

ভারত যদি এই প্রত্যর্পণ অনুরোধ মেনে নেয়, তবে এটি একাধিক ধাপের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে, যেখানে ২০১৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তির বিধান এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির বাস্তবতা উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

রাজীব গান্ধী ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব লর সহকারী অধ্যাপক ও আইনি বিশেষজ্ঞ ড. সঙ্গীতা তাক বলেন, যদিও প্রত্যর্পণ চুক্তির শর্তাবলি মূলত এই প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করবে তবে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয়গুলো একে অত্যন্ত জটিল এবং সংবেদনশীল করে তুলবে।

প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে অনুরোধ পাঠাতে হয়, যা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর বিস্তারিত বিবরণসহ প্রমাণাদি সংযুক্ত থাকতে হবে। এর মধ্যে বিচারিক আদেশ, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথিপত্র অন্তর্ভুক্ত থাকতে হয়।

সঙ্গীতা তাক আরো বলেন, এই অনুরোধের সঙ্গে বাংলাদেশকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে শেখ হাসিনার বিচার ন্যায্য হবে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হবে না।

অর্থাৎ শুধু অভিযোগের বিবরণ পাঠানোই যথেষ্ট নয়; বাংলাদেশকে প্রমাণ করতে হবে যে, শেখ হাসিনার বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রভাবিত হবে না।

ভারত এই বিষয়টি যাচাই না করা পর্যন্ত প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া এগিয়ে না-ও যেতে পারে। 

সঙ্গীতা তাক ব্যাখ্যা করেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যেহেতু প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, ভারতীয় সরকার নিশ্চিত করবে যে, প্রত্যর্পণের শর্তাবলি যথাযথভাবে মানা হচ্ছে কি না।

এটি পর্যালোচনার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে ডুয়াল ক্রিমিনালিটি। অর্থাৎ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো উভয় দেশেই অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত কি না। একই সঙ্গে ভারতকে দেখতে হবে অভিযোগগুলো রাজনৈতিক, সামরিক বা ধর্মীয় অপরাধের আওতায় পড়ে কি না, যা প্রত্যর্পণ বাতিলের কারণ হতে পারে।

এমনকি প্রশাসনিক পর্যালোচনার পরও বিষয়টি এখানেই শেষ হয়ে যাবে না। প্রত্যর্পণ অনুরোধের আইনি বৈধতা ভারতের বিশেষ প্রত্যর্পণ আদালতে খতিয়ে দেখা হবে। 

সঙ্গীতা তাক বলেন, ভারত প্রত্যর্পণের বিষয়ে বিচারিক পর্যালোচনাও করবে। বিশেষ আদালত এটি বিশ্লেষণ করবেন এবং যদি দেখা যায় যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচার করা হতে পারে, তবে আদালত প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া স্থগিত করতে পারেন।

যদি আদালত ও ভারতীয় সরকার প্রত্যর্পণের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়, তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে। 

ড. তাক বলেন, গ্রেপ্তার হওয়ার পর শেখ হাসিনাকে নিরাপদ হেফাজতে রাখা হবে, যতক্ষণ না প্রত্যর্পণের আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা চূড়ান্ত হয়।

ড. তাক বলেন, চূড়ান্ত পর্যায়ে শেখ হাসিনাকে ভারতীয় হেফাজত থেকে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এটি সাধারণত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা সীমান্ত পয়েন্টে সম্পন্ন হয়।

প্রচলিত প্রক্রিয়া অনুযায়ী, এটি হয় কোনো সরকারি চার্টার্ড বিমানের মাধ্যমে, যা দিল্লি বা কলকাতা থেকে ঢাকা যাবে অথবা পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত পয়েন্টে হস্তান্তর করা হতে পারে। 

তবে শেখ হাসিনার মতো একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যর্পণ সহজ কোনো বিষয় নয়। এটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত রাজনৈতিক ও সংবেদনশীল ইস্যু হয়ে উঠবে।  সূত্র : দি ডিপ্লোম্যাট

 

 

মন্তব্য
জামায়াতের আমির

ইতিহাসের নামে আর কোনো গল্প দেখতে চাই না

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
ইতিহাসের নামে আর কোনো গল্প দেখতে চাই না
শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ইতিহাসে যার যেখানে জায়গা রয়েছে, সেটা অবশ্যই দিতে হবে; আপনার ভালো লাগুক কিংবা না লাগুক। যদি ভালো লাগার মানুষকে সামনে এনে ভালো না লাগার মানুষকে ফেলে দেন; এটা ইতিহাস নয়, এটা হবে গল্প। ইতিহাসের নামে আমরা আর কোনো গল্প দেখতে চাই না।

গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন তিনি।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে জামায়াতের প্রয়াত নেতা গোলাম আযমকে মুছে ফেলা হয়েছে উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ভাষা আন্দোলনে অধ্যাপক গোলাম আজম সাহেবের যতটুকু অবদান ততটুকু দিতে অসুবিধা কোথায়? বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী ভাষা আন্দোলনের স্মারকের ড্রাফট করেছিলেন, তাঁকে কোথাও স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না কেন? তমদ্দুন মজলিশ ইতিহাস থেকে বিলীন কেন? বীরদের স্বীকৃতি না দিলে সুবিধাবাদী কাঙাল জন্ম নেবে। যারা গরিবের ধন লুটে খাবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা যত দিন আছে, অনুরোধ করব ইতিহাসের এই অচলায়তন ভেঙে ফেলুন। সম্মানের সঙ্গে তাঁদের (ভাষাশহীদদের পরিবার) কাছে যান, পরিবারগুলোকে সম্মানিত করুন।

জামায়াতের আমির বলেন, আমরা রাষ্ট্রে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাই না। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কেউ যদি খেলে, তাহলে আমরা কারো দাবার ঘুঁটি হব না। শুধু আমাদের সঙ্গে না, এ দেশের একজন নাগরিকের সঙ্গেও যেন কেউ খেলাধুলা না করে। আমরা ফ্যাসিস্ট আমলে একটা কথা শুনতাম খেলা হবে, ওই খেলা আর দেখতে চাই না।

এখনো চাঁদাবাজি-দখলদারি বন্ধ হয়নি উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, চব্বিশের নিহত ও আহতদের রক্ত, জীবন, ইজ্জত ও আবেগকে অপমানিত করবেন না। আমরা দেখছি কিছু কাজ এখনো বন্ধ হচ্ছে না। ঘাটে ঘাটে যে চাঁদাবাজি হয়, এর কারণে দ্রব্যমূল্য বহুগুণ বেড়ে যায়। এর চাপ দেশের সব মানুষের ওপর পড়ে। এ ব্যাপারে আমাদের সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুস সবুর ফকিরের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন দক্ষিণের নায়েবে আমির হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য আবদুল মান্নান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ভাষার গান পরিবেশন করেন হাসান আল বান্না ও তাওহীদুল ইসলাম।

 

 

 

মন্তব্য

দক্ষিণ আফ্রিকার বড় জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক
ক্রীড়া প্রতিবেদক
শেয়ার
দক্ষিণ আফ্রিকার বড় জয়

বড় জয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজেদের যাত্রা শুরু করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বি গ্রুপের প্রথম ম্যাচে গতকাল আফগানিস্তানকে ১০৭ রানে হারিয়েছে প্রোটিয়ারা। করাচিতে আগে ব্যাট করে ওপেনার রায়ান রিকেলটনের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরির সঙ্গে তেম্বা বাভুমা, রসি ফন দার ডুসেন ও এইডেম মারক্রামের ফিফটিতে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩১৫ রান করে দলটি। আইসিসির এই টুর্নামেন্টের অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা আফগানিস্তান লক্ষ্য তাড়ায় সুবিধা করতে পারেনি।

কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডিদের বোলিং তোপে ২০৮ রানে গুটিয়ে যায় দলটি।

হেনরিক ক্ল্যাসেন চোটে না পড়লে হয়তো এই ম্যাচ খেলাই হতো না রিকেলটনের। প্রথমবার আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে খেলতে নেমে সুযোগ কিভাবে কাজে লাগাতে হয় সেটি দেখিয়ে দিলেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। আরেক ওপেনার টনি ডি জর্জি ১১ রানে বিদায় নেওয়ার পর অধিনায়ক বাভুমার সঙ্গে ১২৯ রানের জুটি গড়েন তিনি।

