দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গতকাল শনিবার থেকে সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু হয়েছে। এই অভিযানে সারা দেশে যৌথ বাহিনীর তিন লাখের বেশি সদস্য অংশ নিচ্ছেন। অভিযানের শুরুতে নোয়াখালীর হাতিয়ায় তিন সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আজ রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কো-অর্ডিনেশন মিটিং করা হবে।
এতে দেশের সব বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। এ সভায় অপারেশন ডেভিল হান্টের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করা হবে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই অভিযান চালানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি ‘জয়েন্ট অপারেশন সেন্টার’ সেল খোলা হবে, যেখান থেকে সারা দেশের যৌথ বাহিনীর অভিযানের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ওই সেল থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেবে সরকার। অন্যদিকে এই অভিযানের খবর জানার পর কারা কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে কালের কণ্ঠকে গত রাতে জানিয়েছেন আইজি প্রিজনস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন।
সূত্র জানায়, অভিযানের আগেই রাজধানীসহ সারা দেশের সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজসহ নানা ধরনের অপরাধীর তালিকা করা হয়েছে। সেই তালিকা ধরে চালানো হচ্ছে এই অভিযান। গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত শুক্রবার রাতে গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনায় গতকাল শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরই গাজীপুরসহ সারা দেশে গতকাল অভিযান শুরু করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যৌথ অভিযানে অপরাধীদের গ্রেপ্তার শুরু হয়েছে।’
গাজীপুরের এসপি ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা শনিবার বিকেল থেকে যৌথ অভিযান শুরু করেছি।
’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কারা কী ধরনের অপরাধ করছে, তার তালিকা আগেই করা আছে। গাজীপুর জেলার প্রতিটি থানা এলাকায় অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।’
সূত্র জানায়, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে অবৈধ অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধার। এ ছাড়া দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও যৌথ বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। এবারের অভিযান কঠোর হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। অভিযানে কোনো রাজনৈতিক দলের পরিচয় দেখা হবে না।
গত শুক্রবার রাতে গাজীপুরে ছাত্রদের ওপর হামলার পর নতুন করে ‘কঠোর অভিযান’ চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, দেশকে যারা অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তিনিও সেদিন যৌথ বাহিনীর অভিযানের কথা সাংবাদিকদের জানান।
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চর ঈশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আজাদসহ (৫৮) তিনজনকে আটক করা হয়েছে। গত রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাতিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
হাতিয়া থানার ওসি এ কে এম আজমল হুদা জানান, আটক অন্য দুজন হলেন সিরাজুল ইসলাম (২৪) ও আবদুল মাজেদ পলাশ (২১)।
শেরপুর প্রতিনিধি জানান, শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার বানিয়াপাড়া এলাকা থেকে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক দুই নেতাকে আটক করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় তাঁদের আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিরা হলেন শ্রীবরদী উপজেলার চৈতাজানি গ্রামের মৃত আজাদ আলীর ছেলে মাহমুদুল হাসান রুবেল (৩১) এবং ঝিনাইগাতীর মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের আব্দুস সবুরের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৫)। রুবেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক। রফিক ঝিনাইগাতী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি।
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর জানান, গাজীপুরে শুক্রবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় গত রাত থেকে দেশজুড়ে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। এর অংশ হিসেবে গাজীপুরেও যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যা থেকে অভিযানের অংশ হিসেবে গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে চেকপোস্ট বসিয়েছে সেনাবাহিনী। মোটরসাইকেলসহ সড়কে চলাচল করা বিভিন্ন গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করছেন তাঁরা। এ ছাড়া সাদা পোশাকেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা অপরাধীদের ধরতে অভিযান শুরু করেছেন। গত রাত সাড়ে ৯টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে অভিযানে যায় র্যাব। সেখানে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
তবে এসব বিষয়ে জানতে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ও অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) তাহেরুল হক চৌহানকে মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তাঁরা রিসিভ করেননি। ফলে যৌথ অভিযানের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।