বাভুমা ৫৮ রান করে মোহাম্মদ নবীর দ্বিতীয় শিকার হন। এরপর ডুসেনের সঙ্গে ৪৪ রানের জুটির পথে সেঞ্চুরি তুলে নেন রিকেলটন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শতক করা দক্ষিণ আফ্রিকার পঞ্চম ক্রিকেটার বনে যান তিনি। নাম লেখান হার্শেল গিবস, গ্রায়েম স্মিথ, জ্যাক ক্যালিস ও হাশিম আমলার পাশে।

সেঞ্চুরির পর অবশ্য নিজের ইনিংসটা আর বড় করতে পারেননি রিকেলটন। ১০৩ রান করে রান আউট হন তিনি। ১০৬ বলের ইনিংসটি সাজান ৭টি চার ও ১টি ছয়ের সাহায্যে। এরপর ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন ডুসেন-মারক্রাম। ডুসেন ৪৬ বলে ৫২ রানে থামলেও রেকর্ড গড়েন মারক্রাম।

মাত্র ৩৩ বলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে দ্রুততম ফিফটি গড়ে ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। সঙ্গে ডেভিড মিলারের ১৪ এবং উইয়ান মুল্ডারের অপরাজিত ১২ রানে বিশাল সংগ্রহ পায় প্রোটিয়ারা।

রান পাহাড় টপকাতে নেমে নিয়মিত উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আফগানরা। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে ৩৮ রান তুলতে দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ (১০) ও ইব্রাহিম জাদরানের (১৭) উইকেট হারায় দলটি। চারে নামা রহমত শাহ (৯০) এক প্রান্ত আগলে খেলে ফিফটি তুলে নিলেও অন্য প্রান্তের ব্যাটাররা সুবিধা করতে পারেননি। শেষ দিকে রশিদ খান (১৩ বলে ১৮) ঝড় তুললেও সেটি আফগানিস্তানের হারের ব্যবধান কমায় শুধু। প্রোটিয়াদের হয়ে রাবাদা সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন। 

মন্তব্য
অন্য জীবন

গহীনপুরে ফুল ফোটান সুমন

পিন্টু রঞ্জন অর্ক, হবিগঞ্জ থেকে ফিরে
পিন্টু রঞ্জন অর্ক, হবিগঞ্জ থেকে ফিরে
শেয়ার
গহীনপুরে ফুল ফোটান সুমন
গত বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা উপলক্ষে নানা ধরনের লক্ষ্মীপ্যাঁচা বানিয়েছিল গহীনপুরের শিশুরা। ছবি : কালের কণ্ঠ

আমরা করব জয়, আমরা করব জয়, আমরা করব জয় একদিন’—দূর থেকে কানে ভেসে আসছিল গানটি। অনুমতি নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম। আর দশটা গ্রামীণ বাড়ির মতো গাছগাছালিতে ঠাসা। দুটি ভবন।

একটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বি। সম্পূর্ণ রঙিন। নাম গহীনপুর। তিনটি কক্ষ।
ঘরের শোভা বাড়িয়েছে দেয়ালে ঝোলানো চিত্রকর্ম। মাঝের কক্ষে মেঝেতে গোল হয়ে বসে গাইছে কয়েকজন শিশু-কিশোর। পাশের কক্ষটি বইপত্রে ঠাসা। সেখানে বসে পড়ছে কয়েকজন কিশোরী।
পাশেই গিটার, তবলাসহ নানা বাদ্যযন্ত্র।

গহীনপুরে ফুল ফোটান সুমনগান শেষে শিশু-কিশোররা ব্যস্ত হয়ে পড়ল ছবি আঁকায়। তাদের সামনে কয়েক রকম রং আর ক্যানভাস দিলেন মাঝবয়সী একজন। ছোট্ট হাতে যেন রংধনুর সব রং মেখে নিল শিশুরা। রঙে রঙে ভরিয়ে দিল ক্যানভাস! মিষ্টি মুখের হাসি নান্দনিক চিত্রকর্ম হয়ে ফুটল ক্যানভাসে।

হাত ধুয়ে এরপর তারা বসল পাপেট নিয়ে। মিনিট দশেকের চমৎকার এক নাটিকা পরিবেশন শেষে সবাই বেরিয়ে পড়ল ঘর থেকে। উঠানে মেতে উঠল গোল্লাছুট খেলায়।

সেই ভদ্রলোক স্বভাবসুলভ হাসিতে বললেন, কিছু মনে করবেন না। ওদের সঙ্গে থাকলে মনটা সজীব হয়ে ওঠে।

নাম তাঁর আসাদ ইকবাল সুমন। কবি, আলোকচিত্রী, চিত্রকর, শিক্ষকঅনেক পরিচয় তাঁর। তবে শিল্পী পরিচয়েই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। নিয়মের ঘেরাটোপে বন্দি থাকতে চাননি কখনো। ঢাকায় চারুকলা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। নামডাকও ছড়িয়েছিল অল্পদিনে। কিন্তু সব ছেড়ে গ্রামে ফিরেছেন মাটির টানে। নিজের বসতভিটাকে রূপান্তর করেছেন শিল্পসাধনার কেন্দ্রে। আট বছর ধরে সৃজনশীলতা চর্চার এক মুক্তরাজ্য হয়ে উঠেছে গহীনপুর। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গন্ধা গ্রামে এর অবস্থান। এখন সেখানে শতাধিক শিশু-কিশোর বিনা মূল্যে আঁকাআঁকি, নাচ, গান ও পাপেট শিখছে। সুমন নিজের চিত্রকর্ম বিক্রির অর্থ ব্যয় করেন এই কাজে।

 

রং যেন মোর মর্মে লাগে

বাবা আলাউদ্দিন আহমেদ ছিলেন স্কুল শিক্ষক। এর বাইরে যাত্রাদলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। তাঁর চাচা শাহাব উদ্দিন আহমেদ লেখালেখি করতেন। সুমন ছবি আঁকার নেশায় পড়েছিলেন শৈশবেই। হাতেখড়ি চাচার কাছে। তখনো কৃত্রিম রঙের দেখা পাননি। চাচার হাতে বানানো রঙেই আঁকতেন সুমন। তখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়েন। জেলা পর্যায়ে গেলেন ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায়। তাঁকে দেখে হাসাহাসি করছিল অন্য প্রতিযোগীরা। বুঝলেন, ইনজেকশনের কৌটায় ভরে রং আর বাঁশের কঞ্চিতে বানানো তুলি নিয়েছেন বলে হাসছে। যা-ই হোক, সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পেলেন সুমন! সেই যে রঙের খেলায় মাতলেন আর ছাড়েনি।

 

নতুন উপলব্ধি থেকে নবোদ্যম

মাঝখানে পড়াশোনার চাপে আঁকাআঁকিতে ভাটা পড়েছিল। জোয়ার এলো এইচএসসির পর। ইচ্ছামতো এঁকে যাচ্ছিলেন। আর্টিস্ট তকমাও জুটেছিল এলাকায়। সুমন তত দিনে স্থানীয় কলেজে ডিগ্রিতে পড়ছেন। নবীগঞ্জের সাংস্কৃতিক সংগঠন আনন্দ নিকেতন-এ শিশুদের আঁকাআঁকি শেখানোর আমন্ত্রণ পেলেন। কিন্তু ক্লাস নিতে গিয়ে সুমনের উপলব্ধি হলোনিজেই তো কিছু পারি না। শিশুদের কী শেখাব? ভাবলেন, ডিগ্রি পরীক্ষা শেষে ঢাকায় গিয়ে ছয় মাসের একটা কোর্স করবেন।

যেই ভাবা সেই কাজ। ঢাকায় প্রকাশ বণিক নামের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিচয় হলো। তিনি এক বিকেলে সুমনকে নিয়ে গেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে। সেখানে গিয়ে যেন চোখ খুলে গেল সুমনের। মনে মনে বললেন, এমন একটা পরিবেশ বহুদিন ধরে খুঁজছি। তবে খোঁজ নিয়ে জানলেন, বয়সের কারণে সেখানে পড়ার সুযোগ আর নেই।

সেই সুযোগ মিলল ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভে (ইউডা)। ভর্তি হলেও লজ্জায় পড়লেন ক্লাস করতে গিয়ে। ঠিকঠাক লাইনই টানতে পারছিলেন না। প্রতিবছর ভর্তীচ্ছুদের কোচিং করান ঢাবির চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। ইউডায় তখন ক্লাস নিতেন আব্দুল হালিম চঞ্চল। তিনি পরামর্শ দিলেন, তুমি বরং চারুকলার কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে যাও। অগত্যা সুমন কোচিং শুরু করলেন ভর্তীচ্ছুদের সঙ্গে। এটা বেশ কাজে দিল। দ্বিতীয় সেমিস্টারে স্টিল লাইফে ব্যাচের মধ্যে দ্বিতীয় হলেন।

 

বাবা দিলেন পথের দিশা

সুমনের স্বজনদের অনেকেই লন্ডনে থাকে। তারা চাইল, সুমনও যেন সেখানে থিতু হন। কিন্তু চারুকলার অনেক আপন এই জীবন ছাড়তে মন চাইল না তাঁর। আত্মীয়-স্বজনেরও বোঝাতে পারছিলেন না। এ সময় ভেতরের অস্থিরতা ফুটিয়ে তুলতে শুরু করলেন ক্যানভাসে। নাওয়াখাওয়া বাদ দিয়ে পড়ে রইলেন রংতুলি নিয়ে। এভাবে বেশ কিছু ছবি জমা হলো। সেগুলো নিয়ে ২০০৪ সালে নবীগঞ্জ উপজেলা মিলনায়তনে চার দিনের প্রদর্শনী করলেন—‘ঘুড়ি দ্য কাইট

একদিন সুমনের বাবাও দর্শক হলেন সেই প্রদর্শনীর। মন্তব্যের খাতায় লিখলেন, ঘোর অন্ধকারের মাঝে কিছু কিছু দুঃসাহসী মানুষই ঘটাবে আলোর বিচ্ছুরণ। সুমন, তোমার একক প্রদর্শনী সামান্য আলোর ঝলকানি মাত্র। তোমাকে এটা নিয়ে যেতে হবে অনেক দূর। রং ও তুলির মাধ্যমে সমাজকে জঞ্জালমুক্ত ও শাপমোচন করার চেষ্টা করতে হবে। এ জন্য চাই কঠিন সাধনা ও ইস্পাত কঠিন মনোবল।

বাবার এই মন্তব্যে যেন পথের দিশা পেলেন। ফিরে এলেন ঢাকায়। ডুব দিলেন শিল্পের রঙিন ভুবনে। একসময় আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনেও প্রদর্শিত হয়েছিল তাঁর ছবি। ২০১১ সালে বেরোল তাঁর কবিতার বই যাত্রা বিরতির পর

গহীনপুরে ফুল ফোটান সুমন

ফিরে পেলেন নতুন জীবন

অধিকারবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে হাসি-আনন্দ ভাগাভাগি করার উদ্যোগ কালারিং লিটলস স্মাইলস। তানভীর মৃদুলসহ কয়েকজনের সেই উদ্যোগে সারথি হয়েছিলেন সুমন। ২০১৩ সালে গিয়েছিলেন বান্দরবানের লামার পাওমাং স্কুলে। সেখানে ম্রো শিশুদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ভীষণ আনন্দ পেলেন। পরে আরো কয়েকবার গিয়েছিলেন। শেষবার সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় কোমায় চলে যান।

চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, এ ধরনের ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তদের বাঁচার সম্ভাবনা কম। সেই অল্পসংখ্যকদের একজন সুমন। সুস্থ হওয়ার পর ঠিক করলেনঢাকায় ইঁদুর দৌড়ের জীবন আর নয়।

২০১৬ সালে তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে এলেন বাড়িতে। এক বিকেলে ক্যানভাস রাঙাচ্ছিলেন। কয়েকজন শিশু জানালায় উঁকি দিয়ে দেখছিল। সুমন ইশারায় ডাকলেন, ভেতরে এসো। দেয়ালে ঝোলানো রঙিন ছবিগুলো কৌতূহলভরে দেখল শিশুরা। পরদিনও এলো। এভাবে স্টুডিওতে দিনে দিনে শিশুর সংখ্যা বাড়তে লাগল। সুমন একদিন বললেন, তোমরা ছবি আঁকা শিখবে? সবাই মাথা নেড়ে সায় দিল। এই শিশুদের নিয়েই ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করল গহীনপুর। স্লোগান প্রকৃত মানুষ গড়তে সামগ্রিক শিল্পচর্চা। 

 

মানুষ দেখে তাদের

জাতীয় দিবসে তো বটেই, এখন প্রায় প্রতিদিন গহীনপুর মেতে থাকে নানা সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে। সেখানে নিয়মিত প্রশিক্ষক পাঁচজন। মাঝেমধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকে গিয়ে শেখান শিশুদের। কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে ছাপচিত্র কর্মশালা করাতে গিয়েছিলেন শিল্পী সালমা জাকিয়া বৃষ্টি। তিনি বললেন, সুমন চাইলেই শহরে আরাম-আয়েশের জীবনে থাকতে পারত। তা না করে শিকড়ে ফিরে শিশুদের মানসিক বিকাশে যে কাজটা করছে, এটা প্রশংসার দাবিদার।

গহীনপুরে ফুল ফোটান সুমন
সৃজনশীলতার এক মুক্তরাজ‍্য হয়ে উঠেছে গহীনপুর। ছবি : কালের কণ্ঠ

 

ঢাকার জলপুতুল পাপেটও কয়েকবার এই শিশুদের নিয়ে কর্মশালা করেছে। গহীনপুর পাপেট দল শিল্পকলা একাডেমির তালিকাভুক্ত। হবিগঞ্জ তো বটেই, এখন সুনামগঞ্জ, শ্রীমঙ্গলসহ বিভিন্ন জায়গায় পাপেট শো পরিবেশন করে তারা। বাল্যবিবাহ, মাদক ইত্যাদির বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করে। তাদের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো এলাকার হতদরিদ্র বয়স্ক ব্যক্তিদের সেবা করা। জীবনের পড়ন্ত বেলায় তাঁরা কী খেতে চান, কী পরতে চান, ওষুধপথ্যসহ নানা সেবা দিয়ে থাকে। ফিনিক্স নামের ঢাকার চিকিৎসকদের একটি গ্রুপ এতে আর্থিক সহযোগিতা করে।

আড়াই হাজারের মতো বই আছে গহীনপুরের হাজী সুরুজ উল্লাহ গণগ্রন্থাগারে। বাসায় নিয়েও পড়া যায়। বই বিলির জন্য পাড়াভিত্তিক দল আছে শিশুদের, যাদের মাধ্যমে মায়েরাও বই নেন। হিরামিয়া গার্লস হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা আক্তারের সঙ্গে দেখা হলো পাঠাগারে। সে বলল, এখন দৈনিক গড়ে ৫০ জন পাঠক পাঠাগার থেকে বই নেন।

নবীগঞ্জের হোমল্যান্ড আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মো. আদদান মিয়া জানাল, দুই বছর ধরে গহীনপুর পাপেট দলের সঙ্গে আছি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাপেট শো করি আমরা।

গহীনপুরে ফুল ফোটান সুমন
গহীনপুরে শিশুদের সঙ্গে আসাদ ইকবাল সুমন। ছবি : কালের কণ্ঠ

 

সব মনে ঢালো আলো

সব শ্রেণির মানুষকে নিয়েই এগোতে চান সুমন। এরই অংশ হিসেবে গ্রামের মাদরাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করতে চাইলেন। জামেয়া ইসলামিয়া মাদানিয়া গন্ধামিল্লিক মাদরাসার অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। ২০১৭ সালে একদিন ১১টা ক্যানভাস আর রংতুলি নিয়ে সুমন হাজির হলেন মাদরাসায়। শিশুদের মাতালেন রঙের খেলায়। বাচ্চাদের আঁকা সেই ছবি পোস্ট করলেন ফেসবুকে। সেই ছবি বিক্রির অর্থে মাদরাসায় একটি স্টিলের দোলনা করে দিলেন। আরেকবার এই শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি বিক্রির টাকায় কম্পিউটার, প্রিন্টার, বুকশেলফসহ নানা কিছু কিনে দিয়েছিলেন। অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল বাছির বলেন, ছাত্ররা কারো কাছে হাত না পেতে নিজেদের আয়ে কম্পিউটার, প্রিন্টারের মতো জিনিস কিনছেএটাও দারুণ ব্যাপার। সুমনকে ধন্যবাদ। সুমন বললেন, সবাইকে এক সুতায় বাঁধতে পারলেই সমাজটা সুন্দর হবে।

 

রঙিন স্বপ্নগহীনপুুর নিয়ে রঙিন স্বপ্ন দেখেন সুমন। পারিবারিক জায়গাটা গহীনপুরের নামে লিখে দেবেন বলে জানালেন। বললেন, আমার উদ্দেশ্য শিল্পী বানানো নয়, মানুষকে শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা। মন জোগাতে নয়, মন জাগাতে কাজ করছি। শিশুদের নিয়েই কাটবে জীবন আমার। ভবিষ্যতে গহীনপুরের পরিসর আরো বাড়াতে চাই।

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